নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সবার জন্য ভালোবাসা।

গেছো দাদা

গেছো দাদা › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্প : একজন বাবা ও রিক্সাওয়ালা

২৯ শে আগস্ট, ২০১৮ রাত ১২:৫৬


(সত্য ঘটনার ছায়ায় লেখা । )
রিক্সায় ওঠার পর থেকেই মৃত্তিকা আনন্দে আত্মহারা। মৃত্তিকার অতিরিক্ত খুশির কারণ একটা না। মোট কারণ দুটো। একটা কারণের মধ্যে আলাদা কোন বিশেষত্ব নেই। মামাবাড়ি যাওয়ার সময় সব শিশুরাই খুশি হয়। মৃত্তিকা এখন মামাবাড়ি যাচ্ছে। কিন্তু আরেকটা কারণ একটু অন্যরকম। খুব ছোটবেলা থেকেই। মৃত্তিকা রিক্সায় চড়তে ভালবাসে। বাড়ির ছোট তিনচাকার সাইকেলটা সবসময় চালিয়ে বেড়াত। সাত বছরে পা দেওয়ার পর। একখানা রঙিন সাইকেল কিনে দেওয়া হয়েছে। সাইকেলটাও মৃত্তিকার মতই ফুটফুটে। এবং যেদিনগুলোতে মৃত্তিকার স্কুল ছুটি থাকে। সেইসব দিনের বেশিরভাগ সময়। মৃত্তিকা সাইকেলে থাকে। বনে থাকে যে মানুষ। তাঁকে আমরা বলি বনমানুষ। সেই হিসেবে মৃত্তিকাকে আমরা সাইকেল মানব বলতে পারি। অন্তঃত সেই দিনগুলোর জন্য। হা হা...। যাক। আজকের কথা বলি।

রিক্সাওয়ালা এতক্ষণে বুঝতে পেরেছে। ছোট এই মেয়েটি রিক্সায় চড়ে মহা আনন্দ পেয়েছে। যতক্ষণ রিক্সায় থাকবে। ততক্ষণ মেয়েটি হাসতে থাকবে। রিক্সাওয়ালাও বেশ হাসিখুশি। সারাটা পথ মৃত্তিকার সঙ্গে গল্প করতে করতে এলো। আমি আবার অন্য কথা ভাবছিলাম। আড়াইজনকে নিয়ে রিক্সা চালাতে নিশ্চয় লোকটার কষ্ট হচ্ছে। মানে আমরা দুজন ফুল। আর মৃত্তিকাকে হাফ ধরলে। টোটাল হল আড়াইজন। তার ওপর আবার বেশ বড়সড় একটা ব্যাগ আছে। আমি হাসিমুখে চুপ করতে বললাম। মৃত্তিকার মা হাসাহাসির মধ্যে গেল না। বেশ চোখ গরম করে মৃত্তিকাকে থামতে বলল। কিন্তু কাজ হল না। নরম গরম কোন পদ্ধতিই কাজে লাগল না। মৃত্তিকার বকবকানির অন্যতম কারণ তাঁর সঙ্গীর প্রবল উৎসাহ। হ্যাঁ। প্রায় আমারই বয়সী রিক্সাওয়ালা। শিশুর মত মৃত্তিকার সঙ্গে গল্প করছে। শিশু সাধারণত শিশুকেই ভালবাসে। বড়রাও যখন শিশুদের সঙ্গে শিশুর মত করে মিশতে পারে। তখন ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা। সেই মানুষকে দ্রুত ভালবেসে ফেলে। এক্ষেত্রেও সেরকম ঘটনা ঘটল। মৃত্তিকা আর রিক্সাওয়ালার মধ্যে। খুব অল্প সময়ে। বেশ বন্ধুত্ব গড়ে উঠল। শশুরবাড়ীতে হয়তো ঘন ঘন আসা হয় না। কিন্তু তাই বলে পথ চিনব না !! স্টেশন থেকে পিচঢালা সোজা রাস্তা। রিক্সায় কুড়ি থেকে পঁচিশ মিনিটের মামলা। এ বাবা !! রিক্সাওয়ালা দেখছি অন্য পথ ধরল। ব্যাপার কি ?

রিক্সাওয়ালা আমাকে আশ্বস্থ করল। পথ সে ভুল করেনি। পথ তো বটেই। সে আমার শশুরবাড়ীও চেনে। তাহলে ? না মামণি রিক্সা চড়তে ভালবাসে। তাই একটু ঘুরপথে যাচ্ছে। আরেকটু বেশিক্ষণ রিক্সা চড়া যাবে। এই আনন্দে মৃত্তিকা একেবারে আহ্লাদে আটখানা। পারলে এক্ষুণি রিক্সাওয়ালার গলা জড়িয়ে ধরে। রিক্সাওয়ালা বেশ হৃদয়বান মানুষ। আজকাল এইধরনের মানুষ সচরাচর চোখে পড়ে না। তখন মুখে কিছু বললাম না। কিন্তু মনে মনে একটা জিনিস ঠিক করলাম। ভাড়া দেওয়ার সময় কিছু টাকা বেশি দিতে হবে।

ফোনে আগেই কথা হয়েছে। ট্রেনের টাইম অনুযায়ী শশুরবাড়ীর লোকজন গেটের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। একমাত্র মেয়ে আর নাতনিকে নিয়ে হইচই বেঁধে গেল। আমার শশুরমশাই এমনিতেই আমুদে মানুষ। যখন মৃত্তিকার সঙ্গে দেখা হয়। তখন তাঁর প্রায় আনন্দে পাগল হয়ে যাওয়ার জোগাড় হয়। সবাই বাড়ির ভেতরে চলে গেল। আমি হাসতে হাসতে রিক্সাওয়ালার দিকে এগিয়ে গেলাম। একটা একশো টাকার নোট হাতে নিয়ে। ভাড়া পঞ্চাশ টাকা। ভাবলাম বলব পুরোটাই রাখেন। খুশি হয়েই দিলাম। কিন্তু একটু পরেই যে আমাকে কাঁদতে হবে তখনও জানি না। এটাই মানবজীবন। পরের মুহূর্তের কথা কেউ বলতে পারে না।

রিক্সাওয়ালা আমার হাত চেপে ধরে বলল--"আপনার কাছ থেকে টাকা নিতে পারব না। মামণিকে আমি ভালবেসেই রিক্সায় চড়িয়েছি। এইরকম একটা মেয়ে ছিল আমার। সেও রিক্সা চড়তে খুব ভালবাসত। বেশ রাতে যখন বাড়ি ফিরতাম। তখনও সে জেগে থাকত। রিক্সায় চড়ার জন্য। চাঁদনী রাতে মেয়েকে রিক্সায় নিয়ে সারাপাড়া ঘুরে বেড়াতাম। জোৎস্না ভালবাসত মেয়েটা। গতবছর এই সময় চলে গেল। অনেক চেষ্টা করেও মেয়েটাকে ধরে রাখতে পারলাম না। ক্যান্সার। ক্যান্সারের সাথে পারলাম না। আপনার মেয়েটা খুব ভাল। এক্কেবারে আমার তুলির মতন। কল কল করে কথা বলে। কথা তো না। যেন ফুলঝুরি। চারিদিক দিয়ে পড়ছে। যতক্ষণ মামণিকে নিয়ে রিক্সায় আসলাম। ততক্ষণ মনে হল আমার মেয়েকে নিয়েই ঘুরছি। বুকটা সত্যি সত্যিই আনন্দে ভরে গেল। টাকা নিলাম না বলে কিছু মনে করবেন না। এই টাকা দিয়ে মামণিকে খেলনা কিনে দেবেন। সেই খেলানাটা আমি তাঁকে দিলাম।"

রিক্সাওয়ালা না। আমি দেখলাম একজন বাবা চলে যাচ্ছে। তাঁর চোখে জল। চুপচাপ চলে যাওয়া দেখছি। কিছুই বলতে পারলাম না। কথা জোগাচ্ছে না। আমার চোখ থেকেও তখন জল পড়ছে ।

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ২৯ শে আগস্ট, ২০১৮ রাত ২:১২

বিচার মানি তালগাছ আমার বলেছেন: করুণ গল্প বা ঘটনা পড়ে মন খারাপ হয়ে গেল...

২| ২৯ শে আগস্ট, ২০১৮ রাত ২:১৯

বাকপ্রবাস বলেছেন: সত্যিই খারাপ লাগার মতো

৩| ২৯ শে আগস্ট, ২০১৮ রাত ৩:২১

জুনায়েদ বি রাহমান বলেছেন: একজন বাবার সন্তান হারানোর কষ্ট বা সন্তানের বিরহ বাবারাই বুঝতে পারেন। মন খারাপ হয়ে গেলো।

৪| ২৯ শে আগস্ট, ২০১৮ সকাল ৯:১৩

রাজীব নুর বলেছেন: গল্প পড়ে মনটা বিষন্ন হয়ে গেল।

৫| ২৯ শে আগস্ট, ২০১৮ সকাল ১০:০৬

স্বর্গ-স্পর্শ বলেছেন: মন খারাপের গল্প। প্রার্থনা করি, জগতের সব বাবাদের চোখ হাসুক সন্তানের হাঁসিতে।

৬| ২৯ শে আগস্ট, ২০১৮ সকাল ১১:০৫

নীল-দর্পণ বলেছেন: চোখে পানি চলে এলো শেষে! বিষাদমাখা ভাল লাগা রেখে গেলাম লেখায়।

৭| ২৯ শে আগস্ট, ২০১৮ দুপুর ১:৩৩

শামচুল হক বলেছেন: কষ্টের কাহিনী।

৮| ২৯ শে আগস্ট, ২০১৮ দুপুর ২:০৭

ওমেরা বলেছেন: গল্পটা বেশ ভালই লাগছিল শেষে এসে মনটাই খারাপ হয়ে গেল ।

৯| ২৯ শে আগস্ট, ২০১৮ দুপুর ২:২৬

সম্রাট ইজ বেস্ট বলেছেন: চোখে পানি এনে দেয়ার জন্য প্লাস দিলাম।

১০| ২৯ শে আগস্ট, ২০১৮ বিকাল ৩:০৫

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: আবেগাপ্লুত হলাম। পৃথিবীর সব বাবা ভালো থাকুক।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.