নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কুকরা

একজন সতর্ক কুকরা।

কুকরা › বিস্তারিত পোস্টঃ

পবিত্র মানুষের খোঁজে

১৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ সকাল ১০:৪১

যখন ছোট ছিলাম। মুক্ত আকাশ ভালো লাগতো। গাছ, পাখি ও পাখির গান ভালো লাগতো। খালি পায়ে মাইলের পর মাইল হাঁটতে ভালো লাগতো। নদী ভালো লাগতো, পাহাড় ভালো লাগতো। অকারনে দূর নীলিমার দিকে তাকিয়ে থাকতেও ভালো লাগতো।
বন্ধুদের সাথে আড্ডায় রাত পার করতে ভালো লাগতো। এখনো আকাশ আছে, আকাশে সাদা সাদা পুঞ্জিভুত মেঘ আছে, পাখি আছে, পাখিদের গান আছে। শুধু আমার ভালো লাগার বিষয়গুলো বদলে গেছে।

বুঝতে পারি তখন পবিত্র ছিলাম, শরীরে; মনে। এখন আপদমস্তক অপবিত্র হয়ে গেছি, কি শরীরে; কি মননে। অপবিত্র মানুষদের কাছ থেকে প্রকৃতি বিস্মিত হবার ক্ষমতা কেড়ে নেন। এখন তাই বৃষ্টির পর রংধনু আমাকে বিস্মিত করে না। বৃষ্টিভেজা শালিকের গা ঝাড়া দেয়ার মুহুর্ত কিংবা আকাশে সাদা মেঘের ভেলা আমাকে অভিভূত করে না। ঘাস ফড়িং এর অকারণ ছোটাছুটি আমাকে মুগ্ধ করে না। কৈশোরে পুকুরের টলটলে পানি আমাকে টেনে নামাত, ডুবে যেতাম, ভেসে যেতাম ভালোলাগায়, ভালোবাসায়। এখন পুকুর কিংবা দীঘিতে নামার আগে ভাবি এ পানি দূষিত নয়তো। যখন মন পবিত্র ছিল পানির বিশুদ্ধতা নিয়ে ভাবতাম না, এখন মন দূষিত; পানির বিশুদ্ধতা আমাকে ভীত করে।

কৈশোরে হুমায়ূন আহমেদের একটা উপন্যাস মনে খুব দাগ কেটেছিল। উপন্যাসের বিষয়বস্তুু ছিল পবিত্র মানুষ খোঁজা। গল্পের নায়ক পবিত্র মানুষ খুঁজে বেড়ায়। সে থেকে কিংবা আমি অপবিত্র হওয়ার আগে থেকেই আমি পবিত্র মানুষ খুঁজে বেড়াচ্ছি। ভালো মানুষ পাই, জ্ঞানী মানুষ পাই, ধনী মানুষ পাই, দাতা মানুষ পাই, কবি, সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবী, রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী কত ধরনের মানুষের সাথে পরিচিত হই কিন্তু পবিত্র মানুষ আমার পাওয়া হয় না।

যত নষ্ট হচ্ছি, পবিত্র মানুষ খোঁজার বাসনাটা ততই ব্যাকুল হচ্ছে। দূর থেকে যা পবিত্রময় দেখি, কাছে গেলে ততটাই দুর্গন্ধ পাই। একজনকে চিনতাম বিশাল দানবীর, সৌম্য চেহারা, কপালে দীর্ঘদিন ধর্মকর্মের চিহ্ন, কারো সাতে পাঁচে নেই, এমন জীবন যাপনে অভ্যস্ত ছিলেন ভদ্রলোক। পবিত্র মানুষ ভেবে কাছে গিয়ে জেনেছি ভদ্রলোকের কারনে উনার বাসায় কোন কমবয়সী কাজের মেয়ে রাখা যায় না। আমার এক ঘনিষ্ঠ আত্মীয়কে চিনি, খুবই অমায়িক টাইপের ভদ্রলোক। জগতের সব ভালো ছিল তাঁর মধ্যে। অল্পবেশি লাভের আশায় তাকে যখন দেখি খাঁটি ঘি-য়ে পামওয়েল মেশান তখন ভদ্রলোক এবং ব্যবসা দুটোর প্রতিই আমার ঘেন্না ধরে যায়। এরকম অসংখ্য উদাহারণ আছে। সে শৈশবে, এখনও। চাকুরী জীবনে এসেও যখন একটু ব্যতিক্রমী কাউকে পেয়েছি অভিভূত হয়েছি কিন্তু কাছে গিয়ে তার হৃদয়ের অপবিত্রতা কেবল আমার দু:খবোধটাকেই ভারী করেছে আরো।

আমার পবিত্র শৈশব, তখন জগতের কুটিলতা আমাকে স্পর্শ করেনি। এক কাপ চা, একটা বনরুটিতেই আমার লাঞ্চ হয়ে যেতো। ৫ টাকার টিকেটের একটা সিনেমায় ভরে যেতো মন। এখন আমার মন এবং শরীর দুটোই বড় হয়েছে। দুটোরই চাহিদা বিশাল, কোন কিছুতেই তৃপ্ত হয়না লোভী তনু মন। পবিত্র দিনগুলোর কথা ভেবে দু:খবোধ হয়। জীবন বদলের ইচ্ছেয় খুঁজে বেড়াই পবিত্র মানুষ। ধামির্ক নয়, জ্ঞানী নয়, ধনী নয় নিরেট পবিত্র মানুষ খুঁজে বেড়াই তাঁর সাথে জীবন বদল করবো বলে।

ফোরকান ওয়াহিদ | ৯ নভেম্বর ২০১৭, বৃহস্পতিবার (মানবজমিন)

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ সকাল ১১:০২

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: অসাধারন অনুভব!

আবার শিশুর দৃষ্টিতে দেখূন- দেখবেন পবিত্রতা আবার ধরা দেবে!
শৈষ লাইনের কামনা পূর্ণ হোক!

বিজয় দিবসে অন্তহীন শুভেচ্ছা

১৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ সকাল ১১:০৭

কুকরা বলেছেন: এই দৃষ্টি তো চোখের দৃষ্টি না, মনের দৃষ্টি। মনের ভিতরকার ময়লা ধুয়ে পরিষ্কার করতে না পারলে শুধু চোখ দিয়ে কিভাবে পবিত্রতা ধরা দিবে?

২| ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ সকাল ১১:১৬

সম্রাট ইজ বেস্ট বলেছেন: যথার্থই বলেছেন। নিজের উপলব্ধিটাও এর থেকে ব্যতিক্রম নয়। ভালো লাগল।

৩| ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ সকাল ১১:১৯

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: হুম তাতো অবশ্যই

দেহের ময়লা জলে যায়- মনের ময়লা যায় জ্ঞানে
আমরা পুথিগত জ্ঞানের বাইরে অন্তচক্ষুর জ্ঞানকে অবহেলা করি বলেই তার সন্ধান পাইনা!
শুন্যতা বাড়ে পৌন:পুনিক!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.