নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শব্দকবিতা : শব্দেই দৃশ্য, শব্দেই অনুভূতি [email protected]

সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই

দুঃখের কবিতাই শ্রেষ্ঠ কবিতা। ভালোবাসা হলো দুঃখ, এক ঘরে কবিতা ও নারী।

সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই › বিস্তারিত পোস্টঃ

এই বিশ্বকাপ নেইমারের

০৩ রা জুলাই, ২০১৮ সকাল ১১:৫৯

খেলা শুরুর ৫-৬ মিনিট দেখতে পারি নাই। যখন টিভি সেটের সামনে, মনে হলো মেক্সিকো বেশ চাপেই রাখছে ব্রাজিলকে। কিন্তু একটু পরেই ধীরে ধীরে ব্রাজিলের নিয়ন্ত্রণে চলে আসে খেলা।

প্রথম গোলটা ছিল নেইমারের দুর্দান্ত ক্যারিশমা। শুরু থেকেই সে অত্যুজ্জ্বল ছিল। ডি বক্সের বাইরে থেকে বল নিয়ে বেশ কয়েকজন ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে ডি বক্সের ভেতরে গিয়ে উইলিয়ানকে পাস দিয়ে সামনে চলে যায় নেইমার। উইলিয়ানের কাছ থেকে ফিরতি পাস পেয়ে হালকা ছোঁয়া দিয়ে নেইমার বল জালে ঢোকায় (৫১'' )।

২য় গোলটাও মাঝ মাঠের সামান্য উপরে রিসিভ করে দ্রুত গতিতে সামনে এগোতে থাকে নেইমার। ডি-বক্সের কাছাকাছি গিয়ে পাস দিলে ফিরমিনো গোল করে (৮৮'' )।

এবার সুপার স্টারদের মধ্যে রোনাল্ডোকে দেখা গেছে পুরো মাঠ জুড়ে খেলতে; মেসি পুরো টুর্নামেন্টেই ছিল নিস্প্রভ, নেইমার আগের ম্যাচগুলোতে মোটামুটি ছিল। তবে, আজকের ম্যাচে সে সারা মাঠ জুড়ে আধিপত্য বিস্তার করে খেলেছে। আজ স্ফুলিঙ্গ জ্বলে উঠেছিল। তার স্কিল ও পরিশ্রম আমার ভালো লেগেছে।

নেইমারের ব্যাপারে অনেক ট্রল আছে যে সে বাতাসের ধাক্কায় পড়ে যায়। আজ যদি কেউ তার ব্যাপারে এই মতবাদ দেন, তাহলে বলবো তিনি অন্ধ কিংবা মিথ্যুক। আজ তাকে সিরিয়াসলি ট্যাকল করে বেশ কয়েকবার ফেলে দেয়া হয়েছে এবং তাতে সে বেশ আহতও হয়েছে বলে মনে হয়েছে। শেষবার যখন তাকে সাইড লাইনে ছটফট করতে দেখা গেলো, এটা নিয়ে আমিও কনফিউশনে ছিলাম প্রকৃত ব্যাপারটা কী। আপাতত দৃষ্টিতে 'অভনিয়' মনে হতে পারে, এবং রেফারি এটাকে 'অভিনয়' মনে করেই হয়ত ডিফল্টারের ফাউল ধরেন নি। কিন্তু সেটাই শেষ কথা না। প্রথমবার এক ট্যাকলে নেইমার পড়ে যায়, এবং পড়ে যাবার পর স্টিল পিকচারে পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে বুট দিয়ে তার পায়ের উপর (২য় বার) মেক্সিকান প্লেয়ার চাপ দিচ্ছে।

সুপার স্টারদের আমরা খুব সূক্ষ্মভাবে পর্যবেক্ষণ করি বলে মনে হতে পারে নেইমার বাতাসের ধাক্কায় খামোখাই পড়ে যায়। আমার কাছে সব প্লেয়ারদের ব্যাপারেই এমনটা মনে হয়, এবং রোনাল্ডো, ম্যারাডোনা, মেসি- সবাইকেই এইক্ষেত্রে একরকম মনে হয়। এটা আপনি সাপোর্ট করবেন নাকি বিরোধিতা করবেন তা ডিপেন্ড করবে আপনি কোন টিমকে সাপোর্ট করেন? আপনি ব্রাজিল-বিরোধী হলে এ কথায় আপনার গা জ্বলে উঠবে, আমাকে হয়ত গালিও দিয়ে বসবেন, আর ব্রাজিল-সমর্থক হলে জোরসে হাততালি দিয়ে তালু ফাটিয়ে ফেলবেন।

আমার ব্যক্তিগত অভিমত হলো, যে-কোনো খেলাধুলায়ই খেলোয়াড়গণ 'প্রি-টেন্ড' করে থাকে কিছু বাড়তি সুবিধা পাওয়ার জন্য। ম্যারাডোনা অ্যানালগ যুগের ফুটবলার বলে তার অনেক নেগেটিভ আচরণ, 'হ্যান্ড অব গড'-এর যাদু বেশি প্রচার পায় নি; আজকের যুগে হলে, আমার ধারণা, ম্যারাডোনার মাহাত্ম্য হয়ত এতখানি প্রচার পেত না। কতখানি অভিনয়-দক্ষতা থাকলে রেফারি ও দর্শকদের চোখে ধুলো দিয়ে হাত দিয়ে গোল করা সম্ভব, সেটা ভেবে দেখার বিষয়। আমি ম্যারাডোনা বা মেসি বা নেইমার কারোই ভক্ত না। তবে, ম্যারাডোনার প্রতি শ্রদ্ধা নেই তার নারী কেলেঙ্কারি, ডোপ কেলেঙ্কারি, স্টান্টবাজিসহ সময়ে সময়ে নানাবিধ 'স্টুপিড' কর্মকাণ্ডের জন্য। মেসির খেলা নিয়ে আমার কোনো ভালোবাসা বা উচ্ছ্বাস নেই; কারণ, আমি ক্লাব ফুটবলে মেসির জাদু দেখার অভ্যাস গড়ে তুলতে পারি নাই, নেইমার বা রোনাল্ডোরও। আমার দৌড় ফিফা'র বড়ো বড়ো গুটি কতক টুর্নামেন্ট, যেমন, কোপা, কনফেডারেশন, ইউরো কাপ, বিশ্বকাপ, ইত্যাদি। এখানে যারা ভেলকি দেখায়, আমি কেবল তাদের প্রেমেই পড়ি :) তবে, মেসির প্রতি আমার একটা শ্রদ্ধাবোধ আছে তার বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডে মহৎ অবদানের জন্য। মেসি-বিরোধীরা হয়ত বলবেন ওগুলো বানোয়াট বা মিথ্যা। সেইক্ষেত্রে আমি বলবো, নেইমার বা রোনাল্ডো'র নামে ঐরকম বানোয়াট কিছু বাজারে আছে নাকি? নেই কেন? তো, সেই মেসিই যখন এই টুর্নামেন্টে কোনো এক ম্যাচে পড়ে যাওয়া এক প্লেয়ারকে লাথি দিল, আমি সেটা মেনে নিতে পারি নি।

'এই বিশ্বকাপ নেইমারের'- ব্রাজিলের ২য় গোল করায় নেইমারের অসামান্য নৈপুণ্য দেখে ফেইসবুকে এটা আমার তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া ছিল। পরে স্টেটাসের কলেবর ধীরে ধীরে বাড়ানো হয়। এই স্টেটাসে ব্রাজিল-সমর্থকরা লাইক-কমেন্ট দিলেও এই পূর্ণাঙ্গ স্টেটাসে ব্রাজিল-বিরোধী, বিশেষ করে আর্জেন্টিনা-সমর্থকদের উপস্থিতি একেবারেই নগণ্য ছিল :( :(

আমরা অনেকেই খুব হিংসুটে আচরণ করে থাকি। আমি কেন ব্রাজিল বা আর্জেন্টিনা সাপোর্ট করি, আপনার সাথে না মিললেই তখন আমি আপনার শত্রু হয়ে যাই। এ ধরনের 'অভদ্রতা' এবং 'অসভ্যতা' খোদ ব্রাজিল এবং আর্জেন্টিনায় দেখতে পাবেন না। অন্য কোনো সভ্য দেশেও এমনটা ঘটতে দেখা যায় না। মিডিয়ায় একটা খুব দামি কথা ভেসে বেড়াচ্ছে- নিজের দলের জয়ের চেয়ে প্রতিপক্ষের পরাজয়টাই যেন আমাদের প্রাণের চাওয়া। এই ব্লগের একজন ব্লগার, ভালো লেখেন, ফেইসবুকে আমার ফ্রেন্ডলিস্টের অন্তর্ভুক্ত, যাকে বেশ ব্যক্তিত্বশীল মনে হতো এতকাল, তিনি একজন অন্ধ-আর্জেন্টিনা সমর্থক, এবং তার চেয়েও বড়ো পরিচয়, তিনি একজন ঘোর ব্রাজিল-বিরোধী- তাঁর ক্রমাগত হিংসুটে আচরণ ও ছেলেমি আমাকে বিস্মিত ও ব্যথিত করে। মানুষের ব্যক্তিত্ব যে কত ঠুনকো, তিনি নিজেকে দিয়ে প্রমাণ করছেন। মানুষ কতখানি হীন প্রবৃত্তির হলে এরকম মানসিকতা ধারণ করতে পারেন, চিন্তা করুন। প্রিয় দলকে সাপোর্ট করার নাম এখন 'দলাদলি' হয়ে গেছে। ভবিষ্যতে 'বাংলাদেশ আর্জেন্টিনা সমর্থক দল' বা 'বাংলাদেশ ব্রাজিল সমর্থক দল' নামে কোনো রাজনৈতিক দলের আবির্ভাবের কথা একেবারেই উড়িয়ে দেয়া যায় না। এবং রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যেমন অহিনকূল সম্পর্ক, এই ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা সমর্থক গোষ্ঠীর মধ্যকার সম্পর্ক তার চাইতেও ভয়াবহ মনে হচ্ছে।

ফিরে আসি আজকের খেলায়। ব্রাজিল প্রসিদ্ধ তাদের ছন্দোময় ফুটবলের জন্য। ব্রাজিল আজকের খেলায় তার প্রমাণ দিয়েছে। তবে, মেক্সিকোও সমান তালে লড়েছে, তাদের খেলাও মনোমুগ্ধকর ছিল। খেলার শেষ দিকে এসে তারা ব্রাজিলকে বেশ চাপের মধ্যেই রেখেছিল। মেক্সিকো বেশকিছু কাউন্টার অ্যাটাকে ভালো সুযোগ পেয়েও মিস করেছে।

নেইমার আজকে যেভাবে জ্বলে উঠেছে, এরকম খেলা দেখিয়ে সে যদি ব্রাজিলকে এবার চ্যাম্পিয়ন করাতে পারে, তাহলে বিশ্বকাপের ইতিহাসে নেইমারই হবে এক ও অদ্বিতীয় ফুটবলার, যে সুপার স্টারের খ্যাতি নিয়ে টুর্নামেন্ট শুরু করে এবং দুর্দান্ত প্রতাপে দেশের জন্য জয়ের মুকুট ছিনিয়ে আনে। মেসি ও ম্যারাডোনার অর্জনকে পেছনে ফেলে সে চলে যাবে পেলের কাতারে। আর যদি তা না হয়, ভবিষ্যতে তার জ্বলে উঠবার আর সম্ভাবনা নেই, কারণ, আমার মতে এখনই নেইমারের ফর্ম তুঙ্গে, আগামী বিশ্বকাপের আগেই তাতে ভাটা পড়তে থাকবে।

ফাইনাল স্কোরঃ
ব্রাজিল -২
মেক্সিকো-০

ম্যান অব দ্য ম্যাচঃ নেইমার

খেলার আনন্দকে উপভোগ করুন। আর মাত্র কিছুদিন খেলার উত্তেজনা থাকবে, তারপর ঠান্ডা হয়ে যাবে সব। অন্য দেশকে সাপোর্ট করা নিয়ে হিংসাহিংসি, ঝগড়াঝাটি, খুনাখুনি অত্যন্ত অপ্রত্যাশিত। ব্রাজিল বা আর্জেন্টিনাকে সাপোর্ট করা নিয়ে আমাদের যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার কোনো কারণ দেখি না। তাদের সাথে বাংলাদেশের শক্তিশালী ডিপ্লোম্যাটিক রিলেশন যেমন নাই, তাদের দ্বারা বাংলাদেশ শ্রম-বিনিময় বা ব্যবসায়িক চুক্তি দ্বারা অনেক উপকৃত হচ্ছে, এমন কিছুও নাই। জাপান, কোরিয়া, ইরান, সউদি, মরক্কো, মিশর, জার্মানি, ইটালি, স্পেন, ফ্রান্স, ইংল্যান্ড, সুইডেন, সুইজারল্যান্ড, ইত্যাদি দেশের সাথে আমাদের কূটনৈতিক, অর্থনৈতিক, শ্রমিক বিনিময়সহ অনেক স্বার্থ জড়িত। তাদেরকে সাপোর্ট করার অনেক কারণ আমি খুঁজে পাই। তারা খেলেও ভালো।

দল হেরে গেছে। মুখে নেকাব জড়িয়ে মোবাইলের সামনে কেন্দেকুটে তা রেকর্ড করে ফেইসবুকে শেয়ার করতে হবে, কতখানি বেকুব মেয়ে হলে এই 'শোয়িং অফ' করতে পারে, তা আমার মাথায় ঢোকে না। এই কান্না আন্তরিক এবং প্রকৃত কান্না হলে তা মোবাইলে রেকর্ড করে শেয়ার করার প্রয়োজন পড়তো না। এই বেকুবগুলোর জন্যও মোটিভেশনের খুব দরকার আছে।

উত্তেজনাপূর্ণ খেলা দেখতে চাই। দলের চেয়ে ফুটবলের জয়টাই বেশি কামনা করছি।

পরের ম্যাচে জাপানের জন্য আমার পূর্ণ সমর্থন ছিল। এশিয়ান দেশের মধ্যে জাপান, দঃ কোরিয়া, সউদি আরব, ইরান, ইরাক আমার প্রিয় দল। ১৯৯৪ বিশ্বকাপের এশিয়ান কোয়ালিফাইং রাউন্ড থেকেই আমি এই দেশগুলোর খেলা পছন্দ করতে থাকি। চীনের খেলাও মন্দ না, কিন্তু তাদের ফিনিশিংটা হয়ে ওঠে না।

জাপান-বেলজিয়ামের খেলা আমার কাছে দুর্দান্ত লেগেছে। জাপানের ২য় গোলটা ছিল অসাধারণ। তাদের এভারেজ হাইট একটা ফ্যাক্টর ছিল বলে মনে হয়। যদিও ২ গোলে এগিয়ে ছিল, কিন্তু আমার বার বারই ভয় হচ্ছিল হয়ত বেলজিয়াম অতি শীঘ্রই শোধ করে ফেলবে। এবং শেষ পর্যন্ত ঘটলোও তাই। জাপানের জন্য শেষ পর্যন্ত আমার মনটা বেশ ভারীই হয়ে উঠেছিল। জাপানের জন্য অনেক অনেক শুভ কামনা থাকবে আগামী দিনের জন্য।

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ০৩ রা জুলাই, ২০১৮ দুপুর ১২:১৭

সাহসী সন্তান বলেছেন: লাস্ট লাইনটা সংশোধন করার অনুরোধ রইলো! জাপান গতকাল রাতে বেলজিয়ামের সাথে খেলে ৩-২ গোলে হেরে বিদায় নিয়েছে। সুতরাং ব্রাজিলের আগামী ম্যাচটা হবে বেলজিয়ামের সাথে ০৭ জুলাই...

এখন কোন দল সাপোর্ট করবেন? বেলজিয়াম না ব্রাজিল? ;)

০৩ রা জুলাই, ২০১৮ দুপুর ১২:৪১

সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: আমি আদতেই জেনুইন সাপোর্টার না। আমি হলাম দেশের সাধারণ জনগণ, যারা সরকারের পারফরম্যান্স দেখে ভোটের সময় ভোট দেয় :) সো, যেই দল মাঠে ভেলকি দেখাবে, আমি তার জন্য হাততালি দিব। তবে, হেরে গেলে কেঁদেকুটে বুক ভাসাবো, এক হালি ডিম, সেভেন আপ, ইত্যাদি বলে ট্রল করবো- তা হবে না। খেলার রেশ যতক্ষণ থাকবে, সেটা কেটে গেলে গান শুনবো :)

২| ০৩ রা জুলাই, ২০১৮ দুপুর ১২:১৯

তারেক_মাহমুদ বলেছেন: কাল নেইমার এক কথায় অসাধারণ ছিল ।এভাবে খেলতে পারলে শিরোপা নেইমারের হবে ।

০৩ রা জুলাই, ২০১৮ দুপুর ১২:৪২

সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: একমত।

৩| ০৩ রা জুলাই, ২০১৮ বিকাল ৪:৩৫

রাজীব নুর বলেছেন: ব্রাজিল এবার কাপ পাবে না।

০৩ রা জুলাই, ২০১৮ রাত ৮:৩৩

সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: ব্রাজিল হলো ৫ বারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন। তাদের ফিরে পাওয়া ফর্ম দেখে বোঝা যায় বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্য তারাই দৌড়ে সবচেয়ে এগিয়ে আছে।

আপনার কী মনে হয়, কারা পাবে?

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.