নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কুকরা

একজন সতর্ক কুকরা।

কুকরা › বিস্তারিত পোস্টঃ

মিয়ানমার তার কৌশলগত অবস্থান কতটুকু বোঝে?

০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ রাত ৮:৩৩



মিয়ানমারের রাখাইনে নতুন করে সহিংসতা শুরু হয়েছে। জাতিগত এই সহিংসতাকে ঔপনিবেশিক শক্তিরা জিইয়ে রাখছে এই এলাকাকে (বঙ্গোপসাগর এলাকা) নিয়ন্ত্রণে রাখতে। পরাশক্তি কখনোই চায় না যে বঙ্গোপসাগরে কোন শক্তিশালী রাষ্ট্রের আবির্ভাব হয়ে তার নিজের নিয়ন্ত্রণে থাকা কৌশলগত ব্যালান্সকে পরিবর্তন করে দেবে। ঠিক যখনই পরাশক্তি তার নিয়ন্ত্রণ হারাতে শুরু করে, ঠিক সেসময়েই সে কোন না কোন ঝামেলা পাকিয়ে তার নিয়ন্ত্রণ পূণপ্রতিষ্ঠা করতে চায়। মিয়ানমারের এই সমস্যাটাও ঠিক তেমনই। কিছুদিন পরপরই সেখানে জাতিগত সমস্যা শুরু হয়। এক্ষেত্রে সমস্যা শুরু হওয়াটা যতটা গুরুত্বপূর্ণ, তার চাইতে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো কখন এই সমস্যার আবির্ভাব হচ্ছে। মিয়ানমারের সরকার যে পরাশক্তির প্ররোচনায় রাখাইনে জাতিগত সমস্যা জিইয়ে রাখছে, তা বুঝতে বাকি থাকে না। এই কার্যকলাপে মিয়ানমারকে সমর্থন দিচ্ছে ভারত, যে কিনা এখন ভারত মহাসাগরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত মিত্র। সিকিম-ভুটান সীমান্তে চীনের রাস্তা নির্মাণে ভারতের বাধা দেয়া এবং এর ফলশ্রুতিতে ভারত-চীনের উত্তেজনা এবং বঙ্গোপসাগরে ভারত-মার্কিন নৌ-মহড়া “এক্সারসাইজ মালাবার-২০১৭” এই এলাকায় যুক্তরাষ্ট্রের তৎপরতার পরিচয় দেয়। তবে একইসাথে এই কর্মকান্ডগুলি বলে দিচ্ছে যে পরাশক্তি তার নিজ দেশে যে অস্থিরতায় রয়েছে, সেই একই অস্থিরতায় সে রয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে তার নিয়ন্ত্রণ হারানো নিয়ে।



তবে এখানে শুধু পরাশক্তির কথা বললেই হবে না, মিয়ানমারের কথাও আলোচনা আসা উচিৎ। মিয়ানমারের সরকার হয়তো ভুলে যাচ্ছে যে তাদের কৌশলগত অবস্থান তাদের এধরনের প্রক্সি-যুদ্ধকে সমর্থন করে না। একটু খুঁটিয়ে দেখলেই বোঝা যাবে যে মিয়ানমার একখানা তাসের ঘরের উপরে দাঁড়িয়ে থেকে নৃত্য করছে। বাংলাদেশ-মিয়ানমারের ভৌগোলিক সীমানার দিকে তাকালেই বোঝা যাবে যে মিয়ানমারের রাখাইন মিয়ানমারের বাকি অংশের সাথে যতটা না সংযুক্ত, তার চাইতে বেশি ভালোভাবে সংযুক্ত বাংলাদেশের চট্টগ্রামের সাথে। বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের মংডু শহরের সাথে মিয়ানমারের বাকি অংশের যোগাযোগের মূল মাধ্যম হলো মংডু-বুথিডুয়াং সড়ক। এই সড়ক গিয়েছে সুউচ্চ আরাকান পর্বতের মাঝ দিয়ে এবং কিছু স্থানে পাহাড় কেটে তৈরি করা টানেলের মাঝ দিয়ে। এই টানেল কোন কারণে বন্ধ হয়ে গেলে মংডুর সাথে যোগাযোগ রক্ষা করা মিয়ানমারের পক্ষে খুবই কঠিন হবে। শুধু তা-ই নয়, বুথিডুয়াং হয়ে যে রাস্তাটা কালাদান নদীর অববাহিকা বেয়ে দক্ষিণে চলে গিয়ে বাকি মিয়ানমারের সাথে যুক্ত হয়েছে, সেই রাস্তা থমকে দাঁড়িয়েছে সিতওয়ের উত্তরে বিরাট এক নদীর তীরে। মায়ু নদীর ঐ মোহনাতে কোন সেতু নেই, যা দিয়ে সহজে যানবাহন পার করা সম্ভব। আবার মংডু থেকে সমুদ্রের তীর ঘেঁষে দক্ষিণের রাস্তাটাও ঐ একই স্থানে এসে মায়ু নদীর মোহনায় থমকে দাঁড়িয়েছে। অর্থাৎ বাংলাদেশের সাথে সীমান্ত এলাকায় সৈন্য সমাবেশ করতে মিয়ানমারের যে লজিস্টিক্যাল নেটওয়ার্কের উপরে নির্ভর করতে হয়, তা অন্যন্ত দুর্বল এবং অনাকাংক্ষিত পরিস্থিতি মোকাবিলায় একেবারেই অপ্রতুল।

রাখাইনের সিতওয়ে বন্দরের একপাশে যেমন মায়ু নদী, অন্যপাশে রয়েছে কালাদান নদী। কালাদান নদী ব্যবহার করে ভারত তার বিচ্ছন্নতাকামী মিজোরাম এবং মণিপুর রাজ্যের লাগাম টেনে রাখতে চাইছে। কোলকাতা থেকে পরিবহণ জাহাজ বঙ্গোপসাগর পাড়ি দিয়ে কালাদান নদী হয়ে উত্তরে যাবে এবং একটা পর্যায়ে মালামাল ল্যান্ড করাবার পরে ট্রাকে করে সেগুলি মিজোরামে নেয়া হবে। এভাবেই সিতওয়ের আশেপাশের এই নদী-বেষ্টিত অঞ্চলটা মিয়ানমারের জন্যে যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি ভারতের জন্যেও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এই পুরো অঞ্চলটাই নদীর উপরে নির্ভরশীল এবং এই অঞ্চলের সাথে মিয়ানমারের বাকি অংশের যোগাযোগ ব্যবস্থা যারপরনাই খারাপ। সিতওয়ে বন্দর নৌ-অবরোধে পড়লে মিয়ানমারের পক্ষে মংডু ধরে রাখা প্রায় অসম্ভব। অথচ গোটা-দুই সাবমেরিনের মাধ্যমেই সিতওয়ে বন্দরের আশেপাশের এই এলাকাকে অবরোধে ফেলে দেয়া যায়। আর এরকম পরিস্থিতিতে মিয়ানমারের নৌবাহিনীর পক্ষেও এই এলাকা নিয়ন্ত্রণে রাখাটা কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। তার উপরে বাংলাদেশ-মালয়েশিয়া-ইন্দোনেশিয়ার মতো রাষ্ট্রগুলি মিয়ানমারের রাখাইন নীতির যেখানে ঘোর বিরোধী, সেখানে এই তিন দেশের নৌশক্তির কাছে মিয়ানমারকে অসহায়ই বলতে হবে। এই অসহায়ত্ব থেকে উদ্ধার পেতে মিয়ানমারকে আবারও তাদেরই (যুক্তরাষ্ট্র-ভারত) সরণাপন্ন হতে হবে, যারা রাখাইনের সমস্যা জিইয়ে রাখায় প্ররোচনা দিচ্ছে।

http://koushol.blogspot.com/2017/02/westphalian-system-myanmar-democracy.html



মংডু-বুথিডুয়াং রাস্তাখানি নিয়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ব্রিটিশদের সাথে জাপানি সেনাদের যে যুদ্ধ হয়েছিল, তাতে এটা অন্ততঃ পরিষ্কার যে বিশাল উঁচু আরাকান পর্বত পাড়ি দিয়ে রাখাইন ধরে রাখাটা মিয়ানমারের পক্ষে চাট্টিখানি কথা নয়। কারণ মংডু মিয়ানমারের অভ্যন্তরের চাইতে বাংলাদেশের সীমানা থেকেই বরং বেশি কাছে অবস্থিত। মিয়ানমারকে দিয়ে রাখাইনে সমস্যা সৃষ্টি করার সময়ে মিয়ানমার সরকারকে কেউ পরামর্শ দেয়নি যে কতটা দুর্বল কৌশলগত অবস্থানে থেকে মিয়ানমার রাখাইনে এই নৃশংসতা চালিয়ে নিচ্ছে। তাদের বোঝা উচিত ছিল যে এই প্রক্সি একশনে তাদের লাভ তো কিছু হবেই না, বরং তাদের রক্তকে ব্যবহার করে মার্কিন-ভারতীয় গোয়েন্দারা নিজেদের কাজ হাসিল করে নেবে।

তার উপরে মিয়ানমার সরকার ভেবে দেখেছে কি, যে সিতওয়ে বন্দরে অবরোধের মুখে পড়ে এবং মংডুর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পুরো রাখাইনই যদি তাদের হাতছাড়া হবার উপক্রম হয়, তাহলে মিয়ানমারের কাচিন এবং কারেন বিদ্রোহীরা কি করবে? চীনের ভূমিকাই বা তখন কি হবে? রাখাইনে সমস্যা জিইয়ে রাখলে রাখাইন হারাবার সাথে সাথে মিয়ানমার নামের দেশটারই যে অস্তিত্ব থাকবে না, তা কি মিয়ানমার সরকার ভেবে দেখেছে? আশেপাশের শক্তিরা তখন মিয়ানমারকে ছিঁড়ে খাবে। মিয়ানমার সরকার ভারত-মার্কিন ক্রীড়নক হয়ে কাজ করছে এবং নিজেদের বিপদ ডেকে আনছে – এটা বোঝাবার মতো লোক সম্ভবত নে পি ডাউ-তে নেই।

মন্তব্য ৭ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৭) মন্তব্য লিখুন

১| ০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ রাত ৮:৪১

কুকরা বলেছেন: সোর্স: Click This Link

২| ০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ রাত ৯:০৬

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: বৃহৎ আঙ্গিকের ভিন্ন ভাবনা ভাল লাগল.....

++++

৩| ০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ রাত ১০:০১

প্রশ্নবোধক (?) বলেছেন: এধরনের পোষ্ট আরও চাই। কারন ব্লগে যুক্তিযুক্ত এবং প্রামাণিক কথাবার্তা খুব কম পাওয়া যায়।

০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ রাত ১০:২৮

কুকরা বলেছেন: ১ নম্বর কমেন্টের লিংকটা পড়েন, মূল লেখার প্রশ্নোত্তর পর্বে জটিল সব এনালাইসিস আছে

৪| ০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ রাত ১০:০১

চাঁদগাজী বলেছেন:


জ্বি, বাংলাদেশ ও বংগোপসাগর জিও-পিটিক্যালী ভীষণ ভীষণভাবে স্ট্রেটেজিক, সেজন্য শনি গ্রহের এলিয়েনদের শনির-দৃস্টি পড়েছে!

৫| ০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ রাত ১:১২

উম্মু আবদুল্লাহ বলেছেন: মায়ানমার কেন এত ঝুকি নিচ্ছে? এতটা বোকামি তারা কেন করছে?

৬| ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ বিকাল ৫:৫৭

অত্র এলাকার বড় ভাই বলেছেন: চিন্তার খোরাক পেলাম...ধন্যবাদ এমন বিশ্লেষণধর্মী পোস্টের জন্য।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.