নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

গেন্দু মিয়া একজন সহজ সরল ভালমানুষ। তাকে ভালবাসা দিন। তার ভালবাসা নিন। ছেলেটা মাঝে মাঝে গল্পটল্প লেখার অপচেষ্টা করে। তাকে উৎসাহ দিন।

গেন্দু মিয়ার চরিত্র – ফুলের মতন পবিত্র!

গেন্দু মিয়া

কিছু জানার চেষ্টা থেকে ব্লগে আসা। সাহিত্য চর্চা করতে চাই।

গেন্দু মিয়া › বিস্তারিত পোস্টঃ

আরো একটা গল্প

২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৩:৩৬

(১)



অফিস থেকে নেমে ভ্রু কুঁচকে গেল ফাহিমের। একটা লোকাল ইনস্যুরেন্স কোম্পানি তে চাকরি করে সে। ক্লায়েন্ট কলে মতিঝিল যাবার জন্য অফিস থেকে বেড়িয়েছে। এখন সমস্যা হচ্ছে যাবে কিভাবে। গ্রীষ্মের তপ্ত দূপুরের তীব্র রোদে ভাজা ভাজা হতে হতে গুলশান ১ থেকে ফাহিম হাঁটা ধরল।



“সিএনজি, এই সিএনজি! মতিঝিল যাবেন?”



পর পর ৪ টা সিএনজি তাকে অগ্রাহ্য করে চলে যাবার পর একটা সিএনজি দাঁড়ালো।



“কই যাবেন?”

“ভাই মতিঝিল শাপলা চত্তর।”

“লন।“

“কত টাকা নিবেন?”

“দিয়েন হিসাব কইরা।“

“না, আপনি বলে নেন।“

“আড়াইশ টাকা।“

“ভাই, অনেক বেশী হয়ে গেল না। মিটারে তো ১২০ টাকার বেশি আসার কথা না।“

“আরে মিটার হিসাব কইরা লাভ আসে? গেলে লন। নাইলে কথা বাড়াইয়া কাম নাই।“

“আচ্ছা চলেন চলেন।“



ছিটকিনিটা লাগিয়ে ফাহিম ভাবা শুরু করল। আপাত দৃষ্টিতে ওর চাকরি টা বেশ ভাল বলে মনে হয়েছিল। ৩০,০০০ টাকা বেতন, দুই ঈদে বোনাস, বছর গেলে পার্ফরমেন্স বোনাস। চাকরির এই আকালের বাজারে মন্দ কী?



মাস্টার্স পাস করে মাস ছয়েক নানা জায়গায় চেস্টার পর চাকরিটা পেয়ে অনেকদিনের পুরনো প্রেমিকাকে ঘরের বৌ করে তুলে এনেছিল। চোখ জুড়ে হাজারো স্বপ্ন। ছোট একটা ভাড়া করা বাসা, ছোট্ট একটা সংসার, সবকিছু গোছানো - দুশ্চিন্তা-র জায়গা কোথায়? সারা জীবনের লালন করে আসা স্বপ্নগুলোকে বাস্তব করার এটাই ত সময়।



আস্তে আস্তে বাস্তবতা মাথাচাড়া দিতে শুরু করল। বাড়ি ভাড়া দিতে বের হয়ে যাচ্ছে বেতনের সিংহভাগ। বাকি টাকায় সংসার চালানো – আর সেই সাথে দুই একটা সাধ পূরণ - সঞ্চয় অসম্ভব। তাও সবকিছু মেনে নিয়ে সুখী হবার চেস্টা। বাধ সাধল নতুন এক ঝামেলা। অফিসের বসের কী খেয়াল হোল আল্লা মালুম, নতুন নিয়ম জারি করে বসলেন। এখন থেকে অফিসে স্যুট পড়ে আসতে হবে। সব ক্লায়েন্ট মিটিং স্যুট পড়ে অ্যাটেন্ড করতে হবে। ফাহিম মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। সবেধন নীলমণি একটাই স্যুট যেটা কিনা আবার বিয়ে উপলক্ষে পাওয়া। বসের হুকুম, কী আর করা। অতঃপর স্যুট বাঁচাতে বাস ছেড়ে সিএনজি করে চলাফেরা। বাসের হাতল ধরে ঝুলতে ঝুলতে এর ওর চাপা খেয়ে স্যুটের কী অবস্থা হয় তাও এক বৃহস্পতিবারে যাচাই করে দেখেছে। ফলাফল খুব একটা আশাব্যাঞ্জক না বলাই বাহুল্য।



হিসেবের খাতায় ঢুকে গেল প্রতিদিন চলাচলের সিএনজি ভাড়া। এই ক্লায়েন্ট মতিঝিল তো ওই ক্লায়েন্ট উত্তরা। একটা মোটর সাইকেল কিনে ফেলবে ভেবেছিল কিন্তু তার জন্যও তো পয়সা জমাতে হবে। প্রতিদিন দু’টো ভিসিট মানে অন্তত তিনশ’ তিনশ’ ছয়শ’ টাকা। ঘামে ভেজা কপালে আরো একটা কুঞ্চন জমা হয়। চিন্তা চলে, হিসেব মেলে না।



(২)



নাহ! আর পারা যাচ্ছে না। আল্লাহর নাম নিয়া ইস্টার্ট ত করতাসি, হিসাব তো মিলতাসে না…



রহমত মিয়া ভাবছে। সেই সকাল আটটায় মুখে চা দিয়ে দুইটা পাউরুটি গুঁজে দশ মিনিটের রাস্তা হেঁটে আগারগাঁও-এর গ্যারেজ থেকে গাড়ি স্টার্ট করেছে। তারপর আদাবর, মোহাম্মাদপুর, কচুক্ষেত ঘুরে গুলশান। সকাল থেকে চারটা ট্রিপ মারার পর এখনো একবেলা গাড়ি জমার টাকাও তুলতে পারেনি। বছর দু’য়েক আগে যখন শুরু করেছিল তখন অবস্থা এতটা খারাপ ছিল না। তখন মাঝে মাঝে রাস্তা খালি থাকলে মিটারে-ও যেত। এখন যে কী হয়েছে! রাস্তা ঘাঁটে ভাড়া বেশি চাওয়ার জন্য প্রায়ই যাত্রীদের গালাগালি শুনতে হয়। কয়েকদিন আগে পর্যন্তও যুক্তি দিয়ে বোঝানোর চেস্টা করত, এখন গা সওয়া হয়ে গেছে। দিনে একবার গ্যাস নেয়া লাগে। দুপুর দুইটার আগে গ্যাস নিতে গেলে পাক্কা এক ঘন্টার মামলা – যে লম্বা লাইন! গ্যাসের দাম বাড়ছে, তার ওপর মালিক যেন দিন দিন গাড়ি-র জমা বাড়াচ্ছে। তিনশ’ থেকে পাঁচশ’ আটশ’ ঘুরে এখন এক হাজার টাকা একবেলা-র জমা। এমন তো না যে যাত্রীরা বোঝে না। আসলে বুঝলেও মানে না। আবার দু’শ’ তিনশ’ টাকা লাভ করে ফিরতে না পারলেও সমস্যা। খাওয়ার খরচ আছে, ঘর ভাড়া আছে, ছেলেটাকে স্কুলে পড়াচ্ছে – তার খরচ আছে; পয়সা নিয়ে ঘরে ফিরতে না পারলে এসব চালাবে কে?



গত সন্ধ্যায় গাড়ী জমা করার সময় মালিকের সাথে কথা হচ্ছিলঃ

“হুজুর, গ্যাসের দাম ত দিন দিন বারতাসে। তয় ওইটা ত আমরা দেই। এর পর অনেক টাইম চইলা যায় গ্যাস নিতে। ওইটাও আমগো ওপর দিয়া যায়। আমগো দিকটা একটু চিন্তা কইরেন হুজুর। এত টাকা জমা তুইলা পকেটে ত কিছু থাকে না।“



হুজুরের চোখে সুর্মা, পান খেয়ে লাল করা ঠোঁট। গলা খাকারি দিয়ে গলা পরিস্কার করে বলেনঃ

“রহমত মিয়া এত প্যাঁচালের দরকার কী? তোমার না পোষাইলে যাও গা। ড্রাইভার কম পরে নাই।“



কথা ঠিক। তারই তো হাত পা বাঁধা। সে গেলে আরেকজন আসবে। না হলে আরেকজন। সবাই যেন মুখিয়ে আছে কবে তার পালা শেষ হবে, কবে তার জায়গা আরেকজন নিবে। অতএব, তথাস্তু।



মাঝে মাঝে কেমন যেন মায়া লাগে। এই তো সেদিন-ও এক বোরকা পড়া মহিলা কোলে বাচ্চা নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল ঢাকা কলেজের সামনে, পল্লবী যাবে। কোন সিএনজি-ই রাজি হচ্ছে না। “বিরাট জ্যাম লাগসে মিরপুর রোডে”, রহমত মিয়া মনে মনে চিন্তা করলো, “একবার রওনা দিলে আধা বেলার কাম শ্যাষ।“ এটা সারাদিনেও পোষাতে পারবে না। যথারীতি মাথা নেড়ে না করতে হোল। কিন্তু… আহারে!



পেটের ভেতর কিছু একটা মোচর দিয়ে ওঠায় বাস্তবতায় ফিরে আসতে হোল। সামনে দেখা যাচ্ছে স্যুট পড়া এক ঘর্মাক্ত তরুন হাতে একটা ব্যাগ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।



“কই যাবেন?”

“ভাই মতিঝিল শাপলা চত্তর।



(৩)

কী যন্ত্রনা! এরা কি আর সময় পায় না প্যাঁচাল পাড়ার।



সকাল থেকেই মোস্তফা সাহেবের মেজাজটা খারাপ হয়ে আছে। দেশের পুলিশ করে কী? মাসে মাসে ওয়ার্ড কমিশনারের বাসায় ভেট পাঠান হয়েছে, লোকাল ও,সি,-কে পয়সা খাওয়ানো হয়েছে; তার পর-ও প্রয়োজনের সময় কাউকে পাশে পাওয়া যাচ্ছে না। ব্যাবসা-র রীতি নীতি (!) মেনেও আজকাল আর কেউ নির্বিবাদে ব্যাবসা করতে পারে না।



ডিলারশিপের ধান্দা-র পাশাপাশি এই ব্যবসায় আসাটা আসলে এখন আর অত বুদ্ধিমানের কাজ বলে মনে হচ্ছে না। অনেকেই সাবধান করেছিল, বলেছিল এই ব্যাবসায় পসার থাকলেও ঝামেলা অনেক বেশি। সেই সময়ের আস্তাকুঁড়ে ছুঁড়ে ফেলা উপদেশগুলো যেন আজ বত্রিশ দাঁত বের করে হাসছে। অনেক চিন্তা ভাবনা করে সিএনজি-র এই গ্যারেজটা কিনে ছিলেন। গাড়ি প্রতি ছয়লাখ টাকা দিয়ে আটটা গাড়ি নিয়ে শুরু করে আজ তিনি বাইশটা গাড়ি-র মালিক। এ ব্যবসা-র মজা-ও মন্দ না। সরকারী নিয়ম কানুনের কোন তোয়াক্কা নাই – যা ইচ্ছা জমা নাও। শহরের রাস্তাঘাঁটের যানবাহনের যে অবস্থা, তাতে সিএনজি ছাড়া গতি নেই। কিন্তু এটা চালাতে গিয়ে আবার ডিলারশিপের ব্যবসায় অত মনোযোগ দেয়া হচ্ছে না। এতাই হয়তো পরিনতি ছিল।



বহুদিনের অভ্যাস রাতে মোবাইল ফোন বন্ধ করে ঘুমাতে যাওয়া, তাই সকালে ঘুম থেকে ওঠার পরে তিনি ঘটনা জানতে পারেন। ঘটনা হচ্ছে গতকাল রাতে কিভাবে যেন মতিঝিলের গোডাউনে আগুন ধরে যায়। যে মাল গুলো আজ শহরের বিভিন্ন জায়গায় সাপ্লাই হবার কথা ছিল, গত কাল রাতের সেই আগুনে পুড়ে এখন সব ছাই। দাঁত কিড়মিড় করতে করতে মোস্তফা সাহেব ভাবা শুরু করেন, সুনাম যাই বা টিকে ছিল এখন সেটাও যাই যাই করছে। এখন আশার আলো একটাই, গোদাউন আর মালামাল ইন্স্যুরেন্স করা ছিল। ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিতে ক্লেইম পাঠানো হয়েছে, আল্লা ভরসা! নাহলে তিনি শেষ। এতো টাকার ধাক্কা পুষিয়ে ওঠা মুশকিল।



এই যখন মনের অবস্থা তখন কানের কাছে প্যানপ্যানানি কার ভালো লাগে? বেটা ছোটলোক সিএনজি-ওয়ালা ! বলে কিনা জমা-র টাকা বেশি নিচ্ছি, যা বেটা পুলিশের কাছে যা, পারলে কিছু করে দেখা!



খাকারি দিয়ে গলা পরিস্কার করে তিনি বলেনঃ

“রহমত মিয়া এত প্যাঁচালের দরকার কী? তোমার না পোষাইলে যাও গা। ড্রাইভার কম পরে নাই।“



পরমুহুর্তেই চিন্তায় ডুবে যেতে হয়। মিরপুরে নতুন ফ্ল্যাট বুকিং দিয়েছেন, পরের মাস থেকে জমা-র টাকা আরো একশ’ বাড়িয়ে দিবেন। কিভাবে উঠবে সেটা ড্রাইভারের চিন্তা। এই বয়সে আর এতো চিন্তা ভালো লাগে না। তারপর-ও খালি চিন্তা। ধুর!



(৪)

“বস, কেস তো মনে হচ্ছে জেনুইন। শর্ট সার্কিট থেকে আগুন লেগেছে। এস,আই-এর রিপোর্ট সেরকম-ই।“

“বল কি? তুমি নিজে রিপোর্ট দেখেছ?”

“না বস। গোডাউনে এসে ফোন দিয়েছিলাম মতিঝিল থানায়। এস,আই, বললো।“

“হুমমম……।

দাঁড়াও, দেখি কী করা যায়।“



কয়েক মিনিট পর আবার বসের ফোনঃ

“ফাহিম, শোনো, সিস্টেম করে দিয়েছি। এস,আই, আর ঝামেলা করবে না। আমাদের পি,আর, এজেন্সিতে একটা ফোন দাও। ……”



পরের কয়েক মিনিট ধরে ফাহিম গল্পটা শুনলো - কিভাবে গোলাম মোস্তফা নামক এক ডিলার ইন্স্যুরেন্স ক্লেইম করার জন্য নিজের গোডাউনে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। গোডাউন ছিল খালি, অথচ…। কী চমৎকার পরিকল্পনা! বস তো পুরা জিনিয়াস। উনি না থাকলে কোম্পানির যে কী হত!



“… কালকের খবরের কাগজে যেন আসে।“ ফোন কেটে গেলো।



একটা নিঃশ্বাস ফেলে ফাহিম আবার হাঁটা ধরলো। এই ফাইলটা ক্লোজ করতে হবে। দ্রুত অফিসে ফিরতে হবে।



“সিএনজি, এই সিএনজি। গুলশান যাবেন?”

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৩:২৮

স্পাইসিস্পাই001 বলেছেন: বাহ্ দারুন লিখেছেন তো .....

ভাল লাগলো ++++

ধন্যবাদ .... হ্যাপী ব্লগিং....।

২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ১:৫৪

গেন্দু মিয়া বলেছেন: অসংখ্য ধন্যবাদ। গল্পটা শেষ করলাম। মতামত জানাবেন।

:)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.