নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি চিন্তা করি....সুতরাং আমি অস্তিত্বশীল

সাজ্জাতুল ইমরান ফয়সাল

একজন সাধারণ মানুষ

সাজ্জাতুল ইমরান ফয়সাল › বিস্তারিত পোস্টঃ

সিলেট ট্যুর - (দ্বিতীয় পর্ব )

০৮ ই নভেম্বর, ২০১৭ সকাল ১০:৪৮

ভোরের স্নিগ্ধ বাতাস আর সি এন জি ড্রাইভার শাহবাজ মিয়ার সাথে কথোপকথন দুটোই উপভোগ করছিলাম। এতে করেই সিলেটি মানুষদের কথা বলার স্টাইল সম্পর্কে একটা ধারণা মনে প্রোথিত হয়ে গেলো - আর তা হলো তারা মহাপ্রাণ ধ্বনি ব্যবহার করে থাকে প্রচন্ড পরিমানে । যেমন : "আমি খতা খইতাম ফারতাম নায় "....[আমি কথা বলতে পারবো না] :D

যা ই হোক, এগিয়ে যাচ্ছিলাম সিলেটের গোয়াইন ঘাটের দিকে। রাস্তা যে খুব ভালো তা বলা যাবে না তবে প্রকৃতি আর আবহাওয়া উপভোগ করতে করতে রাস্তার বন্ধুরতার প্রতি তেমন মনোযোগ দিলাম না। পথের দুই ধারে গ্রাম্য পরিবেশ, প্রচুর ধান ক্ষেত দেখতে দেখতে এগোচ্ছিলাম।দৃষ্টি সীমা যতদূর যায় ধান ক্ষেত,এই ধান ক্ষেতের ঠিক মধ্যি খানে অল্প একটু এলাকা জুড়ে ঝাঁকড়া চুলের মতন কিছু গাছপালা নিয়ে দু- একটি বাড়ি , এই দৃশ্য আমাকে খুব টেনেছে। ইচ্ছা হচ্ছিলো সেখানে গিয়ে ছোট মাছ ভুনা আর শুঁটকি ভর্তা দিয়ে ভাত খেয়ে আসি।


বিছানাকান্দি যাওয়ার পথে নৌকা ঘাটের একটু আগে একটা দোকানের সামনে থামলাম। শাহবাজ মিয়া খেলো চা ও পান, আর আমরা খেলাম শুধু চা। সেখান থেকে নৌকা ঘাটে গেলাম। আরো তিনজন অপরিচিত ট্যুরিস্টের সাথে শেয়ার করে একটা ইঞ্জিন চালিত নৌকা ভাড়া করে নিলাম ... যে খাল দিয়ে নৌকা চলছিল তা ছিল এক কথায় ঘোলা পানির অগভীর প্রবাহ, যার সর্বোচ্চ গভীরতা হবে কোমর পানি। আমাদের সামনের নৌকাতেই দেখলাম ২/৩ জন টুরিস্ট হাটু সমান পানিতে নেমে চরে আটকে যাওয়া নৌকা ধাক্কা দিচ্ছে। আমাদের নৌকাটাও প্রায় আটকে গিয়েছিলো দু এক জায়গায়, তবে নেমে ধাক্কা দিতে হয়নি।


নৌকায় যেতে যেতে দূরে নেভি ব্লু রঙের পাহাড় চোখে পড়ছিলো। কোনো কোনো জায়গায় পাহাড় আর আকাশ পৃথক করা যাচ্ছিলো না। পাহাড়কেই আকাশের একটা শেড বলে মনে হচ্ছিলো।


স্রোতের বিপরীতে প্রায় সোয়া এক ঘন্টা চলার পর অবশেষে নৌকা এসে থামলো। স্বচ্ছ পানি আর প্রচুর নুড়ি পাথরে পা রাখলাম। এতক্ষন যে নীলাভ পাহাড়ের কথা বলছিলাম , সেগুলো এখন বেশ কাছেই। পাহাড়ের পাশ দিয়ে স্বচ্ছ পানির প্রবাহ বড় বড় পাথর ধুয়ে নিয়ে কল কল ছুটে চলছে। পরবর্তী প্রায় দেড় ঘন্টা এই পানির ঢলেই নিজেকে ডুবিয়ে নিলাম ইচ্ছেমতো।



ভাগ্য ভালো যে ছবি তোলার জন্য একটা পিচ্চিকে পেয়ে গেলাম। তার নাম আশরাফুল। ক্যামেরা তার দায়িত্বে দিয়েই পানিতে নেমে উপভোগ করে নিলাম পাহাড় আর ঝর্ণা ঢলের অবারিত সৌন্দর্য আর সে ছবি তুলেই যাচ্ছিলো আমাদের।

একটাই আফসোস , পেছনের এতো সুন্দর সুন্দর পাহাড়গুলো সব ভারতের। পাহাড়ের গায়ে ছোট ছোট বাড়ি ঘর দেখা যাচ্ছিলো , সেখানে কিছু মহিলা কাজ করছিলো। আমাদের এখানথেকে একজন তো জোরে জোরে চিৎকার করে বলছিলো " এই মাসি , খিদা লাগসে , ভাত রান্না করেন "
স্বচ্ছ পানিতে হঠাৎ খেয়াল করলাম একটা জাল এর ছেড়া অংশে দুইটা মাছ আটকে ভেসে যাচ্ছিলো। আমি অনেক্ষন ট্রাই করেছিলাম ছুটানোর জন্য , কিন্তু ব্যর্থ হয়ে শেষ পর্যন্ত এভাবেই ছেড়ে দিলাম। ওই পানিতে এমনিতেও অনেক ছোট ছোট মাছ ঘুরে বেড়ায়।


দাপাদাপি শেষে ফিরতি পথ ধরলাম। আমাদের নৌকা যেটা দিয়ে এসেছিলাম - আমাদের জন্য অপেক্ষা করছিলো। স্রোতের অনুকূলে হওয়ায় এবার যেতে মাত্র আধা ঘন্টার মতো লাগলো। এবার যেন টের পেতে শুরু করলাম ক্ষিধে, তীরে পৌঁছেই দেখি সি এন জি ড্রাইভার শাহবাজ মিয়া অপেক্ষা করছেন। উনি ই জানালেন যে সেখানে দুটো খাবারের দোকান আছে। একটা দোকানে ঢুকে পড়লাম এবং হাঁসের মাংস ও আলুর ভর্তা দিয়ে জম্পেশ পেটপুজো চালালাম । কিছু কোল্ড ড্রিঙ্কস এবং চিপস নিয়ে সি এন জি তে উঠে বসলাম। এবার গন্তব্য রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্ট। ..............................চলবে।

[বি: দ্র: ট্যুরের এ পর্যন্ত খরচাপাতি :
** ঢাকা থেকে ট্রেনে শোভন চেয়ারে প্রতি টিকেট ৩২০ টাকা।
** সিলেট স্টেশন থেকে দরগাহ গেটে ব্যাটারি চালিত রিক্সা ৫০ টাকা নিয়েছে।
** ৫০০ টাকা থেকে শুরু করে বিভিন্ন রেটে হোটেল পাওয়া যায়।
** সারাদিনের জন্য ভাড়া করা সি এন জি অনেক দরদাম করে ১৪০০ টাকা।(ড্রাইভারের লাঞ্চ বিল আমরা দিয়েছিলাম।)
** বিছানাকান্দি যাওয়ার জন্য নৌকা ঘাটে ভাড়া ১৬৫০ টাকা ফিক্স করে দেয়া থাকলেও আমাদের কাছ থেকে ২০০০ টাকা নিয়েছিল, কারণ সেখানে মাঝিদের বিশাল সিন্ডিকেট।
** হাঁসের মাংস প্রতি বাটি ১০০ টাকা। ] :-B

মন্তব্য ৭ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (৭) মন্তব্য লিখুন

১| ০৮ ই নভেম্বর, ২০১৭ সকাল ১১:২০

মোস্তফা সোহেল বলেছেন: ওখানে গেলে মাঝে মাঝে পাহাড় গুলোকে দেখে মেঘ মনে হয় আবার কখনও মেঘকে দেখে পাহাড় মনে হয়।
ছবি গুলো ভাল হয়েছে।
সিলেটে গেলে সবার ওই একটিই দুঃখ মেঘালয়ের পাহাড় গুলো কেন আমাদের দেশে হল না।

০৮ ই নভেম্বর, ২০১৭ সকাল ১১:২৯

সাজ্জাতুল ইমরান ফয়সাল বলেছেন: আসলেই মেঘ আর পাহাড়ের অপূর্ব সংমিশ্রণ ছিল সেখানে। কিছু পাহাড় আমাদের দেশে হলে পাহাড়ে ওঠা যেত আর এতে ভ্রমণ টা পূর্ণতা পেতো।

২| ০৮ ই নভেম্বর, ২০১৭ সকাল ১১:৫৫

সত্যপথিক শাইয়্যান বলেছেন:
হাঁসের মাংস প্রতি বাটি ১০০ টাকা!

উলস!!!

ক্ষিধা লেগে গেলো, ভাই!!!

ওটা খাওয়ার জন্যে সিলেটে ভ্রমনের ইচ্ছে আছে। :)

++++++++

০৮ ই নভেম্বর, ২০১৭ দুপুর ১২:০০

সাজ্জাতুল ইমরান ফয়সাল বলেছেন: হা হা হা
আপনি তো দেখি আমার মতোই ভোজন রসিক। আমার তো রাস্তা ঘাটে জীবিত হাঁস দেখলেও জিভে জল আসে।

বি: দ্র: আরো একটা মজার খাবার খেয়েছি , পরের পর্বে বিস্তারিত আসছে। .... ;)

৩| ০৮ ই নভেম্বর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:০৯

অনন্য দায়িত্বশীল আমি বলেছেন: চমৎকার চমৎকার ছবি।

০৯ ই নভেম্বর, ২০১৭ সকাল ৯:২৪

সাজ্জাতুল ইমরান ফয়সাল বলেছেন: ধন্যবাদ :)

৪| ১০ ই নভেম্বর, ২০১৭ দুপুর ১২:৩৭

সুমন কর বলেছেন: শেষে তথ্যগুলো দেয়াতে ভালো হলো। যাদের প্রয়োজন তাদের সুবিধে হবে।
+।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.