নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
প্রথম প্রেমের মতো প্রথম কবিতা এসে বলে, হাত ধরে নিয়ে চলো, অনেক দুরেরও দেশে...
লিখতে পারি না কিন্তু কিছু লিখার জন্য হাত নিশপিশ করছে। তাই ভাবলাম এমন কিছু নিয়ে দু’টো লাইন লিখি, যা আমার কাজের সংশ্লিষ্ট। তাহলে আমার জন্য সহজও হলো আবার কিছু লিখাও হলো।
আজকে আলোচনা করবো ব্যাংকিং ব্যবসায় বহুল আলোচিত ও ব্যবহৃত ক্যাশ রিজার্ভ রেশ্যু (Cash Reserve Ratio) নিয়ে। একে কখনও কখনও ক্যাশ রিজার্ভ রিক্যুয়ারমেন্ট-ও (Cash Reserve Requirement) বলে। তবে ক্যাশ রিজার্ভ রেশ্যু নামেই বিশ্বব্যাপী অধিক পরিচিত। সংক্ষেপে বলে সিআরআর (CRR)। অনেক সময় একে তারল্য অনুপাত-ও (Liquidity Ratio) বলা হয়।
কোন একটি দেশের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহকে নিয়ন্ত্রনকারী ব্যাংক কর্তৃক তার আওতাধীন বানিজ্যিক ব্যাংকসমুহকে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন শর্ত বেঁধে দেয়া হয়। এমনই একটি শর্ত হচ্ছে সিআরআর সংরক্ষন।
মূলত ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহ ব্যবসা করে ডিপোজিটরের থেকে টাকা সংগ্রহ করে উক্ত টাকা ঋণ হিসেবে ঋণ গ্রহীতাদের নিকট লোন বিতরনের মাধ্যমে। এই ডিপোজিট রেট ও লোন রেট এর মাঝখানে একটি ফারাক (Spread) থাকে। এই Spread এর কিছু অংশ প্রশাসনিক ব্যয় হিসেবে নির্বাহ করার পর বাদ-বাকি যা থাকে- তাই মুনাফা।
এক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা হচ্ছে, ডিপোজিটরের নিকট হতে গৃহীত পুরো টাকা অবশ্যই ঋণ হিসেবে বিতরন করা যাবে না। ডিপোজিটের একটি অংশ নিরাপত্তা সঞ্চিতি হিসেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়ন্ত্রনাধীন থাকতে হবে। এই নিরাপত্তা সঞ্চিতিই হচ্ছে সিআরআর এবং এসএলআর (Statutory Liquidity Ratio)। এসএলআর নিয়ে পরে কোন এক সময় লিখা যাবে।
তাহলে বলা যায়, সিআরআর হচ্ছে একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান কর্তৃক গৃহীত মোট আমানতের এমন একটি অনুপাত যা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাথে রক্ষিত একটি চলতি আমানত হিসাবে (Current Deposit Account) রক্ষিত রাখতে হবে। কোন কারনে এর ব্যত্যয় হলে শোকজ লেটারসহ ইস্যু করাসহ বিশাল অংকের জরিমানা আরোপ কঠোরভাবে কার্যকর করা হয়।
এতটুকু যদি আমি বুঝিয়ে বলতে পারি, তবে পরের অংশে যাওয়া যেতে পারে।
বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক বিগত এক বছরে কয়েকবারই সিআরআর রেট পরিবর্তিত হয়েছে। কিংবা বলা যায়, কমানো হয়েছে। সর্বশেষ গত পনের’ই এপ্রিল হতে এই রেট নির্ধারন করা হয়েছে 3.50 ও 4.00%।
আবার কনফিউশ্যন তেরী হলো? আমি দুটো রেট লিখলাম কেন? উত্তর সহজ। সিআরআর ক্যালকুলেশন করা হয় পাক্ষিকভাবে কিন্তু মেইনটেইন করা হয় প্রাত্যাহিকভাবে। অর্থাৎ বাংলাদেশ ব্যাংকে রক্ষিত চলতি হিসাবে প্রাত্যাহিকভাবে একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান তার মোট ডিপোজিটের 3.50% এর কম টাকা রাখতে পারবে না এবং পাক্ষিকভাবে গড় হিসাবায়ন করে রক্ষিত টাকার পরিমান কোনক্রমেই 4.00% এর কম হবে না। এই 0.50% এর ফ্লেক্সিবিলিটি রাখা হয়েছে সিআরআর মেইনটেনান্সের সুবিধার্থে। নয়তো মাঝেমাঝেই ব্যাংকগুলোকে সিআরআর সংরক্ষণে ব্যর্থ হওয়ায় জরিমানা গুনতে হতো।
এখানে আরেকটা বিষয় উল্লেখ্য। মোট ডিপোজিট বলতে চলতি মাসের ডিপোজিট বুঝানো হয় না। এটা হলো দ্বিতীয় গত মাসের (Preceding Two Month) মোট গড় ডিপোজিট। তার মানে জুলাই মাসের সিআরআর রক্ষনের হিসাবায়ন হবে মে মাসের ডিপোজিট (Average Time & Demand Liability) এর উপর ভিত্তি করে।
একটা উদাহরন দিয়ে আজকের লিখা শেষ করি।
বাংলাদেশ ব্যাংকে তালিকাবব্ধ একটি শিডিউল্ড ব্যাংক ‘ক’ এর মে মাসের গড় ডিপোজিট 1000.00 কোটি টাকা। তাহলে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিদ্যমান সার্কুলার অনুযায়ী বাংলাদেশ ব্যাংকে উক্ত ‘ক’ ব্যাংকের চলতি হিসাবে প্রাত্যাহিক সিআরআর হিসেবে রক্ষিত টাকার পরিমান 35.00 কোটির কম হবে না এবং পাক্ষিকভাবে রক্ষিত টাকার পরিমান গড়ে 40.00 কোটির কম হবে না।
এখন একটা প্রশ্ন আসতে পারে। সপ্তাহ শুরু অর্থাৎ রোববারে চলতি হিসেবে 40.00 কোটি টাকা রেখে দিলেইতো হলো। সারা সপ্তাহ বা পক্ষকালব্যাপী আর হাত না দিলেই হলো। ইজি এন্ড সিম্পল! কিন্তু আদতে তা হয় না। কারন ইন্টার ব্যাংক ট্রানজেকশন, ট্রেজারী বিল, ট্রেজারী বন্ড ক্রয়-বিক্রয়, মেয়াদপূর্তিসহ বাংলাদেশ ব্যাংক সংশ্লিষ্ট যে কোন লেনদেন এই হিসাবের মাধ্যমেই সম্পন্ন হয়। সুতরাং বলা যায়, এই হিসাব প্রতিদিনই শুধু নয়, প্রতিনিয়তই পরিবর্তন হয়। অবশ্য, লেনদেনের একটা টাইমফ্রেম বেধে দেয়া আছে।
তাহলে প্রতিদিন এই হিসাবে রক্ষিত টাকার পরিমান 35.00 থেকে 40.00 কোটির মধ্যে স্থির রাখার জন্য মানি মার্কেট ডিলারগন (G-Sec Dealer) অন্য ব্যাংকের সাথে কখনও টাকা ধার দেন কিংবা ধার করেন। আর এই সময়ই আমাদের সামনে হাজির হয় কল লোন, রেপো, রিভার্স-রেপো, স্পেশাল রেপো, এএলএস ইত্যাদি ইত্যাদি । যা ধাপে ধাপে আলোচনা করা যাবে ইনশাআল্লাহ।
পরবর্তী আলোচনায় থাকবে কেন সিআরআর সংরক্ষন বাধ্যতামুলক করা হলো? সিআরআর রেট কিভাবে ইকোনমিতে প্রভাব রাখে?
ধন্যবাদ।
বিষয়টি ব্যাপক। আর আমার ব্যাকগ্রাউন্ডও কমার্স নয়। ব্যাংকিং করতে গিয়ে যা শিখেছি- তার আলোকে লিখা। মনযোগী পাঠকের কোন অংশ বুঝতে সমস্য হলে মন্তব্যে বিস্তারিত ব্যাখ্যা করা যাবে।
২| ২৭ শে জুলাই, ২০২০ রাত ১২:৪১
গাওসেল এ. রাসেল বলেছেন: অনেক অনেক ধন্যবাদ, সোনাবীজ ভাই। আপনার মন্তব্যে আমি খুব অনুপ্রাণিত হই। লেখাটা লিখে একটু দ্বিধায়ই ছিলাম। আঁতলামি হয়ে গেলো নাকি আবার- ভেবে।
নিঃসন্দেহে অপনি মনযোগী পাঠক।
আপনি ঠিক ধরেছেন। বাংলাদেশ ব্যাংক আবার এই টাকা অলস না রেখে বিভিন্ন ব্যাংককে প্রয়োজন হলে ঋণ দেয় বিভিন্ন ফর্মে। যে রেটে ঋণ দেয়, তাকেই ব্যাংক রেট বলে। এটা এখন পাঁচ পার্সেন্ট। চাইলে সরকারকেও ঋণ দিতে পারে এখান থেকে।
এখান থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক ভালো অংকের মুনাফাও করে। সমস্ত ব্যয় নির্বাহ শেষে ২০১৮ অর্থবছরে তাদের মুনাফার পরিমাণ ছিলো প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা।
৩| ২৭ শে জুলাই, ২০২০ সকাল ১১:৩০
সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: cash reserve ratio balance কি নগদে রাখতে হয় নাকি এটা current account balance? CRR সম্ভবত করোনার কারণে বৃদ্ধি করা হয়েছে। এটার প্রভাব কি হতে পারে আশা করি পরবর্তীতে লিখবেন। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাথে লেনদেন কি নগদে হয় না instrument এর মাধ্যমে? এ সব ব্যাপারে আমার আগ্রহ আছে। তাই পরে বিস্তারিত লিখলে উপকৃত হব।
২৯ শে জুলাই, ২০২০ রাত ৮:৪০
গাওসেল এ. রাসেল বলেছেন: অত্যন্ত দুঃখিত, সাড়ে চুয়াত্তর ভাই। রিপ্লাই দিতে দেরি হওয়ার জন্য
সিআরআর চলতি আমানত হিসাবে রাখতে হয়। এর মানেই ক্যাশ ফর্মে রাখা। এর জন্যই তো এর নাম ক্যাশ রিজার্ভ। আমরা যখন বাংলাদেশ ব্যাংক চেক সাবমিট করি, ওরা ঐ চেক অনার করতে বাধ্য।
না। তা নয়। সিআরআর কমানো হয়েছে কয়েক ধাপে। গত বছরের জুলাই পর্যন্ত এটা ছিলো সাড়ে ছয় পার্সেন্ট। এটা মূলত করা হয়েছিল ব্যাংক মালিকদের সংগঠন এবিবি এর চাপে পড়ে, আমানত ও ঋণ ইন্টারেস্ট রেট যথাক্রমে ছয় ও নয় করতে গিয়ে। বিষয়টা তখন খুব আলোচিত ছিলো। একইসাথে ব্যাংকগুলোর জন্য বড় একটা ধাক্কাও ছিলো।
তারপর থেকে কয়েক ধাপে এটা কমাতে কমাতে এখন চার পার্সেন্ট। এই কমানোটা হয়েছিলো ইকোনমিতে ক্যাশ সরবরাহ বাড়ানোর জন্য। অন্যভাবে বলা যায় লোনেবল ফান্ড বাড়ানোর জন্য। বিষয়টা মজার ও ব্যাপক। আমি সংক্ষেপে বলছি এখানে। একটা রাফ হিসাব আছে, যার ভিত্তিতে বলা যায়, সিআরআর এক পার্সেন্ট কমালে ইকোনমিতে প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা লোন বাড়ানোর সুযোগ তৈরি হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাথে লেনদেন ইন্সট্রুমেন্ট ও চেক উভয় মাধ্যমেই হয়। লেনদেনে তৃতীয় পক্ষ জড়িত থাকলে অর্থাৎ একটি ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংক এর মাধ্যমে অন্য একটি ব্যাংকে লেনদেন করলে, তা হয় বাংলাদেশ ব্যাংক চেক এর মাধ্যমে।
আর যদি একটি ব্যাংক সরাসরি বাংলাদেশ ব্যাংকের সাথে লেনদেন করে, তবে তা হয় ইন্স্ট্রুমেন্ট এর মাধ্যমে। এজন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি মডিউল ( এমআই মডিউল বা মার্কেট ইন্ফ্রাস্ট্রাকচার মডিউল) ব্যবহার করা হয়।
আবারো অসংখ্য ধন্যবাদ, মন্তব্য করার জন্য। হ্যা, আমারও ইচ্ছে আছে ধাপে ধাপে লেখার এ বিষয়ে।
৪| ২৭ শে জুলাই, ২০২০ দুপুর ১:৩০
রাজীব নুর বলেছেন: পোষ্ট পড়লাম কিন্তু এই বিষয়ে মন্তব্য করার মতো মেধা আমার নেই।
৫| ২৯ শে জুলাই, ২০২০ রাত ৮:৩৩
গাওসেল এ. রাসেল বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ, রাজীব নুর ভাই। মন্তব্য করার জন্য।
এটা মেধার কোন বিষয়ই না, ভাই। আমি কাজ করতে করতে শিখেছি।
যেমন এই ব্লগের সবাই কত বিষয়ে জানে, কত বিষয়ে লিখে, আর আমার দৌড় এই বিষয় পর্যন্তই।
আবারো ধন্যবাদ আপনাকে।
©somewhere in net ltd.
১| ২৭ শে জুলাই, ২০২০ রাত ১২:২২
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: পুরা ম্যাথমেটিক্যাল একটা বিষয়, বাট খুব ইন্টারেস্টিং।
ব্যাংক ডিপোজিটরের কাছ থেকে পেলো ১০,০০০ কোটি টাকা
রিজার্ভ রাখলো ৪,০০০ কোটি টাকা
লোন দিল ৬,০০০ কোটি টাকা। এই ৬,০০০ কোটি টাকার উপর যে প্রফিট/ইন্টারেস্ট পাবে, সেটাই দেয়া হবে ১০,০০০ কোটির ডিপোজিটরকে? তাহলে বুঝলাম, লোন থেকে সুদ গ্রহণের অংকটা অনেক বড়ো হয়ে থাকে!!
কেন্দ্রীয় ব্যাংক রিজার্ভ টাকা কী করে? তারা রিজার্ভ রাখে, নাকি তারাও লোন দেয়? তারা কি কোনো প্রফিট দেয় সংশ্লিষ্ট ব্যাংককে।
সুন্দর লিখেছেন রসেল ভাই। রাত গভীর, না হয় আরো কিছু জানার ছিল।