নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

গেন্দু মিয়া একজন সহজ সরল ভালমানুষ। তাকে ভালবাসা দিন। তার ভালবাসা নিন। ছেলেটা মাঝে মাঝে গল্পটল্প লেখার অপচেষ্টা করে। তাকে উৎসাহ দিন।

গেন্দু মিয়ার চরিত্র – ফুলের মতন পবিত্র!

গেন্দু মিয়া

কিছু জানার চেষ্টা থেকে ব্লগে আসা। সাহিত্য চর্চা করতে চাই।

গেন্দু মিয়া › বিস্তারিত পোস্টঃ

তুলনাহীন দুই কন্যা

৩১ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ দুপুর ২:০৪

অফিসে ঢুকে টেবিলে বসতেই আমাদের অফিস সহকারী আনোয়ার ভাই এসে দাঁড়ালেন। তার হাতে এক টুকরো কাগজ। কাগজে ছয় অংকের একটা সংখ্যা।



ব্যপার কী? ব্যাপার হলো উনার ভাতৃকন্যা এবার জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষা দিয়েছেন। তার ফলাফল জানতে উৎসুক জনতা ফোনে আনোয়ার ভাইকে প্যারা দিচ্ছেন যেন ইন্টারনেট থেকে ফলাফল জেনে ব্রডকাস্ট করা হয়। কাগজের সংখ্যাটা রোল নাম্বার।



তো, চেষ্টা করলাম। এরর দেখায়। আবার মেসেজ আসলো যে দূপুর দুইটা নাগাদ ফলাফল বের হবে। একযোগে ইন্টারনেটে এবং স্কুলের দেয়ালে। কম্পিউটার খোলা, নেটে ঢোকা, ওয়েবসাইট খুঁজে বের করে নাম্বারটা টাইপ করা - এই সময়ের মধ্যে যেসব তথ্য জানা গেলো সেগুলো হচ্ছেঃ



১। আনোয়ার ভাই বেশিদূর পড়াশোনা করতে পারেন নি

২। তার ভাইয়ের কন্যারা আপাতত পড়াশোনা করছে

৩। তিনি এটি নিয়ে খুব গর্বিত



যা হোক, তাকে নিরাশ হয়ে ফিরে যেতে হলো। আমি ঠিক দূপুর দুইটায় আবার চেক করবো বলে আশ্বাস দিলাম।



মিনিট দশেক পরে তিনি আবার আসলেন, এবার হাতে দুইটা সংখ্যা - দুইটা রোল নাম্বার। বোঝা গেলো, ভাতৃকন্যা আসলে ২ জন আছেন যারা জে,এস,সি পরীক্ষা দিয়েছেন।



আমি খুব বেশি আশা না রেখেই আবার সার্চ দিলাম, দেখা গেলো এবার ফলাফল এসেছে। পরীক্ষার্থীদের এবং তাদের পরিবারের কথা বিবেচনায় এনে কর্তৃপক্ষ কয়েক ঘন্টা আগেই ফলাফল ছেড়ে দিয়েছেন। দুই কন্যার এ, এ- এবং এ+ এর সংখ্যার বেশ পার্থক্য থাকার পরেও দু'জনের মোট জিপিএ সমান। আমি হিসেবটা না বুঝলেও আনোয়ার ভাইকে বেশ সন্তুষ্ট মনে হলো। উল্লেখ্য, দুইকন্যারই একাধিক বিষয়ে এ+ আছে।



উনি বিস্তারিত টুকে নিয়ে তার সহকর্মীদের উদ্দেশ্যে হাঁটা দেবার পর শোনা গেলো গর্বিত কন্ঠের ঘোষণা, "দুইজনই এ+ পাইসে!" উল্লেখিত সহকর্মীদের মধ্যে জে,এস,সি পরীক্ষার্থী ভাতৃকন্যাদের অপ্রতুলতা থাকার কারণে আনন্দের মাত্রার তুলনামূলক বিশ্লেষন করা গেলো না।



একটা ব্যাপার ভালো হয়েছে, দুইকন্যার দুই পরিবারের হওয়ায় কাউকে অন্তত আজকে প্যারা খেতে হবে না, যেহেতু দুইজনের জি,পি,এ সমান এসেছে। আমার মনে আছে আমার এস,এস,সি,-র ফলাফল বের হবার পর আমার অপ্রত্যাশিত রকমের ভালো ফলাফলের করণে আমাদের বৃহত্তর পরিবারের মুক্তি পেয়েছিলো "প্যারা - এক দুখ ভরা কাহানী"। তার পর এইচ, এস, সি-র পর আমার ফলাফল অপ্রত্যাশিত রকমের খারাপ হবার কারণে "রিটার্ন অফ প্যারা" স্বচক্ষে দেখার (এবং সশরীরে অনুভব করার) সৌভাগ্য (কিংবা দূর্ভাগ্য) আমার হয়েছিলো। তারও পরে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবার সময় দেখা গেলো তৃতীয় পর্বঃ "প্যারা - দ্য রিভেঞ্জ"। চাকরি বাকরি, বিদেশে উচ্চশিক্ষা ইত্যাদি নিয়ে প্যারা চক্র এখনো চলছে। এর শেষ নেই।



শিক্ষা বোর্ডকে ধন্যবাদ এহেন তুলনামূলক বিশ্লেষনের সুযোগ না দেবার জন্য।



দুই কন্যার জন্য অনেক অনেক আশীর্বাদ রইলো। অনেক বড় হও, অনেক লেখাপড়া করে আনোয়ার কাক্কুকে গর্বিত করো। জীবনে সবারই জয়ী হবার সম্ভাবনা আছে, অন্যের সাথে তুলনামূলক জয়ে আসলে সুখ নেই। সুখ আছে আত্মতুষ্টিতে।



এখন দূপুর দুইটা বেজে ৭ মিনিট, নিশ্চয়ই দেশজুড়ে স্কুলে স্কুলে আনন্দ এবং প্যারা-চক্র শুরু হয়ে গিয়েছে!

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.