নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার সম্পের্ক যে দিন কিছু জানতে পারবো সে দিন অবশ্যই লিখবো!

মাগুর

স্বীয় স্বত্ত্বার সহিত সত্যের সন্ধানে সর্বদা সচেষ্ট

মাগুর › বিস্তারিত পোস্টঃ

বিষাদগল্পঃ স্মৃতি!

০১ লা আগস্ট, ২০১৪ রাত ৯:৫৬

১.

চারপাশে এত এত মানুষ, রঙবেরঙের পোষাক তাদের গায়ে। সেগুলো যে খুব দামী তা নিয়ে কোন সন্দেহ নাই রাশেদের মনে। বিশাল সাদা পাঁচকোনা আকৃতির বিল্ডিং। সামনে ঢাউস সব গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে পার্কিং জুড়ে। গেটের সামনে দাঁড়িঢে আছে অ্যারাবিয়ান কায়দার চৌস্ত দারোয়ান। চারপাশে নানা রঙয়ের আলোর খেলা। শুধুমাত্র হুলুস্থুল টাইপ বড়লোকরাই এসব জায়গায় পার্টি দিতে পারে। বড্ড বেমানান লাগছে নিজেকে ওর এখানে এসে। না আসতে পারলেই ভালো হতো! কিন্তু কি করবে রাশেদ? আজ যে ওর একমাত্র মেয়ে সুপ্তির বিয়ে।



২.

বয়স তখন কেবল চব্বিশ, সেতুর সাথে বিয়ের দু'বছর চলছে। হ্যাঁ, দু'বছরই তো! অল্প বয়সে ঘর পালিয়ে বিয়ে করেছিলো দুজন। তারপর কোন পরিবারই মেনে নেয়নি। দুজন মিলে গড়ে তুলেছিলো ছোট্ট সংসার। এরই মধ্যে ঘর আলো করে এলো মেয়েটা। সেতুর সঙ্গে মিলিয়ে বড় আদর করে মেয়ের নাম রেখেছিলো সুপ্তি। বাবার বড়ই আপন ছিলো মেয়েটা। সারাক্ষণ বুকে-পিঠে লেপ্টে থাকতো, গল্প শুনতে চাইতো, কপট অভিমানে গাল ফুলিয়ে বাবার কাছে আদর নিতো! কিন্তু....কিন্তু বেশিদিন সয়নি এসব।



৩.

নতুন ঘর, নতুন সংসার, নতুন পরিবেশ আর কোলজুড়ে আসা সুপ্তি সেতুর জীবনকে স্বপ্নময় করে রেখেছিলো। রাশেদ আর সুপ্তিকে নিয়ে এতই ব্যস্ত ছিলো যে নিজের কথা মনে হয়নি আর। মনে হয়নি বাবা-মা কিংবা ভাই-বোনদের কথা। জোছনা রাতে যখন চাঁদের আলো জানালার শিক গলে বিছানায় পড়তো তখন বউ আর মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকতো রাশেদ। সারাদিনের গাধার মতো খাটনি আর আর্থিক টানাপোড়ন তুচ্ছ মনে হতো ওর কাছে। কিচ্ছু লাগবে না ওর! আছেই তো, সেতু আর সুপ্তি। তারপর কিভাবে কি যেন হয়ে গেল! বদলে গেল সব, অর্থহীন হয়ে গেল। সুপ্তিকে নিয়ে আলাদা হয়ে গেল সেতু। যার সব ছিলো সে সব হারিয়ে নিঃস্ব হলো।



৪.

- হ্যালো স্যার, আপনি কি কাউকে খুঁজছেন?

- না মানে, ইয়ে...! আমার....আমার মেয়েরা...না থাক। কিছু না। এমনি দেখছিলাম, চলে যাচ্ছি ভাই।



কালো স্যুট, চোখে কালো সানগ্লাস পরা লোকটার কথায় সতেরো বছর আগের স্মৃতি থেকে বাস্তবে ফিরে এলো রাশেদ। খেয়ালই করেনি আনমনে হাঁটতে হাঁটতে গেটের কাছে চলে এসেছে কখন। হাতের মোবাইল টিপে ম্যাসেজটা বের করে আরেকবার পড়লো, "Tomar meyer biye, Grand Palace a. Ekbar eshe dekhe jeyo."



৫.

গ্র্যান্ড প্যালেসের ভেতরে আর ঢোকা হয়নি রাশেদের। ইস্ত্রিবিহীন কোঁচকানো শার্ট, রঙ জ্বলা প্যান্ট আর আধ ছেঁড়া জীর্ণ চপ্পল পায়ে হতদরিদ্র চেহারা নিয়ে মেয়ের সামনে দাঁড়াতে চায়নি সে। সতেরো বছর হয়ে গেছে, কিন্তু মেয়েটা এখনো মনে নিয়ে আছে সেই চার বছর বয়সের স্মৃতি। তার কাছে বাবা মানে আনন্দ, দুষ্টুমি, আহ্লাদ বা রূপকথার গল্প। থাকুক না সে তার স্মৃতিতে, বাবাকে নিয়ে।





মাগুর রুবায়েত

আগস্ট ১, ২০১৪

ব্যাংক টাউন, সাভার।

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ০১ লা আগস্ট, ২০১৪ রাত ১০:৫৯

কান্ডারি অথর্ব বলেছেন:


ভাল লাগল +++

২| ০২ রা আগস্ট, ২০১৪ রাত ৩:৪৪

বৃতি বলেছেন: সহজ সুন্দর গল্প। ভাল লাগলো বেশ।

৩| ০২ রা আগস্ট, ২০১৪ সকাল ৯:৫৩

মৃদুল শ্রাবন বলেছেন: অন্যরকম একটা কষ্ট ছুয়ে গেল। কেন যে মানুষের মধ্যের সম্পর্কগুলো ভেঙে গিয়ে কাছের মানুষগুলো নাগালের বাইরের হয়ে যায় !!!!

সহজ সাবলীল উপস্থাপনায় গল্পটা ভেতর স্পর্শ করেছে।

৪| ০২ রা আগস্ট, ২০১৪ দুপুর ১২:৩৬

জাহাঙ্গীর.আলম বলেছেন:

বিষাদী গল্পে মন ছুঁয়ে গেল ৷


অল্প শব্দে অনেক অনুভব পেলাম ৷

৫| ০২ রা আগস্ট, ২০১৪ বিকাল ৪:৩৬

হাসান মাহবুব বলেছেন: দুঃখজনক পরিণতি।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.