নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার কারো কাছে নেই কোন অভিমানের দেনাপাওনা, নেই কোন কষ্টের হিসাব, তবুও লুকিয়ে থাকা হাহাকার পরম যতনে আগলে রাখি-- প্রথম পাওয়া চিঠির মত, আমি এই রকমই বন্ধু ।

জিএম হারুন -অর -রশিদ

আরেকটা জীবন যদি পেতাম আমি নির্ঘাত কবি হতাম

জিএম হারুন -অর -রশিদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

একটি বেওয়ারিশ লাশের অপেক্ষা

১৩ ই জুলাই, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:০৪

শহরের মানুষগুলো
এখন আর খবর খুঁজে না,
খবরই তাদের খুঁজে ফেরে
এইতো সেদিন -
‘বেওয়ারিশ’ এক লাশ খুঁজছে তার আপনজনদের।

হিমঘরে শুয়ে আছে লাশটি,
সারা শরীরে তুলোর মতো বরফ জমে আছে,
মাঝে মাঝে কিছু বরফ
লাল আর কালো হয়ে গেছে লাল কালো রক্তে,
রক্ত ঝরেছিলো বুক বরাবর তিনটি গর্ত দিয়ে,
আর মুখ এবং মাথা দিয়েও,
একেবারে কাছ থেকে
তিনটি গুলি ঢুকেছিলো তার বুক বরাবর,
মুখে আর মাথায় কয়টা বুঝা যাচ্ছে না,
মগজ বেরিয়ে চেহারাটাও বুঝা যাচ্ছে না,
বন্দুক যুদ্ধ - খেলায় নাকি সে মারা গেছে।

বেওয়ারিশ লাশ হওয়ার আগে সে শুধু বলেছিলো,
“জনাব,
আমার বিধবা মা’
আমাকে খুঁজে না পেলে পাগল হয়ে যাবে,
ছোট বোন’টির অনেক অনেক মন খারাপ হবে’
আপনারা ভুল মানুষ’কে ধরেছেন,
একই নামের অনেক মানুষ আছে এই দুনিয়ায়।

জনাব,
আমি কখনও কোনো দাবী নিয়ে রাস্তায় স্লোগান দেয়নি,
অন্যায় দেখেও কখনো মুখ খুলিনি,
আমি কখনো রাজনীতি নিয়ে কথা বলিনি,
শুধু বেঁচে থাকার চেতনাই আমার মূলনীতি ,
রাষ্ট্রীয় আইন অমান্য করিনি কখনোই,
সারাদিন পর বেঁচে থেকে
মা-বোনের কাছে বাসায় ফিরলেই আমরা খুশি,
বাবা মারা যাবার পর আমাদের দরিদ্র মা’
আমাদের শুধু একটা চেতনাই শিখিয়েছে,
প্রয়োজনে চোখ, মুখ, বুক বন্ধ থাকবে,
যে কোনো ভাবে বেঁচে থাকাই
আমাদের মুল চেতনা, একমাত্র চেতনা।

জনাব,
শুধু নামের মিলের কারনে
আপনারা আমাকে বন্দুক যুদ্ধের খেলোয়ার বলছেন,
আমি কখনো বন্দুকই দেখিনি,
না ভুল বলেছি স্যার ,
ক্ষমা করে দিবেন,
আপনাদের কাছে দেখিছি,
আর সিনেমায় দেখেছি,
ছোট বেলায়
বাবা’কে একবার ‘খেলনা বন্দুক’ কিনে দিতে বলেছিলাম,
টাকার অভাবে তখন কিনে দিতে পারেনি আমার কেরানী বাবা,
শুধু এই অক্ষমতার জন্য আমার বাবা
অনেকদিন আমার চোখে, চোখ রাখতো না,
তাই আমার বন্দুক যুদ্ধ খেলা শিখা হয়নি,

জনাব,
আমার বাবা- মা জানলে
কখনো আমার নাম ‘খোকা’ রাখতেন না,
কোনো ‘বাবা-মা’ই আর কোনোদিন
সন্তানের নাম ‘খোকা’ রাখবে না।

জনাব,
আমি এই খেলার নিয়ম জানি না,
খেলার আগে আমাকে দয়া করে একবার নিয়মগুলো শিখিয়ে দিবেন,
আমার ভুল হলে
আপনারাই ঝামেলায় পরে যাবেন,
শুধু দয়া করে মুখে গুলি করবে না,
চেহারা না চিনতে না পারলে
মা আমাকে সনাক্ত করবে কি ভাবে,
ডান হাতের কব্জিতে বাঁধা এই তাবিজ’টা যেনো না খুলো পরে,
আমার মা’ এই তাবিজটা আমাকে পড়িয়েছিলেন
এক মাওলানা সাহেবের কাছ থেকে নিয়ে
প্রভু যেনো আমাকে সব বিপদ থেকে রক্ষা করেন।

জনাব,
তাবিজটা যেনো থাকে দয়া করে হাতেই থাকে,
এইটুকু দয়া আপনারা আমাকে করবেন,
আমি মরে গিয়েও আপনাদের জন্য দোয়া করবো,
আপনারা যেনো এই খেলায় আরো নাম করতে পারেন ,
জনাব, বলেন ‘আমিন’
তাহলে দোয়া কবুল হবে”।

হিমঘরে অনেকেই তাদের হারিয়ে যাওয়া আপনজন’কে খুঁজছে,
অবহেলায়, অনাদরে বেওয়ারিশ লাশগুলো
তীব্র অপেক্ষায় আছে আপনজনদের জন্য,
এক একজনের মুখের চাদর সরাচ্ছে,
কেউ কেউ অমানুষিক চিৎকার করে
বেওয়ারিশ লাশের বুকে পরে যাচ্ছে,
আবার কেউ কেউ অনেকক্ষন ধরে
আটকানো নিশ্বাস ছাড়ছে স্বস্তিতে।

একজন মা’ বলে উঠলো
এটা আমার ‘খোকা’র লাশ হতে পারে না,
আমার ‘খোকা’র গায়ের রং অনেক সুন্দর।
হঠাৎ সাথে থাকা সাহসী ছোট মেয়েটি কেঁদে বলে উঠলো,
“মা’ এইডাই আমার ভাই,
ডাইন হাতের তাবিজটা এখনো আছে।”

মা,
অনেকক্ষন তাবিজটার দিকে তাকিয়ে থাকলো ,
যেনো অপরিচিত লাগে ‘তাবিজ’টা
তারপর বলে উঠলো’
“চল ‘খোকা’ বাড়ীতে চল,
শরীরটা অনেক ময়লা হয়ে আছে,
গরম পানি দিয়ে গোসল করাবো তোকে”
ছোট মেয়েটি কেঁদে কেঁদে বললো,
“আমার ভাইতো মরে গেছে ‘মা’
কেনো মরলো?”

মা শুধু তীব্র হাহাকার নিয়ে চিৎকার করে বললো
“ বাবা’রে আমাকে মাফ করে দিস,
আমি কেনো যে তোর নাম ‘খোকা’ রেখেছিলাম?”
________________
রশিদ হারুন
১৩/০৭।২০১৮

মন্তব্য ১১ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১১) মন্তব্য লিখুন

১| ১৩ ই জুলাই, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:৪০

জাজাফী বলেছেন: লেখাটি সুন্দর হয়েছে। বর্তমান সময়ের প্রেক্ষিতে লেখা সত্য বচন। খুব কম মানুষই এমন করে লিখছে। এখন সবাই তাবেদারী করতেই বেশি পছন্দ করে। আপনাকে সাধুবাদ জানাই। আমরা একটা অনলাইন পত্রিকা করেছি একটু ভিন্নধরনের। শুধু মাত্র ছোটদের বিষয় নিয়ে তাই নাম দিয়েছি "ছোটদেরবন্ধু" সময় পেলে ঘুরে আসবেন আর যদি আমাদের বিষয়াবলীর কোন কিছু আপনার ভালো লাগে তবে সেই ধরনের লেখাও দিতে পারেন আমরা তা আনন্দের সাথে প্রকাশ করবো।

১৩ ই জুলাই, ২০১৮ রাত ৮:১৪

জিএম হারুন -অর -রশিদ বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে,
খুব উৎসাহ পেলাম

২| ১৩ ই জুলাই, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:৫৬

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন:
অসাধারন হৃদয় ছোঁয়া সত্য কাব্য!
মানুষের অসহায়তার কাব্য!
মানবতার মৃত্যুর কাব্য
স্বৈরাচারিতার বিবৃতি কাব্য
নিয়তির হাতে অসহায় আমজনতার কাব্য!

অনুভবের রোমকুপ গুলো কেঁপে কেঁপে ওঠার কাব্

+++++

১৩ ই জুলাই, ২০১৮ রাত ৮:১৪

জিএম হারুন -অর -রশিদ বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে,
খুব উৎসাহ পেলাম

৩| ১৩ ই জুলাই, ২০১৮ রাত ৮:১৮

রাকু হাসান বলেছেন: চমৎকার কবিতা পড়লাম ....।ব্লগে যে সব কবিতা আসে প্রায়ই ,সেগুলো থেকে ভিন্ন লাগছে

১৩ ই জুলাই, ২০১৮ রাত ৮:৩৮

জিএম হারুন -অর -রশিদ বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে,
খুব উৎসাহ পেলাম

৪| ১৪ ই জুলাই, ২০১৮ রাত ১২:০৮

চঞ্চল হরিণী বলেছেন: আপনার এই কবিতাই তো বর্তমান সময়ের একটা প্রতিবাদ তাই না ? অথচ প্রতিবাদটা যদি লাশ হওয়ার আগে হত !
'বেঁচে থাকাই মূলনীতি'- অন্যায়ের প্রতিবাদ না করে কীটের মত বেঁচে থাকা এটা কেমন বেঁচে থাকা? যে মানুষটা এখন এসব অনুনয় করে বলছে সে নিশ্চয়ই আগেই সব অন্যায় বুঝতো। কিন্তু পাশ কাটিয়ে গেছে। নিজের ঘরে ফেরাই ছিল শান্তি, এখন লাশ হয়ে চির শান্তিতেই ফিরেছে। দেশের সকল সাধারণ মানুষ, অর্থাৎ আমজনতা যদি অন্যায় দেখে এড়িয়ে না গিয়ে প্রতিবাদ করতো, প্রয়োজনে রাজনীতির মাঠেই নামতো, স্লোগান দিতো মোটকথা ভীরু স্বার্থপর না হয়ে সচেতন হত তাহলে এমন অবস্থাই হতো না। কিন্তু "আমি কোন ঝামেলায় যাবো না, চোখ-নাক-মুখ-বুক বন্ধ রেখে শুধু নিজেরে নিয়ে কোনমতে বাঁচতে পারলেই হয়" এমন মানসিকতা যদি থাকে তাহলে এভাবে খোকাদের লাশ হওয়া কোনদিনই বন্ধ হবে না। বলতে পারেন আমজনতা এত কিছু বোঝে না। ভুল। বোঝে না অশিক্ষিতরা। কিন্তু শিক্ষিতের হার এখন দেশে কম নয়। শিক্ষত আমজনতারা যদি চোখ বন্ধ করে স্বার্থপরের মত বেঁচে থাকতে চায় তাহলে শেষে নিজের স্বার্থটাও আসলে আর থাকে না। সেটা হয় অদূরদর্শিতা, বোকামি।

৫| ১৪ ই জুলাই, ২০১৮ সকাল ১০:১৯

কল্পদ্রুম বলেছেন: ভালো লিখেছেন।

১৭ ই জুলাই, ২০১৮ দুপুর ১:০৯

জিএম হারুন -অর -রশিদ বলেছেন: বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে,
খুব উৎসাহ পেলাম

৬| ১৪ ই জুলাই, ২০১৮ সকাল ১১:২৮

রাজীব নুর বলেছেন: গ্রেট কবিতা।

১৭ ই জুলাই, ২০১৮ দুপুর ১:০৯

জিএম হারুন -অর -রশিদ বলেছেন: বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে,
খুব উৎসাহ পেলাম

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.