নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

রাতের শেষে ভোর আসিবে সেই আশাতেই রই, দিনের শেষে খুঁজে ফিরি শান্তি গেল কৈ?

মোহাম্মদ ইমরান হোসাইন

অসামাজিক মানব

মোহাম্মদ ইমরান হোসাইন › বিস্তারিত পোস্টঃ

নব দম্পতির জোছনা বিলাস

২০ শে জানুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১২:০১

বিয়ে করতে করতে অবশেষে সত্যিই
বয়সটা একটু বেশি হয়ে গেল সায়েম
সাহেবের। ৩৫ পেরিয়ে ৩৬ এ পা
দিলেন তিনি। নিজেকে প্রতিষ্ঠিত
করতে গিয়ে এতটাই ব্যাস্ত হয়ে
পড়েছিলেন যে, বিয়ে বা নারী নামক
কিছু একটা যে জীবনে অবশ্যক, তা
তিনি ভুলেই গিয়েছিলেন। আর যখন
নিজেকে প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে সফল
হয়ে জীবনে কারো প্রয়োজন উপলব্ধি
করলেন, তখন তার যৌবন তাকে বিদায়
জানাবার প্রস্তুতি নিচ্ছে। তবে সায়েম
সাহেবের প্রকৃত বয়সটা যতই হোক না
কেন, তার চেহারা দেখে সেটা বোঝার
উপায় নেই।
আজ সায়েম সায়েম সাহেবের বিয়ে।
উনার বন্ধুরা দু'তিন খানা বাচ্চা আর
বাচ্চাদের মা সহ বিয়েতে উপস্থিত।
সায়েম সাহেবের সবচেয়ে কাছে বন্ধু
তুহিন। আট বছর পূর্বে বিয়ে করেছে
সে। তুহিনের বড় ছেলের বয়স সাত
বছর। তারপর আরও দুটা আছে।
তুহিনের বউকে দেখে মনে হচ্ছে চতুর্থ
কেউ আগমনের প্রস্তুতি নিচ্ছে।
বিষয়টা ভাবতেই আতকে উঠে সায়েম
সাহেব। তিনি বুঝতে পারছেন না, এত
কিছু কেমনে কি?
সায়েম সাহেবের ভাবনার মাঝেই হঠাত্
তুহিন এসে ডেকে বলে- যাক দোস্ত,
অবশেষে তাহলে তোর বিয়েটা হচ্ছে!
আমিত ভেবেছিলাম তুই বিয়েই করবি
না।
তুহিনের কথায় খুব একটা মনোযোগ নেই
সায়েম সাহেবের। তিনি ভাবছেন
অন্যকথা। আবারাও তাঁর ভাবনায়
ব্যাগাত ঘটায় তুহিন।
: জানিস ব্যাটা, বউ ,বাচ্চা নিয়ে
অবস্থা একদম বেসামাল। তোর বিয়েতে
আসবে বলে সবাইকে নতুন কাপড় কিনে
দিতে হল। তোর ভাবির শাড়িটার দাম
কত জানিস, পনেরো হাজার টাকা।
তারপরওত আরও এটা সেটা কত কি!
কথা গুলি বলতে বলতে তুহিনকে কিছুটা
বিমর্ষ দেখালেও, সায়েম সাহেবের মুখটা
অধিক মলিন দেখাচ্ছিল। তিনি বিস্মিত
কন্ঠে বলেন- সব কি তোকেই কিনে
দিতে হচ্ছে!
: তো আবার কি? শুধু কি এই , আরও
যে কত জামেলা রে দোস্ত। বিয়েটা কর,
তারপর বুঝবি।
সায়েম সাহেবের মুখটা একদম মলিন হয়ে
যায়। তিনি মনে মনে বলেন, নিজের
পায়ে নিজেই কুড়াল মারার কি দরকার?
গাঁধা গুলা কেন যে বিয়ে করতে যায়!
কিন্তু পরক্ষনেই তাঁর মনে পড়ে যায়,
তিনি নিজেই আজ বিয়ে করতে
যাচ্ছেন। তাহলে তিনিও কি গাঁধাদের
দলে পড়ে যাচ্ছেন! মনের মাঝে এমন
একটা দ্বিধা নিয়েই অবশেষে বিয়ে
করতে যান সায়েম সাহেব।
.
সায়েম সাহেবের স্ত্রী তানিয়া। বয়সটা
১৯ পেরিয়ে কুড়িতে ছুঁই ছুঁই করছে।
পূর্ণ যৌবন নিয়ে, নব বধূ সেজে খাটের
উপরে মাথাটা নিচু করে বসে আছে সে।
তার চোখে মুখে নেই কোনো কষ্ট কিংবা
আনন্দ। হয়ত সে বুঝতে পারছে না
তার এখন কষ্ট পাওয়া না আনন্দিত
হওয়া উচিত। সে শুনেছে তার বরের
বয়সটা অনেক বেশি। এ জায়গাটিতে
এসে যেন তার অনুভূতি গুলি সব থেমে
যাচ্ছে। সে জানেনা তার ভাগ্যটা
কোথায় এসে ঠেকেছে, সেখান থেকেই বা
কোথায় যাবে। মনে তার এমনি অনেক
ভাবনা।
.
ছাদে দোলনায় বসে কফি খাচ্ছিলে
সায়েম সাহেব। মনে তাঁর অনেক
চিন্তা। নব বধূর কাছে যেতে যেন এক
রাজ্জের ভয় আর লজ্জা এসে ঘিরে
ধরেছে তাকে। একাকি একটা মেয়ের
সাথে, একই রুমে, একই খাটে তিনি কি
করে রাত কাটাবেন! এ ভাবনাতেই
অস্থির তিনি। এসব ভাবনা ছেড়ে
আকাশের দিকে তাকাতেই সায়েম
সাহেবের মুখটা উজ্জ্বল হয়ে উঠে।
আকাশে পূর্ণিমার চাঁদটা জোছনা
বিলিয়ে যাচ্ছে। অদ্ভুত কিছু চিন্তা
তাঁর মাথায় ঘুর ঘুর করতে থাকে।
অসমাপ্ত কফির মগটা নিয়েই ঘরে
এসেই দেখে প্রায় সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে।
চারদিকটা ভালো করে পরখ করে,
অনেক সাহস সঞ্চার করে অবশেষে নব
বধূর অবস্থারত নিজের রুমের দিকে পা
বাড়ায় সায়েম সাহেব। বুকটা তাঁর ধুপ
ধুপ করছে। রুমের সামনে গিয়ে একটা
কাশি দিয়ে কিছুক্ষন অপেক্ষা করে
অতঃপর সালাম দিয়ে রুমে প্রবেশ করে
সায়েম সাহেব। ছোট কন্ঠে সালামের
জবাব দেয় তানিয়া।
রুমে প্রবেশ করেই দ্বিধায় পড়ে যায়
সায়েম সাহেব। এক পা সামনে আসলে
দু'পা পিছিয়ে যাচ্ছেন তিনি। নিজের এ
অবস্থা দেখে নিজেই নিজেকে করুণা
করতে ইচ্ছে করছে তাঁর। সেই মুহুর্তেই
উনার মনে পড়ে তুহিনের কথা। 'তুহিনও
কি আমার মত এতটা ভয় বা লজ্জা
পেয়েছিল? অসম্ভব! এতটা ভয় পেলে
এত অল্প সময়ে ও ব্যাটার পক্ষে এত
কিছু করা সম্ভব ছিল না। তার মানে
আমাকেও এমন কিছু করতে চাইলে
সাহসী পুরুষ হতে হবে। গর্জে উঠতে
হবে তুহিনের মত।'
নিজেকে অনেক বুঝিয়ে অবশেষে খাটের
উপরে উঠে বসতে সমর্থ হোন সায়েম
সাহেব। কথা বলতে তাঁর মনটা আন
চান করছে। কিন্তু তবুও কিছু বলতে
পারছেন না তিঁনি। এভাবেই কেটে যায়
অনেকটা সময়।
নব বধূ যেন বিরক্ত হয়ে উঠছে।
সায়েম সাহেবের এই নীরবতা অসহ্য
লাগছে তানিয়ার কাছে। আর তাই সব
লজ্জা ভুলে প্রথমে তানিয়াই কথা
বলে- কিছু বলছেন না যে!
মিষ্টি একটা কন্ঠ অনমনা সায়েম
সাহেবকে বাস্তবে ফিরিয়ে আনে। একটু
বিস্ময় নিয়েই তিঁনি তানিয়ার দিকে
তাকান। তারপর বলে- আপনি কি কিছু
বলেছেন?
: হুম। এভাবে চুপ করে আছেন কেন?
: খুব নার্ভাস লাগছে।
: কেন?
: আসলে এর পূর্বে আর কখনো বিয়ে
করি নাইত, তাই। আশা করি ভবিষ্যতে
আর এমন হবে না।
কয়েক মুহুর্তের মাঝেই সায়েম সাহেবের
সব লজ্জা আর ভয় কোথায় যেন
হারিয়ে যায়। আর তাই শেষের কথা গুলি
মুখে একটা দুষ্ট হাসি হেসেই বলেন
তিঁনি। সায়েম সাহেবের কথা শুনে মনের
ভিতরে একটা জ্বালা ধরে যায়
তানিয়ার। মনে কিছুটা কষ্ট নিয়েই বলে
সে- ভবিষ্যতে আর কি এমন হবে না?
কষ্ট যেন তানিয়ার কন্ঠটা চেপে
আসছিল। সায়েম সাহেবের দুষ্ট হাসিটা
তখন আরও উজ্জ্বল হয়ে উঠে। হাসি
মাখা মুখেই বলেন তিনি- অর্থাত্
আপনার সাথে কথা বলতে ভবিষ্যতে
আর নার্ভাস ফিল করব না।
: হুহ!
কষ্ট টা দূরে সরে গেলেও তানিয়ার মুখে
অভিমান। এমনি একটা সময়েরই যেন
অপেক্ষা করছিল সায়েম সাহেব।
তানিয়ার অনেকটা কাছে এসে বসেন
তিনি। অতঃপর, নব বধূর বড় ঘোমটা
সরিয়ে মায়া মাখা মুখটির দিকে
তাকাতেই বিস্ময় ঘিরে ধরে সায়েম
সাহেব কে। মনে তার একটা প্রশ্ন
উঁকি দেয়, সব মেয়েরাই কি এমন
সুন্দরী? নাকি শুধু তাঁর বউ!
: এভাবে চেয়ে আছেন কেন?
: খাচ্ছি। তানিয়ার দিকে চেয়ে
আনমনেই উত্তর টা দেয় সায়েম
সাহেব।
: কি খাচ্ছেন! বিস্মিত কন্ঠে তানিয়া।
: ওহ স্যারি, পান করছি।
: কি?
: তোমার রূপের সুধা।
সায়েম সাহেবের শেষ কথাটা শুনে খুব
লজ্জা পায় তানি। দু হাতে মুখ ঢাকে
সে।
সায়েম সাহেব তানির মুখ থেকে ওর হাত
জোড়া সরিয়ে, ওর দিকে অপলক চেয়ে
থেকে বলে- জোছনা দেখবে?
: কোথায়? কিভাবে? তানির কন্ঠে
বিস্ময়।
: ছাদে চল। খুব সুন্দর জোছনা।
: ফুলসজ্জার রাতে বুঝি কেউ ছাদে বসে
জোছনা দেখে?
: এইতো, আমরা দেখব।
সায়েম সাহেবের কথা শুনে মুচকি হাসে
তানি। তার মনে এখন অনেক বেশি
আনন্দ।
ছাদে দোলনায় বসে জোছনা দেখতে থাকে
দু'জনে। স্বর্গের সুখ যেন ঘিরে রেখেছে
তাদের। হঠাত্ই সায়েম সাহেব, বসা
থেকে তানির কোলে মাথা রেখে শুয়ে
পড়ে। বিস্ময়ের চুরান্ত পর্যায়ে এসে
পড়ে তানি। সেই সাথে এক পরম
প্রশান্তিতে ভরে উঠে তার দেহ আর
মন। মাঝ বয়েসি বরের কাছ থেকে এত
সুন্দর কিছু সময় সে আশা করে নি।
আসলে বয়স মনকে বেঁধে রাখতে
পারেনা, যদি প্রকৃত পক্ষেই মনটা
সুন্দর হয়। রাত বাড়তে থাকে। আর
ধীরে ধীরে মধুময় হয়ে উঠে নব
দম্পতির জোছনা বিলাস।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.