নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সবার জন্য ভালোবাসা।

গেছো দাদা

গেছো দাদা › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্প : মেয়ের বাবা

০৬ ই মে, ২০২২ রাত ১২:২৮

আমি সাতাশ বছর বয়সে বিয়ে করি। প্রেমের বিয়ে। বড়লোকের মেয়ে। তবু শ্বশুরবাড়ি থেকে আপত্তি করে নি। কেননা আমি ভালো ছাত্র ছিলাম। আই আই টি খড়গপুরের ইনজিনীয়ার। বড় চাকরী দিয়েই ক্যারিয়ার শুরু করেছিলাম। বিয়ের পর অনেকদিন লেগে যায় আমার স্ত্রীর প্রেগনান্ট হতে। ফিলোপাইন টিউব চোকড ছিল,ইউটেরাসও ছোট । ছবছর পর অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে গর্ভসঞ্চার হয়। বিয়ের পরই আমার শখ জাগে আমি একটা মেয়ের বাবা হব। মেয়েরা খুব বাপসোহাগী হয়,আদরকাড়া হয়। কিন্তু আমার স্ত্রী নিজে মহিলা হয়েও মেয়ে বাচ্চা তার দু চোখের বিষ। বলতেন,“তুমি ত’ মেয়ে নও। বুঝবে না আমার শরীর থেকে অন্যরকম শরীর নিয়ে একটা শিশু জন্মাবে এ যে কি আনন্দ কি শিহরণ তা তুমি কি বুঝবে?“
উন্নত দেশগুলোতে মেয়েদেরই গর্ভের অধিকার এটা আইনত স্বীকৃত। আমাদের দেশে উচ্চবিত্ত সমাজে আইনী স্বীকৃতি না থাকলেও বাস্তবে তাই। বেবি যখন পেটে সাত মাস অর্থাৎ পুরো ফর্মেশান হয়ে গেছে তখন আমার স্ত্রী আলট্রাসাউন্ড করান এবং গর্ভস্থ শিশুটি দেখা যায় কন্যা। আমি শুনে উচ্ছ্বসিত হয়ে বলেছিলাম,“শুনেছি মেয়ের বাবা না হলে বাবা হওয়ার আসল স্বাদ পাওয়া যায় না। “
পাছে আমি আটকে দি ,এর দুদিনের মাথায় নিজের জমানো টাকার থেকে আমার
স্ত্রী এই ম্যাচিওর বেবিটিকে চেনা গাইনিকে বেশী টাকার লোভ দেখিয়ে পেটের মধ্যে খুন করান এবং কেটে কেটে বার করান৷ অপারেশন হয়ে যাওয়ার পর নার্সিং হোম থেকে আমায় ফোন করে জানায়। এরপর আমার স্ত্রী আর গর্ভবতী হন নি।
ঘটনার শুরু এর কয়েকমাস পরে। আমার স্ত্রী কয়েক ঘণ্টার জন্য সন্ধ্যায় বাপের বাড়ি গেছেন। আমি বিছানায় শুয়ে কাগজ পড়ছিলাম। হঠাৎ বাচ্চার আর্ত চীৎকারে চমকে গেলাম। আমার ঠিক পাশেই একটা ন্যাপি পরা মাস দুয়েকের বাচ্চা। আমি যেন বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে গেলাম। বাচচাটার চীৎকার বেড়েই চলেছে। কি মনে হল খুব সাবধানে আলতো করে কোলে তুলে নিতেই মুহূর্তে চুপ হয়ে গেল। যেন কত নিরাপদ। এবার ভালোকরে তাকিয়ে দেখলাম যেন ঠিক আমার মায়ের মুখটা বসানো। বুঝলাম এ আমার সেই মাতৃগর্ভে খুন হয়ে যাওয়া মেয়ে। একটু পরই কলিংবেল বেজে উঠল। আমার স্ত্রী ফিরে এসেছেন। মেয়ে আমার যেন বাতাসে মিলিয়ে গেল।
এরপর থেকে আমার স্ত্রী বাড়ি না থাকলেই বাচ্চাটা আমার কোল দখল করা শুরু করল। এ ঘটনার কথা আমি কাউকেই বলি নি জানি হাসাহাসি করবে। ‘অডিও এন্ড ভিসুয়াল হ্যালুসিনেশান কাপলড টুগেদার’ বলে ডায়গনোসিস করে সাইকিয়াট্রিস্ট চিকিৎসা করবে। কিন্তু আমি জানি আমি এবসোলিউটলি নর্মাল। অফিস বাড়ি সোশাল লাইফ সব জায়গায় একশো ভাগই দি। মাঝখান থেকে মেয়েকে নিয়ে আমার সুখের স্বর্গ কেন ভেঙে যায়?
মেয়ের যখন এক বছর বয়স ওর মা না থাকলেই সারা ঘর পায়ে মল পরে দৌড়ে বেড়াত,‘তোরসা’ বলে ডাকলেই এসে গলা জড়িয়ে কোলে বসে পড়ত। বড় শীতল ওর শরীর৷ মনে হয় কোনোমতে ধরে রাখা। দু বছর বয়সে আধোআধো স্বরে গলা জড়িয়ে গাল বাড়িয়ে দিত,“ বাবা হামি । ” পাঁচ বছর বয়সে রূপকথার রাজপুত্রের গল্প শুনতে চাইত। এ সবই ওর মা না থাকলে। মা ফিরে আসার আওয়াজ পেলেই বলত,“যাই মা আসছে,মারবে। “
একদিন জিজ্ঞাসা করেছিলাম। ও ফুপিয়ে ফুপিয়ে কেঁদে উঠে বলেছিল ,” তুমি ত‘ জানতে না মায়ের কথায় ওই লোকটা ফরসেপ দিয়ে আমার মাথা,বুক টুকরো টুকরো করে কেটে আমায় মেরে ফেলেছে। তুমি দেখলে ভয় পেয়ে যাবে বাবা।
দেখতে দেখতে মেয়ের বয়স তেইশ হয়ে গেল। তোরসার কথা ওর বাবা ছাড়া আর কেউ আজো জানে না। মেয়েকে বললাম,“মা তুই ত’ বড় হয়ে গেলি। এবার ত’ ভালো ছেলে দেখে বিয়ে থাওয়া----। ” মুহূর্তে মেয়ের মুখ কালো হয়ে গেল। বলল,“বাবা ছেলেমানুষি করো না। আমার কষ্ট হয়। আমি ত’ মায়ের পেটেই খুন হয়ে গেছি কবে। আমাদের অব্যক্ত বিশ্বে ভালোবাসা বলে কিছু নেই। আমার খুব কষ্ট হয়। তবু তবু তোমার ভালোবাসার টানে না এসে পারি না। তবে বাবাগো এই স্তরেরও মেয়াদ চব্বিশ বছর। এরপর আমি আরো উর্ধ্ব স্তরে চলে যাবো মানে আমি চাইলেও আর এক বছর পর থেকে তোমার কাছে আর আসতে পারব না”।
কাল আমার তোরসার চব্বিশ বছর পূরণ হবে। ওর মা বেরোতেই ও এসেছিল। আমায় জড়িয়ে ধরে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদল বলল,“বাবা এই শেষ দেখা। তোমার মৃত মেয়ে তোমায় ভালোবেসেছিল। ভূলে যেও বাবা! পারলে ভূলে যেও। ”কি করে ভূলি মা রে। আমি যে তোর বাবা। বড়বড় করে কাগজে লিখলাম “আমি অসহনীয় বিষাদে ভূগছিলাম। তাই আত্মহত্যা করছি। আমার মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী না।”
আমি শোয়ার ঘরের পাখায় ঝুলে পড়লাম।

মন্তব্য ১৬ টি রেটিং +৭/-০

মন্তব্য (১৬) মন্তব্য লিখুন

১| ০৬ ই মে, ২০২২ রাত ১২:৩৮

শায়মা বলেছেন: কি সাংঘাতিক!
এই মানসিক বিষাদ রোগ বুঝতেই পারলো না :(

০৬ ই মে, ২০২২ রাত ১২:৫৩

গেছো দাদা বলেছেন: হুমম

২| ০৬ ই মে, ২০২২ রাত ১২:৫৮

মুক্তা নীল বলেছেন:

এরকম ভয়ঙ্কর খুন কে প্রশ্রয় ও খুনীর সঙ্গে বসবাস করলে অস্বাভাবিক হয়ে যাওয়াটাই স্বাভাবিক ।

০৬ ই মে, ২০২২ রাত ১:০৮

গেছো দাদা বলেছেন: সঠিক বলেছেন।

৩| ০৬ ই মে, ২০২২ রাত ১:৪২

একলব্য২১ বলেছেন: আজকের দিনে এই রকমটা হয় উচ্চ শিক্ষিত পরিবারে। আপনি কি বাস্তবে এর রকম কিছু দেখেছেন বা শুনেছেন। নাকি নিছকই একটি বানানো ভয়ংকর গল্প।

০৬ ই মে, ২০২২ রাত ১:৪৭

গেছো দাদা বলেছেন: কিছুটা সত্য, বেশিটাই গল্প।

৪| ০৬ ই মে, ২০২২ রাত ১:৪৪

রানার ব্লগ বলেছেন: বেশ লেগেছে গল্প খানা!!

০৬ ই মে, ২০২২ রাত ১:৪৭

গেছো দাদা বলেছেন: ধন্যবাদ।

৫| ০৬ ই মে, ২০২২ রাত ২:০৬

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
মানসিক বিকারগ্রস্থ বাবার
মৃত্যুতে গভীর শোকাহত!

০৬ ই মে, ২০২২ রাত ২:০৮

গেছো দাদা বলেছেন: আমিও।

৬| ০৬ ই মে, ২০২২ ভোর ৬:৫৬

স্বামী বিশুদ্ধানন্দ বলেছেন: গল্পটি অনেক মর্মস্পর্শী ! ভালো লাগলো।

৭| ০৬ ই মে, ২০২২ সকাল ৯:১৪

গেঁয়ো ভূত বলেছেন: এত গল্প নয়, যেন সত্য ঘটনা প্রত্যক্ষ করলাম। বিশ্বাস করুন আমার চোখে পানি চলে এসেছে।

৮| ০৬ ই মে, ২০২২ সকাল ১০:১১

বিজন রয় বলেছেন: ব্যতিক্রম প্লট! ভাল লেগেছে।


কিন্ত গল্পের কয়েকটি লাইন কোনটার পর কোথায় থামতে হতো এটা চোখে লেগেছে।
আরো একটু সময় নিয়ে লিখলে গল্পটি আরো প্রজ্জ্বল হয়ে উঠতো।

শুভকামনা।

৯| ০৬ ই মে, ২০২২ সকাল ১১:০৮

জুল ভার্ন বলেছেন: গল্প ভালো হয়েছে।

১০| ০৬ ই মে, ২০২২ দুপুর ২:০৭

শেরজা তপন বলেছেন: চমৎকার হয়েছে! এর কাছাকাছি একটা প্লটের গল্প আমি অনেক আগে লিখেছিলাম। কাঁচা লেখা- ব্লগে দেইনি কখনো।
বাস্তবের কাছাকাছি গল্পটা পড়ে বিমোহিত হলাম। মেয়ে সন্তান মানেই অন্য রকম কিছু-অনুভুতি ভাষায় প্রকাশ করা যায় না।

১১| ০৬ ই মে, ২০২২ বিকাল ৩:০৩

জগতারন বলেছেন:
মেয়ে সন্তান বাস্তব ভেহেস্ত !!!
গল্পটি পড়ে শিহরিত হয়ে উঠলাম।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.