নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

যুক্তির মাঝেই সমাধান খুঁজি।

উড়ন্ত বাসনা

জীবন কে ভালবাসি।

উড়ন্ত বাসনা › বিস্তারিত পোস্টঃ

ওদের নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না কিছুতেই

০৯ ই জানুয়ারি, ২০১৭ সকাল ১০:৩৫

সংশোধিত না হলে দল থেকে বহিষ্কার করা হবে বলে অপকর্ম সংগঠনকারী নেতাকর্মীদের সতর্কও করে দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, যারা অপকর্ম করে তাদের সংশোধন হতে হবে। যারা সংশোধন হবে না তাদের দল থেকে বের করে দিতে হবে। প্রথমে সংশোধন করব; যারা সংশোধন হবে না তাদের দল থেকে বহিষ্কার করা হবে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা ছাত্রলীগ-যুবলীগকে বিতর্কের ঊর্ধ্বে রাখতে বেশ কিছু পরামর্শ দিয়েছেন। এ ব্যাপারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. ফেরদৌস হোসেন বলেন, যেহেতু আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায়, তাই তাদের সহযোগী সংগঠন ছাত্রলীগের ব্যাপারে কঠোর হতে হবে। বিতর্কিতদের দিয়ে সংগঠনের কমিটি করা যাবে না। নিয়মিত ছাত্রদের দিয়ে কমিটি করতে হবে। ত্যাগী কর্মীরা যেন কোণঠাসা না হয়। যেন পকেট কমিটি কোথাও না হয়, সেটা লক্ষ রাখতে হবে। বিশেষ করে এসব সংগঠনকে কিছুতেই মূল দলের লেজুড়বৃত্তি করা যাবে না। স্বাধীনভাবে কাজ করতে দিতে হবে। কোনো অন্যায় হলে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা থাকতে হবে। তবে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে

বিতর্ক পিছু ছাড়ছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন ছাত্রলীগ-যুবলীগের। নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না কিছুতেই। বেপরোয়া মনোভাব নিয়ে একের পর এক নানা অঘটনের জন্ম দিয়েই যাচ্ছে সংগঠনগুলো। একদিকে যেমন অভ্যন্তরীণ কোন্দলের জের ধরে নিজেদের মধ্যে ঘটছে সংঘর্ষ-সংঘাত ও প্রাণহানির ঘটনা; তেমনি ক্ষমতার দাপটে কারণে-অকারণে হামলা করছে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের ওপর। টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, নিয়োগ বাণিজ্য থেকে শুরু করে ছোটখাটো ছিনতাইয়ের অভিযোগও যেমন আসছে; তেমনি পাড়া-মহল্লায় অলিগলিতে তুচ্ছ ঘটনার জের ধরেও ঘটছে তুলকালাম। রাস্তাঘাট বন্ধ করে মানুষকে যানজটে ফেলে পালন করছে বিভিন্ন অনুষ্ঠান। শাসকদলের বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের এখন কিছুটা সমীহ করেই চলতে হয় স্থানীয় মানুষদের।

সংগঠনের সূত্রগুলো বলছে, এতদিন ধরে ‘বিশৃঙ্খল’ ছাত্রলীগকে দেখাশোনার দায়িত্ব ছিল সংগঠনের সাবেক সভাপতি ওবায়দুল কাদেরের ওপর। আওয়ামী লীগের এবারের কাউন্সিলে তিনি সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়ে যাওয়ার পর সহযোগী সংগঠন ছাত্রলীগের ভালো-মন্দ দেখাশোনার ভার কারো ওপর ন্যস্ত হয়নি। আর এ ‘সুযোগে’ ছাত্রলীগের ‘বেপরোয়া’ নেতাকর্মীরা একের পর এক ‘অঘটন’ ঘটিয়ে যাচ্ছেন—এমন অভিযোগও রয়েছে।
ছাত্রলীগের সাবেক নেতারাও বলছেন, সংগঠনটি অনেকটা নিয়ন্ত্রণহীন। বৃহৎ সংগঠন হওয়ায় কেন্দ্রীয় নেতাদের পক্ষে সবাইকে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হচ্ছে না। পাশাপাশি স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের প্রভাবের কারণেও স্থানীয় পর্যায়ের ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের নানা ‘অপকর্মে’ জড়ানোর ঘটনা ঘটছে।

আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর প্রথম বছরের মতো দ্বিতীয় বছরও দলটির সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের বিভিন্ন কর্মকা- ও অপতৎপরতায় সমালোচনার ঝড় ছিল। বারবার চেষ্টা করেও ছাত্রলীগ ও যুবলীগকে তারা নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেনি। প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায় থেকে অব্যাহত হুশিয়ারি তাদের দমাতে পারেনি। একপর্যায়ে ছাত্রলীগ, যুবলীগের দায়িত্ব আওয়ামী লীগ নেবে না বলে দলের শীর্ষ পর্যায় থেকে মন্তব্য করা হয়। এ ছাড়া ছাত্রলীগ এখন আর আওয়ামী লীগের অঙ্গ বা সহযোগী সংগঠন নয়, ছাত্রলীগের মধ্যে শিবির ঢুকে সন্ত্রাসী তৎপরতা চালাচ্ছে—এ ধরনের নানা মন্তব্যও শোনা যায়।
বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়, গত ২৪ মাসে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে প্রায় ২৩৫টি অভ্যন্তরীণ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে শতাধিক। এসব ঘটনায় ছাত্রলীগের ৪ শতাধিক নেতাকর্মী বহিষ্কার এবং সংগঠনের ১২টি কমিটি বিলুপ্ত করা হয়। এসব সংঘর্ষের অধিকাংশ ঘটনাই ঘটে দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সংগঠিত সংঘর্ষের সংখ্যা ১৮৭টি এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বাইরে ৪৮টি। এসব সংঘর্ষে নিহত হয়েছেন ১৬ জন এবং আহতের সংখ্যা প্রায় তিন হাজার। এসব ঘটনায় ৫শর বেশি ছাত্রলীগ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলাও হয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ঘটে যাওয়া এসব ঘটনার কারণে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়সহ ৪৮টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বিভিন্ন মেয়াদে বন্ধ ঘোষণা করা হয়। ছাত্রলীগের পাশাপাশি যুবলীগও নানা অপকর্ম ও সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।

এ বছরের গত ছয় দিনেও ছাত্রলীগ বেশ কিছু বিতর্তিক ঘটনার জন্ম দিয়েছে। এর মধ্যে গত ৫ জানুয়ারি নেত্রকোনায় দলীয় কোন্দলের জেরে নেত্রকোনা শহরে স্থানীয় এক ছাত্রলীগ নেতাকে কুপিয়ে জখম করা হয়েছে। একই দিন নাশকতা সৃষ্টির পরিকল্পনা করার অভিযোগ এনে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) শাখা ছাত্রদলের সহসভাপতি নবীনুল ইসলাম নবীনকে বেধড়ক পিটিয়েছে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এ ছাড়া গত বছরের ৩০ অক্টোবর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলায় ঘটনায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা যে জড়িত তা এখন স্পষ্ট। সে ঘটনায় গত বৃহস্পতিবার স্থানীয় যুবলীগের জেলা কমিটির সাবেক সদস্য দেওয়ান আতিকুর রহমান আঁখিকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এর আগে এ হামলায় জড়িত থাকার অভিযোগে নাসিরনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-প্রচার সম্পাদক আবুল হাসেম, হরিপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ফারুক আহমেদ ও চাপৈরতলা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি সুরুজ আলীকে দল থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়। এর আগে ১৮ অক্টোবর ঝিনাইদহে ৬৫ বছরের এক মুক্তিযোদ্ধাকে নির্যাতনের অভিযোগও স্থানীয় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতাদের বিরুদ্ধে। সে বছরের ২৭ অক্টোবর গুলিস্তানে অবৈধ দোকান উচ্ছেদের সময় হকারদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে ছাত্রলীগের কিছু নেতাকর্মী। এ সময় প্রকাশ্যে গুলি করে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাব্বির হোসেন ও ওয়ারী থানা শাখার সাধারণ সম্পাদক আশিকুর রহমান। পরে তাদের সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়। এর আগে গত ৩ অক্টোবর সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক বদরুল আলম কলেজ ছাত্রী খাদিজা আক্তার নার্গিসকে বর্বরভাবে কুপিয়ে আহত করেন। এ ঘটনার পরে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে বদরুল ছাত্রলীগের কেউ নয়। তবে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ থেকে খবর পাওয়া গেছে, তিনি ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক। ২৭ মে বরিশালে ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের জের ধরে পলিটেকনিক ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক রেজাউল করিম মারা যান। ২৯ মার্চ দুপুরে চট্টগ্রামের প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়াসা মোড় ক্যাম্পাসে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের দুপক্ষের সংঘর্ষে ছুরিকাঘাতে মারা যান সংগঠনটির চট্টগ্রাম নগর কমিটির উপ-সম্পাদক নাসিম আহমেদ সোহেল। ২১ মার্চ নোয়াখালী সরকারি কলেজের পুরনো ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে নোয়াখালী সরকারি কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সদস্য ফজলুল হুদা, জেলা ছাত্রলীগের সদস্য সাইফুল ইসলাম ও ছাত্রলীগের সাবেক নেতা ইয়াসিন মারা যান। ১৯ জানুয়ারি সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষে মারা যান নিজেদের কর্মী কাজী হাবিবুর রহমান। ২০ মার্চ ছাত্রলীগের বালু উত্তোলনকে কেন্দ্র করে হবিগঞ্জ সদর উপজেলার মশাজান-নোয়াবাদের গ্রামবাসীর মধ্যে সংঘর্ষের সময় তাসপিয়া প্রমি নামের এক শিশু নিহত হয়।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.