নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সবার জন্য ভালোবাসা।

গেছো দাদা

গেছো দাদা › বিস্তারিত পোস্টঃ

ভারতের নকশাল বিপ্লব ও বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ।। গল্প হলেও কি সত্যি নয় ??

১৯ শে জুলাই, ২০১৮ রাত ১০:৪৩


১৯৭১ এর ডিসেম্বর মাসের মাঝামাঝি একটি সকাল।
.
ঢাকা শহর জেনারেল নিয়াজির পাকিস্তানী সেনাবাহিনী এবং পাকিস্তান সমর্থক বাংলাদেশীদের নিয়ে তৈরি জামাত, আলবদর, আলশামস, রাজাকার বাহিনীর দখলে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ফারুকুল ইসলাম গত নয় মাসের তীব্র গন্ডগোলের মধ্যেও, মিরপুর রোডের বাড়িটি ছেড়ে কোথাও যান নি।ডিসেম্বর মাসের শীত অগ্রাহ্য করে স্নান সেরে এসে ফারুকুল তাঁর আম্মাকে বললেন, আম্মা ভাত দাও, ক্ষুধা পাইছে খুব। আম্মা খাবার দিতে তিনি খাবার টেবিলে বসলেন, তখনই কলিং বেল বাজল। কাজের ছেলে দরজা খুলে দিতে সাত-আটজন যুবক ফারুকুল ইসলামের কাছে এসে একসাথে বলল, আসসালামু আলাইকুম স্যার।
ফারুকুল ইসলাম সালামের জবাব দিয়ে বললেন, কি ব্যাপার? তখনও তিনি ভাতের সাথে ভাজি মাখাচ্ছিলেন, প্রথম গ্রাসটা মুখে তুলতে পারেননি।
ব্যাপার কিছুই না, তাদের কমান্ডার পাড়ার মোড়ে গাড়িতে বসে আছেন। তিনি অধ্যাপকের সাথে একটু কথা বলতে চান। ফারুকুল ইসলাম বললেন, দাঁড়াও বাপজানেরা, খাইতে বসছি, খাইয়া নিই। তাতে দলের একজন বলল, স্যার, আপনি পাঁচ মিনিটের মধ্যে কথা শেষ কইরা আইসা খাইয়েন, সমস্যা নাই।
ছেলেগুলোর ভাষা অত্যন্ত ভদ্র, কিন্তু তাদের হাতে বন্দুক, মুখের লম্বা দাঁড়ি মেহেন্দি দিয়ে রাঙ্গানো, মাথায় টুপি আর চোখের নিচে সুরমা। ফারুকুল একবার ধমক দেবার কথা ভাবলেও মত বদলে হাত ধুয়ে ওদের সাথে নেমে এলেন নিচে।
মোড়ের মাথায় গাড়ির কাছাকাছি আসতেই ফারুকুল ইসলামের হাত পিছমোড়া করে বেঁধে ও চোখ বেঁধে গাড়িতে করে ওনাকে নিয়ে আসা হল মিরপুর রায়েরবাজারে। গাড়ি থেকে নামিয়ে, হাঁটু মুড়িয়ে বসিয়ে, চালিয়ে দেওয়া হল গুলি।
শুধু ওঁকেই নয়। ঢাকার সমস্ত জ্ঞানীগুণীদের একটা তালিকা করে রেখেছিল পাকিস্তানী জেনারেল নিয়াজী। যুদ্ধে নিশ্চিত হার হচ্ছে জেনে শিক্ষক-অধ্যাপক, উকিল-ব্যারিস্টার, ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার, ব্যবসায়ীদের ওপর সে লেলিয়ে দিয়েছিল আলশামস বাহিনীকে। রায়েরবাজার বধ্যভূমিতে এঁনাদের লাশের স্তূপ জমেছিল সে দিন।
.
একই দিন। ৩২৫ মাইল পশ্চিমদিক।
.
কলকাতার দমদমের বাড়ি থেকে বেরোচ্ছেন অধ্যাপক অনিন্দ্য রায়, কলেজ যাবার জন্য। প্রেসিডেন্সিতে ফিজিক্স পড়ান তিনি। বাড়ির গেটটি টেনে বন্ধ করতে গিয়ে তাঁর চোখে পড়ল, গেটের পাশে লাল রঙে লেখা নকশালী পোষ্টার, ‘খতম মানে খুন নয়, এটা হল শ্রেণিঘৃণার চরম প্রকাশ’।
অনিন্দ্য লেখাটা একবার পড়ে নিয়ে দ্বিতীয়বার চোখ বোলাচ্ছেন। আসলে চিন্তা করছেন, পড়ছেন না।চার বছর আগে চীনের মাও সে তুংকে ‘চীনের চেয়ারম্যান আমাদের চেয়ারম্যান’ মেনে যে বিপ্লব শুরু হয়েছে, সেই বিপ্লবী দলেরই নাম নকশাল। নকশালবাড়ি গ্রাম থেকে শুরু হয়েছিল বলেই কি?
এ বিপ্লবের মূল নেতা চারু মজুমদার পলাতক। কিন্তু বিপ্লবী আন্দোলন গ্রামে আটকে নেই, সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে।আর দাবী উঠেছে, শ্রেণীশত্রু খতম করতে হবে। কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্ররা সে দাবীতে সাড়া দিয়ে অধ্যাপক, সরকারী কর্মচারী, ব্যবসায়ীদের শ্রেণীশত্রু তকমা দিয়ে খুন করছে। মেধার কি নির্মম অপচয়! ভাবতে ভাবতে পোষ্টারটা ছিঁড়ে ফেললেন অনিন্দ্য।
ক্লাস নিয়ে, কলেজের শেষে দুটো টিউটোরিয়াল পড়িয়ে ফিরতে ফিরতে রাত আটটা বেজে গেছে। অনিন্দ্য তাড়াতাড়ি পা চালালেন। স্টেশন থেকে ওঁর বাড়ি দশ মিনিটের হাঁটা পথ।
বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে গেটটা খুলবেন, পেছন থেকে কেউ একজন ডাক দিল, স্যার?
অনিন্দ্য রায় ঘুরে দেখলেন, পাড়ারই শুভদীপ। আই এ পড়ে। ‘কি খবর, শুভদীপ,কিছু বল...’ কথাটা শেষ করতে পারলেন না অনিন্দ্যবাবু। কারণ শুভদীপ একটি ছুরি আমূল বসিয়ে দিয়েছে ওঁনার পেটে।
মারা যাবার আগে খুব অবাক হয়েই অনিন্দ্যবাবু দেখলেন, শুভদীপ ‘শ্রেণিশত্রু নিপাত যাও! বিপ্লবের শত্রুকে খতম করা হল’ লেখা একটি পোষ্টার চিপকে দিচ্ছে ওনার বাড়ির দেওয়ালে।
.
প্রিয় পাঠ(ঠি)ক(কা),গল্পের প্রশ্ন, অতিবাম নকশালি আর আলশামসের কাজের মধ্যে কোনও মিল কী খুঁজে পান? ঘেন্না পায় এদের ওপর? রাগ??

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ২০ শে জুলাই, ২০১৮ রাত ১:৩৭

ঠাকুরমাহমুদ বলেছেন: আপনার লেখা সুন্দর ও গোছানো ।

***আপনি কি কোনো কারণে নিজের উপর বিরক্ত বা নিজেকে নিয়ে উপহাস করেন ? আপনার প্রোফাইল ফটো দেখে মনে হতে পারে কোনো ড্রেনের নর্দমা থেকে উঠে আসা কেউ - ভয়ানক ব্যাপার !!! ছবিটি কি পরিবর্তন করা সম্ভব ?

২০ শে জুলাই, ২০১৮ রাত ১:৪৫

গেছো দাদা বলেছেন: আপনাকে ধন্যবাদ জানাই । আমি নিজের ব্যাপারে কোনো উঁচু বা নিচু ধারনা রাখি না । এ দুনিয়া টাকে দেখার একটা অন্যরকম ভিউ প্রকাশ করার জন্য আমার এই প্রোফাইল ফটো টি দেওয়া আছে । কোনো দিন চেঞ্জ করতেও পারি ।

২| ২০ শে জুলাই, ২০১৮ রাত ১:৫৩

ঠাকুরমাহমুদ বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকেও । মুক্তিযুদ্ধে এই দেশে কি হয়েছে তা বাংলাদেশের খুব কম মানুষ ই মনে রেখেছে, আরেকটি কথা না বললেই নয় বাংলাদেশের মানুষের মেমোরী সম্ভবত ৩২ এম বি তাই এক সপ্তাহ পর্যন্ত তাদের স্মৃতি থাকে তারপর ভুলে যায় - হয়তো কোনো একদিন ভারতীয় ছবির “গজনি” হয়ে যাবে এই দেশের লোকজন শর্ট মেমোরী ১৫ মিনিট !!!

৩| ২০ শে জুলাই, ২০১৮ রাত ২:৪২

চঞ্চল হরিণী বলেছেন: হ্যাঁ, মিল পাই। রাগ হয় দুই দলের উপরই। তবে ঘেন্না পায় এক দলের উপর আর করুণা হয় আরেক দলের উপর। কারণ একদলের উদ্দেশ্যই ছিল বেছে বেছে সকল ভালোকে খতম করে সমাজের ক্ষতি সাধন করা, আর আরেক দল ভ্রমিত হয়ে ভুল পথে ভালোকে প্রতিষ্ঠার জন্য খতম করেছিল, সমাজের ক্ষতি সাধন তাদের মূল উদ্দেশ্য ছিল না।

৪| ২০ শে জুলাই, ২০১৮ সকাল ১০:৩১

রাজীব নুর বলেছেন: ইচ্ছা করছে ধরে ধরে কিছু মানুষ ডেকে আপনার লেখাটা পড়াই।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.