নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

গেন্দু মিয়া একজন সহজ সরল ভালমানুষ। তাকে ভালবাসা দিন। তার ভালবাসা নিন। ছেলেটা মাঝে মাঝে গল্পটল্প লেখার অপচেষ্টা করে। তাকে উৎসাহ দিন।

গেন্দু মিয়ার চরিত্র – ফুলের মতন পবিত্র!

গেন্দু মিয়া

কিছু জানার চেষ্টা থেকে ব্লগে আসা। সাহিত্য চর্চা করতে চাই।

গেন্দু মিয়া › বিস্তারিত পোস্টঃ

বিবর্তন (একটি ধারাবাহিক গল্প) - পর্ব ৪

১১ ই নভেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১২:২৫

আগের পর্ব গুলো পড়ার জন্যঃ



বিবর্তন (একটি ধারাবাহিক গল্প) - পর্ব ১



বিবর্তন (একটি ধারাবাহিক গল্প) - পর্ব ২



বিবর্তন (একটি ধারাবাহিক গল্প) - পর্ব ৩





(৪) উত্থান



সুরুজ মিয়ার জুসের দোকানে প্রায়ই তিনি আসতেন। কাঁচাপাকা চুল, সৌম্যদর্শন এই ভদ্রলোককে দেখলেই কেমন যেন সম্ভ্রম জাগে। গঞ্জের এক কোণে ধার দেনা করে শুরু করা ফলের রসের সেই দোকানটি তখনও ততটা পরিচিতি পায়নি। নসিমনের ব্যবসা বুদ্ধি খুব ভালো। নিজে দায়িত্ব নিয়ে পাই পাই করে দেনা শোধ করে দিয়েছে। সুরুজ মিয়াও জান দিয়ে খেটেছে এই দোকানটাকে দাঁড় করানোর জন্য। মাইলের পর মাইল সাইকেলে করে ঘুরে ঘুরে গাছ থেকে বেছে বেছে কাঁচা পাকা ফল কিনে আনতো। সেই ফলের জুস তৈরি করে দোকানে পরিবেশন করতো নসিমন। ছেলে কাচুও স্কুলের পড়া শেষে সময় দিতো দোকানে। তিনজনের পরিশ্রমে গড়ে তোলা দোকানটা ধীরে ধীরে পরিচিতি পেল।



সেই কাঁচাপাকা চুল ওয়ালা সৌম্য দর্শন লোকটা সাপ্তাহিক বাজার করতে প্রায়ই আসতো, আর এলেই একবার না একবার ঢুঁ মেরে যেত দোকানাটায়। গরমকালে লেবুর শরবত আর শীতে নারকেলের পানি – একেবারে গঁৎ বাধা অর্ডার করতো। একদিন তিনি সুরুজ মিয়াকে ডেকে বললেন এই ব্যবসা নিয়ে বড় শহরে যেতে পারলে মুনাফা আরো বাড়বে। সুরুজ মিয়া ঢাকায় কখনো যায়নি। সেই ঢাকায় নাকি এরকম অনেক ব্যবসা আছে, বড়লোক হবার অনেক সুযোগ আছে। আর ঢাকা নাকি গাঁও গেরামের মতো না। সেখানে কেউ কাউকে চেনে না। কামলার ছেলে বলে কাচুকেও আর কেউ গঞ্জের স্কুলে গালমন্দ করবে না। ভদ্রলোকও বিনিয়োগ করতে চান। কিন্তু বিশ্বাসী কাউকে না পেয়ে এখনো করা হয়ে ওঠেনি। গত তিন বছরে অসংখ্যবার তিনি এই দোকানে এসেছেন। দেখেছেন, বুঝেছেন, বিশ্বাস করার মতো কর্মী মানুষ পেয়েছেন।



সেই থেকে সুরুজ মিয়ার উত্থান শুরু। ঢাকার মতিঝিলে অফিস পাড়ায় একটা ছোট্ট দোকান নিয়ে শুরু করলো সে। কাচু কে সরকারী স্কুলে পড়ালো। বছর পাঁচেকের মাথায় যখন দ্বিতীয় দোকানটা দিলো ততদিনে কাচু কলেজে ভর্তি হয়েছে। কিছু কিছু মানুষ থাকে যারা সব অবস্থাতেই জীবনের গান গেয়ে যায়। সুরুজ উদ্দিন আহমেদ তাঁদেরই দলে। না পাওয়ার ভয় তাকেও ভাবায়, অমঙ্গলের শঙ্কা তাকেও গ্রাস করে, তার বুকেও বাসা বাঁধে লক্ষ্যচ্যুত হবার ত্রাস। কিন্তু তার চোখে তখন অনেক স্বপ্ন, মনে তখন অনেক আশা। তখন শুধু ঢাকা নয়, সমস্ত দেশজুড়ে গণ আন্দোলনের জোয়ার স্তিমিত হচ্ছে। গণতন্ত্রের মুক্ত বাতাসে শ্বাস নিতে অস্থির উত্তাল জনতা সবে শান্ত হয়েছে – তারা সার্বিক পরিস্থিতির পরিবর্তনের আশায় উদগ্রীব। শিল্প-কারখানাগুলোতে নিত্য নতুন ব্যবসাবুদ্ধি আর ভোক্তাশ্রেনীতে আকৃষ্ট করতে নব নব বিপণনীর আয়োজনে আর্থসামাজিক দৃশ্যপটে পরিবর্তনের ছোঁয়া লেগেছে।



প্যাকেট করা ফলের জুস দোকানে দোকানে সরবরাহ করার বুদ্ধিটা তখন মাথায় আসে। ততদিনে সেই শুভাকাঙ্খী আর নেই। তার পরিবার আর বিনিয়োগে উৎসাহী না হওয়ায় সুরুজ মিয়া পুরোটা কিনে নেয়। সূক্ষ্মবুদ্ধির অধিকারী তার সহধর্মিনী নসিমন নিজের মত করে ব্যবসা সাজানোর এই সুযোগটা হাতছাড়া হতে দেয়নি। আস্তে আস্তে পরিচিতি পেলো তাদের পণ্য।



ছেলে কাচু যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে পা রাখে তখন পড়াশোনার বাইরের পুরোটা সময় সে ব্যবসায় দিতো। উন্নতি করতেই হবে – এই একটাই মন্ত্র জপে যেত সে সারাক্ষণ। পড়াশোনা শেষ করে যখন পিতার সাথে ব্যবসার হাল ধরলো তখন সে অনেক পরিপক্ক, অনেক ধীরস্থির, সুবিবেচক। এর ফল পেতেও বেশি দিন অপেক্ষা করতে হয়নি। সুরুজ মিয়া অনেকটা নিশ্চিত হলেন ছেলেকে তার পাশে সবসময়ের জন্য পেয়ে।



তিল তিল করে গড়ে তোলা কোম্পানীটার হেড অফিস যখন গুলশানে আসলো ততদিনে সুরুজ মিয়ার বয়স হয়েছে। কাজ ছেড়ে তিনি অবসরে গিয়েছেন। কাচুর নিজের সংসার হয়েছে, তার ঘর আলো করে এসেছে সন্তান। স্বপ্নটা বড় হয় – সেই সাথে বড় হয় কোম্পানী। সুযোগ্য হাতে পড়ে তিরতির করে উঠে চলে সমৃদ্ধির পথে। সুরুজ মিয়ার প্রত্যয়ে নিজেকে জড়িয়ে ফেলে কাচু, হাতে তুলে নেয় দ্রুতবেগে ভেসে চলা নৌকার হাল।



সমৃদ্ধি আসবেই - উত্থানের পথে পিতা-পুত্রের প্রতিটি দৃঢ় পদক্ষেপ এই একই ছন্দে আন্দোলিত হয়।



(চলবে)

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.