নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি একজন অবসরপ্রাপ্ত সরকারী কর্মকর্তা

মােঃ ফজলুর রহমান

অবসরপ্রাপ্ত সরকারী কর্মকর্তা

মােঃ ফজলুর রহমান › বিস্তারিত পোস্টঃ

একটি নথির আত্মকাহিনী - লাল ফিতার দৌরাত্ম্য

০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ৯:০৯


সরকারি চাকুরির প্রথম দিকে ১৯৭৯ খৃঃ এ আমি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে সেকশন অফিসার হিসাবে কর্মরত ছিলাম। তখন একদিন একটা নথি পেলাম যে নথিটি ১৯৭২ খৃঃ থেকে ১৯৭৯ খৃঃ পর্যন্ত দীর্ঘ ৭ বছর ধরে ৩টি মন্ত্রণালয়ে ঘুরছে । নথির বিষয়টি হলো - চাঁপাই নবাবগঞ্জ জেলা সদর হাসপাতালের জন্য দিল্লীর Services of God নামক একটি কল্যাণ সংস্থা একটি এক্সরে প্ল্যান্ট অনুদান দিয়েছে এবং প্ল্যান্টটি সেই ১৯৭২ খৃঃ তেই চাঁপাই.. জেলা হাসপাতালে এসেছে , কিন্তু স্থাপন / ইনস্টল করা হয় নাই। ঐ এক্সরে প্ল্যান্টটি ইনস্টল করার জন্য দিল্লী থেকে দু’জন প্রকৌশলী / টেকনিশিয়ান আসবেন যাঁদের ভিসা লাগবে , তাই নথিটি কখনও গেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে , আবার কখনও গেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে - অনুমতির জন্য। আবার দু’জন প্রকৌশলী / টেকনিশিয়ানের আসা যাওয়া ও থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করা এবং ব্যয় নির্বাহ করার কথা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের । তাই নথিটি কখনও এসেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে । এভাবে ৩টি মন্ত্রণালয়ে ৭ বছর ধরে নথিটি আসা যাওয়া করছে আর এক্সরে প্ল্যান্টটি বাক্সবন্দি হয়ে চাঁপাই.. সদর হাসপাতালে পড়ে আছে। আমি নথিটি পেয়ে হতভম্ব হয়ে গেলাম। এই ৩টি মন্ত্রণালয়ে ৭ বছর ধরে কত তথাকথিত জাঁদরেল / ঝানু / দক্ষ আমলা / মন্ত্রী এসেছেন , গেছেন - কিন্তু তাঁরা এই বিষয়টি ফয়সালা করে এক্সরে প্ল্যান্টটি ইনস্টল করাতে পারলেন না। বলা বাহুল্য নতুন স্বাধীন দেশে ঐ হাসপাতালে তখন একটি এক্সরে প্ল্যান্টের প্রয়োজনও ছিল যথেষ্ট। ঐ সময় পাকিস্তান থেকে ফেরৎ আসা অনেক সিএসপি অফিসারও সরকারের মধ্যম স্তর থেকে ঊর্ধতন স্তরে কর্মরত ছিলেন। তাঁদের কেউই যে এ নথিটি দেখেন নাই এমনটি নয়। আমি নথিটি পেয়ে মনে মনে অঙ্গীকারাবদ্ধ / Committed হলাম যে , আমি এই এক্সরে প্ল্যান্টটি স্বল্পতম সময়ে ইনস্টল করাব। আমি বিকল্প প্রস্তাব দিয়ে নোট লিখলাম যে, দিল্লীর প্রকৌশলী / টেকনিশিয়ান না এনে এ দেশের প্রকৌশলী / টেকনিশিয়ান দিয়েই এক্সরে প্ল্যান্টটি ইনস্টল করা হোক। সে নোট সহ নথিটি আমি হাতে হাতে নিয়ে আমার এই প্রস্তাবের সপক্ষে ঊর্ধতন কর্তৃপক্ষের অুমোদন গ্রহণ করি এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে পত্র প্রেরণ করি জরুরি ভিত্তিতে এক্সরে প্ল্যান্টটি ইনস্টল করার ব্যবস্থা গ্রহণ করে মন্ত্রণালয়কে জানানোর জন্য। এর অল্পদিন পরেই স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এক্সরে প্ল্যান্টটি ইনস্টল করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে জানায় যে এক্সরে প্র‌্যান্টটি ইনস্টল করা হয়েছে এবং এটা সুষ্ঠুভাবে কাজ করছে । এতে প্রায় দু’ মাস লেগেছিল। অর্থাৎ দু’মাসের কাজ ৭ বছরেও হয়নি। এই ৭ বছর যারা নথিটি এভাবে ঘুরিয়েছিলেন এটা আমাদের সেই সব তথাকথিত জাঁদরেল বা ঝানু আমলাদের কাজের দক্ষতার একটা নমুনা । তাঁরাই দ্রুত পদোন্নতি পেয়েছেন , রাষ্ট্রের জন্য সর্বযুগে অপরিহার্য ( INEVITABLE ) বলে বিবেচিত হয়েছেন চাকুরিরত থাকাকালে এবং চাকুরিশেষে অবসরকালে। আর আমি ২০০৫ এ অবসরকালে দু’টি পদোন্নতি থেকে বঞ্চিত হই। হা হা হা !

মন্তব্য ৯ টি রেটিং +৬/-০

মন্তব্য (৯) মন্তব্য লিখুন

১| ০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ৯:২৪

প্রামানিক বলেছেন: ভাই যারা কাজ করে তাদেরই ঠকতে হয়, যারা কাজ করে না তারা প্রমোশন পায়।

২| ০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ৯:২৯

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: রাষ্ট্রীয় এই সব কাজের কি কোন জবাব দিহীত নেই?

যারা এই সব অবহেলায় জড়িত তাদের বিচারের আওতায় আনার কোন নিয়ম কি নেই?

২ মাসের কাজ ৭ বছর ঘুরানোর জন্য প্রয়োজনে তাদের মরনোত্তর বিচার হওয়া উচিত!!!

কি অর্থব আমলাতান্ত্রিকতা!!

০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ১০:০৭

মােঃ ফজলুর রহমান বলেছেন: এসব অবহেলার জন্য শাস্তির বিধান কাগজে-কলমে আছে , বাস্তবে নেই।

৩| ০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ১২:০৫

কালীদাস বলেছেন: সচিবালয়ের এই হয়রানি দেওয়া লোকগুলোর জন্য মাঝে মাঝে করুনা জাগে মনে। খালি ফলোআপ করতে ইচ্ছা করে, মানুষকে যে পরিমাণে কষ্ট দেয় এরা, এদের জীবনে সেগুলো ফিরে আসে কিনা।

৪| ০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ১:১৬

ধুন্দুলওয়ালার দাঁত ব্যথা!! বলেছেন: এইটাই দেখি সবখানে। ইচ্ছা থাকলে কত কি যে করা যায় আমি নিজেই জানি। কেবল নিজের কাজ আর দেশের প্রতি অল্প মায়া লাগে। এমন না যে অনেক কস্ট করা লাগে। ২ মাসে ওই কাজটা করছিলেন আপনি, খাটনি মনে হয় ১০-১২ ঘন্টার বেশি দিতে হয়নাই, একটু খেয়াল করা আর তাগাদার উপরে রাখা। এতেই কাজ হয়, এইটাও কেউ করেনা।

৫| ০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ সকাল ১০:২৯

হাসান বিন নজরুল বলেছেন: এই ক্ষণিকের পৃথিবী যিনি সৃষ্টি করেছেন তিনি এদের জন্য উপরে শাস্তির ব্যবস্থা রেখেছেন বলেই এরা এখানে ক্ষণিকের অবকাশ পাচ্ছে।

৬| ০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ৮:৫৯

থিওরি বলেছেন: আপনার কাজের জন্য স্যালুট।
এভাবে আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় আরো কত ফাইল যে বস্তাবন্দী!!!

৭| ০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ১০:০১

ঢাকাবাসী বলেছেন: পৃথিবীতে আমার দেখা সরকারী আমলা বা কর্মচারীদের মধ্যে সবচাইতে নিকৃস্ট অপদার্থ অদক্ষ অশিক্ষিত (?) দুর্ণীতিবাজ লোকেদের ম্যাক্সিমাম বাংলাদেশী। আপনাকে ধরছিনা। প্রায় পন্চান্ন বছর আগে পড়েছিলুম কিষন চন্দরের একটা এরকম একটা গল্প, লাল ফিতার গল্প।

৮| ১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ৯:১৭

মােঃ ফজলুর রহমান বলেছেন: পাঠ করার জন্য এবং মন্তব্য করার জন্য সকলকে ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.