নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বল বীর চির উন্নত মম শির !

শাহারিয়ার ইমন

শাহারিয়ার ইমন › বিস্তারিত পোস্টঃ

দ্যা টেল-টেইল হার্ট (The Tell-Tale Heart) ;বিশ্বখ্যাত সাহিত্যিক"এডগার এলান পো"(Edgar Allan Poe) এর অনুবাদ গল্প ।(শেষ পর্ব)

২৬ শে আগস্ট, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:০৮



একটুও না নড়ে এক ঘন্টা যাবত আমি সেখানে ঠায় দাঁড়িয়ে ছিলাম । বৃদ্ধ লোকটির একটু নড়াচড়ার শব্দ শুনলাম না , সেও বিছানায় একদম সোজা হয়ে বসে ছিল । তখন আমি তার কাঁপা কাঁপা গলা থেকে মৃদু কান্নার মত শব্দ শুনতে পেলাম , সে খুব ভয় পেয়েছিল । সে আমাকে দেখতে পারছিলনা ,শুনতে পারছিলনা কিন্তু অনুভব করতে পারছিল কেউ একজন মৃত্যু হাতে নিয়ে তার দরজায় দাঁড়িয়ে আছে ।

আমি টর্চের ওপর থেকে অল্প কাপড় সরিয়ে তার চোখের উপর ধরলাম , তার শকুনের মত ধারালো তীক্ষ্ম চোখ দেখে আমার শরীরের রক্ত ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছিল , আমি উত্তেজনা বোধ করলাম । এই শকুনি চোখ চিরতরে বন্ধ করতেই হবে ।

তোমাকে তো আগেই বলেছি আমার শ্রবণশক্তি অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গিয়েছিল । আমি তখন বৃদ্ধ লোকটির হার্টবিট শুনতে পাচ্ছিলাম যেমন করে ঘড়ির কাটা টিকটিক করে বেজে ওঠে । ধীরে ধীরে সামনে এগুতে চেষ্টা করছিলাম কিন্তু তার হার্টবিট বহুগুনে বেড়ে গেছিল এবং আমার ভয় হচ্ছিল যে , কেউ এই শব্দ শুনে ফেলবে এবং আমাকে ধরে ফেলবে । তখন আর আমার হাতে সময় ছিল না । এক দৌড়ে বৃদ্ধ লোকটির গায়ে ঝাঁপিয়ে পড়লাম , সে একটা চিৎকার দিয়ে উঠেছিল । বিছানার চাদর দিয়ে আমি তার নাকমুখ চেপে ধরলাম যেন সে আর শ্বাস করতে না পারে । কয়েক মিনিট তার হার্টবিট শুনতে পেলাম ,আস্তে আস্তে কমতে কমতে একসময় একদম থেমে গেল । আমি বিছানার চাদর সরিয়ে তার বুকে আমার কান রাখলাম এবং কোন শব্দই শুনতে পেলাম না । বৃদ্ধ লোকটি মারা গেছে ,পাথরের মত শক্ত হয়ে শুয়ে পড়ে আছে । আমি মনের ভিতর অনেক বেশি প্রশান্তি অনুভব করলাম ,তার শকুনের মত চোখ আমাকে আর কষ্ট দেবেনা ।



তুমি আমাকে এখনো কি পাগল ভাবছ ? তোমার দেখা উচিত ছিল আমি কত যত্ন করে লোকোটির মৃতদেহ এমন জায়গায় রেখেছিলাম যেন কেউ খুঁজে না পায় । প্রথমে আমি তার মাথা কেটেছিলাম ,পরে হাতদুটি এবং শেষে পাদুটি । আমি এতটাই সচেতন ছিলাম যাতে এক ফোঁটা রক্তও যেন মেঝেতে না পড়ে । আমি মৃতদেহ মোড়কে বেঁধে মেঝের তিনটি তক্তা উঠিয়ে তার নিচে খুব সুন্দরভাবে রাখলাম । পরে তক্তাগুলো আবার ওখানে আগের মত সাজিয়ে রাখলাম যেন কেউ বুঝতে না পারে ওগুলো নাড়ানো হয়েছে ।

যখন আমার সব কাজ শেষ হল তখন দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ পেলাম ।তখন প্রায় রাত ৪ টা বাজে এবং গাঢ় অন্ধকার ছিল । আমি যদিও কোনরকম ভয় পেলামনা । নিচে গিয়ে দরজা খুললাম । তিনজন পুলিশের লোক দাঁড়িয়ে ছিল । একজন প্রতিবেশি বৃদ্ধ লোকটির চিৎকারের আওয়াজ শুনতে পেয়েছিল এবং পুলিশকে খবর দিয়েছিল ।পুলিশ আমাকে প্রশ্ন এবং বাড়ি সার্চ করতে করতে এসেছিল ।

তারা আমার বলা গল্পটি বিশ্বাস করল এবং আমার সাথে বন্ধুর মত কথা বলছিল । হঠাৎ করে আমার মাথা ব্যাথা শুরু হল এবং আমি যেন আমার কানের ভিতর অদ্ভুত রকমের শব্দ শুনতে শুরু করলাম ,আমি তখন চাইলাম পুলিশ যেন চলে যায় তাড়াতাড়ি ।
আমি বেশি বেশি এবং খুব দ্রুত জোরে জোরে কথা বললাম ।তখন শব্দ যেন আরো পরিষ্কারভাবে শুনতে পেলাম ।

পুলিশের লোকগুলো তখনো বসেছিল এবং আমার সাথে কথা বলছিল । তখন আমি বুঝতে পারলাম শব্দটা আমার কানের ভিতরে নয় কিংবা মাথার ভিতরেও নয় । আমি যেন ভয়ে সাদা হয়ে গেলাম । আরো উচ্চস্বরে কথা বললাম । সাথে সাথে শব্দটিও উচ্চ হতে লাগল । শব্দটি ছিল ঘড়ির টিক টিক শব্দের মত কিন্তু অনেক দ্রুত এবং তীক্ষ্ম । এই শব্দটি আমি ভাল করেই চিনি । আস্তে আস্তে শব্দটি আরো উচ্চস্বরে আমার কানে বাজতে লাগল । আমি আরো দ্রুত জোরে জোরে কথা বললাম । পুলিশের লোকগুলো এখনো কেন চলে যাচ্ছিল না ? আমি চেয়ার ছেড়ে উঠলাম এবং চেয়ার মেঝের ওপর টেনে শব্দ করলাম । কিন্তু শব্দ ক্রমান্বয়ে উচ্চস্বরে বাজতে লাগল আমার কানে । পুলিশের লোকগুলো আমার সাথে তখন কথা বলছিল এবং তার হাসছিল ।


এও কি সম্ভব ? তারা কোন কি শব্দ শুনতে পাচ্ছে না ?
না ,তা কি করে সম্ভব ? তারাও শব্দ শুনছে । তারা আমার সাথে কোন খেলা খেলছে । তখন আমি এমন কষ্ট পাচ্ছিলাম ঐ শব্দ এবং তাদের হাসি থেকে যা আর সহ্য করতে পারছিলাম না ।
আমি যেন পাগল হয়ে যাচ্ছিলাম । আরো বেশি উচ্চস্বরে শব্দ আমার কানে আসতে লাগল ।আমি নিজেকে আর ধরে রাখতে পারলাম না ।

আমি মেঝের দিকে আঙ্গুল দিয়ে দেখালাম যেখানে বৃদ্ধ লোকটির মৃতদেহ রেখেছিলাম । এবং চিৎকার করে কেদেঁ উঠে বললাম ,” আমি আমিই বৃদ্ধ লোকোটিকে হত্যা করেছি । তক্তাগুলো উঠালেই লাশ পাবে । কিন্তু তার হার্টবিট কেন থামছে না তাকে হত্যা করার পরও ? কেন এখনো আমি তার হার্টবিট শুনতে পাচ্ছি ? “


ছবি ক্রেডিট ; গুগল ।
প্রথম পর্ব ; Click This Link

(স্বর্বসত্ব সংরক্ষিত )

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২৬ শে আগস্ট, ২০১৮ রাত ১১:০০

কাওসার চৌধুরী বলেছেন:



"এডগার এলান পো"র গল্পগুলো অনুবাদ করা খুব কঠিন কাজ৷আপনি এই দুরুহ কাজটি করেছেন এজন্য সাধুবাদ জানাই৷মূল গল্পটি আমার পড়া না হলেও আপনার অনুবাদটি ভাল হয়েছে৷সামনের দিনগুলোতে আরো অনেক অনুবাদ চাই৷শুভ কামনা রইলো৷

২| ২৭ শে আগস্ট, ২০১৮ দুপুর ১:৪৮

রাজীব নুর বলেছেন: জীবনের গল্পটা যদি, এমন হতো
শেষ থেকে আবার, শুরু করা যেতো
চোখ ছুঁয়ে যেত যেই স্বপ্ন গুলো
জীবনটা বুঝি সেই, স্বপ্ন হতো ...

৩| ২৭ শে আগস্ট, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:২৮

শাহারিয়ার ইমন বলেছেন: চেষ্টা করব। আপনার কথা শুনে অনুপ্রানিত হলাম

৪| ২৭ শে আগস্ট, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:২৯

শাহারিয়ার ইমন বলেছেন: জীবন প্রথম থেকে শুরু করলেও আমরা একই ভুল করতাম

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.