নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

যুক্তির মাঝেই সমাধান খুঁজি।

উড়ন্ত বাসনা

জীবন কে ভালবাসি।

উড়ন্ত বাসনা › বিস্তারিত পোস্টঃ

বেকারদের নিয়ে কি সরকারের উদ্বেগ হয় না?

২৩ শে জুলাই, ২০২১ রাত ১০:৩৩

তিউনিসিয়ার কোস্টগার্ড ইউরোপে যাওয়ার পথে ভূমধ্যসাগর থেকে ২৬৪ জন বাংলাদেশিকে উদ্ধার করেছে। লিবিয়া থেকে ইউরোপে যাওয়ার সময় মোট ২৬৭ জন নাগরিককে উদ্ধার করে কোস্টগার্ড। ২৬৪ জন বাংলাদেশি, আর তিনজন মিশরীয় নাগরিক। ২৫ জুনের এমন সংবাদ প্রচার হয় টিভি মিডিয়াতে! বিষয়টি উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠার।

গ্রিক, ব্রুনেই, ইতালি, সিঙ্গাপুর, লেবানন, মালদ্বীপ, ইরাক যেখানে সামান্য কাজের সুযোগ আছে, সেখানে বাংলাদেশি নারী ও পুরুষ বড় ধরনের সম্পদ ছেড়ে পাড়ি জমান। কেউ কেউ টিকে যান। আবার অনেকে দুর্বিষহ অভিজ্ঞতা নিয়ে দেশে ফিরে আসেন। এমন গল্প পত্রিকায় বিভিন্ন সময় ওঠে আসে। বিভিন্ন দেশে নারীদের গৃহকর্তার দ্বারা যৌন নির্যাতনের শিকারের খবরের শিরোনামে আসে গণমাধ্যমে। যারা অসম্মানিত হন, নির্যাতনের শিকার হন, সেই নারীদের খবর উন্নয়নের মহাযজ্ঞ আর মানবতাওয়ালারা তথা রাষ্ট্রের নীতিনির্ধারকেরা রাখেন না। তবে প্রবাসী আয়ের ঠিকিই হিসাব কষেন। বেকারত্ব সব সময়ই ছিল। এটা শুধু এই সরকারের সময়েই নয় সব সরকারের সময়ের বড় সমস্যা।

মহামারি করোনাতে সংখ্যাটা বেড়েছে দেড় বছরে। করোনাতে বিশাল অঙ্কের নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবার দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে গেছে। এমন পরিসংখ্যান দিচ্ছেন বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা। আপদকালীন সময়ে সকল প্রকার নিয়োগপ্রক্রিয়া প্রায় বন্ধ থাকায় সেটি আরও প্রকট হয়ে উঠেছে। এ নিয়ে সরকারের টেনশন আছে কিনা তাও বোঝা যাচ্ছে না।

বাজেটে যে বিষয়টি উপেক্ষিত রয়েই গেছে তা হলো বেকার ও নতুন গরিব হওয়া জনগোষ্ঠী। তাদের নিয়ে অর্থমন্ত্রী জাতিকে কিছু দিতে পারেননি। অনেক লেখালেখির পরও বাজেটে এ নিয়ে নতুন সিদ্ধান্ত আসেনি। শেষমেশ বাজেট পাশ হয়ে গেল। এবারের বাজেট ব্যবসায়ীদের স্বার্থে এটা সোজাসাপটা কথা। আবার ধনী বান্ধব বললেও ভুল হবে না।

মহামারি করোনার ধাক্কাটা যে কতো প্রকট তার হিসাব সরকারি সংস্থার কাছে না থাকলেও বেসরকারিভাবে উঠে এসেছে। তৈরি পোশাক শিল্পের কয়েক লাখ শ্রমিক চাকুরি হারিয়েছেন। প্রবাসেও এর প্রভাব পড়ায় দেশে ফিরে আসতে বাধ্য হয়েছেন লাখো শ্রমিক যাদের সরকার শখ করে নাম দিয়েছেন রেমিটেন্স যোদ্ধা। দেশে ফেরৎ প্রবাসীরা নতুন বেকার। অনেকে ছুটিতে দেশে এসেছিলেন তারাও যেতে পারেননি।

আইএলও সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছেন-মহামারির কারণে সবচেয়ে ঝুঁকিতে আছেন তরুণ শ্রেণি। উঠতি বয়সের তরুণ যাদের বয়স ২৪ তাদের মধ্যে ২৪.৮ শতাংশ বেকার হয়েছেন! তরুণদের মধ্যে বেকারের হার কয়েকগুণ বেড়েছে। আর যেহেতু কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ দীর্ঘকালীন সময় জুড়ে সেহেতু স্নাতক শেষ বর্ষের শিক্ষার্থীরা তাদের পরীক্ষা শেষ করতে পারেনি। আটকে আছেন তারা, কোনো চাকুরী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারছেন না। দেড় বছর ধরে নিয়োগ পরীক্ষা আটকে আছে। তাদের জন্য সরকারের চিন্তার উদয় হচ্ছে কি তাও স্পষ্ট না। অনেকের বয়স সীমা পার হয়ে গেছে, অনেকের যায়যায় অবস্থা। অন্তত চাকুরীর পরীক্ষার সুযোগ দিতে হবে প্রার্থীদের।

জানা গেছে সরকারি প্রতিষ্ঠানে প্রায় চার লাখের মতো পদ খালি আছে। এই কঠিন মহামারি বিপর্যয়ের সময়ে সরকারের ভাবা উচিৎ চাকুরী প্রবেশের বয়স বৃদ্ধি করা। বিভিন্ন দেশ তাদের এই মহামারি সময়ে নাগরিকদের বিভিন্ন সুবিধা দিলেও সরকার দেশে দিতে পারেনি। প্রণোদনার নামে ইঁদুর বিড়াল খেলা খেলেছে। চলতি লকডাউনে সরকার তড়িৎ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। শ্রমজীবী মানুষের কথা ভাবা হয়নি। ভাবা হয়নি দিন উপার্জন করে সংসার চালানো লোকদের কথা। যারা নিয়মিত কাগজের পত্রিকা পড়েন তারা অন্তত জানেন দেশের শ্রমজীবী মানুষের জীবনের করুণ গল্প কেমন এই চলতি লকডাউনে।

সরকারি উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান বিআইডিএসের তথ্যমতে, দেশে মাধ্যমিক থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী তরুণদের এক-তৃতীয়াংশ পুরোপুরি বেকার! শিক্ষিত যুবকদের মধ্যে সম্পূর্ণ বেকার ৩৩ দশমিক ৩২ শতাংশ। বাকিদের মধ্যে ৪৭ দশমিক ৭ শতাংশ সার্বক্ষণিক চাকরিতে, ১৮ দশমিক ১ শতাংশ পার্টটাইম বা খণ্ডকালীন কাজে নিয়োজিত। জরিপ অনুযায়ী, শিক্ষা শেষে এক থেকে দুই বছর পর্যন্ত বেকার ১১ দশমিক ৬৭ শতাংশ, দুই বছরের চেয়ে বেশি সময় ধরে বেকার ১৮ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ। ছয় মাস থেকে এক বছর পর্যন্ত বেকার ১৯ দশমিক ৫৪ শতাংশ। এটি ২০১৯ সালের ডিসেম্বরের তথ্য। এমন তথ্য অনেক ছাপা হয়েছে পত্র-পত্রিকায়।

এমন তথ্য দেখে উদ্বিগ্ন না হয়ে পারা যায় না। জরিপে শিক্ষিত যুবকদের মধ্যে বেকারত্বের হার বেশি। দেড় বছরে এর সংখ্যাটা বেড়েছে বরং কমেনি। বাংলাদেশে বেকারত্বের ভয়াবহতা জানতে কোনো জরিপের প্রয়োজন হয় না। শুধু শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দেখলেই অনুমেয়।

বেসরকারি কোনো সংস্থা এই জরিপ করলে সরকারের নীতিনির্ধারকেরা হয়তো অসত্য বলে মিথ্যার তকমা দিতো। দেশি-বিদেশি প্রায় সব জরিপ ও পরিসংখ্যানেই বাংলাদেশে শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর মধ্যে উচ্চ বেকারত্বের তথ্য-উপাত্ত উঠে এসেছে। ইকোনমিক ইনটেলিজেন্স ইউনিটের জরিপে বেশ কয়েক বছর আগে বলা হয়েছিল, বিশ্বে বাংলাদেশেই শিক্ষিত বেকারের হার সর্বোচ্চ।

স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণি পেলেও দেশে ভালো চাকরির নিশ্চয়তা নেই। এমন গল্প দেখা যায় পত্র-পত্রিকায়। উচ্চশিক্ষায় দুর্দান্ত ফল অর্জনকারীদের মধ্যে ২ থেকে সাড়ে ৩৪ শতাংশ বেকার। আবার যারা চাকরি পান, তাদের ৭৫ শতাংশেরই বেতন প্রত্যাশামূলক না।

যদি বলা হয় বেকার কী? আন্তর্জাতিক সংজ্ঞায় সংজ্ঞায়িত করলে হয় আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার সংজ্ঞা অনুযায়ী, কাজপ্রত্যাশীদের মধ্যে সপ্তাহে ন্যূনতম এক ঘণ্টা মজুরির বিনিময়ে কাজের সুযোগ না পেলে বেকার হিসেবে ধরা হয়। বাংলাদেশে এমন বেকার ২৭ লাখ। হতাশার বিষয় হলো মাস্টার্স পাস করেও দশ হাজার টাকা বেতনের চাকরি না পাওয়া। পরিবার ও সরকার যে বিনিয়োগ করলো বছরের পর বছর, সেটা কাজে লাগলো না। এভাবেই শিক্ষিত শ্রমশক্তির অপচয় হচ্ছে।

করোনায় কাজ হারিয়ে শহর থেকে বিপুলসংখ্যক শ্রমজীবী মানুষ গ্রামে ফিরে গেছেন গত বছর আবার চলতি লকডাউনেও কর্ম হারিয়েছেন যার হিসাব এখনও আসেনি। তাই শুধু শহরকেন্দ্রিক কর্মসংস্থান না করে গ্রামাঞ্চলে যাতে বেশি কর্মসংস্থান হয়, সেদিকে নজর রাখতে হবে। কৃষি খাতে বেশি কর্মসংস্থান হয়, দ্রুত কৃষি প্রণোদনার অর্থ ছাড় করতে হবে। যদিও বাজেটে গত অর্থবছর থেকে তেমন একটা বাড়েনি ২০২১-২২ অর্থবছরে।

গত মার্চে সাধারণ ছুটিতে অর্থনীতি কার্যত অচল হয়ে গেলে অসংখ্য মানুষ তাদের কর্মক্ষেত্র হারান। কয়েকমাস পর অর্থনীতি আবার সচল হলেও অনেকেই কাজ ফিরে পাননি। এ নিয়েও সরকার কিছু ভেবেছেন বলে মনে হয় না। প্রতিবছর দেশে ২১-২২ লাখ মানুষ কর্মবাজারে যোগ হচ্ছেন। সরকারি-বেসরকারি খাতে খুব বেশি হলে ৭ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হয়। আরও কয়েক লাখ বিদেশে কাজের সুযোগ পান।

কর্মসংস্থান বাড়ানোর জন্য বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ বৃদ্ধির বিকল্প নেই। কিন্তু এক দশক ধরেই মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) অনুপাতে বেসরকারি বিনিয়োগের অংশ ২২-২৩ শতাংশের মধ্যে ঘুরাঘুরি করছে।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২৩ শে জুলাই, ২০২১ রাত ১১:০২

চাঁদগাজী বলেছেন:


বাজেটে বেকারদের জন্য কি করা সম্ভব?

২| ২৪ শে জুলাই, ২০২১ রাত ১:২০

আমারে স্যার ডাকবা বলেছেন: বেকারদের নিয়ে সরকারের অনেক অনেক পরিকল্পনা ও প্রজেক্ট আছে। যা সরকারের আমলা ও রাজনীতিবিদদের পকেট ভরাচ্ছে।

যখন কোন দেশে সরকার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় ক্ষমতায় আসে, যখন বিরোধীদলও সরকারের মন্ত্রীসভায় থাকে এবং সরকারের সব কিছুতে "জ্বি হুজুর" নীতি ধারন করে, যখন ক্ষমতার বাইরে থাকা দেশের বৃহৎ রাজনৈতিক দলগুলোও জনগনের স্বার্থে কোন আন্দোলন/সংগ্রাম করে না, তখন এমনই হয়।

৩| ২৪ শে জুলাই, ২০২১ দুপুর ১২:২২

রাজীব নুর বলেছেন: আমি দীর্ঘদিন ধরে বেকার আছি।
সমস্য গুলো কোথায় এবং কি কি তা আমি খুব ভালো করেই জানি!

৪| ২৪ শে জুলাই, ২০২১ বিকাল ৩:০৬

সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: কারণ বেকাররা সবচেয়ে দুর্বল প্রজাতি। সুন্দর লিখেছেন। আপনার লেখার শেষের দুইটা লাইন নিয়ে আমাদের ভাবা উচিত। বিনিয়োগ ও শিল্পায়ন ছাড়া এই অতি জনসংখ্যার দেশে বেকারত্ব একটা অভিশাপ। বেকারত্ব দূর করতে পারলে অন্য অনেক সমস্যা মানুষ নিজেই সমাধান করতে পারে। মানুষ দান, খয়রাত চায় না। মানুষ চায় ব্যবসা বা পেশার জন্য উপযুক্ত পরিবেশ। আর চাকরিজীবীরা চায় একটা চাকরি। তবে আমাদের যুব সমাজের একটা বড় অংশ আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষা পাচ্ছে না যার দ্বারা দেশে বা বিদেশে ভালো চাকরি পাওয়া যেতে পারে। কোম্পানিগুলি কয়েক শ সিভির মধ্যে ভালো প্রার্থী পেতে হিমশিম খায়।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.