নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

গেন্দু মিয়া একজন সহজ সরল ভালমানুষ। তাকে ভালবাসা দিন। তার ভালবাসা নিন। ছেলেটা মাঝে মাঝে গল্পটল্প লেখার অপচেষ্টা করে। তাকে উৎসাহ দিন।

গেন্দু মিয়ার চরিত্র – ফুলের মতন পবিত্র!

গেন্দু মিয়া

কিছু জানার চেষ্টা থেকে ব্লগে আসা। সাহিত্য চর্চা করতে চাই।

গেন্দু মিয়া › বিস্তারিত পোস্টঃ

বিবর্তন (একটি ধারাবাহিক গল্প) - পর্ব ২

১০ ই নভেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৩:২০

বিবর্তন (একটি ধারাবাহিক গল্প) - পর্ব ১





বিবর্তন

----------------------

(২) স্বপ্ন



ল্যাপটপে রেজিগনেশন লেটারটা টাইপ করতে করতে শফিক ভাবলো অনেকদিন আনিকাকে নিয়ে আইসক্রিম খেতে যাওয়া হয় না। আজকে যেহেতু আগে আগে অফিস থেকে বের হয়ে যাচ্ছে, আজকে কিছুটা সময় পাওয়া যাবে। নতুন প্রজেক্টটা শুরু করার আগে কয়েকদিন বিশ্রাম করে নেবে। একটা এস,এম,এস করে দিলো সে আনিকার ফোনে। ও যেন টুপলুকে স্কুল থেকে তুলে বাসায় না যায়, সরাসরি গুলশানে চলে আসে।



গত প্রমোশনটা পাবার পর সে বুঝেছিলো যে তার ওপর অফিসের বড় কর্তাদের নজর আছে। মার্কেটিং ম্যানেজার থেকে প্রমোশন পেয়ে সিনিয়র ম্যানেজারদের কাতারে যোগদান করে তার মনে হয়েছিল প্ল্যানটা বড় কর্তাদের জানানোর এটাই সুযোগ। তার এই পরিকল্পনা ‘মডার্ণ জুস বার অ্যান্ড বেভারেজ’-এর ব্যবসায়িক মানচিত্রে ছোটখাটো একটা পরিবর্তন আনতে পারে।



বড় পরিবারের উত্তরাধিকারী হওয়া সত্ত্বেও পিতার অবিমৃষ্যকারিতার কারণে তার জীবদ্দশায় একে একে সব সম্পত্তি বিক্রি হয়ে যায়। তিনি পৃথিবী ছেড়ে চলে যাবার পর যা কিছু অবশিষ্ট আছে তাও বিক্রি করে নিজের একটা ব্যবসা দাঁড় করিয়ে নিজের বহুদিনের ইচ্ছাকে সার্থক রূপ দেয়ার উদ্দেশ্যেই সে প্ল্যানটা বানাচ্ছিলো। মডার্ণ জুস বার অ্যান্ড বেভারেজের ঢাকা শহরে চারটা জুসের বার আছে – সেখানে কেবল তাদের ব্র্যান্ডের ফলের জুসই বিক্রি হয়, আরো আছে নিজস্ব কার্বনেটেড বেভারেজের ডিস্ট্রিবিউশন চ্যানেল। ছয় বছর ধরে সেলস ম্যানেজ করার কাজ করে শফিক জানে যে জুস বার গুলোতে যদি ঠান্ডা কোন মুখরোচক আইটেম দেয়া যায় তাহলে হু হু করে বিক্রি হবে। কাজেই তার পরিকল্পনা ছিলো জুস বার গুলোতে প্রাথমিকভাবে আইসক্রিম পার্লার যোগ করার এবং পরবর্তিতে ডিস্ট্রিবিউশন চ্যানেলগুলোতে প্যাকেটজাত আইসক্রিম ঢোকানোর। প্রডাকশনের কারখানা, প্যাকেজিং ইত্যাদির খরচের খতিয়ান, লাভ ক্ষতির হিসেব, এমনকি ব্র্যান্ডের নামও সে তার প্রস্তাবে ঢুকিয়ে পাঠিয়েছিল, সব রকম প্রশ্নের জন্য সে প্রস্তুত থাকতে। তার চাওয়া ছিলো শুধু এটুকুই – এক্‌জেকিউটিভ পার্টনার হিসেবে স্বয়ং সে ই থাকবে।



আক্রমণটা এলো সম্পূর্ন অপ্রত্যাশিত দিক থেকে। সেদিন সকালে সে বড় কর্তার সাথে দূপুরে বসার অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিয়ে রেখেছিল। টেনশনে লাঞ্চটা না করেই সে দূপুর দু’টার দিকে বসের অফিসে উপস্থিত হয়। রাশভারী ম্যানেজিং ডিরেক্টর আশরাফ সাহেবের মুখোমুখি হবার জন্য প্রস্তুত। ঘরে ঢুকে দেখে কোম্পানীর চেয়ারম্যান কায়েস সাহেবও আছেন।





“শফিক, তোমাকে তো ভালো ছেলে বলেই জানতাম। হঠাৎ এরকম বদ মতলব হল কেন?”



গায়ে আরমানির স্যুট, হাতে রোলেক্স ঘড়ি, পায়ে ইতালির এক নামকরা মুচির হাতে বানানো জুতো – সারা শরীর থেকে জৌলুস ঠিক্‌রে বের হচ্ছে। বয়সে খুব একটা বড় হবেন না আশরাফ উদ্দিন আহমেদ। কিন্তু কথা বার্তায় সব সময় একটা ঔদ্ধত্য। পিতার চেয়েও বয়সে বড় কর্মকর্তাদের সাথে তুমি তুমি করে কথা বলার রেকর্ড আছে তাঁর। কিন্তু, শফিক গায়ে মাখলো না। এখন এসব চিন্তা করার সময় নয়।



“বদ মতলব মানে? ঠিক বুঝলাম না, স্যার।”



“সেলসে থেকে থেকে তো বড়লোক হয়ে গেছো দেখছি। তাই তো বলি, আমার লাভের গুড় পিঁপড়েয় খায়।”



চুরির অপবাদ, তাও আবার এরকম অপ্রত্যাশিত সময়ে, শফিক কিছুটা হকচকিয়ে যায়।



“স্যার, আমি কিছুই বুঝতে পারছি না।”



“নিজে থেকে সব স্বীকার কর, নাহলে আমার টাকা চুরি করে আমার ব্যবসাতেই পার্টনার হওয়ার শখ ছুটিয়ে দেবো।”



চেয়ারম্যান কায়েস উদ্দিন আহমেদের বয়স ষাট ছুঁই ছুঁই করছে। তার পোষাক আশাক সর্বদাই ভদ্র-মার্জিত। ছেলে আশরাফের মত কথায় কথায় উত্তেজিত হন না। পাশের সোফা থেকে তার গলা ভেসে আসে, “আশরাফ, এতো উত্তেজিত হবার দরকার নেই। তুমি পলিসি মোতাবেক আগাও।”



এতক্ষনে ব্যাপারটা পরিস্কার হয় শফিকের কাছে। সে প্রস্তাবে তার পার্টনারশিপের জন্য তিন ভাগে ভাগ করে একটা বিনিয়োগের পরিমাণ লিখে দিয়েছিল – তার, কোম্পানীর আর ব্যাঙ্ক ঋণের। সেটাই হয়তো এম,ডি,-কে ভাবিয়ে তুলেছে। সে একটা উত্তর দিতে গেলঃ



“এতো টাকা থাকলে তুমি কি আর আমার কোম্পানীতে হাল চাষ করতে নাকি? কত দিন ধরে সরাচ্ছো বল। ফিন্যান্স ডিপার্টমেন্টকেও খাইয়েছ নাকি? এক্সটার্নাল অডিটরকেও? আমি তো দেখছি দুধকলা দিয়ে এতদিন কালোসাপ পুষেছি।”



“স্যার, আপনি ভুল বুঝছেন। আমার কিছু জমি ছিলো গ্রামে, সেটা…”



“চোপ্‌! চুরি করে আবার বাহাদুরি করার চেষ্টা! ভালোয় ভালোয় সব স্বীকার করো, নাহলে কিন্তু পুলিশ ডাকতে বাধ্য হব!”



শফিকের লজ্জায় মাটির সাথে মিশে যেতে ইচ্ছে করছিল। মনে মনে সে ভাবছিল, ভাগ্যিস এই রুমের কথা বাইরে থেকে শোনা যায় না। আনিকা ঠিকই বলে, যতই দাম দেবার ভাব করুক না কেন, কর্পোরেট কালচারের বুলি কপচাক না কেন, মালিক পক্ষ সব সময়ই আলাদা। প্রকৃত অর্থে তাঁদের কাছ থেকে সন্মান জেতার আশা করা অসম্ভব। সেই অসম্ভবকেই সম্ভব করার আশা নিয়ে এসেছিলো সে। মনে মনে তখনই রেজিগনেশন লেটারটা সে ড্রাফট করা শুরু করে।





কম্পিউটার থেকে লগ আউট করতে করতে শফিক ভাবে এই শেষ সপ্তাহটা ছিলো তার জীবনের সবচেয়ে দুঃসহ সপ্তাহ। প্রিন্ট করা লেটারটা একটা খামে ঢুকিয়ে পিয়নের হাতে বড় সাহেবের জন্য ধরিয়ে দিয়ে সে বেরিয়ে পরে। অনেকদিন খোলা আকাশটা দেখা হয় না।





মুক্তির নিঃশ্বাস ফেলে শফিক আকাশের দিকে তাকায়, অনেক উঁচুতে দু’পাখা মেলে দিয়ে ভেসে বেড়াচ্ছে গুটিকয়েক গাঙচিল। সে গাঙচিল হবার স্বপ্ন দেখে, আকাশটাকে ছোঁবার স্বপ্ন দেখে।







বিবর্তন (একটি ধারাবাহিক গল্প) - পর্ব ৩



মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.