নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

গেন্দু মিয়া একজন সহজ সরল ভালমানুষ। তাকে ভালবাসা দিন। তার ভালবাসা নিন। ছেলেটা মাঝে মাঝে গল্পটল্প লেখার অপচেষ্টা করে। তাকে উৎসাহ দিন।

গেন্দু মিয়ার চরিত্র – ফুলের মতন পবিত্র!

গেন্দু মিয়া

কিছু জানার চেষ্টা থেকে ব্লগে আসা। সাহিত্য চর্চা করতে চাই।

গেন্দু মিয়া › বিস্তারিত পোস্টঃ

রম্যগল্পঃ বিনিময়

১৫ ই এপ্রিল, ২০১৫ বিকাল ৪:১৯

রম্যগল্পঃ বিনিময়
------------------
একুশে বইমেলা ২০১৫। মেলা প্রাঙ্গনে হাঁটছি। হাতে একটা ছড়ার বই। বইয়ের নাম "বজার ছড়া"। বদিউজ্জামানের শর্ট ভার্সন বজা।

অসাধারণ প্রতিভাধর এক কবি আমি। লিখি আগামীর পাঠকের জন্য। বলাই বাহুল্য এযুগের পাঠকের মাথার ওপর দিয়ে যায়। আমি বলি - "নো প্রবস!" গুনীলোকেরা কখনও তাদের সময়ে সমাদর পায়নি। আসলে আমারও লক্ষ্য সেটাই। মরণোত্তর কোন একটা পদক টদক পাওয়া। খালি আফসোস নিজের চোখে দেখে যেতে পারবো না।

একটা ব্যাগী প্যান্ট আর একটা টিশার্ট গায়ে দিয়ে বই বগলদাবা করে আমি মেলা প্রাঙ্গনে হাঁটাহাঁটি করি। ফুলটাইম কবি হয়ে যাবার পর হাতে টাকা পয়সার টানাটানি। ঘোরাঘুরি করি যদি পরিচিত কাউকে পাই, জোর করে বই গছায়ে দেব।

তো, সেদিন টি,এস,সি থেকে বইমেলার ফটকের দিকে বামের ফুটপাথ ধরে হাঁটছি। হঠাৎ, এক তরুণ সামনে এসে হামলে পরলো। আমার ডানহাতটা টেনে নিয়ে বললো -

"একটা আলপনা এঁকে দেই ভাইয়া।"

বাহ্‌। কী দারুণ সমাদর। এরকমই তো চাই। আর না চাইলেও অবশ্য উপায় নেই। হাতটা তার কব্জা থেকে ছাড়াতে গেলে বেশ একটা কুস্তি করতে হবে বলে মনে হচ্ছে। আমি আবার শান্তিপ্রিয় মানুষ। তো জিজ্ঞেস করলাম - "অবশ্যই আঁকবেন। তা বিনিময়ে কী দিতে হবে?"
"সমস্যা নেই ভাইয়া। যা খুশি দিয়েন।"

আমি অভিভূত। এরকম নির্লোভ নির্মোহ লোকদের জন্যই তো সমাজ আজো টিকে আছে। এদের জন্যই তো আমি ছড়া লেখি। মাথা নেড়ে সম্মতি দিলাম। ছেলেটা আঁকা শুরু করলো। একবার সাদারঙে একটা দাগ দেয়, ত আবার লাল রঙে একটা দাগ দেয়। কিছু একটা লেখা হচ্ছে বুঝতে পারলাম।

জিজ্ঞেস করলাম, "ভাই আপনি করেন কী?"

"জ্বী, চারুকলায় পড়ি। ছবি আঁকি।"

হুমমম। তা'হলে এই ব্যাপার। উনিও তা'হলে আমার মতনই একজন আর্টিস্ট। আমি খেলা করি ছন্দ নিয়ে, আর উনি খেলা করেন রঙ নিয়ে।

আঁকা শেষ। ছেলেটা তো মহা করিৎকর্মা। তিরিশ সেকেন্ডে আলপনা এঁকে ফেললো। হাতটা ঘুরিয়ে দেখলাম লাল সবুজ দুইটা ফুলের মধ্যে লেখা 'অমর একুশে বইমেলা'। ভাল লাগলো। এবার বিনিময়ের পালা।

ছেলেটা তাঁকিয়ে আছে। আমি খুব গম্ভীর মুখ করে বগলের নিচ থেকে "বজার ছড়া" বের করলাম। পৃষ্ঠা উল্টিয়ে গলা খাঁকাড়ি দিয়ে পড়া শুরু করলামঃ

"রবির জন্য রেস্পেক্ট
২৩শে ডিসেম্বর, ২০১৪
উৎসর্গঃ শ্রীরবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

ইয়ো ম্যান রবি,
তুমি মহাকবি।
ঝাক্কাস লিখসো,
গানের লিরিক্স-ও।
শর্ট যত স্টোরি,
গোল্ডেন হিস্টোরি।
নভেলস্‌ পুরাই কুল,
রবি ম্যান ইউ রুল!"

ছেলেটা হাঁ করে তাকিয়ে আছে। ব্যাপারটা ঠিক বুঝতে পারে নি। আমি জিজ্ঞেস করলামঃ "আর কিছু?"

ছেলেটা মিনমিন করে বলা শুরু করলো, "জ্বী। কেউ কেউ একশ' টাকা দেয়, কেউ কেউ..."

"আরে বলেন কী? আপনি একজন শিল্পী। আমিও একজন শিল্পী। আপনি খেলা করেন রঙ নিয়ে আর আমি খেলা করি ছন্দ নিয়ে।"

ছেলেটা অবিশ্বাসের দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আমি বলে চললামঃ

"আপনি আমার জন্য একটা ছবি এঁকেছেন। আমি আপনাকে একটা ছড়া পড়ে শোনালাম। আপনার ছবি আমার ভাল লেগেছে। তা ছড়াটা আপনার কেমন লাগলো?"

তার মুখের হাঁ-টা আরেকটু বড় হলো।

(সমাপ্ত)

মন্তব্য ২ টি রেটিং +৫/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৫ ই এপ্রিল, ২০১৫ বিকাল ৪:৩৭

দিশেহারা রাজপুত্র বলেছেন: ছড়া পইড়া রবি ঠাকুর নোবেল গাঙের জলে দিব তো।

মজা পাইছি। সেইরকমের।
প্রথম প্লাস।

১৫ ই এপ্রিল, ২০১৫ বিকাল ৪:৪৩

গেন্দু মিয়া বলেছেন: ধন্যবাদ। :)

বজা-কে আপনার মন্তব্য জানিয়ে দেব। ;)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.