নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব,ইইই প্রকৌশলী। মতিঝিল আইডিয়াল, ঢাকা কলেজ, বুয়েট এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র।টেলিকমিউনিকেশন এক্সপার্ট। Sustainable development activist, writer of technology and infrastructural aspects of socio economy.

এক নিরুদ্দেশ পথিক

সমাজের প্রতিটি ছোট বড় সমস্যার প্রকৃতি নির্ধারণ করা, আমাদের আচার ব্যবহার, সমাজের প্রচলিত কৃষ্টি কালচার, সৃষ্টিশীলতা, চারিত্রিক উদারতা এবং বক্রতা, অপরাধ প্রবৃত্তি, অপরাধ সঙ্ঘঠনের ধাঁচ ইত্যাদির স্থানীয় জ্ঞানের আলোকে সমাজের সমস্যার সমাধান বাতলে দেয়াই অগ্রসর নাগরিকের দায়িত্ব। বাংলাদেশে দুর্নীতি রোধ, প্রাতিষ্ঠানিক শুদ্ধিকরন এবং টেকনোলজির কার্যকরীতার সাথে স্থানীয় অপরাধের জ্ঞান কে সমন্বয় ঘটিয়ে দেশের ছোট বড় সমস্যা সমাধান এর জন্য লিখা লিখি করি। আমার নির্দিষ্ট দৃষ্টিভঙ্গি আছে কিন্তু দলীয় সীমাবদ্ধতা নেই বলেই মনে করি, চোর কে চোর বলার সৎ সাহস আমার আছে বলেই বিশ্বাস করি। রাষ্ট্রের অনৈতিক কাঠামোকে এবং দুর্নীতিবাজদের সবাইকে তীক্ষ্ণ ভাবে চ্যালেঞ্জ করার চেষ্টা করি। রাষ্ট্র কে চ্যালেঞ্জ করতে চাই প্রতিটি অক্ষমতার আর অজ্ঞতার জন্য, তবে আঘাত নয়। ব্যক্তিগত ভাবে নাগরিকের জীবনমান উন্নয়ন কে দেশের ঐক্যের ভিত্তিমূল মনে করি। ডাটাবেইজ এবং টেকনোলজি বেইজড পলিসি দিয়ে সমস্যা সমাধানের প্রোপজাল দেবার চেষ্টা করি। আমি মূলত সাস্টেইন এবল ডেভেলপমেন্ট (টেকসই উন্নয়ন) এর নিরিখে- অবকাঠামো উন্নয়ন এবং ডিজাইন ত্রুটি, কৃষি শিক্ষা খাতে কারিগরি ব্যবস্থাপনা ভিত্তিক সংস্কার, জলবায়ু পরিবর্তন, মাইক্রো ইকনমিক ব্যাপার গুলো, ফিনান্সিয়াল মাইগ্রেশন এইসব ক্রিটিক্যাল ব্যাপার নিয়ে লিখার চেষ্টা করি। মাঝে মাঝে চোরকে চোর বলার জন্য দুর্নিতি নিয়ে লিখি। পেশাঃ প্রকৌশলী, টেকনিক্যাল আর্কিটেক্ট, ভোডাফোন।

এক নিরুদ্দেশ পথিক › বিস্তারিত পোস্টঃ

গ্যাস সম্পদ ব্যবস্থাপনাঃ অতল দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা এবং ভয়ঙ্কর অদুরদর্শিতার সমাধান শুধু উপর্যূপরি দাম বৃদ্ধিতে?

২৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১:৪৭


বাংলাদেশের গ্যাসের দাম বৃদ্ধির ধরণ- ১লা সেপ্টেম্বর ২০১৫ এর আগে ২ চুলার গ্যাসের দাম ছিল ৪৫০, ১লা সেপ্টেম্বর ২০১৫ থেকে তা বাড়িয়ে ৬৫০ টাকা করা হয় যা আবার বাড়িয়ে ১০০০ টাকা করা হচ্ছে, বৃদ্ধির হার ১২২,২২%। এই সময়ে ১ চূলা গ্যাস ৪০০ টাকা থেকে বেড়ে ৮৫০ টাকা হবে, দাম বাড়ার হার ১১২,৫০%।

অন্যান্য গ্যাস খাতের মধ্যে- আবাসিক গ্রাহকদের মধ্যে যাঁরা মিটার ব্যবহার করেন, তাঁদের ক্ষেত্রে বৃদ্ধির হার ৬০ দশমিক ৬৮ শতাংশ। আবাসিক খাতের পরেই গ্যাসের সবচেয়ে বেশি দাম বাড়বে ক্যাপটিভ বিদ্যুৎ (বেসরকারি শিল্পপ্রতিষ্ঠানে ব্যবহারের জন্য মালিকদের নিজস্ব উৎপাদিত) উৎপাদনে। বৃদ্ধির হার ১০২,৯৪%। সিএনজি খাতে গ্যাসের দাম বৃদ্ধির হার ৩৯,১০%। সিএনজির দাম বাড়বে ৩৩%। চা-বাগানে ব্যবহৃত গ্যাসের বৃদ্ধির হার ২০,৫৫%। বিদ্যুৎ উৎপাদনে যে গ্যাস দেওয়া হয় তার বৃদ্ধির হার ৫,২৪%। শিল্পে বৃদ্ধির হার ৩২,৬০%। বাণিজ্যিক গ্রাহকদের ক্ষেত্রে বৃদ্ধির হার ৩০,৫৫%। ​সার উৎপাদনে বৃদ্ধির হার ৯,৭১%।

আন্তর্জাতিক এনার্জি খাতে দামের পরিস্থিতি- বিশ্ববাজারের গ্যাসের ওয়েলহেড দাম প্রতি ঘনফুট ৩,৫ ডলার। গত ৫ বছরে প্রতি ঘনফুট গ্যাসের গড় দাম ৩,৫ ডলারের কিছু নিচে ছিল। বাংলাদেশে গ্যাসের উৎপাদনকারী দেশ এবং আমাদের গ্যাসের দাম তুলনামূলক কম। বলা হয়ে থাকে ৬৫০ টাকার যে দাম তা বিশ্ব আন্তর্জাতিক দামের অর্ধেকের কাছাকাছি।

গত ৫ বছরে প্রতি ঘনফুট গ্যাসের গড় দাম ৩,৫ ডলারের কাছাকাছি ছিল।

তবে এখানে কিছু বড় বড় ফাঁক ফোঁকর ও দুর্নীতির ব্যাপার রয়েছে।
১। ডিস্ট্রিবিউশন এন্ডে চুলাপ্রতি মাসিক ৯২ ইউনিট গ্যাস খরচ দেখিয়ে বিল নেয়া হয় ৬৫০ টাকা। অথচ খরচ হয় ৪২-৪৫ ইউনিট, এই অভিযোগ নিস্পত্তির উদ্যোগ না নেয়ার দুর্বিত্তায়িত কারণ দৃশ্যমান।
২। বেসরকারি শিল্পপ্রতিষ্ঠানে (মূলত গার্মেন্টস সেক্টর) ব্যবহারের জন্য মালিকদের নিজস্ব উৎপাদিত ক্যাপটিভ বিদ্যুৎ এর গ্যাস জেনারেটর গুলোতে যে গ্যাস পাইপলাইনের যে সংযোগ রয়েছে তার প্রায় শত ভাগ গ্যাস ভিত্তিক বিদ্যুৎ প্ল্যান্ট গ্যাস চুরি এবং মিটার টেম্পারিং এর সাথে জড়িত। দুর্নীতির পরিসর চলমান রাখতে ইন্ডাস্ট্রিয়াল লাইন গুলোকে প্রিপেইড করার বিবেচনা কখনই আমলে নেয়া হয় নি।

৩।উপরুন্তু বিদ্যুৎ এবং সার উতপাদনে ব্যবহৃত পুরানো এবং নিন্ম ইফেসিয়েন্সির গ্যাস জেনারেটরে প্রায় ৭৫% গ্যাস লস হচ্ছে। অর্থত অতি অধিক পরিমান গ্যাস পুড়ে সামান্য বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে মেশিনারির অতি নিন্ম ইফেসিয়েন্সির কারনে।
৪।অদক্ষ ও নিম্নমানের যন্ত্রপাতির কারনে দৈনিক সরবরাহ করা গ্যাসের ১৬ শতাংশ অপচয় হচ্ছে। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) প্রণীত ‘এনার্জি সিকিউরিটি’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। সম্প্রতি এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদন জ্বালানি সম্পদ বিভাগে জমা দেয় এডিবি। এতে বলা হয়, সারা দেশে প্রতিদিন গড়ে গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে দুই হাজার ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট। এর মধ্যে প্রায় ৪০০ মিলিয়ন ঘনফুট অপচয় হচ্ছে। এক্ষেত্রে বিদ্যুৎকেন্দ্র, সার কারখানা ও শিল্পপ্রতিষ্ঠানে অপচয়ের হার বেশি। এছাড়া আবাসিকেও প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ গ্যাসের অপচয় হচ্ছে। অপচয় বন্ধ করা গেলে এ গ্যাস দ্বারা তিন হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাবে।


৫। পেট্রোবাংলার বিরুদ্ধে আইওসির গ্যাস ক্রয়ে দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। দুদকের অনুসন্ধান ও তদন্ত কমিটির ২৮.১.২০১৫ তারিখের এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, ব্যয় উসুল, কম্প্রেসর স্থাপন ও পরিচালনা, গ্যাসের দাম পরিশোধে ডিসকাউন্ট সুবিধা না নেয়া এবং যন্ত্রপাতি আমদানি— এসব ব্যাপারে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে পেট্রোবাংলা অভিযুক্ত। প্রতিবেদনে আইএমইডির সূত্রে তিতাস গ্যাস সঞ্চালন ও বিতরণ কোম্পানির বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে এবং বলা হয়েছে, ত্রুটিপূর্ণ মিটার ও মিটার টেম্পারিং, গ্যাস অপচয় এবং অবৈধ সংযোগের কারণে প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে। গণশুনানিতে অভিযোগ করা হয়েছে, চুলাপ্রতি মাসিক ৯২ ইউনিট গ্যাস খরচ দেখিয়ে বিল নেয়া হয় ৬৫০ টাকা। অথচ খরচ হয় ৪২-৪৫ ইউনিট। এ অভিযোগ নিষ্পত্তির উদ্যোগ নেই। চুলায় গ্যাস নিরবচ্ছিন্নভাবে না পাওয়া এবং পেলেও কাঙ্ক্ষিত চাপে না পাওয়ায় ভোগান্তি ও বিপর্যয়ে মধ্যে আছে নগরবাসী। গ্যাসের অপ্রতুল সরবরাহ ও স্বল্প চাপ শিল্প খাতকে চরম সংকটে রেখেছে। ফলে শিল্প খাত জ্বালানি সংকট ও উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধির শিকার। এ অবস্থার প্রতিকার ছাড়াই শিল্পেও গ্যাসের দাম বৃদ্ধি হচ্ছে।

অর্থাৎ অদক্ষতা, মেয়াদ উত্তীর্ণ নিন্ম ইফেসিয়েন্সির বিদেশী গ্যাস জেনারেটরের বোঝা এবং সংশ্লিষ্টদের সর্বগ্রাসী দুর্নীতিকে (মিটার টেম্পারিং এবং ঘুষ) স্পেইস দিতে সবধরনের গ্যাস ডিপেন্ডেন্ট সেক্টরে গ্যাসের মূল্য প্রায় দ্বিগুন করার কথা বলা হচ্ছে, অথচ কমার্সিয়াল সেক্টরের গ্যাস চুরি, প্রি পেইড মিটারিং, সঞ্চালন এবং উৎপাদন ইফেসিয়েন্সি আনার কোন আলোচনা নেই।

গ্যাস উৎপাদনকারী দেশগুলো নিজস্ব ব্যবহারের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক দামের চেয়ে অনেক কম দামে গ্যাসের প্রাইসিং করে থাকে। এই প্রাইসিং এর কয়েকটি মডেল রয়েছে যার প্রধান ফোকাস হচ্ছে গ্যাসের দাম তেলের দামের সাথে সামঞ্জস্য রেখে করা যাতে গ্যাস অতিমাত্রায় প্রাইমারি ফুয়েল হিসেবে আবির্ভুত হয়ে জ্বালানি নিরাপত্তায় সংকট বয়ে না আনে।

বাংলাদেশ তেলের দাম আন্তর্জাতিক বাজারের সাথে সমন্বয় করে ফ্লটিং করছে না-
১। তেল খাতকে সরকার তার রাজস্ব আয়ের খাত হিসেবে বেছে নিয়েছে (এখন গ্যাসকেও রাজস্ব খাতে আনতে চায়!)।
২। তেলের পুরো বাজারে বিপিসি’র মনোপলি আছে এতে দুর্নিতিও কমছে না। বিপিসি’দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যবস্থাপনার মনোপলি তেলের আমদানি, সঞ্চালন এবং ডিস্ট্রিবিউশনে খরচ বেশি দেখিয়ে অবারিত চুরি এবং দুর্নিতির সুযোগ করে দিয়েছে এতে সরকারের যা রাজস্ব আসা উচিত ছিল তা অনেক কম আসছে, অন্যদিকে শুল্ক ছাড়াই তেলের দামও বেশি পড়ছে। ২০১৬ তে আন্তর্জাতিক বাজারে ব্যারেল প্রতি যখন অপরিশোধিত তেল ৩৫ ডলার ছিল, তখন বিপিসি তা ৬৭ ডলার করে কিনেছে।

৩। তেলের দাম বেশি হবার কারনে সরকারি বিদ্যুতের দাম বেশি, বেসরকারি কোম্পানিরা গ্যাস ভিত্তিক ক্যাপ্টিভ জেনারেশনকে প্রাধান্য দিয়েছে, অন্যদিকে তারা গ্যাস চুরিও করতে পারছে, আবার সেসব গ্যাস জেনারেটর এর মেশিনারি শুল্ক মুক্ত, নিন্ম মানের ইফেসিয়েন্সির গ্যাস জেনারেটরে দেশ ভরে গেসে, ফলে বেশি গ্যাস পুড়িয়ে কম বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। অন্যদিকে আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী, প্রতি টন ইউরিয়া সার উৎপাদনে গ্যাসের প্রয়োজন হয় ২৫ হাজার ঘনফুট। অথচ বাংলাদেশে একই পরিমাণ সার উৎপাদনে গ্যাস ব্যবহার হচ্ছে গড়ে ৪৪ হাজার ঘনফুট। অদক্ষতায় ৭৬% বেশি গ্যাস ব্যবহার হচ্ছে

৪। তেলের দাম বেশি হবার কারনে সিএঞ্জির উপর চাপ পড়েছে।
৫। বিদ্যুতের ইন্ডাস্ট্রিয়াল সরবারোহ নিয়মিত না হবার কারনে এবং গ্যস চুরির সুযোগ থাকায় বেসরকারি খাতে নিজস্ব গ্যাস জেনারটের (অতি নিন্ম ইফেসিয়েন্সির) প্রভাব বেশি।

পেট্রল এবং অকটেনের দাম কমানো উচিত। এতে সিএনজির ওপর থেকে চাপ কমবে এবং গাড়ির মালিকরা তেলেই গাড়ি চালাবে। বিপিসির মনোপলি ভেঙে ফার্নেস অয়েলের মার্কেট স্বচ্চ মনিটরিং এর মধ্যমে বেসরকারি খাতে ওপেন করে দিলে দাম অর্ধেকে নামতে বাধ্য, এতে বিদ্যুতের দাম ব্যাপক কমবে, গ্যাসের উপর চাপ কমে আসবে। পুরো শিল্প উৎপাদনে বেগ আসবে এবং পণ্য থেক সরকারের ভ্যাট আসবে। সামগ্রিক ভাবে জনগণের ওপর থেকে চাপ কমে আসবে।

উল্লেখ্য, ২৪/৭ নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবারোহের নিশ্চয়তা দিলে বেসরকারি ক্যাপ্টিভ খাতে কেন ছোট ছোট (সার্ভিস মেয়াদ উত্তীর্ণ পুরানো বিদেশী জেনারেটর যা খুবই নিন্ম ইফেসিয়েন্সির) গ্যাস জেনারেটর লাগবে, এই ফয়সালা দরকার। সরকার বিদ্যুতের জন্য প্রি পেইড কমার্শিয়াল বিতরনের অবকাঠামো নিয়ে সমীক্ষা করেছে কি? ১২০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের উৎপাদন সক্ষমতার বিপরীতে মাত্র ৮০০০ মেগাওয়াট বিতরণ সক্ষমতা কেন? গত এক দশকে উৎপাদন ৩ থেকে ৩.৫ গুণ করা হলেও সঞ্চালন এবং বিতরণ অবকাঠামো কেন মাত্র ২০% বাড়িয়ে উৎপাদন সক্ষম প্ল্যান্ট বসিয়ে রেখে (কুইক রেন্টালের প্ল্যান্টে) এখনো ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে হচ্ছে? এই সমন্বয়হীন পরিকল্পনার উত্তরণ কিভাবে হবে, বিদ্যুতের সঞ্চালন এবং বিতরণকে ইন্ডাস্ট্রিয়াল মডেলে রূপান্তর করে বেসরকারি গ্যাস প্ল্যান্ট নিরুৎসাহিত করার পরিকল্পনা আর কত দেরিতে হবে?

অর্থাৎ আমাদেরকে গ্যাসকে প্রায় একমাত্র প্রাইমারি জ্বালানির হিসেবে সরানোর পথে যে অন্তরায় গুলো আছে তা সরাতে হবে, গ্যাসের অপচয় নির্ভর আন-ইফেশিয়েন্ট ব্যবহারের যে দুঃখজনক মডেল তা সংস্কার করতে হবে। গ্যাস এবং বিদ্যুতের জন্য পৃথক কমার্শিয়াল ডিস্ট্রিবিউশন লাইন করতে হবে এবং কমার্শিয়াল লাইন প্রিপেইড করতে হবে। বর্তমান সঞ্চালন লাইনকেই রি-ডিজাইন করে এবং এতে কমার্শিয়াল এলাকা-ইপিজেড-এবং বড় বড় ইন্ডিস্ট্রিয়াল প্ল্যান্ট গুলো কালেক্টেড রেখে এই কমার্শিয়াল সঞ্চালন তৈরি করা যায়।এসব না করে শুধু বাছবিচারহীন গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি সরকারের সাময়িক আয় বৃদ্ধি ছাড়া কার্যত কোন টেকসই সমাধান দিবে না।


বাংলাদেশে গ্যাসের সম্পদ মূল্য শূন্য? বলা হয়ে থাকে আমাদের গ্যাসের দাম নির্ধারণের ক্ষেত্রে নিজস্ব গ্যাসের সম্পদ মূল্য শূন্য ধরে নির্ধারণ করছি। উদাহরণ স্বরূপ রান্নার গ্যাসে বর্তমানে ২ চুলার বিপরীতে যে ৬৫০ টাকা নেয়া হচ্ছে এটা কিসের দাম? প্লেইন এনালাইসে দেখা যাচ্ছে শুধু সঞ্চালন, বিতরণ এবং ব্যবস্থাপনা খরচ? কেন এই খরচ এত বেশি হবে?

বর্তমানে বাংলাদেশ ও ভারতে সিলিন্ডারপ্রতি এলপিজির নির্ধারিত মূল্য ও তার বিভাজনের একটি তুলনামূলক পর্যালোচনা
৪০ কিলোমিটারের মধ্যে বাংলাদেশে ভোক্তাপর্যায়ে এলপিজির সিলিন্ডারপ্রতি নির্ধারিত মূল্য ৭০০ টাকা। উল্লেখ্য, বাংলাদেশের বাজারে প্রতি সিলিন্ডারে এলপিজি পাওয়া যায় ১২ কেজি। ভারতে ১৪,২ কেজি। ফলে ভারতের এলপিজি সিলিন্ডারের মূল্যহারকে বাংলাদেশের সমতুল্য মূল্যহারে পরিবর্তন করার ক্ষেত্রে এলপিজির পরিমাণ ধরা হয়েছে ১২ কেজি।
ভারতে এলপিজি ভ্যাট মুক্ত। অর্থাত্ ভারত এলপিজি খাতকে রাজস্বের উত্স হিসেবে গণ্য করে না। বাংলাদেশী মুদ্রায় ভারতের বাজারে বিপণনকৃত প্রতি সিলিন্ডার এলপিজির মূল্য ৪৮৩ দশমিক ৫০ টাকা। এ মূল্য নির্ধারণে ১২ কেজি এলপিজির এক্স-রিফাইনারি মূল্য ধরা হয়েছে। অন্যান্য ব্যয়ের হিসাব ১২ কেজি ধরা হলে সিলিন্ডারপ্রতি এলপিজির মূল্য ৪৮৩ দশমিক ৫০ টাকার চেয়ে কম হতো।

ক্যাব আবেদনে বলেছে, ‘এলপিজি’র বাজার এখন অসাধু ব্যবসাকবলিত। এ বাজার রাষ্ট্র বা বাজার কেউই নিয়ন্ত্রণ করে না, নিয়ন্ত্রিত হয় ব্যবসায়ীদের দ্বারা। ভোক্তাস্বার্থ ও জ্বালানি নিরাপত্তা রক্ষার্থে এলপিজির দাম ৭০০ থেকে কমিয়ে ৪৫০ টাকা পুনর্নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে।। সে প্রস্তাবমতে, ‘এলপিজির দাম পুনর্নির্ধারণের মাধ্যমে বাজার বিইআরসির নিয়ন্ত্রণাধীন এনে এলপিজিকে অসাধু ব্যবসামুক্ত করা ভোক্তা অধিকার সুরক্ষায় জরুরি।’

কিভাবে আন্তর্জাতিক পরিসরে গ্রাহক পর্যায়ে কিভাবে দাম নির্ধারিত হয়? উদাহরণ- নেদারল্যান্ডস। ৩৫.৬% সম্পদ মূল্য/উতপাদন খরচ, ১৮.৮% উতপাদন-সঞ্চালন-নেটোয়ার্ক ম্যেনেজমেন্ট কষ্ট এবং বাকি ৪৫,৬% ট্যাক্স এবং ভ্যাট।

সমুদয় গ্যাস বিক্রির অর্থ থেকে সরকার শুল্ক-ভ্যাট পায় ৫৫ শতাংশ। আবার গ্যাসের সম্পদমূল্য ধরে দাম বাড়ানোর অর্থ থেকেও শুল্ক-ভ্যাট পায় ৫৫ শতাংশ। দাম বৃদ্ধিজনিত অর্থ থেকে সরকার পাবে ৮১,১ শতাংশ (শুল্ক-ভ্যাট ৫৫%, লভ্যাংশ ২%, করপোরেট কর ৩%, সম্পদমূল্য মার্জিন ১৫,৯৬% এবং জিডিএফ মার্জিন ৫,১৮%)। বাদবাকি ১৯,৯% থেকে যাবে আইওসি গ্যাস ক্রয় মার্জিন ৩% বৃদ্ধিতে (বিদ্যমান ১৪ শতাংশ)। মাত্র ৫% যেতে পারে উৎপাদন, সঞ্চালন ও বিতরণ কোম্পানিগুলোর মার্জিন বৃদ্ধিতে। উদ্বৃত্তাংশ সম্পদমূল্য মার্জিনে সমন্বয় হয়ে সম্পদমূল্য হিসেবে থেকে যাবে সরকারেরই হাতে। প্রস্তাবিত দাম বৃদ্ধিজনিত অর্থের এমন বিভাজন গণশুনানিতে অনৈতিক ও অন্যায্য বলে অভিহিত হয়েছে।

ভ্যাট, লভ্যাংশ, কর, সম্পদ মূল্য এবং অন্যান্য মার্জিন নির্ভর গ্যাস এর দাম নির্ধারনের এই বাংলাদেশী মডেল বড়ই অদ্ভুত, আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক বিবেচনায় এটা বড়ই অন্যায্য, এ থেকে বুঝা যাচ্ছে সরকার এনার্জি খাত থেকে আয় বাড়ানোর জন্য যাবতীয় শিল্প বিকাশ এবং উৎপাদন বিরোধী আয়োজন (পড়ুন এনার্কি) করে রেখেছে।

গ্যাসের প্রাইসিং মডেল উৎপাদনকারী এবং আমদানীকারি দেশে ভিন্ন। বাংলাদেশ উৎপাদনকারী মডেল থেকে আমদানীকারি মডেলে ঢুকতে চাচ্ছে, এতে কোন সমস্যা দেখছি না, এটা দরকারও! তবে শিল্পের মেরুদণ্ড এনার্জি খাত থেকেই সরকারের রাজস্ব তোলার ভয়ঙ্কর অদুরদর্শী পরিকল্পনা, তেলের বাজার ব্যবস্থাপনা প্রক্রিয়ায় দুর্নীতি, গ্যাসকে একমাত্র প্রাইমারি জ্বালানীতে আটকে রাখার ব্যবস্থাপনা এবং এল পি জি গ্যাসের আসাধু ব্যাবসায়ী চক্রের মাফিয়া গিরি আড়ালে রেখে এই রূপান্তর প্রক্রিয়া শুরু করলে তার সুফল সরকার এবং নাগরিক কেউই পাবে না। এতে দেশি বিদেশি আসাধু ব্যবসায়ীরাই শুধু লাভবান হবে। সরকারের সাময়িক রাজস্ব স্ফীতির আড়ালে লুকিয়ে আছে ভয়ঙ্কর জ্বালানী বিপর্জয়ের দায়!

দেশে এ পর্যন্ত আবিষ্কৃত ২৬টি গ্যাসক্ষেত্রে গ্যাসের মজুত নিরূপণ করা হয় ২৭,১২ ট্রিলিয়ন ঘনফুট। এর মধ্যে ১৩ দশমিক ৬৩ ট্রিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসই ব্যবহার হয়ে গেছে। অবশিষ্ট আছে ১৩,৪৯ ট্রিলিয়ন ঘনফুট। গত কয়েক বছরে দেশে নতুন গ্যাসক্ষেত্রের সন্ধান মেলেনি, নতুন উৎপাদনও শুরু হয়নি। মিয়ানমার ও ভারতের সঙ্গে সমুদ্রসীমা-সংক্রান্ত বিরোধ নিষ্পত্তির পর সাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছিল তবে এখন পর্যন্ত তা কাজে লাগানো যায়নি পছন্দের কোম্পানিকে কাজ পাইয়ে দিবার অস্বচ্চতায়। গ্যাসের ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে তাই পুরনো ক্ষেত্র থেকেই উৎপাদন বাড়ানোর চেষ্টা চলছে যা গ্যাস ক্ষেত্র গুলকে অকার্জকর করে তুলবে বলে ধারনা করা হচ্ছে। ​এখন পর্যন্ত যে গ্যাসক্ষেত্রগুলো আবিষ্কৃত হয়েছে, তার মধ্যে ২৪টিই স্থলভাগে। বাকি দুটি অফশোরে। বর্তমানে উৎপাদনে আছে ২০টি গ্যাসক্ষেত্র, যার সবই স্থলভাগে। অফশোরে গ্যাস উত্তোলনে আমাদের ব্যর্থতা নিদারুণ।

নাগরিক কম্ফোর্টের দিক থেকে সাপ্লাই গ্যাস ভালো হলেও অত্যধিক ঘনবসতি পূর্ণ ঢাকা এবং চট্রগ্রামের মত শহরে শিরা উপশিরার মত বিস্তৃত ভূগর্ভস্ত গ্যাস লাইন ভূমিকম্প, ভূমি ও ভবন ধ্বস এবং ভূগর্ভস্ত বিদ্যুৎ সঞ্চালনের অনুকূল নয়। অন্যদিকে রান্নায় সিলিন্ডার এর ডিস্ট্রিবিউশন ভয়ঙ্কর জ্যামের নাগরীতে ট্রাফিক বাড়াবে। তাই এই দুয়ের মধ্যে একটা ট্রেড অফ থাকা চাই। মিটার হীন চূলার পদ্ধতিও টেকসই নয়, এই পদ্ধতি রেখে দাম বাড়ালে তা আদলে গ্যাসের অপচয়কেই উৎসাহিত করবে।

ইন্ডাস্ট্রিয়াল জোন (ইপিজেড, এস ইপিজেড, বিসিক, বেসরকারি শিল্প পার্কে) এবং বিশেষ করে সার ও সিমেন্ট কারখানার জন্য শুধু মাত্র প্রিপেইড ফ্যাসিলিটি সম্পন্ন কমার্শিয়াল গ্যাস পাইপ লাইন ডিজাইন করা যায় কিনা সেটা ভাবতে হবে। কেননা আন্তর্জাতিক দামে এল্পিজি কিনে এনে তা পুনঃ প্রসেস করে বর্তমানের গ্যাস লাইনে সরবারোহ করলে সেটা চুরিতে এবং সিস্টেম লসে যাবে, জ্বালানী ব্যবস্থাপনার ইফেসিয়েন্সি এবং দামের দিক থেকে এটা টেকসই নয়।


বাংলাদেশ এখনো পর্যন্ত কোন আন্তর্জাতিক গ্যাস পাইপ লাইনে যুক্ত হবার কৌশলী পরিকল্পনা নেয়নি। ভারতকে জল, স্থল এবং আকাশে বিভিন্ন সড়ক-রেল-নৌ-টেলি এবং ইন্টারনেট (এমনকি সমুদ্র বন্দরও) ট্রানজিট দিয়ে দিলেও তার বিপরীতে সীমান্তের পাশ দিয়ে যাওয়া ভারত-মিয়ানমার গ্যাস পাইপ লাইনে যুক্ত হবার কোন দুরদর্শী পরিকল্পনাই নেয়নি।

অন্যদিকে তেলের দাম পতন এবং এল এন জি বাজার সহনীয় থাকার সময়ে এল এন জি টার্মিনাল না থাকা, পরিকল্পনা এবং বাস্তবায়নে গড়িমসি ধীরগতির কারনে শক্তিশালী উৎপাদনকারী দেশের সাথে বৃহৎ চুক্তিতেও যেতে পারছে না। ফলে আন্তর্জাতিক বাজারের কম দামের সুবিধা অবকাঠামোর অভাবে নিতে পারছে না। বন্দর এবং এল এন জি টার্মিনাল সুবিধা এবং ইন্ডাস্ট্রি সহায়ক সঞ্চালন এবং মিটারিং মডেল তৈরিতে আরো ৫-৭ বছর কালক্ষেপণ হয়ে গেলে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিক বাজারের এল এন জি ভিত্তিক গ্যাস জ্বালানীর সুবিধা একেবারেই নিতে পারবে না। কেননা এই সময়ে বিশ্বের দেশ সুমূহের উপর কয়লা ভিত্তিক প্ল্যান্ট থেকে সরে আসার পরিবেশবাদী চাপ বাড়বে, উন্নত দেশ সমূহ নিজেরাই কয়লা থেকে সরে এসে বিকল্প নন নিউক্লিয়ার জ্বালানীর জন্য এমনিতেই টাইট কূটনৈতিক তৎপরতা আরো বাড়াবে এবং বিশুদ্ধতম ফসিল ফুয়েল সিকিউর করতে বদ্ধ পরিকর হবে। এখানে বাংলাদেশের মত দুর্বল জ্বালিনী কূটনীতির দেশগুলো ব্যাপক ভাবে পিছিয়ে পড়বে। সেক্ষেত্রে বিকল্প প্রাইমারি জ্বালানির সন্ধান বাংলাদেশের জন্য খুবই কস্টার্জিত (আর্থিক এবং পরিবেশ বিবেচনায়) হয়ে উঠবে। তাই সময়ে ফুরিয়ে যাবার আগেই বোধোদয় হওয়া দরকার বাংলাদেশের রাজনৈতিক নেতৃত্বের!

এনার্জি পরিকল্পনায় সঠিক বোধ আসুক সংশ্লিষ্টদের,
বাংলাদেশের জ্বালানী নিরাপত্তা নিঃশঙ্ক হোক!

বাংলাদেশ এগিয়ে যাক!

মন্তব্য ২৩ টি রেটিং +৭/-০

মন্তব্য (২৩) মন্তব্য লিখুন

১| ২৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:১৯

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: বাংলাদেশের জ্বালানী নিরাপত্তা খুবই নড়বড়ে। সেদিন খুব বেশি দূরে নয়, যেদিন জ্বালানীর দুস্প্রাপ্যতার কারণে এ দেশ অর্থনৈতিক ভাবে পিছিয়ে পড়বে। তেল সম্পদে সমৃদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও দুর্নীতির কারণে নাইজেরিয়ার ভঙ্গুর অর্থনীতির কথা স্মরণ করা যেতে পারে।

ধন্যবাদ।

৩০ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ ভোর ৬:১২

এক নিরুদ্দেশ পথিক বলেছেন: নাইজেরিয়া একটা চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখানো উদাহরণ। বিশ্বের ৫ম বৃহত্তম মজুদ, ৬ষ্ঠ বৃহত্তম তেল উৎপাদন কারি দেশে ৬০-৭০% সময় বিদ্যুৎ থাকে না। নাই নিজস্ব রিফাইনারি (ছিল, সেগুলো অকেজো করে ফেলা হয়েছে), নেই পাইপলাইন (ছিল, সেগুলো তেল চুরির টুলস মাত্র)। আছে শুধু চুরি এবং ভয়ঙ্কর দুর্নিতি।

এর মধ্যে আন্তর্জাতিক বাজারের দরপতন, তাদের অতি তেল নির্ভর অর্থনীতির ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা।

২| ২৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ৮:৪৪

জেন রসি বলেছেন: খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয় নিয়ে চমৎকার পোস্ট।

গ্যাসের প্রাইসিং মডেল উৎপাদনকারী এবং আমদানীকারি দেশে ভিন্ন। বাংলাদেশ উৎপাদনকারী মডেল থেকে আমদানীকারি মডেলে ঢুকতে চাচ্ছে, এতে কোন সমস্যা দেখছি না, এটা দরকারও! তবে শিল্পের মেরুদণ্ড এনার্জি খাত থেকেই সরকারের রাজস্ব তোলার ভয়ঙ্কর অদুরদর্শী পরিকল্পনা, তেলের বাজার ব্যবস্থাপনা প্রক্রিয়ায় দুর্নীতি, গ্যাসকে একমাত্র প্রাইমারি জ্বালানীতে আটকে রাখার ব্যবস্থাপনা এবং এল পি জি গ্যাসের আসাধু ব্যাবসায়ী চক্রের মাফিয়া গিরি আড়ালে রেখে এই রূপান্তর প্রক্রিয়া শুরু করলে তার সুফল সরকার এবং নাগরিক কেউই পাবে না। এতে দেশি বিদেশি আসাধু ব্যবসায়ীরাই শুধু লাভবান হবে। সরকারের সাময়িক রাজস্ব স্ফীতির আড়ালে লুকিয়ে আছে ভয়ঙ্কর জ্বালানী বিপর্জয়ের দায়!

এখানে বলেছেন উৎপাদনকারী মডেল থেকে আমদানিকারি মডেলে ঢুকা দরকার। কেন?

৩০ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ১১:৩২

এক নিরুদ্দেশ পথিক বলেছেন: গ্যাসের প্রাইসিং মডেল

আন্তর্জাতিক পরিসরে ৩টি প্রধান প্রাইসিং মডেল অনুসারিত হয় রাশান-ইউরোপিয়ান, নর্থ আমেরিকান এবং জাপানিজ। এই আলোচনায় না গিয়ে এখানে ব্যাকগ্রাউন্ড হিসেবে প্রথমে উৎপাদনকারী মডেল নিয়ে একটু আলোচনা করি।

ক। গ্যাস উৎপাদনকারী অধিকাংশ দেশ তাদের নিজ নাগরিককে প্রাকৃতিক সম্পদের সুফল দিতে সম্পদ মূল্য শূন্য ধরে শুধুমাত্র উৎপাদন মূল্য ( নিজস্ব উৎপাদন বা বিদেশি কোম্পানি থেকে ক্রয় বা এই উভয়ের গড়), ট্রান্সমিশন এবং ডিস্ট্রিবিউশন খরচ (সংশ্লিষ্ট অবকাঠামো এবং অবকাঠামো ব্যবস্থাপনা ব্যয়) ধরে প্রতি ঘনফুট গ্যাসের দাম নির্ধারন করে থাকে।

উদাহরণ স্বরূপ, এখন রান্নার গ্যাসে যে মাসিক ৯২ ইউনিট গ্যাস খরচ দেখিয়ে ২ চুলার বিল নেয়া হয় ৬৫০ টাকা (অভিযোগ আছে এটা ৪২-৪৫ ইউনিটের মধ্যে, বাকিটা চুরির স্পেইস), এটা গ্যাসের সম্পদ মূল্য শূন্য ধরে। নতুন প্রস্তাবনায় এটাকে বাড়িয়ে ১০০০ করা হবে, সেখানে সম্পদ মূল্য ধরা হবে প্রথম বারের মত।

কথা হচ্চে প্রতি ঘনফুট গ্যাসের সম্পদ মূল্যকে শূন্য ধরে শুধু উৎপাদন, সঞ্চালন এবং বিতরনের খরচ ৬৫০ টাকার যৌক্তিকতা আছে কিনা? উত্তরঃ নেই। কারন দুর্নিতী এবং চুরির কারনে বাস্তবতার চাইতে এই দামই দ্বিগুন বেশি। এই দাম আমাদের উৎপাদনকারী মডেল। সুতরাং বুঝাই যাচ্ছে বিতরণের চুরি না ঠেকিয়ে উৎপাদনকারী থেকে আমদানী কারি মডেলে ট্রান্সফর্ম করলে সেটা টেকসই হবে না, গ্যাসের দাম আরো বাড়বে বা বাড়াতে হবে বা ভর্তুকি দিতে হবে, আদতে এতে বিদ্যুৎ এবং পণ্যের দাম বাড়বে।

খ। কিছু কিছু উৎপাদনকারী দেশ প্রাইমারি জ্বালানীর সোর্স হিসেবে গ্যাসের উপর অতি ডিপেন্ডেন্ট হয়ে যাওয়া থেকে নিজেদের রক্ষা করতে জ্বালানী তেলের দামের সাথে ভারসাম্য রেখে গ্যাসের প্রাইসিং করে থাকে। তবে সে ক্ষেত্রে জ্বালানির তেলের দাম ফ্লটিং থাকে আন্তর্জাতিক দামের অনুকূলে। এটা টেকসই।

(বাংলাদেশে সরকার বিপিসির মোনোপলির উপর দাঁড়িয়ে তলের দাম ঠিক করে। বিপিসির আমদানি এবং রিফাইনারি দুর্নিতি, ক্রয়-সঞ্চালন-পরিবহণ এবং বিতরনে বহুস্তরের তেলচূরির কারনে এই দামের বেইজ লাইন অন্তর্জাতিক বাজারের রিফাইন্ড ওয়েলের দামের চাইতে ঢের বেশি। তার উপর সরকারের রাজস্ব উৎস হয়ে উঠার কারনে তেলের দাম আরো বেশি হয়।

মোটকথা দুর্নিতির কারনে বেইজলাইন দাম বেশি হওয়া এবং তেল দেশের রাজস্ব আয়ের উৎস হয়ে যাবার কারনে আন্তর্জাতিক বাজারের তেলের ফ্লটিং রেট এখানে নেই, অন্যদিকে ট্রান্সপোর্টেশং এবং ডিস্ট্রিবিউশন এন্ডে ব্যাপক চুরির কারনে গ্যাস এবং তেলের উভয়েরই বেইজলাইন প্রাইস বেশি।)


কেন আমাদের উৎপাদনকারী মডেল থেকে আমদানিকারী মডেলে যেতে হবেঃ

১। বিদেশ থেকে এল এন জি ক্রয়, পরিবহন, রি প্রসেসিং খরচ (লিকুইড থেকে আবার গ্যাসে রূপান্তর করে পাইপলাইনে সরবারহ), ট্রান্সমিশন এবং ডিস্ট্রিউবিউশন লাইন বসানো-সেটা মেইন্টেনেন্স, ব্যবস্থাপনা ইত্যাদির সমূদয় খরচ হিসেবে আনলে দেখা যাবে ৩.৫ ডলারের আন্তর্জাতিক বাজারের গ্যাস নূন্যতম ১০ ডলার করে অভ্যন্তরীণ বাজারে বিক্রি করতে হবে। এর উপর সরকার রাজস্ব তৈরি করতে চাইলে এটা ১২- থেকে ১৫ ডলারে গিয়ে ঠেকতে পারে। তবে গুরুত্ব পুর্ণ বিষয় হচ্ছে আমাদের শিল্প এই দামে গ্যাস কিনতে পুরোপুরি অক্ষম, সুতরাং বহু স্তরের দুর্নিতি এবং চুরি থামায়ে তেল এবং গ্যাসের বেইজলাইন প্রাইস না কমালে উৎপাদনকারী মডেল থেকে আমদানিকারী মডেলে যাওয়া দুরূহ হয়ে পড়বে। গেলে রাষ্ট্রকে দুর্বিত্ত নেতা কাম ব্যবসায়ীদের অনুকূলে কুইক রেন্টালের মত শর্ট কাট বাজেটারি পকেট কেটে নগদ ভর্তুকি গুন্তে হবে যেটা বিদ্যুতের বেলায় আমরা দেখেছি বছর ভেদে ৫ থেকে ১৭ হাজার কোটি টাকা পর্যন্ত।

মৌলিক প্রশ্ন হচ্ছে, যেখানে গার্মেন্টস এর প্রায় সবাই নিজস্ব ক্যাপ্টিভ গ্যাস জেনারেটরে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে গিয়ে ভয়াবহ আকারে গ্যাস চুরি করছে, রাস্তার জ্যামে গ্যাস পুড়ছে, রান্নার গ্যাসে অপচয় হচ্ছে সেখানে আমরা আন্তর্জাতিক বাজার থেকে গ্যাস কিনে চুরির কেন্দ্রিক পাইপ লাইনে সরবারোহ করার মত আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নিব কিনা?


বিজিএমই'র সবুজাভ কাচের দালানে ভদ্র বেশে যারা আছেন তাদের চুরি, গ্যাস সেক্টরের দুর্নিতি গ্রস্ত প্রশাসন, বিদ্যুৎ ও সার উতপাদনে ব্যবহৃত নিন্ম মানের গ্যাস জেনারেটর ( যার জন্য প্রায় ৪০০ মিলিয়ন ঘনফুট অপচয় হচ্ছে দিনে) এই মডেলে যাবার বড় বাঁধা। এজন্যই বলেছি, এই সমস্যা গুলোর সমাধান করে তবেই আমদানীকারি মডেলে যাওয়া দরকার এবং দ্রুতই।

এখন সম্পূরক প্রশ্ন হোল, বিদেশ থেকে ক্রয় করতে হবে কেন?
​​গ্যাসের অর্ধেক মজুত শেষ। ​দেশে এ পর্যন্ত আবিষ্কৃত ২৬টি গ্যাসক্ষেত্রে গ্যাসের মজুত নিরূপণ করা হয় ২৭ দশমিক ১২ ট্রিলিয়ন ঘনফুট। এর মধ্যে ১৩ দশমিক ৬৩ ট্রিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসই ব্যবহার হয়ে গেছে। অবশিষ্ট আছে ১৩ দশমিক ৪৯ ট্রিলিয়ন ঘনফুট। বর্তমান সরবারোহ এবং চাহিদার অনুপাত প্রায় ৪ঃ৫। ​২০১৬ এর মাঝমাঝিতে পেট্রোবাংলার তথ্যমতে, দেশে গ্যাসের চাহিদা দৈনিক ২ হাজার ৯৫০ মিলিয়ন ঘনফুট। এর বিপরীতে উৎপাদন হচ্ছে দৈনিক ২ হাজার ৩৫০ মিলিয়ন ঘনফুট। এ হিসাবে গ্যাসের ঘাটতি থাকছে দৈনিক ৬০০ মিলিয়ন ঘনফুট। এই হিসেবের সাথে গ্রোথ যগ করলে দেখা যায়, ২০২৫-২৭ এর পরে গ্যাসের প্রাপ্তি মার্জিনাল হয়ে উঠবে। উপরন্তু ​কূপ থেকে সক্ষমতার অতিরিক্ত গ্যাস উত্তোলন করায় ভূ-অভ্যন্তরে গ্যাসস্তর ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। গ্যাস উত্তোলনের স্বাভাবিক প্রবাহ এতে নষ্ট হয়। ফলে কমে যায় গ্যাসক্ষেত্রের উৎপাদন মেয়াদ। নির্ধারিত সময়ের আগেই ক্ষেত্রটি পরিত্যক্ত হওয়ার আশঙ্কাও থাকে। বাড়তি উৎপাদনের কারণে গ্যাসক্ষেত্র পরিত্যক্ত হওয়ার উদাহরণ সমুদ্রবক্ষের একমাত্র উৎপাদনকারী ক্ষেত্র সাঙ্গু।

সুতরাং বিদেশ থেকে এল এন জি ক্রয় ছাড়া উপায় থকবে না। তার জন্য চাই অবকাঠামো, নেই কোন আন্তর্জাতিক গ্যাস পাইপ্লাইন সংযোগ, তাই অতি দ্রুত এল এন জি টার্মিনাল করা দরকার। অর্থাৎ আমদানীকারি মডেলের যে কষ্ট ইনভল্ভেমেন্ট সেটা এখনই শুরু হয়ে গেসে মহেশখালী-মাতারবাড়ি এল এন জি টার্মিনালের মাধ্যমে, এই টার্মিনালের কাজের গতি যত কম হবে খরচ তত বাড়বে।

(উল্লেখ্য, গত কয়েক বছরে দেশে নতুন গ্যাসক্ষেত্রের সন্ধান মেলেনি। যদিও মিয়ানমার ও ভারতের সঙ্গে সমুদ্রসীমা-সংক্রান্ত বিরোধ নিষ্পত্তির পর সাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছিল। অদৃশ্য কারনে মীমাংসিত ব্লক গুলো ইজারা দেয়া হচ্ছে না। সাধারণত শীতের স্ট্যাবল ওয়েদারে সমুদ্রে ড্রিলিং এবং এক্সপ্লোরেশনের কাজ হয়। যেহেতু ২ টি শীতকালীন মৌসুম পেরিয়ে গেলেও ইজারায় আগ্রগতি নেই, কন্সপাইরেসি থিউরি অফ ইকোনোমিক্স মতে বঙ্গোপসাগরে প্রমাণিত মজুদ থাকার পরেও এক্সপ্লোরেশনে না যাওয়া বলছে ভিতরে বড় ধরনের ঘাপলা হচ্ছে।​​ এখন পর্যন্ত যে গ্যাসক্ষেত্রগুলো আবিষ্কৃত হয়েছে, তার মধ্যে ২৪টিই স্থলভাগে। বাকি দুটি অফশোরে। বর্তমানে উৎপাদনে আছে ২০টি গ্যাসক্ষেত্র, যার সবই স্থলভাগে। মানে পানিতে আমাদের গ্যাসের উৎপাদন এখনো পর্জন্ত শূন্য, এটা অবিশ্বাস্য!)

৩০ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ১১:৩৫

এক নিরুদ্দেশ পথিক বলেছেন: গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ। উত্তরটা গুছিয়ে দিবার চেষ্টা করেছি, তবে বেশ বড় হয়ে গেছে।
ভালো থাকবেন জেন রসি!

৩| ২৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ৯:১০

আখেনাটেন বলেছেন: @ ক্যাব আবেদনে বলেছে, ‘এলপিজি’র বাজার এখন অসাধু ব্যবসাকবলিত। এ বাজার রাষ্ট্র বা বাজার কেউই নিয়ন্ত্রণ করে না, নিয়ন্ত্রিত হয় ব্যবসায়ীদের দ্বারা। --- আর এ জন্যই এলপিজি কারখানা করার হিড়িক পড়েছে।

জ্বালানী নিরাপত্তা নিয়ে সরকারে দীর্ঘমেয়াদী কোনো লক্ষ্যই নেই। এই জ্বালানীর কারণে প্রায় ১/২ শতাংশ জিডিপির প্রবৃদ্ধি কম হচ্ছে। মায়ানমারের গ্যাস চীন ও ভারত কেনার বন্দোবস্ত করে ফেলেছে, আর বাংলাদেশে এই নিয়ে কোনো উদ্যোগ চোখে পড়ে না। অথচ মায়ানমার এই গ্যাস রপ্তানী করবে বাংলাদেশের নাকের ডগা থেকে। কয়দিন পর পর শুধু শুনি এই মেগা প্রজেক্ট ঐ মেগা প্রজেক্ট; কিন্তু বাস্তবে এখনো একটার সুফল আমরা পাচ্ছি না। একটা প্রজেক্টে এক যুগ করে লাগছে।

গতকাল পত্রিকায় দেখলাম গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানিগুলোর কাছে এনবিআরের কয়েক হাজার কোটি টাকা পাওনা আছে। অথচ এই কোম্পানীগুলো প্রতিবছর বিপুল পরিমান লভ্যাংশ দেখিয়ে নিজেদের মধ্যেই মুনাফার একটা অংশ ভাগ-বাটোয়ার করে নেয়। আর সরকারি কোষাগারে টাকা দিতে পারে না। হরিলুট চলছে। কয়দিন আগে বাপেক্সের এমডিকে সরানো হয়েছে এই হরিলুট বিষয়ক কোনো একটা কারণে।

কী অমিত সম্ভাবনাময় একটা দেশ! তরুনেরা পরিশ্রম করার জন্য কী বিপুল উৎসাহ নিয়ে অপেক্ষায় আছে, একটা করার মতো কাজ চাই। আর কারা যেন দেশটাকে শুধু পেছনেই টানছে স্বাধীনতার পর থেকেই!!!

৩০ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৪:৫২

এক নিরুদ্দেশ পথিক বলেছেন: বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রডাকশন কোম্পানি লিমিটেডের (বাপেক্স) ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) পদ থেকে প্রকৌশলী মো. আতিকুজ্জামানকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। ওই পদে তার স্থলাভিষিক্ত হচ্ছেন অনিয়মের দায়ে অপসারিত তিতাস গ্যাসের সাবেক এমডি নওশাদ ইসলাম।

"গত জুন মাসের ১৯ তারিখ ভোলা জেলার শাহবাজপুর গ্যাসক্ষেত্রে দুটি কূপ খননের ইচ্ছা প্রকাশ করে জ্বালানি মন্ত্রণালয় ও বাপেক্সের কাছে চিঠি দেয় রাশিয়ার গ্যাস অনুসন্ধানকারী প্রতিষ্ঠান গ্যাজপ্রম। ওই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৮ জুলাই বাপেক্সের কাছ থেকে জরুরি ভিত্তিতে মতামত জানতে চায় জ্বালানি মন্ত্রণালয়। নিজেদের মতামতে গ্যাজপ্রমের কাজের মান ও ব্যয়ের বিষয় তুলে ধরে প্রতিষ্ঠানটিকে গ্যাসকূপ খননের কাজ না দেয়ার বিষয়ে মত জানায় বাপেক্স।"

প্রসঙ্গত, ২০১৫ সালের ১৩ এপ্রিল থেকে বাপেক্সের এমডির দায়িত্ব পান প্রকৌশলী মো. আতিকুজ্জামান। দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে বাপেক্সকে কারিগরি দিক থেকে শক্তিশালী করার জন্য নানা পদক্ষেপ নেন তিনি। সম্প্রতি তিনটি নতুন গভীর খনন রিগ কেনাসহ অন্যান্য সরঞ্জাম সংগ্রহ কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। এছাড়া রূপকল্প-২০২১ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বাপেক্স কর্তৃক ১০৮টি কূপ খনন এবং ৩০০০ লাইন কিলোমিটার দ্বিমাত্রিক সিসমিক জরিপ কার্যক্রম পরিচালনার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।

বণিক বার্তা সরিয়ে দেয়া হলো বাপেক্সের এমডিকে, নভেম্বর ২০, ২০১৬

৩১ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ১০:৩৫

এক নিরুদ্দেশ পথিক বলেছেন: কী অমিত সম্ভাবনাময় একটা দেশ! তরুনেরা পরিশ্রম করার জন্য কী বিপুল উৎসাহ নিয়ে অপেক্ষায় আছে, একটা করার মতো কাজ চাই। আর কারা যেন দেশটাকে শুধু পেছনেই টানছে স্বাধীনতার পর থেকেই!!!

৪| ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ২:৩৭

স্নিগ্ধ শোভন বলেছেন:


অনেক কিছু জানতে পারলাম। ধন্যবাদ চমৎকার এই পোস্টের জন্য।

৩০ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ ভোর ৬:২০

এক নিরুদ্দেশ পথিক বলেছেন: আন্তরিক ধন্যাবাদ জানবেন।

৫| ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ৩:১৯

চাঁদগাজী বলেছেন:



দেশটি হঠাৎ করে থেমে যাবে, মানুষ বুঝতেও পারবে না যে, গ্যাসকে কিভাবে অকারণে পুড়ি্যে ফেলেছে ইডিয়টেরা।

০৩ রা জানুয়ারি, ২০১৭ বিকাল ৪:১৪

এক নিরুদ্দেশ পথিক বলেছেন: অকারনে গ্যাস পুড়ানোর সব মেকানিজম ( ট্রান্সমিশন, ডিস্ট্রিবিউশন ইফেশিয়েন্সি, বিদ্যুৎ এবং সার তৈরির মেশিনারিজ, প্রশাসনিক অদক্ষতা, চুরি, মিটারিং ইত্যাদি ইত্যাদি) রিপ্লেইস কিংবা ট্রান্সফর্ম করার বিষয়ে কর্মপরিকল্পনা দরকার।

৬| ৩১ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:০৬

জেন রসি বলেছেন: স্পষ্ট এবং বিস্তারিত ভাবে ব্যাখ্যা করার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। এসব বিষয় নিয়ে আমাদের নাগরিক সচেতনতা প্রায় নেই বললেই চলে!

শুভকামনা।

০৩ রা জানুয়ারি, ২০১৭ বিকাল ৪:১৪

এক নিরুদ্দেশ পথিক বলেছেন: আন্তরিক ধন্যবাদ।

৭| ৩১ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ১০:০১

আহমেদ জী এস বলেছেন: এক নিরুদ্দেশ পথিক ,




চমৎকার এবং সমৃদ্ধ একটি লেখা । মূল লেখায় ও প্রতিমন্তব্যে বিস্তারিত সুন্দর ভাবে তুলে ধরেছেন ।
এনার্জি পরিকল্পনায় সঠিক বোধ আসুক সংশ্লিষ্টদের এ প্রত্যাশা অমূলক । আমরা সবাই এক নিরুদ্দেশের পথিক , নইলে পথ হারাই কেন বারেবারে ?
জেন রসি বলেছেন , আমাদের নাগরিক সচেতনতা প্রায় নেই বললেই চলে!
তাই এমন লেখাতেও পাঠ ও মন্তব্যসংখ্যা দুঃখজনক । পোস্টটি ষ্টিকি হতে পারতো ।

আখেনাটেন এর এই মন্তব্য- কী অমিত সম্ভাবনাময় একটা দেশ! তরুনেরা পরিশ্রম করার জন্য কী বিপুল উৎসাহ নিয়ে অপেক্ষায় আছে, একটা করার মতো কাজ চাই। আর কারা যেন দেশটাকে শুধু পেছনেই টানছে স্বাধীনতার পর থেকেই!!! সত্যের আর এক নাম ।

শেষ করি এই লাইনটি দিয়ে - জন্ম থেকেই জ্বলছি ।

বিদায়ী বছরের শুভেচ্ছা ।

০৩ রা জানুয়ারি, ২০১৭ বিকাল ৪:১৫

এক নিরুদ্দেশ পথিক বলেছেন: আখেনাটেন এর এই মন্তব্য- কী অমিত সম্ভাবনাময় একটা দেশ! তরুনেরা পরিশ্রম করার জন্য কী বিপুল উৎসাহ নিয়ে অপেক্ষায় আছে, একটা করার মতো কাজ চাই। আর কারা যেন দেশটাকে শুধু পেছনেই টানছে স্বাধীনতার পর থেকেই!!! সত্যের আর এক নাম ।

আন্তরিক ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা জানবেন।

৮| ০১ লা জানুয়ারি, ২০১৭ বিকাল ৫:২৮

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: দেশ-জাতির স্বার্থে আরেকটি কল্যানকর সমৃদ্ধ প্রবন্ধের জন্য ধন্যবাদ।

এই তথ্যগুলোই যদি আমজনতার মাঝে ব্যপক বিস্তৃতি ঘটানো যেত- সাধারন মানুষই বাধ করতো নীতি-নির্ধারণে!

অজানার সুযোগেই লোভী, অদক্ষ, দূর্নীতিবাজ কতিপয়ের হাতে দেশের অধিক সম্পদ কুক্ষিগত!

বেরিয়ে আসুক দেশ দুষ্টচক্রের জাল থেকে
++++++++++

০৩ রা জানুয়ারি, ২০১৭ বিকাল ৪:১৬

এক নিরুদ্দেশ পথিক বলেছেন: এই তথ্যগুলোই যদি আমজনতার মাঝে ব্যপক বিস্তৃতি ঘটানো যেত- সাধারন মানুষই বাধ করতো নীতি-নির্ধারণে! অজানার সুযোগেই লোভী, অদক্ষ, দূর্নীতিবাজ কতিপয়ের হাতে দেশের অধিক সম্পদ কুক্ষিগত! বেরিয়ে আসুক দেশ দুষ্টচক্রের জাল থেকে।

মানুষকে জানাতে হবে, জাগাতেও!

৯| ০১ লা জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ১০:১৩

বিষাদ সময় বলেছেন: তথ্য বহুল একটি পোস্টের জন্য ধন্যবাদ।

আমাদের দেশের মন্ত্রীরা আবাসিক খাতে গ্যাস ব্যবহারকে গ্যাসের একটি অপচয় এবং অচিরেই তা বন্ধ করে দেওয়া উচিত বলে যখন তখন হঙ্কার ছাড়েন। এই হঙ্কারের উদ্দেশ্য কি গ্যাস সম্পদের আপচয় রোধ করা? মোটেই তা নয়। কারন মোট গ্যাস সম্পদের মাত্র ৬% ব্যবহার করেন আবসিক গ্রাহকরা এবং শুধু মাত্র এই আবাসিক খাতে গ্যস ব্যবাহরের উপকার টুকু সাধারণ জনগন প্রত্যক্ষ ভাবে ভোগ করে।

তারপরও কেন মন্ত্রীদের কোপানলে গ্যাস সেক্টরের দুর্নীতি নয়, অদক্ষ যন্ত্রপাতি নয় কোপানলে এই আবসিক খাতের গ্যস ব্যবহার কারিরা? কারন আর কিছু নয় প্রভাবশালী কিছু নেতার এল,পি, জি ব্যবসার বাজার সম্প্রসারন করা।

০৩ রা জানুয়ারি, ২০১৭ বিকাল ৪:১৭

এক নিরুদ্দেশ পথিক বলেছেন: আন্তরিক ধন্যবাদ এবং শুভেচ্ছা জানবেন।

১০| ০৫ ই জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ২:২৮

ভ্রমরের ডানা বলেছেন:
খুবই দুঃখজনক ও হতাশার। জাতীয় পাইপ লাইন থেকে গ্যাস চুরি হচ্ছে, অজস্র মুনাফাবাজি ব্যবসা করে গ্যাসের সরবরাহ গ্রহণকারীদের জিম্মি করা হচ্ছে। জ্বালানী সমস্যার জ্বলুনি মিটবে কবে?

০৫ ই জানুয়ারি, ২০১৭ বিকাল ৪:২৭

এক নিরুদ্দেশ পথিক বলেছেন: বিদ্যুৎ এবং গ্যাসের জাতীয় পাইপ লাইনকে রিডিজাইন, সংস্কার এবং পরিবর্ধন করে কমার্শিয়াল লাইন করা যায়, তবে এতে শুধু প্রিপেইড গ্রাহকেরা কানেক্টেড থাকতে পারবে। এর মাধ্যমে বর্তমানের চুরির স্কোপ গুলোর টুঁটি চেপে ধরতে হবে টেকনলজি এবং অটোমেশনের মাধ্যমে।

১১| ০৫ ই জানুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ১২:৫২

অগ্নি সারথি বলেছেন: আজব দেশের ধন্য রাজা, দেশ জোরা তার নাম!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.