নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

প্রিয় বিবেক

প্রিয় বিবেক › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্পঃ ‘স্পর্শানুভূতি’

০২ রা ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ১১:১৭

‘নিশীথ’ অনেক আগেই টিএসসিতে চলে এসেছে। অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে ‘বর্ণের’ জন্য। বর্ণ নিশীথের বয়ফ্রেন্ড। প্রায় ৪ মাসের প্রেম তাদের। তারা একজন আরেকজনকে প্রচণ্ড রকমের ভালোবাসে। অবশেষে বর্ণের দেখা মিলল। নিশীথ জিজ্ঞেস করলো,

-কি হল এত দেরি কেন?
-সরি। এই যে কানে ধরলাম। আর জীবনেও লেট হবে না।
-তুমি তো প্রতিবারই কানে ধরে বল আর কখনও লেট করবে না। কিন্তু প্রতিবারই লেট কর।
-তোমাকে এত্তগুলো লাভ ইউ। হ্যাপি?

কথা শুনে নিশীথ মুচকি হাঁসে। আর বর্ণ হাঁসিতে গড়াগড়ি খায়। নিশীথ এক দৃষ্টিতে বর্ণের দিকে তাকিয়ে আছে। আজ কেন যেন তাকে খুব চিন্তিত লাগছে। বর্ণ কথা বলতে শুরু করল,

-আজ এত জরুরী তলব কেন ম্যাডাম?
-তোমার সাথে কিছু জরুরী কথা ছিল।
-‘কি জরুরী কথা? তুমি মা হবা নাকি?’ বলেই বর্ণ খিলখিলিয়ে হেঁসে উঠল।
-তোমার ফাজলামি বন্ধ করবা?
-ওকে বউ। এই যে মুখে হাত দিলাম। আর দুষ্টামি করবো না। এখন বল।
-বাসায় আমার বিয়ের কথা চলছে। তুমি কিছু একটা কর।
-সুখবর তো! বিয়ের কথা পাকাপাকি করে ফেল। তারপর ডেট ফিক্সড হলে আমাকে ইনভাইট কইরো। আমি এসে বিয়ের দাওয়াত খাব। আর আমি গরীব মানুষ। গিফট দিতে পারবো না কিন্তু!

বর্ণের কথা শুনে নিশীথ এবার ভারি বিরক্ত হল। সে উঠে দাঁড়াল চলে যাবে বলে। বর্ণ তার হাত টেনে ধরে বলল, ‘আর দুষ্টামি করবো না, প্রমিস। এখন বল।’ নিশীথ কথা বলতে শুরু করলো,

-আমার বিয়ের কথা চলছে। তুমি এখনই কিছু একটা কর।
-আমার তো চাকরি নাই। কিভাবে কি করি বল?
-এট লিস্ট তোমার আব্বু-আম্মুকে আমার আব্বু-আম্মুর সঙ্গে কথা বলতে বল। বিয়েটা না হয় পরে হবে। কিন্তু আগে কথা বলে রাখতে তো দোষ নেই!
-খুব জোরে দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে বর্ণ বলল, ‘আমার আব্বু-আম্মু কখনোই তোমার আব্বু-আম্মুর সঙ্গে কথা বলতে রাজী হবেন না।
-নিশীথের মাথায় যেন বাজ পড়ল। সে জিজ্ঞেস করলো, ‘মানে কি? কেন রাজী হবেন না?’
-জানি না।
-তোমার আব্বু-আম্মু আমার ফ্যামিলি ব্যাকগ্রাউন্ড পছন্দ করবেন না নাকি আমাকে পছন্দ করবেন না?
-এসবের কিছুই না।
-তাহলে? কি হইছে? কথা বল না কেন?
-আমি সনাতন ধর্মাবলম্বী।
-মানে?
-আমি একজন হিন্দু।
-তুমি কি পাগল হয়ে গেছো?
-না নিশীথ। আমি ঠিকই বলছি। আমার প্রকৃত নাম ‘তৎসম চট্টোপাধ্যায় বর্ণ’।
-তুমি হিন্দু। এটা আগে বল নাই কেন?
-‘বললে যে তোমাকে পেতাম না। তোমাকে অনেক ভালোবাসি। অনেক!’
কথা শুনে নিশীথের দু’চোখ ছলছল করে উঠল। বর্ণ আবার বলতে শুরু করলো,

-আচ্ছা নিশীথ চল আমরা পালিয়ে বিয়ে করি।
-আমি আমার ফ্যামিলির সাথে বিট্রে করতে পারবো না।
-কিন্তু আমি যে তোমাকে ভালোবাসি!
-কিন্তু তুমি হিন্দু, আমি মুসলমান। এই সমাজ কখনও তা মেনে নিবে না।
-নিশীথ সমাজ টা আমাদেরই সৃষ্টি। আর ধর্ম? তাও আমাদের প্রয়োজনে এসেছে। পৃথিবীতে যত ধর্মই থাকুক না কেন সবার স্রষ্টা কিন্তু একজনই। আমাকে এই পৃথিবীর কারো মানার দরকার নেই। জাস্ট, তুমি মেনে নাও। তাহলেই হবে।
-‘সরি বর্ণ। আমি পারবো না। আমাকে মাফ করে দাও।’ কথাটুকু বলতে গিয়ে নিশীথ আবিষ্কার করল তার দু’চোখ বেয়ে অশ্রুদের স্রোত বয়ে যাচ্ছে। সে কোনরকম চোখের পানি মুছল। তারপর সে বর্ণকে কিছু না বলেই সেখান থেকে উঠে সামনের দিকে চলে গেল। এবার আর বর্ণ নিশীথের হাত টেনে ধরে নি। নিশীথ চলে যাবার পর হাত দিয়ে মুখ ঢেকে হাউমাউ করে কাঁদতে লাগলো। তাঁর কান্নাতে আকাশ বাতাস ভারি হয়ে উঠল।

প্রায় ১০ মিনিট পার হয়ে গেল। বর্ণ এখনও কাঁদছে। সেই মুহূর্তে সে আবিষ্কার করলো কেউ একজন পেছন থেকে তার কাঁধে হাত রেখেছে। সে পেছন ফিরে তাকাল। তারপর যা দেখল তা তার বিশ্বাস হল না। নিশীথ তার কাঁধে হাত রেখেছে। বর্ণ উঠে দাঁড়াল। বর্ণের দেখাদেখি নিশীথও উঠে দাঁড়ালো। বর্ণ জিজ্ঞেস করলো,

-তুমি না চলে গেলে? আবার আসলে কেন?
-তোমাকে পালিয়ে বিয়ে করবো বলে!
-মানে?
-হুম। তোমাকে অনেক বেশি ভালোবাসি।
-কিন্তু সমাজ তো মানবে না!
-এ সমাজ আমাকে মানবে কিনা তা নিয়ে আমার মাথাব্যাথা নেই। আমি যাকে ভালোবাসি সে আমাকে সারাজীবন বুকের মধ্যিখানে যত্ন করে রাখলেই হবে। কি আমাকে বুকের মাঝখানে জড়িয়ে রাখতে পারবেনা?
সেই মুহূর্তে বর্ণ সমস্ত শক্তি খরচ করে নিশীথকে জড়িয়ে ধরল। প্রথমবারের মত বর্ণ নিশীথকে চুমু খেল। কতটা সময় যাবত তারা একজন অন্যজনকে জড়িয়ে ধরে রেখেছিল, তা এই দুই প্রাণী ছাড়া জগতের কেউ জানে না। কেউ না!

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.