নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি চিন্তা করি....সুতরাং আমি অস্তিত্বশীল

সাজ্জাতুল ইমরান ফয়সাল

একজন সাধারণ মানুষ

সাজ্জাতুল ইমরান ফয়সাল › বিস্তারিত পোস্টঃ

দাদাদের দেশে গিয়েছিলাম

০১ লা নভেম্বর, ২০১৭ বিকাল ৫:৩০


কলকাতা এক আজব শহর। আজব বলছি এই কারণে যে - সবাই যেখানে আধুনিকতার দিকে ধাবমান এবং পরিবর্তনের সাথে খাপ খাওয়াতে ব্যস্ত, সেখানে কলকাতা বেশ অনেক ক্ষেত্রেই সংরক্ষনশীলতার পরিচয় বহন করে চলছে। তাদের এমন ধ্যান ধারণার প্রাথমিক ধারণাই আমি পেয়েছি বেনাপোল বর্ডার ক্রস করেই। সর্বপ্রথম আমার নজরে আসলো তাদের বাংলা লেখার ফন্ট গুলো। সংস্কৃতি ভাবসম্পন্ন এক আদিম ছাপ রয়েছে তাদের লেখনীতে। দোকানের নেম প্লেটে কিংবা কোনো বিল বোর্ডে সবখানেই বাংলা অক্ষরগুলো দেখে মনে হচ্ছিল সেগুলো অপুষ্টিজনিত রোগে আক্রান্ত !!

বর্ডারের কাস্টমস আর ইমিগ্রেশন খুব পীড়াদায়ক এক বিষয় মনে হয়েছে , তাই যখন তা অতিক্রম করে ভারত সীমান্তে ঢুকলাম কিছুটা শান্তি অনুভব করলাম। এলাকার নামগুলো পড়ে পড়ে যাচ্ছিলাম। আমাদের দেশে গ্রামের দিকে মানুষ জন ঘর বাড়ি বানায় রাস্তা থেকে বেশ ভেতর দিকে আর রাস্তার পাশে বানালেও বাড়িগুলো থাকে রাস্তার দিকে পেছন দিয়ে। কিন্তু সেখানে দেখতে পাচ্ছিলাম সব ঘরগুলো রাস্তা থেকে একটু দূরে কিন্তু রাস্তার দিকে ফেরানো এবং বেশ খোলামেলা।ফলে দূরপাল্লার বাসে বসেই দেখলাম - কেউ সবজি কাটছে , কেউ বা আরামসে ঘুম দিচ্ছে আর কেউ বা করছে স্নান !!

বনগাঁও, গাইঘাটা, হাবড়া এইসব নাম পড়ে পড়ে একপর্যায়ে ঘুমিয়েই পড়েছিলাম। ঘুম থেকে উঠেই দেখি কলকাতা শহরের মধ্যেই প্রায় ঢুকে পড়েছি। যা হোক - কলকাতা নেমেই প্রথমেই যেই ধাক্কাটা খেলাম তা হলো - মানুষজনের মধ্যকার রুক্ষতা। আমি যার সঙ্গেই কথা বলতে চাই, চরম অনীহা মূলক জবাব পাচ্ছিলাম। একটি কথা দ্বিতীয় বার জিজ্ঞেস করতেই যেন রাজ্যের বিরক্তি তাদের চেহারায়। সেক্ষেত্রে এমন কটু কথা শুনতে হচ্ছিলো যে থ হয়ে যাচ্ছিলাম। অনেক কষ্টে নিজেকে সামলে নিয়ে এবং খাপ খাওয়ানোর সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছিলাম।

কলকাতার খাবার খেতে গিয়ে দ্বিতীয় ধাক্কা খেয়ে ফেললুম !! সুন্দর সুন্দর পারফিউম খাবার গুলোতে ব্যবহৃত হয়ে থাকে বলেই আমার ধারণা। মুরগির মাংসে গোলাপের গন্ধ পাই তো মাছের তরকারিতে পাই বেলি ফুলের। এক মহা বিড়ম্বনা ই বৈকি !! আর মুখে দেবার সাথে সাথেই অনুভব করতে পারি কেউ যেন ১০ নিউটন বল নিয়ে গালের মধ্যে চড় বসিয়ে দিলো !
বিস্বাদ , অস্বাদ নাকি কুস্বাদ আভিধানিক অর্থে কোনটা সঠিক জানিনা তবে কলকাতার খাবারগুলোর সাথে এগুলোর যেকোনো উপমা ই অনায়াসে বসিয়ে দেয়া যায়। আমাদের দেশে খাবারের সাথে সালাদ ফ্রি দেয়া হয় , কিন্তু সেখানে সালাদের দাম অন্যান্য তরকারির দামের চেয়ে কোনো অংশে কম নয়। তবে - শুধু মাত্র বড় বাজারের এক দোকানে বিরিয়ানি খেয়ে বেশ ভালোই লেগেছিল - যাতে বাসমতি চাল এর সাথে আলু বোখারা ও কাজু বাদামের মজাদার কম্বিনেশন ছিল।

কলকাতার মানুষ যে হিসেবি তা সবাই জানে, তার একটি স্পষ্ট উদাহরণ হলো - বিল যদি সাতশত একানব্বই টাকা আসে তবে তারা সাতশত একনব্বই টাকা ই রাখবে , ভুলেও এক টাকা কমিয়ে সাতশত নব্বই টাকা রাখবে না।

কলকাতার অধিবাসীরা তাদের সংরক্ষনশীলতার ছাপ রেখে দিয়েছে আরো একটি বিষয়ে আর তা হলো হাতে টানা রিক্সা। বিষয়টি আমার কাছে চরম অমানবিক মনে হয়েছে। একজন বয়স্ক মানুষ পায়ে হেটে ও হাতে টেনে রিক্সা টানছে আর আমি তার ঘাড়ের উপর বসে আছি - ভাবতেই একটা খারাপ লাগা কাজ করে।মনে মনে ভাবি - ফোর জি'র ভারতে আজ ও উলঙ্গ দাসবৃত্তি !!

একদিন বাইরে চা খাবো ভাবছি। চায়ের দোকান খুঁজতেই দেখি রাস্তার এক কোণে দুজন লোক বসে চা খাচ্ছেন কিন্তু তাদের হাতের চায়ের কাপ দেখা যাচ্ছে না। আরেকটু কাছে যেতেই দেখি - বোতলের ছিপির সমান একটি মাটির তৈরী পাত্রে তারা চা খাচ্ছে। ব্যাপার টা আরো হাস্যকর মনে হলো যখন দেখলাম তারা বেশ অনেক্ষন সময় ব্যায় করে, গল্প স্বল্প করে করে চায়ে চুমুক দিচ্ছে। আমার মনে তখন একটি ই প্রশ্ন "এক ঢোক চা কয় চুমুকে খাওয়া যায় !!??!!"

এতক্ষন কলকাতার এক গাদা দোষের পসরা সাজালাম, এবার পজেটিভ কিছু বলতে চাই। কলকাতার যানবাহনে চলাচল তথা যোগাযোগ ব্যবস্থা ঢাকার চেয়ে যথেষ্ট উন্নত। ট্রাফিক জ্যাম মুক্ত রাস্তা, দ্রুতগামী মেট্রো রেল, কম ভাড়ার সহজলভ্য লোকাল বাস, পর্যাপ্ত অটো ও ট্রাম এ শহরের যোগাযোগ ব্যবস্থাকে যথেষ্ট শক্তিশালী করেছে। আর সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য যে বিষয়টি আমার নজর কেড়েছে তা হলো - নিয়মানুবর্তিতা। নিয়ম মেনে বাসে বসা হতে শুরু করে রাস্তা পার হওয়া সবকিছুতেই প্রচন্ড সিস্টেম মেনে চলে তারা। আমাদের ঢাকা ও এমন হবে সেই স্বপ্ন দেখি।

পরিশেষে এক বিশেষ অনুভূতি ব্যক্ত করবো। কলকাতার সীমানা ছাড়িয়ে যখন বাংলাদেশে প্রবেশ করি তখন - এক টানা ২ মিনিট নিঃশাস বন্ধ করে রেখে তারপর শ্বাস নিলে যেমন প্রশান্তি লাগবে ঠিক তেমন লাগছিলো। আমার রক্ত কণিকায় অক্সিজেন এর পরিমান যেন শত গুন্ বেড়ে গিয়েছিলো। কত শত অপরিচিত বাঙালিদেরকেও দেখে মনে হচ্ছিলো তারা আমার অনেক পরিচিত , অনেক আপন। আমি তখন উপলব্ধি করতে পারি - আমি আমার জন্মভূমিকে কতটা ভালোবাসি।

মন্তব্য ২১ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২১) মন্তব্য লিখুন

১| ০১ লা নভেম্বর, ২০১৭ বিকাল ৫:৩৫

মাকার মাহিতা বলেছেন: আমি যেতে চাচ্ছি? ভিসা প্রসেসিং কি ভাবে একটু জানাবেন? নিজে নিজে ভিসার জন্য কি এপ্লাই করা যায়?

আপনার ভ্রমন লেখা ভাল লেগেছে । ছবি দিলে আরও ভাল হতো...

০২ রা নভেম্বর, ২০১৭ সকাল ৯:১২

সাজ্জাতুল ইমরান ফয়সাল বলেছেন:

আমি প্রথমেই বি আর টি সি বাসে টিকেট কেটেছি। তারপর অনলাইন এ ফর্ম ফিল আপ করে প্রয়োজনীয় কাগজ সংযুক্ত করে শ্যামলী তে ইন্ডিয়ান ভিসা প্রসেসিং সেন্টার এ দাঁড়িয়েছি। প্রথম দিন পাসপোর্ট জমা দিয়ে আসলে এক সপ্তাহের মধ্যে আরেকটা ডেট দেয়। সেই ডেটে গিয়ে ভিসা নিয়ে আসলাম। ধন্যবাদ রইলো

২| ০১ লা নভেম্বর, ২০১৭ বিকাল ৫:৩৮

স্নিগ্দ্ধ মুগ্দ্ধতা বলেছেন: দারুণ লাগল।

০২ রা নভেম্বর, ২০১৭ সকাল ৯:১৩

সাজ্জাতুল ইমরান ফয়সাল বলেছেন: অশেষ ধন্যবাদ

৩| ০১ লা নভেম্বর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:২৪

মোহাম্মদ আলী আকন্দ বলেছেন:


অল্প কথায় চমৎকার লিখেছেন।
আমি অনেক আগে কোলকাতা গিয়েছিলাম।
তখনকার আমরা অভিজ্ঞতা আর এখনকার আপনার অভিজ্ঞতা একই রকমের, এত বছরে কিছুই যেন বদলায় নি।

০২ রা নভেম্বর, ২০১৭ সকাল ৯:২৩

সাজ্জাতুল ইমরান ফয়সাল বলেছেন: ধন্যবাদ।
আসলেই অনেক কিছু বদলায়নি।

৪| ০১ লা নভেম্বর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:৫৮

চাঁদগাজী বলেছেন:


শহরের জীবনে চা থেকে যানবাহন, শহর পরিস্কার রাখার ব্যবস্হা, সিকিুরিটিই বড় বেশী দরকার।

৫| ০১ লা নভেম্বর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:০০

চাঁদগাজী বলেছেন:


নিজের মানুষের মাঝে নিজকে স্বস্তিতে দেখা একটা অনুভুতি, উহা দেশের প্রতি আপনার ভালোবাসা মাপা কোন উপায় নয়।

০২ রা নভেম্বর, ২০১৭ সকাল ৯:২৬

সাজ্জাতুল ইমরান ফয়সাল বলেছেন: আমার এই লিখা শুধুমাত্র আনন্দ নিয়ে পড়ার জন্য। কেউ ব্যক্তিগত ভাবে নিক সেটা আমি চাই না। কারো ব্যক্তিগত অনুভূতিতে আঘাত করে থাকলে আমি দুঃখিত। ভালো থাকবেন।

৬| ০১ লা নভেম্বর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৪০

প্রামানিক বলেছেন: ১৯৮৩ সালে গিয়েছিলাম। আমারদেখা গ্রামের পরিবেশের সাথে আপনার বর্ণনার মিল পেলাম।

০২ রা নভেম্বর, ২০১৭ সকাল ৯:২৬

সাজ্জাতুল ইমরান ফয়সাল বলেছেন: ;) :)

৭| ০১ লা নভেম্বর, ২০১৭ রাত ৮:০২

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: নিজ জন্মভুমি হলো মায়ের মতো। মায়ের চেয়ে আপন আর কে আছে?

০২ রা নভেম্বর, ২০১৭ সকাল ৯:২৭

সাজ্জাতুল ইমরান ফয়সাল বলেছেন: নিজ জন্মভূমিতে বুক ভরে শ্বাস নেয়ার অনুভূতি ই অন্যরকম।

৮| ০১ লা নভেম্বর, ২০১৭ রাত ৮:২৫

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: "এক ঢোক চা কয় চুমুকে খাওয়া যায় !!??!!" =p~ =p~ =p~

- - - তখন উপলব্ধি করতে পারি - আমি আমার জন্মভূমিকে কতটা ভালোবাসি।

দারুন লাগল ভ্রমন কথা :)

+++

০২ রা নভেম্বর, ২০১৭ সকাল ৯:২৮

সাজ্জাতুল ইমরান ফয়সাল বলেছেন: অনেক অনেক ধন্যবাদ।

৯| ০১ লা নভেম্বর, ২০১৭ রাত ৮:৪১

123456789happy বলেছেন: দাদা..! আর্ধেক দিলুম, পুরোটা খেতে হবে কিন্তু B-)

০২ রা নভেম্বর, ২০১৭ সকাল ৯:৫৩

সাজ্জাতুল ইমরান ফয়সাল বলেছেন: :D =p~

১০| ০১ লা নভেম্বর, ২০১৭ রাত ৯:১২

এলিয়ান বলেছেন: শেষের কথা টা একে বারে সত্যি বলেছেন। যতবার দেশে যাই বিমান বংলাদেশের আকাশ সীমায় প্রবেশ করলে মনে হয় নিজের আকাশ, অক্সিজেনটা নিজের। অনুভুতিটা কেমন যেন প্লাটে যাই।

০২ রা নভেম্বর, ২০১৭ সকাল ৯:৫৪

সাজ্জাতুল ইমরান ফয়সাল বলেছেন: সত্যি এ এক অন্যরকম অনুভূতি

১১| ০১ লা নভেম্বর, ২০১৭ রাত ৯:১৯

টারজান০০০০৭ বলেছেন: কলকাতার মানুষজনের মানসিকতা সেই ব্রিটিশ আমলেই পড়িয়া রহিয়াছে ! উহাদের চাইতে দিল্লি , বোম্বের মানুষজন অনেক আধুনিক , অনেক উদার মন মানসিকতার !

তাহাদের ট্রাফিক সিস্টেম দেখিয়া আমিও অবাক হইয়াছি , আদ্দেক ডিমের পুরোটাই খাওয়া লোকজন এতো সুন্দর পরিবহন ব্যবস্থা কেমনে বাস্তবায়ন করিল !

০২ রা নভেম্বর, ২০১৭ সকাল ৯:৫৬

সাজ্জাতুল ইমরান ফয়সাল বলেছেন: তাদের কিছু কিছু নিয়মানুবর্তিতা দেখে আমিও বেশ অবাক। আমাদের ও নিজেদের এভাবেই পরিবর্তন করে নিতে হবে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.