নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব,ইইই প্রকৌশলী। মতিঝিল আইডিয়াল, ঢাকা কলেজ, বুয়েট এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র।টেলিকমিউনিকেশন এক্সপার্ট। Sustainable development activist, writer of technology and infrastructural aspects of socio economy.

এক নিরুদ্দেশ পথিক

সমাজের প্রতিটি ছোট বড় সমস্যার প্রকৃতি নির্ধারণ করা, আমাদের আচার ব্যবহার, সমাজের প্রচলিত কৃষ্টি কালচার, সৃষ্টিশীলতা, চারিত্রিক উদারতা এবং বক্রতা, অপরাধ প্রবৃত্তি, অপরাধ সঙ্ঘঠনের ধাঁচ ইত্যাদির স্থানীয় জ্ঞানের আলোকে সমাজের সমস্যার সমাধান বাতলে দেয়াই অগ্রসর নাগরিকের দায়িত্ব। বাংলাদেশে দুর্নীতি রোধ, প্রাতিষ্ঠানিক শুদ্ধিকরন এবং টেকনোলজির কার্যকরীতার সাথে স্থানীয় অপরাধের জ্ঞান কে সমন্বয় ঘটিয়ে দেশের ছোট বড় সমস্যা সমাধান এর জন্য লিখা লিখি করি। আমার নির্দিষ্ট দৃষ্টিভঙ্গি আছে কিন্তু দলীয় সীমাবদ্ধতা নেই বলেই মনে করি, চোর কে চোর বলার সৎ সাহস আমার আছে বলেই বিশ্বাস করি। রাষ্ট্রের অনৈতিক কাঠামোকে এবং দুর্নীতিবাজদের সবাইকে তীক্ষ্ণ ভাবে চ্যালেঞ্জ করার চেষ্টা করি। রাষ্ট্র কে চ্যালেঞ্জ করতে চাই প্রতিটি অক্ষমতার আর অজ্ঞতার জন্য, তবে আঘাত নয়। ব্যক্তিগত ভাবে নাগরিকের জীবনমান উন্নয়ন কে দেশের ঐক্যের ভিত্তিমূল মনে করি। ডাটাবেইজ এবং টেকনোলজি বেইজড পলিসি দিয়ে সমস্যা সমাধানের প্রোপজাল দেবার চেষ্টা করি। আমি মূলত সাস্টেইন এবল ডেভেলপমেন্ট (টেকসই উন্নয়ন) এর নিরিখে- অবকাঠামো উন্নয়ন এবং ডিজাইন ত্রুটি, কৃষি শিক্ষা খাতে কারিগরি ব্যবস্থাপনা ভিত্তিক সংস্কার, জলবায়ু পরিবর্তন, মাইক্রো ইকনমিক ব্যাপার গুলো, ফিনান্সিয়াল মাইগ্রেশন এইসব ক্রিটিক্যাল ব্যাপার নিয়ে লিখার চেষ্টা করি। মাঝে মাঝে চোরকে চোর বলার জন্য দুর্নিতি নিয়ে লিখি। পেশাঃ প্রকৌশলী, টেকনিক্যাল আর্কিটেক্ট, ভোডাফোন।

এক নিরুদ্দেশ পথিক › বিস্তারিত পোস্টঃ

পাটশিল্পে ব্যর্থতা ডান ও বামের সম্মিলিত অপব্যবস্থাপনার ফসল

০৪ ঠা জুলাই, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:০৫

পাটশিল্পে ব্যর্থতা ডান ও বামের সম্মিলিত অপব্যবস্থাপনার ফসল।

সরকার রাষ্ট্রায়ত্ত সব পাটকল বন্ধ ঘোষণা করেছে। পাটকল বন্ধের কয়েকটি দিক আলোচনা করবো।
-----------------------------
এক- জনপ্রিয় পপুলিস্টিক ভিউ। লোকসান হচ্ছে তাই বন্ধ, রাষ্ট্রের সেইভ।
-----------------------------
রাষ্ট্রায়ত্ত করনের ১ম বছর থেকেই লোকসান শুরু হয় সর্ববৃহৎ আদমজী পাটকলে। তবে সিরাজ সিকদার, মেজর জলিল সহ অনেকেই অভিযোগ করেছেন স্বাধীনতা যুদ্ধের পরে বাংলাদেশ থেকে প্রস্থানের সময় ভারতীয় সেনারা আদমজী সহ বহু পাটকলের অতি মূল্যবান যন্ত্রপাতি ব্যাপকহারে চুরি করে নিয়ে গেছে।

আওয়ামীলীগ ও বাম দলগুলোর চরম সমালোচনার মুখে একটি কঠিন প্রক্রিয়ায় আদমজী বন্ধ করে তার আংশিক জায়গায় আদমজী ইপিজেড স্থাপন করে বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকার, এতে শিল্পমন্ত্রী নিজামীর ভূমিকা ছিল। শুধু বন্ধের আগের বছরেই ১৮০০ কোটি টাকা লোকসান দিয়েছিল মিলটি, যা সেই সময়ে জাতীয় রাজস্ব আয়ের প্রায় ১০% এর কাছাকাছি ছিল। ইপিজেড হওয়ায় নতুন শিল্প ও বহু শ্রমিকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হওয়ায়, অর্থনীতিবিদরা সিদ্ধান্তটি সঠিক ছিল বলেই মনে করেন। (মামুন রশীদ, জুলাই ০৪, ২০২০, বণিকবার্তা)


লোকসান, চুরি আর কাজে ফাঁকি দেয়া, শ্রমিক ইউনিয়নের দৌরাত্ব- দুর্বিত্তপনার কারনে লোকাসানি মিল বন্ধের গ্রহণযোগ্যতা আছে অর্থনিতীতে। এখানে ডেভেলপমেন্ট পার্টনারদের প্রত্যক্ষ প্রভাবও আছে। বর্তমানে দেশে যে পাট ও পাটজাত পণ্য উৎপাদিত হয় তার ৯৫ শতাংশই বেসরকারি পাটকলে উৎপাদিত হয়। ফলে পাটকল বন্ধের নতুন সিদ্ধান্ত খুব জনপ্রিয়।
-----------------------------
দুই- অপব্যবস্থাপনা, চুরি ও লুট বন্ধ করো, শিল্প নয়।
-----------------------------
নতুন করে ৫ কোটি লোক যখন বেকারত্বের ঝুঁকিতে তখন পাটকল বন্ধ করা শ্রমবাজারে কি একটা ভয়ংকর বার্তা পৌঁছাচ্ছে না? শিল্প বন্ধ করে কর্মসংস্থান আগাবে কিভাবে? আদমজীতে ইপিজেড হয়েছে বলে ব্যাপারটা ভিন্ন। কিন্তু এককালে বিশ্বের সর্ববৃহৎ মুসলিম কটন মিল সহ বাকি মিলগুলোতে দেখা গেছে, শিল্পএর যন্ত্রাংশ তো বটেই, আবাসিক ভবনের দরজা জানালা পর্যন্ত চুরি করা হয়েছে (আওয়ামীলীগ পন্থী আজাদ সাহেবকে দেয়া হয়েছে পরে)। বন্ধ হওয়া বহু শিল্পেই নতুন শিল্প হয়নি, বরং সেগুলা পরিত্যাক্ত। ভৌত কাঠামোগুলোকে বাঁচানোর চেষ্টাও হয়নি।

আবার কথা হচ্ছে, চুরি ও লোকসান শুধু পাটকলে হচ্ছে? দলীয় দুর্বিত্তদের কুইক রেন্টাল আর ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে, ১০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা বসিয়ে রেখে, বিদ্যুৎ খাতকে ৯ হাজার কোটি ভর্তুকি দেয়া হচ্ছে বছরে। সরকারের প্রায় সব প্রতিষ্ঠান লোকসানে। কে চুরি করছে না এই সময়ে, কে চুরি করেনি এই দেশে? চুরি ও লুট বন্ধ না করে, পুরো শিল্পই বন্ধ কেন? লোকসানের কারনেই যদি বন্ধ হয়, কুইক লোকসানের আসল খাত গুলো বন্ধ হচ্ছে না কেন?
-----------------------------
তিন- করোনার সময়ে শ্রমবাজারে ভুল বার্তা।
-----------------------------
করোনার কারনে দারিদ্র্য বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে প্রায়, নতুন করে প্রায় ৫ কোটি লোক বেকারত্বের ঝুঁকিতে, এমন সময় সরকার যদি পাটকল বন্ধ করে ৩০ হাজার শ্রমিক ছাটাই করে তাইলে মার্কেটে কি মেসেজ যায়? সরকারের তো সব অর্থনৈইতিক কর্ম কান্ডের মূল শ্লোগান হওয়া দরকার কর্ম সুরক্ষা। সরকারই যদি গণ ছাটাই আর শিল্প বন্ধ করে তাইলে বেসরকারিরাতো এক অংকের সুদে ঋণ নিয়ে আরো আগে শিল্প বন্ধ করে পাচারে লিপ্ত হয়ে নিজেরাও পালাবে। ইতিমধ্যেই তৈরি পোশাক সহ রপ্তানীমূখী খাতে ছাটাইয়ের মচ্ছব শুরু হয়েছে। ঠিক এই সময়ে শ্রম বাজারে কি মেসেজ পাঠাচ্ছে সরকার?
-----------------------------
চার- ফিরে দেখা। পাটকলের ব্যবস্থাপনাগত সমস্যা।
-----------------------------
১৯৭২ থেকেই আদমজী সহ প্রায় ৭০টি রাষ্ট্রীয় সাহায্যে প্রতিষ্ঠিত কিন্তু ব্যক্তি ও পরিবারিক মালিকানাধীন লাভজনক পাটকলকে অতি দ্রুততার সাথে রাস্ট্রয়াত্ব করার ভয়ংকর হীন্মান্যতা দেখানো হয়। এখানে শ্রমিকদের উপর দলীয় নিয়ন্ত্রণের রাজনৈতিক ইচ্ছা প্রবল ছিল, ছিল লোপাটের ব্যাপক ধান্ধা।

তাই মালিক পক্ষ গুলোর সাথে মিউচুয়াল নিষ্পত্তি না করে, পরিচালানা কাঠামো তৈরি না করে, নেতৃত্ব তৈরি না করে, অপারেশন্স প্রসেস ঠিক না করে, জোর করে অধিগ্রহণের পর দলীয় চামচা বুদ্ধীজীবি ও দুর্বিত্তদের বেছে বেছে সেখানে বসিয়ে শ্রমিক নিয়ন্ত্রণ ও লুটের ফাঁদ পাতা হয়েছে। এইধরনের নির্বোধ কাজে তৈরি হতে যাওয়া সমস্যাগুলো সরকারকে ধরিয়ে দিবার, কিংবা প্রতিবাদ করার মত বুদ্ধিজীবী ও রাজনৈতিক দল তখন কমই ছিল।

শিল্প ব্যবস্থাপনা জ্ঞান, কৌশলগত অবকাঠামো, শিল্প কারখানার মেইন্টেনেন্স ও শ্রম বাজারের দীর্ঘমেয়াদি সুরক্ষা ইত্যাদিতে রাজনৈতিক দুরদর্শিতা দেখাতে সেসময় বাংলাদেশের প্রধান বিরোধী দল হিসেবে বাম দলগুলো চরম ব্যর্থ হয়েছিল। পশ্চাৎপদ এবং বিদেশ নির্ভর বামদল গুলো পাটকল রাস্ট্রয়াত্বকরনে একচেটিয়া সমর্থন জুগিয়েছিল। এইসব আত্মঘাতী রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সিদ্ধন্তের পুনঃ মূল্যায়ন বাম দলগুলো কখনও আনুষ্ঠানিকভাবে করেছি কিনা জানা নেই।


শ্রমিক লীগ ও রাজনৈতিক ব্যবস্থাপকদের অতি চুরি, ভুয়া বিল, ভুয়া শ্রমিক দেখিয়ে বেতন তোলা, আগুন লাগানোর নাশকতা, প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ভারতের সাথে গোলামী চুক্তি সহ সর্বনাশা অপব্যবস্থাপনার সব কারনে স্বাধীনতার ১ম বছর থেকে টানা উৎপাদন কমতে শুরু করে। (এস মুজিবউল্লাহ, সেপ্টেম্বর ৩, ১৯৮০, দৌনিক ইত্তেফাক, বাহাত্তর থেকে পঁচাত্তর, মুনীর উদ্দীন আহমদ- নভেল পাব্লিশিং হাউজ। বহু পত্রিকার কলাম ও বইতে পাটকলে মজিব আমলের দুর্বিত্তপনার প্রতিবেদন এসেছে)। আদমজী সহ প্রায় প্রতিটি পাটকল অধিগ্রহণের ১ম বছরেই লোকসানে যায়, ১৯৭২ এ ৫কোটি দিয়ে শুরু, ১৯৭৪ এ তা সাড়ে এগার কোটিতে পৌঁছে। দুর্বিনীত দুর্নীতির প্রতিষ্ঠান বিজেএমসি'র হাতে ৪৮ বছরের মধ্যে ৪৪ বছরই লোকসানে ছিল সরকারি পাট খাত।দলীয়করণ প্রাধান্য পাওয়ায় দুর্নীতির উর্বর ক্ষেত্র হয়ে উঠেছে আমাদের পাটকল গুলো। ফলে বন্ধ করার সিদ্ধান্তও জনপ্রিয়তা পেয়েছে বটে!
-----------------------------
পাঁচ- পাটকলের অন্যান্য সমস্যা গুলো
-----------------------------
১। বাংলাদেশের পাটকলের প্রধান কয়েকটা সমস্যা ম্যানেজার ও শ্রমিক নেতাদের চুরি-দুর্নীতি।

২। পণ্যের কোন ডিজাইন ভ্যারিয়েশান নাই। ইনোভেশান নাই। পণ্য হিসেবে সুতা ও সাধারণ ছালা বিক্রির অতি ঝোঁক।

৩। সেলস ফলোআপ নাই, কাস্টমার স্যাটিস্ফিকশান সার্ভে নাই।

৪। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারের চাহিদা মাফিক পণ্য তৈরির বোধ নেই।

৫। চুরিতে মেশিনারি নষ্ট, মেইন্টেনেন্সে মনোযোগ নেই। এটা তো বিচ্ছিন্ন কিছু না, সব সরকারি প্রতিষ্ঠানেরই সমস্যা।

৬। ১৭০০ টাকার পাট ২২০০ টাকা দিয়ে কেনা হয়, কৃষককে ঠকিয়ে দলীয় দালালদের পকেট ভারি করা হয়, অথচ চাইলেই ডিজিটাল পেমেন্টে কৃষক থেকে ডিরেক্ট ইন্টারফেইসে আদ্রতা পরীক্ষা করে পাট কেনা যায়।

৭। পাট দিয়ে তৈরি সুতা ঘুষ/কমিশন খেয়ে কম দামে সেট করা দেশি দালাল ও বিদেশী কাস্টমারদের কাছে বিক্রি করা। এতে বেসরকারি পাটকলও আন্তর্জাতিক বাজারে প্রাইস ওয়ারের বিপদে পড়ে।

৮। শ্রমিক ইউনিয়নের নেতাদের দৌরাত্ব, কাজে ফাঁকি, দুর্নীতি ও দালাল সংযোগ। বাম সংঘঠন গুলো শ্রমিক অধিকার নিয়ে আন্দোলন করে কিন্তু এই বিষগুলোতে নিরব থাকে।


কথা হচ্ছে, এই সমস্যা গুলো সবার জানা, এগুলা সমধান যোগ্যও ছিল। এগুলা সাধারণ শ্রমিকরা করেছে না, করছে দলীয়া পান্ডারা। আমি মনে করি পলিটিক্যাল ইচ্ছা থাকলে যে কোন পাটকলই লাভে থাকবে, এটা জাস্ট পলিটিক্যাল উইলের ব্যাপার। যারা চুরি করে পাটকল লোকসানে রেখেছে তারা সরকার গুলোর সেট করা লোকই।
-----------------------------
ছয়- গোল্ডেন হ্যান্ড শেইকের প্রসেস ভুল ও বন্টন অসম
-----------------------------
শ্রমিক নেতারা যারা এতদিন কাজ না করে চুরি করলো, তারা অর্ধ কোটির বেশি করে বিশাল টাকা পাবে। শ্রমিকদের বলা হচ্ছে ১১-১৩ লাখ দিবে, কিন্তু ডিরেক্ট ইন্টারফেইসে, ডিজিটাল পেমেন্টে দেয়া হবে কিনা তার নিশ্চয়তা নেই।

কয়েক বছরের হয়রানি আর ঘুষের পরে শ্রমিকরা ৫-৬ লাখ পাবেন হয়ত, তবে এই ৩০-৩৫ হাজার শ্রমিক প্রান্তিক দরিদ্র্য হতে যাচ্ছে আগামী ৩-৪ বছরের মধ্যেই। ইনারা বেসরকারিতে কাজ পাবে না, তরুণ ও সেমি দক্ষ শ্রমিকের অভাব নেই, যেহেতু গার্মেন্টস খাতে ছাটাই হচ্ছে। অন্য দিকে গ্রামে কৃষি ও মাটি কাটার কাজও করতে পারবে না। এইজন্য কারখানা বন্ধ না করে, শ্রমিক ছাটাই না করে, শিল্প ও শ্রমিক দক্ষতাকে শেয়ারড সরকারি-বেসরকারি মালিকানায় কাছাকাছি শিল্পে মাইগ্রেট করাই উত্তম।

এখন যে গোল্ডেন হ্যান্ডশেইক দেয়া হবে, এটার ৫০%ই লস। এই টাকা দলীয় লোক ছাড়া কারো কাজে আসবে না। একদিকে প্রসেস ঠিক নাই, অন্যদিকে টামিংও ঠিক নাই।
-----------------------------
সাত- গুরুত্বপূর্ণ বারগেইন পাওয়ার হাতছাড়া
-----------------------------
২৫ টির সবগুলোই একিসাথে ছেড়ে দেয়ায় সরকারের হস্তান্তরের বারগেইন পাওয়ার কম থাকবে। কারন তাকে একটা বিশাল লট ছাড়তে হবে, আগ্রহী ভালো ক্রেতার চেয়ে বিক্রয় প্রার্থী মিলের সংখ্যা বেশি। সাধারণত বেসরকারি মালিক্রা জমির মালিকানা, সহজ শর্তের ঋণ ও ভিন্ন শিল্পের অনুমতি চায়। যেহেতু অনেক মিল ক্যান্ডিডেট তাই সরকারের ব্যবসায়ী নেতারা যেনতেন দামে মিল কিনে নেয়ার চেস্টা তদবির ও চাপ তৈরি করবে। আওয়ামীলীগ রাস্ট্র লুটের যে মডেল তৈরি করেছে, পাটকল সচল রাখার যে কৌশলগত ব্যর্থতা তারা দেখিয়েছে, তাতে এটা আমুলক নয় যে, তারা নিজেরাই দলীয় লোকেদের পানির দামে পাটকল ও তার সম্পদগুলো ধরিয়ে দিবার আয়োজন করেছে।

একটা একটা করে হস্তান্তর করলে সরকারের নেগোসিয়েশন পাওয়া থাকতো। এভাবে লটে না তুলে পাটকল গুলোর জমি ও শ্রমিক রক্ষা করে, শিল্প বহুমূখী করে ছোট আকারে স্পেশাল ইপিজেড তৈরির উদ্যোগ নেয়া যেত, এতে ভাল বারগেইন করে শ্রমিকদের কর্ম রক্ষার শর্তেই ভালো দামে মিল হস্তান্তর করা যেত।
-----------------------------
আট- পাটপণ্য হতে পারতো রপ্তানি বহুমুখীকরণের হাতিয়ার
-----------------------------
একটা কৌশলের মধ্যে নতুন পাট পণ্যের আন্তর্জাতিক বাজার ধরা, নলেজ ক্রিয়েট ও টারন্সফার, ট্রেনিং এবং এমপ্লয়মেন্ট সুরক্ষা করে সুসময়ে পাটকল টেকসই করনের অথবা বেসরকারি করনের কাজ করা যেত ধীরে ধীরে। আমাদের বেসরকারি কোম্পানি গুলোই সরকারি পাটকল কিনতে চায়, তাদের অনেকেই লাভে। চায়না সরকারি পাটকলে বিনিয়োগ করতে চেয়েছে।

সাস্তেইনেবল লিভিং জনপ্রিয় হওয়ায় পাট ও পাটজাত পণ্যের কদর কিন্তু বাড়ছে। পাট পণ্যে গত ১০ বছরের গড়ে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের হার বেড়েছে। কভিড-১৯ পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববাজারের পাটের চাহিদা বাড়ছে, এমন একটি সম্ভাবনাময় সময়ে রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিশ্লেষকরাও।

ডঃ মোবারক স্যার পাটখড়ি থেকে সোনালী পলিথিন বানাইলেন, কিন্তু বাংলার জৈব পলির কিছুই হল না, ইন্ডিয়া আর চায়না বায়ো পলি ব্যাগ দিয়ে ইউরোপ আমারিকার বাজার দখল করে বসে আছে। স্যার কিংবা সরকার নিজেও কিছু করলো না, কাউকে করতেও দিল না। বিএনপির এত সমালোচনা করলো, উপরন্তু এখন নিজেরাই উল্টো রথে। ২৫টি পাটকল একযোগে বন্ধ।

বেসরকারি পাটকলের একটা বড় গন্তব্য ছিল ভারতীয় বাজার, সেখানে এন্টিডাম্পিং নীতিমালা করায় আমাদের পাটশিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, সরকার এই নিয়েও বন্ধুরাস্ট্রের সাথে কাজ করছে না।


কিন্তু পাটকল বন্ধের কাজটা করা হল ঠিক যখন দেশে কর্ম সুরক্ষার খুব দরকার ছিল। তাও বন্ধ হল সব গুলো একসাথে! একদিকে কর্ম রক্ষার দিক থেকে এটা ভুল মেসেজ দিচ্ছে, অন্যদিকে বিকাশমান পাট শিল্পের স্ট্রাটেজি ঠিক না করে, পাট চাষীদের পণ্যের গন্তব্য ঠিক না করে একযোগে এমনটা করাও সঠিক হয়নি, কেননা এই সবগুলা পাটকলই লোকসানি ছিল না, দুচারটা লাভেও ছিল, সেখানে আরো দক্ষতা আনা যেত।

আগেই বলেছি, আদমজীকে ইপিজেড করার মধ্যমে তার কিছুটা গতি হলেও অন্য পাটকল গুলোর কপাল খোলেনি, খুলেছে দলীয় ব্যবসায়ীদের। বিএনপি বেসরকারি পাট খাতের আকার ও বৈদেশিক রপ্তানি বাড়িয়েছে। তবে শিল্পমন্ত্রী মতিউর রাহমান নিজামী আমলে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের নারী কর্মসংস্থানের ক্ষতি হয়েছে বলে অভিযোগ আছে। শিল্প পরিচালনায় অনভিজ্ঞ শেখ মুজিবুর রহমান সরকার পাটকল পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনার প্রসেস তো ডেভেলপ করেইনি, উল্টো আওয়ামলীগ নেতা বুদ্ধিজীবীরাই পাটশিল্প লুটের মূল কারিগর ছিল। বর্তমানের আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ভারতে পাটেরবাজার কৌশলগত করার উদ্যোগ নেয়ার পরিবর্তে এসেছে এন্টি ডাম্পিংং নিষেধাজ্ঞা। সারাজীবন তারা পাটকল বন্ধের কথা বলে এখন নিজেরাই সবকটি পাটকল বন্ধ করে রাজনৈতিক বেহায়াপনা দেখালো। আর আমাদের বাম! দীর্ঘমেয়াদে আবকাঠামো ভালো রাখার কৌশলগত জ্ঞানহীনতায়, ব্যবস্থাপনা অনভিজ্ঞতায়, অর্থনৈতিক নীতিকৌশলে অজ্ঞ থেকে শুধু আওয়ামী লীগের লেজুড়বৃত্তি করে গেছে কিংবা কুসুম কুসুম বিরোধিতা করেছে সময়ে সময়ে। শুধু বিএনপি আমলেই এই বিরোধিতায় ধার ছিল, তবে সেখানে টেকসই ব্যবস্থাপনাগত ও কৌশলগত দাবি ছিল না। বাম ও ডানের এই সম্মিলিত লুট লেজুড়বৃত্তি আর অজ্ঞতাই আজকের আতিকায়, বিশালাকার সরকারি পাটশিল্পের মৃত কংকাল। অথচ বাংলার পাটশিল্পই পঞ্চাশ ও ষাটের দশকে ২য় শিল্পবিপ্লবে এশিয়া ও বিশ্বের গৌরবময় এক অধ্যায় ছিল।

মন্তব্য ৭ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৭) মন্তব্য লিখুন

১| ০৪ ঠা জুলাই, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৪২

রাজীব নুর বলেছেন: লোকসান হলেই শ্রমিকের দোষ। ম্যানেজমেন্ট, মন্ত্রনালয়, সচিবালয় ওইখানে সবাই ফেরেশতা থাকেন। অযোগ্য লোক দিয়ে কোনো প্রতিষ্ঠান চলতে পারে না। যখন কোনো প্রতিষ্ঠানের উন্নতি হবে না, তার মানে প্রতিষ্ঠানের লোক গুলো সৎ না, দক্ষ ও পরিশ্রমী না। মুখের কথায় চিড়া ভিজে না। উন্নতির জন্য দরকার সৎ, বুদ্ধিমান, পরিশ্রমী, দক্ষ ও যোগ্য লোকের।

০৬ ই জুলাই, ২০২০ বিকাল ৪:৩৫

এক নিরুদ্দেশ পথিক বলেছেন: যখন কোনো প্রতিষ্ঠানের উন্নতি হবে না, তার মানে প্রতিষ্ঠানের লোক গুলো সৎ না, দক্ষ ও পরিশ্রমী না। মুখের কথায় চিড়া ভিজে না। উন্নতির জন্য দরকার সৎ, বুদ্ধিমান, পরিশ্রমী, দক্ষ ও যোগ্য লোকের।

২| ০৪ ঠা জুলাই, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৫১

সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: সরকার বলছে এগুলি আবার চালু করা হবে কিছু কাঠামোগত সংস্কারের পর। তবে প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কাজ হবে কি না বলা যাচ্ছে না। আর যদি সত্যিই চালু হয় ও পুরনো শ্রমিকরা আবার নিয়োগ পায় তাহলে এদের এখন এত মোটা অংকের টাকা দেয়া হচ্ছে কেন। এই মিল গুলি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করত এটা বিবেচনা করা দরকার ছিল। পাট চাষিদের উপর এই সিদ্ধান্তের কিছু বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে সেটা বিবেচনা করা হয়েছে কি না জানি না। কিছু পাটজাত পণ্য সম্ভবত দেশের বাজারে বিক্রি হয়। ফলে লোকসানের একটা অংশ থেকে দেশের ক্রেতা/ ভোক্তারা লাভবান হতো। এখন এই মিলগুলি বন্ধ হলে দেশের ভিতরে পাটজাত পণ্যের দাম বেড়ে যেতে পারে। জনগণ যদি মূল্যে কিছু সাশ্রয় পায় তাহলে সরকারের উচিত ভর্তুকি দিয়ে এগুলি চালানো। কারণ এতে জনগণ সুবিধা পাবে। আবার এই ভর্তুকির টাকাও জনগণই দেয়। যেমন বিমানতো প্রচুর লোকসান করে কিন্তু সরকার একে বন্ধ করে না। কারণ এতে জনগণ সুবিধা হারাবে। একইভাবে যেখানে ২৫ থেকে ৩০ হাজার লোকের কর্মসংস্থানের প্রশ্ন সেখানে এগুলি বন্ধের আগে বেকারত্বের কথা চিন্তা করা উচিত। হিসাব বিজ্ঞানের লাভ লোকসান নয় বরং অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে লাভ লোকসান হিসাব করা উচিত ছিল।

৩| ০৪ ঠা জুলাই, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৫৯

আহমেদ জী এস বলেছেন: এক নিরুদ্দেশ পথিক,




ঠিকই বলেছেন - অব্যবস্থাপনা, চুরি, লুট বন্ধ করুন, শিল্প নয়।

স্বাধীনতার পরে যতো শিল্পই রাষ্ট্রের কব্জাগত করা হয়েছে তার সিংহভাগই ব্যবস্থাপনার সীমাহীন লুটপাট, আহাম্মক ও অশিক্ষিত শ্রমিক ইউনিয়নগুলোর ব্যাপক ধান্ধার দৌরাত্ব আর চুরি ও কাজ ফাঁকির মচ্ছবের কারনে হয় ধ্বংস হয়েছে নয় লোকসানী শিল্পে পরিনত হয়েছে।
যে সমীকরনেই এসবকে ফেলুন না কেন , বাস্তব এটাই।

৪| ০৪ ঠা জুলাই, ২০২০ রাত ৮:৪১

নুরুলইসলা০৬০৪ বলেছেন: যাকে দিয়ে তাড়াবো ভূত সে হলো আধা ভূত।

৫| ০৪ ঠা জুলাই, ২০২০ রাত ৮:৫৫

নেওয়াজ আলি বলেছেন: ছোটকালে পড়েছি পাটকে সোনালি আঁশ বলে। আর এখন গলায় ফাঁস। শুধু অব্যবস্থাপনার জন্য

৬| ০৪ ঠা জুলাই, ২০২০ রাত ১০:১৪

সেলিম আনোয়ার বলেছেন: আসলে সততা আর পরিশ্রমের বিকল্প নেই টেকসই উন্নয়নের পূর্বশর্ত হলো লাগসই পরিকল্পনা আর তার বাস্তবায়ন সৎ ও দক্ষ জনবল ছাড়া সেটি অসম্ভব । সততার পরিচর্যা করতে হবে সর্বাগ্রে তার পর পরিশ্রম। নাহলে সব বৃথা যাই করেন না কেন । ক্ষমতা আর শ্রমের দূর্বৃত্তায়নে সব পন্ড হয়ে যাবে । আলা উদ্দিনের চেরাগ বাস্তবে এক্সিস্ট করে না ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.