নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কুকরা

একজন সতর্ক কুকরা।

কুকরা › বিস্তারিত পোস্টঃ

ব্রাক্মনেরা কৌলীন্য প্রথার দোহাই দিয়ে সামাজিক সুবিধা আদায় করতে লাগলেন।ক্রমে এই কৌলীন্য প্রথা থেকে সৃষটি হল কন্যাকে উচ্চবর্নে বিবাহ দেবার...

৩০ শে জানুয়ারি, ২০১৫ সকাল ১১:৪১

বিনয় ঘোষের লেখা “ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর” পুস্তকের ১১০ পৃষ্ঠায় লেখা আছে,”ব্রাক্মনেরা কৌলীন্য প্রথার দোহাই দিয়ে সামাজিক সুবিধা আদায় করতে লাগলেন।ক্রমে এই কৌলীন্য প্রথা থেকে সৃষটি হল কন্যাকে উচ্চবর্নে বিবাহ দেবার রীতি,যার অবশ্যম্ভাবী ফল হল বহুবিবাহ।এক একজন কুলিন ব্রাক্মন বহু কন্যার পাণি গ্রহন করতে লাগলেন।
ঋতুমতি হবার আগে বিবাহ দেবার বাধ্যবাধকতা ও বিবাহ দিতে না পারলে পিতামাতার যে সামাজিক অসম্মান হত তা থেকে নিস্কৃতি দেবার জন্য কুলিন ব্রাক্মনেরা এই সব কন্যাদের বিবাহ করতেন।অতএব বিবাহ বেশ লাভজনক ব্যাবসা হয়ে উঠল।কুলিন ব্রাক্মন কন্যাদের অসহায় পিতা মাতার দু তিন ডজন স্ত্রী থাকা সত্বে ও ৭০/৮০ বছরের বৃদ্ধ কুলীন ব্রাক্মনদের উপযুক্ত পাত্র বিবেচনা করতেন।মৃতপ্রায় ৮০ বছরের ও অধিক বয়স্ক বৃদ্ধের সাথে নিতা্ন্ত বালিকা কন্যাদের বিবাহ হত মৃত্যুর আগে সে বৃদ্ধের লাভ হত সামান্য কয়েকটি টাকা।“
কুলীন ব্রাক্মনদের মধ্যে অনেকে এ প্রথার বিরোধিতা করেছিলেন তাদের মাঝে পূর্ববঙ্গের (বর্তমান বাংলাদেশে) রাসবিহারি মুখোপাধ্যায় ছিলেন বিশেষ উল্লেখযোগ্য।তিনি তার জীবন চরিতে যা লিখেছেন তা থেকে সামান্য কিছু তূলে ধরা হল।
তিনি লিখেছেন,”পিতাঠাকুর মহাশয় আমাকে অতি শৈশবাবস্থায় রাখিয়া স্বর্গারোহন করেন।তখন পিতৃব্য শ্রীযুক্ত তারক চন্দ্র মুখোপাধ্যায় মহাশয় আমার অভিভাবক ছিলেন।দারিদ্রতাবশত আমাকে অল্পকালের মাঝেই তিনি ৮টি বিবাহ করান।বহুবিবাহে সম্মতি থাকিলে বোধহয় আমাকে শতাধিক রমণির পাণী গ্রহন করতে হত।নিরুপায় হয়ে আরো ৬টি বিবাহ করিতে হইল,তাহাতে আমার ঋন পরিশোধ ও ভরণপোষনের সংস্থা হইলে আমি হোসেন শাহির জমিদারিতে আশ্রয় গ্রহনপূর্বক তহশিলদারি কর্মে নিযুক্ত হই।
(রাসবিহারি মুখোপাধ্যায়ের সংক্ষিপ্ত জীবন বৃত্তান্ত)
এছাড়া আরো অনেক দৃষটান্ত আছে যে যার দ্বারা প্রমান করা যেতে পারে যে কৌলিন্য প্রথা সমাজে ভীষন আকার ধারন করেছিল।যেম্ন,”(ক)একটি ব্রাক্মনের যদি ত্রিশটি স্ত্রী থাকে তবে প্রতি মাসে কয়েকদিনের জণ্য শ্বশুরালয়ে গিয়ে থাকলে আর খেয়ে ও ঊপহার পেয়ে থাকলে ,জীবিকা অর্জনের কোন চেষটা না করে তার সারা বৎসর কেটে যেতে পারে।বহুবিবাহ প্রথার ফলে
কুলীন ব্রাক্মনেরা এক নিস্কর্মা,পরভুকশ্রেনি হয়ে ঊঠেছে,এবং বিবাহের মত একটি সামাজিক ও ধর্মিয় অনুষঠানকে নীতি হীনতার ঊৎস করে তুলেছে।
(খ)” অতএব অনেক কুলীন ব্রাক্মনের জীবনধারণের একমাত্র ঊপায় হল বহূবিবাহ করা
(গ)কুলীনরা বৃদ্ধ বয়সে ও বিবাহ করে। অনেক সময় স্ত্রীদের সঙ্গে তাদে্র দেখা সাক্ষাতই হয় না অথবা বড়জোর ৩/৪ বছর পরে একবারের জন্য দেখা হয়।
(ঘ)” এমন কথা শোনা যায় যে একজন কুলীন ব্রাক্মন ১ দিনেই ৩/৪ টি বিয়ে করেছেন।
(ঙ)”কোন কোন সময়ে একজনের সব কয়টি কন্যার ও অবিবাহিত ভগিনীদের একই সঙ্গে বিবাহ দেয়া হয়।
(চ)”কুলিনের ঘরের বিবাহিত বা কুমারী কন্যাদের খুব দুঃখের
মাঝে দিন কাটাতে হয়। কুলীনদের এ ধরনের বহু বিবাহের ফলে ব্যাভিচার,গর্ভপাত,শিশুহত্যা ও বেশ্যাবৃত্তির মত জঘণ্য সব অপরাঁধ সংঘটিত হয়।“

(উপরের (ক) থেকে (চ) পর্জন্ত উদ্ধৃতিগুলো শ্রী বিনয় ঘোষের লেখা ঐ ““ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর” নামক পুস্তক থেকে নেয়া হয়েছে।
এছাড়াও এমন সব ব্যক্তির কথা জানা গেছে যারা ৮২,৭২,৬৫,৬০ ও ৪২ টি কন্যার স্বামি এবং এ সমস্ত স্ত্রীদের যথাক্রমে ১৮,৩২,৪১,২৫ ও ৩২ টি করে পুত্র সন্তান এবং ২৬,২৭,২৫,১৫ ও ১৬টি করে কন্যা সন্তান ছিল।মোট কথা কৌলিন্য প্রথা এক শ্রেণীকে একশত খণ্ডে বিভক্ত করে বিভেদের প্রাচির রচনার ফলে মানুষের মানবিকতাকে দারুনভাবে অপমানিত করা হয়েছিল এবং মানুষের স্বাধীন অধিকারের মূলে কুঠারাঘাত করা হয়েছিল।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.