নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

Anti-extremist, Anti-nationalist, Humanist, Blogger, Writer - online; offline ...

বাব-উল-হাবীব

It’s a crazy stunt…Keep it up…!

বাব-উল-হাবীব › বিস্তারিত পোস্টঃ

অবশেষে অ্যাডেয়ার…

০৬ ই জুন, ২০১৮ ভোর ৬:৩৭


অ্যাডেয়ার হচ্ছে চেন্নাই শহরের কেন্দ্রবিন্ধু।
চেন্নাই হচ্ছে তামিল নাডু'র রাজধানী।
আর তামিল নাডু হচ্ছে; ভারতের একটি অঙ্গরাজ্য।
দাঁড়িয়ে আছে বঙ্গোপসাগরের কোলঘেষে।
সাগরঘেষা শহরগুলোর চরিত্র একটু ভিন্ন রকমের হয়।
এটাও তার ব্যাতিক্রম নয়।

কথাবার্তায় তেমন অসুবিধা হচ্ছে না!
এখানকার লোকেরা কমবেশি ইংরেজি বুঝে।
প্রথমে খুব অবাক হয়েছিলাম। এটা ক্যামনে সম্ভব?
টু-স্ট্রৌক সি এন জি চালাচ্ছে ড্রাইভার।
তাকে ইংরেজিতে ইন্সট্রাকশন দিন; ঠিক-ই পৌঁছে দেবে আপনাকে!
ভাড়া নিয়ে মুছকি হেসে চলে যাবে।
রাস্তার ধারে যে কোন রেস্টুরেন্টে ঢুকে খাবারের অর্ডার দিন, ইংরেজিতে।
ঠিক-ই খাবার সার্ব করবে।
বাসে উঠে হেল্পারকে বলুন কোথাকার ঠিকেট চাই!
সে রেসপন্স করবে!
এদের ইংরেজি জ্ঞান দেখে একটু অবাক হলাম। ঘটনা কি?!
একটু মনে হয় তদন্ত করা দরকার।
এখানকার মানুষেরা দেখতে সাধারণ ইণ্ডিয়ানদেরচে' একটু ভিন্ন।
কতকটা কালো আফ্রিকানদের মতো। শ্রীলঙ্কান তামিলদের চাচাতো ভাই।
তদন্তে যা বেরিয়ে এলো; বিস্ময়কর!
এরা হিন্দিকে বর্জন করেছে সর্বান্তকরনে।
শিক্ষার মাধ্যম ইংরেজি।
কথা বলে তামিল ভাষায় আর না হয় ইংরেজিতে।
যে বা যারা কয়েকবছর অন্ততঃ স্কুলে কাটিয়েছে তারাই কমবেশি ইংরেজি বুঝে বা বলতে পারে।
এদের ইংরেজি জ্ঞানের রহস্য জানা গেল।
*
সি ফুড স্পেশাল!
শহরের কেন্দ্রবিন্দুতে অবস্থিত অভিজাত একটি রেস্টুরেন্ট।
দুপুরেরে খাবার খেতে; দেখে শুনেই এটা বেঁচে নেয়া।
গতকাল দুপুরেও এখানে খেয়েছি!
সামুদ্রিক মাছের বিরিয়ানি। অসাধারণ রাঁধে।
তবে বদখত একটা জিনিসের ভয়ে পেটে ক্ষুধা নিয়েও আজ রেস্টুরেন্টির দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছি। ঢুকব কি ঢুকব না, সিদ্ধান্ত নিতে পারছি না।
উৎকট গন্ধওয়ালা হার্ট আকৃতির একটা পাতা।
অনেকগুলো দেয়া থাকে বিরিয়ানিতে।
এই পাতা ওরা খায় কিভাবে?! আল্লাহ মালুম।
আমার দেশের ছাগলও সম্ভবতঃ এগুলো চিবুবে না।
হটাৎ মনে পড়ল; এখানকার লোকেরা কম-বেশি ইংরেজি জানে।
এত ভাল, দামি একটা রেস্টুরেন্ট। এর ওয়েইটাররা নিশ্চই ইংরেজি বুঝে।
ওইয়েইটার না বুঝলে ম্যানেজার তো অবশ্যই বুঝবে।
আর বুঝাতে পারলেই কেল্লাফতে।
অতি সুস্বাদু শ্যামন বিরিয়ানি। উলস! উলস!
জিহবাটা টেনে নিয়ে রেস্টুরেন্টের ভিতরে পা বাড়ালাম।
বিসমিল্লাহ!

এই পাতাটা যদি না দেয়; তাইলে, সিদ্ধান্ত নিয়েই ফেল্লাম আর যেকঠা দিন চেন্নাই-তে থাকছি
প্রতিদিন দুপুরেরে খাবারটা এখানেই খাব।
ঢুকেই প্রথমে ম্যানেজারের মোখোমোখি হলাম!
তাকে বুঝিয়ে বললামঃ...
"আমি আপনাদের রেস্টুরেন্টে এসেছি, আপনাদের বিখ্যাত সামুদ্রিক মাছের বিরিয়ানি খাবার জন্য। তবে বিরিয়ানিতে আপনারা যে হার্ট আকৃতির পাতাটা দেন, ওঠা আমার পছন্দ না। আপনি কি দয়া করে আপনার বাবুর্চিকে বুঝিয়ে বলতে পারেন যাতে আমার বিরিয়ানিতে ঐ জিনিস না দেয়।"
খুব-ই সমজদারের মতো ম্যানেজার মাথা দোলাল। তবে কোন শব্দ করল না।
স্মার্ট দেখতে একজন ওইয়েইটারকে ডেকে তামিল ভাষায় কিছু বলল।
ইয়েস স্যার! ওয়েলকাম স্যার!
বলে ওইয়েইটার একটা টেবিলে নিয়ে বসাল।
তাকেও আরেকদফা বুঝিয়ে বললামঃ ...
"আমি আপনাদের রেস্টুরেন্টে এসেছি, আপনাদের বিখ্যাত সামুদ্রিক মাছের বিরিয়ানি খাবার জন্য। তবে বিরিয়ানিতে আপনারা যে হার্ট আকৃতির পাতাটা দেন, ওঠা আমার পছন্দ না। আপনি কি দয়া করে আপনার বাবুর্চিকে বুঝিয়ে বলতে পারেন যাতে আমার বিরিয়ানিতে ঐ জিনিস না দেয়। "
ইয়েস স্যার! ওয়েলকাম স্যার! বলে অর্ডার নিয়ে বেচারা কিচেনের দিকে চলে গেল।
স্টার্টার খেয়ে অরেঞ্জ জুসে চুমুক দিলাম।
আর মনে মনে ভাবলাম। আহা! কি ভাল রেস্টুরেণ্ট আর কি ভাল সার্ভিস!

কাঁচের জানালা দিয়ে বহমান নদীর মতো রাস্তাটা দেখা যাচ্ছে।
অদ্ভুতদর্শন বাস। নির্দিষ্ট স্টপেজে থামছে, যাত্রি নামছে, ঊঠছে, আবার ছুটছে।
দিকবিদিক ছুটছে, অসংখ্য যানবাহন। কোথায় যাচ্ছে, কে জানে!
সবাই ব্যাস্ত। ভীষণ ব্যাস্ত! এই দুনিয়ার সব জায়গায়। দাঁড়াবার সময়তো নাই!

ওইয়েইটার এসে খাবার সাজিয়ে দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
অপেক্ষা করছে, আরো কিছু লাগবে কি না?!
বিনয়ী চেহারা, ক্লিন শেইভড। স্মার্ট!
মনে মনে ভাবলাম আজ একে মোটমুটি ভালো একটা বখশিষ দিয়ে দেব।
যাতে আবারো আসলে সে খেয়াল করে। যত্ন নেয়!
তার চেহারা থেকে চোখ সরিয়ে তাকালাম প্লেইটের দিকে।
চারিদিকে বিভিন্ন রকমের সালাদে সজ্জিত প্লেইটের ঠিক মধ্যখানে একটা বাটি উপুড় করে রাখা।
এই বাটিটা তুল্লেই বেরিয়ে পড়বে, খাবার। দুপুরেরে খাবার। সি-ফুড বিরিয়ানি।
ধীরে ধীরে কাজটা করলাম। বাটিটা সরালাম।
উৎকট গন্ধটা ধাক্কা মারল নাকে। প্রচন্ড জোরে। বমি পেল আমার।
হার্ট আকৃতির পাতাগুলো দেয়া হয়েছে বিরিয়ানিতে। তবে সাধারণত যা দেয়া হয়ঃ আমার বেলায় করা হয়েছে তার দ্বিগুণ!!

আমার চমকে উঠাটা ওয়েইটার ধরতে পেরেছে।
মুখ খুলল সে। তবে ইংরেজিতে নয়, খাছ তামিল ভাষায়।
ছুটে এল ম্যানেজার। সে ও কথা বলল। বুঝতে চায় সমস্যাটা কি?
ওয়েইটার নিজেই বুঝেনি সমস্যা কি! ম্যানেজারকে কি বুঝাবে?

ওয়েইটার- ম্যানেজার দুজনেই চুপ করল, এক সময়। তাকাল এবার কাস্টমারের দিকে।
ধীরে ধীরে চোখ তুললাম, বিরিয়ানির প্লেইট থেকে।
পেটে ক্ষুধা, সামনে খাবার; কিন্তু খাওয়া যাচ্ছে না।
বুঝলাম ইংরেজি ঝেড়ে আর লাভ নেই। কোন এক বিচিত্র কারনে এই রেস্টুরেন্টের স্টাফরা ইংরেজি বুঝে না। আমার কপাল!

পরিষ্কার বাংলায় বললামঃ "বেটা! তোরা কি একদিনও স্কুলে যাসনি?! বাল্যকালটা কাটিয়েছিস কি করে? সারা চেন্নাইতে এই তোরা দুজন লোক; সুন্দরকরে সাজানো গুছানো একটা রেস্টুরেন্টে বসে অপেক্ষা করছিলে আমার দুপুরটা মাটি করার জন্য!!"
একটা সিঙ্গেল বর্ণও বুজেনি। বুজবেই বা কেমন করে? এরা তামিল ছাড়া আর কিছুই বুজে না।
না ইংরেজি। না হিন্দি। বাংলা'রতো প্রশ্ন-ই আসে না।
অবাক ফ্যাল ফ্যাল চোখে তাকিয়ে আছে।
আর আমি থাকিয়ে আছি ধোঁয়াউঠা বিরিয়ানির দিকে। দুঃখিত, ঠান্ডা চোখে।

বাইরে,
কাঁচের জানালা দিয়ে বহমান নদীর মতো রাস্তাটা দেখা যাচ্ছে।
অদ্ভুতদর্শন বাস। নির্দিষ্ট স্টপেজে থামছে, যাত্রি নামছে, ঊঠছে, আবার ছুটছে।
দিকবিদিক ছুটছে, অসংখ্য যানবাহন। কোথায় যাচ্ছে, কে জানে!
সবাই ব্যাস্ত। ভীষণ ব্যাস্ত! এই দুনিয়ার সব জায়গায়। দাঁড়াবার সময়তো নাই!

এক প্লেইট সামুদ্রিক মাছের বিরিয়ানি সামনে নিয়ে বসে আছি পেটে ক্ষুধা নিয়ে।
বিলটাও দিয়ে যেতে হবে। এদেরকে কিছুই বুঝানো যাবে না!

*
অনুলিখনঃ
বাব - উল - হাবীব

মন্তব্য ৯ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৯) মন্তব্য লিখুন

১| ০৬ ই জুন, ২০১৮ সকাল ৮:২৫

সনেট কবি বলেছেন: আচ্ছা বিপদতো!

২| ০৬ ই জুন, ২০১৮ সকাল ৮:৫১

লাবণ্য ২ বলেছেন: ইস! দুঃখজনক।

৩| ০৬ ই জুন, ২০১৮ সকাল ৯:০২

রাজীব নুর বলেছেন: আপনার লেখা পড়ে আমার তো এখনই চেন্নাই যেতে ইচ্ছা করছে ।

৪| ০৬ ই জুন, ২০১৮ সকাল ৯:১৫

ভুয়া মফিজ বলেছেন: চমৎকার লিখেছেন। একটা অভিজাত রেষ্টুরেন্টের লোকজনের ইংরেজীর এই দশা কেন তা তদন্ত করেন নাই?

৫| ০৬ ই জুন, ২০১৮ সকাল ৯:২৬

বৃষ্টি বিন্দু বলেছেন: আহা!
এ কি মুশকিল।
পড়ে মজাও পেলাম, দু:খও লাগলো।

৬| ০৬ ই জুন, ২০১৮ সকাল ৯:৪৭

যুক্তি না নিলে যুক্তি দাও বলেছেন: ভারি মুশকিল তো

৭| ০৬ ই জুন, ২০১৮ সকাল ১০:৩২

টারজান০০০০৭ বলেছেন: পাতাখানা কি জাতীয় ? বদগন্ধ কেন ?

৮| ০৬ ই জুন, ২০১৮ সকাল ১১:০৮

সম্রাট ইজ বেস্ট বলেছেন: ইয়েস স্যার, ওয়েলকাম স্যার এগুলো তো ইংরেজিই! ইংরেজি তো তাহলে কিছু হলেও বোঝার কথা!

৯| ০৬ ই জুন, ২০১৮ সকাল ১১:৫৩

একদম_ঠোঁটকাটা বলেছেন: পাতা তা হল কারি-পাতা। সাউথ ইন্ডিয়ান প্রত্যেক খাবারে ওটা মাস্ট দেবেই । আমার টেস্ট তা একদম যা তা লাগে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.