নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

I have a dream...

নিরন্তর সত্যের উপর পথ চলি, দুমড়ে মুচড়ে দেই সব বাধা!

আব্দুল হালিম মিয়া

আব্দুল হালিম মিয়া › বিস্তারিত পোস্টঃ

যে কোন অবস্হায় নিরীহ নারী শিশুকে হত্যা করার অধিকার কারো নেই। দোষীদের শাস্তি আজ না হলেও কাল হবে। সেই প্রত্যাশায় রইলাম।

১৭ ই জুন, ২০১৪ রাত ৯:২৫

কিভাবে শুরু করবো কথাগুলো বুঝতে পারছি না। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ শেষ হলে ১৬ই ডিসেম্বরের পরে আমরা সবাই যখন গোয়ালন্দের বাড়ীতে ফিরে আসি তখন দেখা যায় মিলিটারিরা আমাদের নিজ বাড়ীটা পুড়াতে যেয়ে ভুল করে ওদেরই সমর্থক যার অনুরোধে আমাদেরটা পুড়াতে এসেছিল, আমাদের একটা বাড়ীর পরে তারই একটা বাড়ী যেটা দেখতে হুবহ আমাদের বাড়ীটার মত ছিল সেটা পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। তবে আমাদের বাড়ীর ভেতরের সব বহনযোগ্য জিনিষপত্র লুট করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।



আর আমার নয়া চাচার বাড়ীটা ১৬ই ডিসেম্বেরে পরেও এসে দেখি বিহারীরা জোর করে দখল করে রেখেছে। উল্লেখ্য যে নয়া চাচার তিন ছেলেই মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছেন। একজনকে অবশ্য মিলিটারীরা ধরে নিয়ে বুকের উপর উঠে বুট দিয়ে পিষে, সিগারেটের আগুন দিয়ে ছ্যাকা দিয়ে প্রচন্ড নির্যাতন করে, পরে বাথরুম থেকে পালিয়ে তিনি সোজা ভারতে চলে যেতে পেরেছিলেন। তাদের সেই বাড়ীটা ১৭, ১৮ ডিসেম্বরও বিহারীরা দখল করে রেখেছিলো। দা, কুড়াল নিয়ে এমনভাবে বসেছিলো, যে কেউ গেলেই তাদের উপর হামলে পড়তো। আজ এতদিন পর কেনো বলছি সে সব কথা? আসছি সে কথায়।



পাকিস্তান আমলে গোয়ালন্দে খুব নামকরা ডাক্তার ছিলেন মোস্তফা ডাক্তার। আমাদের বাড়িটার পাশেই তার বাসা ও চেম্বার। যে কোন অসুখ হলেই বাবা লোক পাঠাতেন, মোস্তফা ডাক্তার এসে আমাদেরকে দেখে যেতেন। খুব জনপ্রিয় ছিলেন। জানতাম না তারা বিহারী ছিলেন, জানার মত বয়স তখনও হয় নি। জানলাম আরও পরে যখন তার আপন ভাইকে কিছুদিন পরে মেরে ফেলা হলো। তার নাম ছিল বাবুল। দেখতে খুব সুন্দর ছিলেন ও ভালো ক্যারাম খেলতে পারতেন। আমাদের বাসাতেও আসতেন সবাই ক্যারাম খেলতেন এক সাথে। মনে আছে তিনি আমাকে ক্যারামের একটা স্ট্রাইক উপহার দিয়েছিলেন যার সাথে তার নাম ইংরেজীতে 'বাবুল' খোদাই করে লেখা ছিল। গোয়ালন্দের দলমত নির্বিশেষে সবার সাথেই তার বেশ সখ্যতা ছিল। অথচ পাকিস্তানিরা আমাদেরকে আক্রমন করার আগেই তাকেসহ আরো অনেককে মেরে ফেলা হলো। তার কোন ব্যাক্তিগত দোষ ছিল বলে আমার জানা নাই। তিনি কোন দল করতেন কিনা আমি তাও জানি না। তারপর শুনেছি, মিলিটারীরা যখন গোয়ালন্দে আসেন তখন ওইসব বিহারীরা পাকিস্তানি মিলিটারীদেরকে সাথে করে নিয়ে দেখিয়ে দেখিয়ে দিতেন কারা কারা মুক্তি বাহীনিতে গেছেন, তাদের বাড়ীগুলো চিহ্নিত করে দিতেন। প্রতিশোধ স্পৃহায় ওদের চোখে তখন হয়তো ছিল মরন নেশা!



ফলে স্বাধীনতার পর আবার ওরা টার্গেট হলো। লাইন ধরিয়ে ওদেরকে গুলি করা হলো। গোয়ালন্দের মরা পদ্মায় প্রচুর লাশ ভেসেছিল, বাতাসে অনেকদিন যাবত সেই দুর্গন্ধ ছড়িয়ে ছিল। শুনেছি একজন বড় বিহারি ব্যবসায়ী এসেছিলেন আমার বাবার কাছে। তার একমাত্র মেয়েকে রেখে যেতে, কিন্তু তার মেয়ের একই কথা ছিল, তার বাবাকে মেরে ফেললে তাকেও মেরে ফেলতে হবে। পরদিন ঠিক তাই করা হয়েছিল.......।



বিজয়ের দু তিনদিন পর আমার এক কাজিন এলেন দুপুরের ভাত খেতে। তিনি ভারত ফেরত নন, গোয়ালন্দের বরাট এলাকার ট্রেনিং প্রাপ্ত মুক্তিযুদ্ধা। চোখ দুটো টকটকে লাল। শুনছিলাম তার মুখে আজ কতজনকে একসাথে গুলি করে ফেলে দিয়েছেন সেই সব কথা। তখন অবশ্য কারো মধ্যেই কোন ফিলিংস ছিল না তেমন একটা। কারন এই সবে আমরা দেশ স্বাধীন করেছি। পাকিস্তানি হায়েনা, রাজাকার আলবদর, বিহারীদের নৃশংস সেই সব ঘটনার বর্ণনা শুনছি আর শিউরে উঠছি।



তারপর রাজবাড়ী শহরেও বিহারীরা বিজয়ের পরও বেশ ক দিন মুক্তিযুদ্ধাদের উপর চোরা গোপ্তা হামলা অব্যাহত রেখেছিল, গাছের উপরে লুকিয়ে থেকে হঠাৎ করেই গুলি বর্ষন করে চলছিল। তাই সম্ভবত বলা হয়, দেশটা ১৬ তারিখে স্বাধীন হলেও রাজবাড়ি শহর বিজয় হয়েছিল আরো ক দিন পর।



যাই হোক সেসব বিগত হয়েছে আজ থেকে ৪৩ বছর আগে। সে দিন যে শিশুটির জন্ম হয়েছে তার বয়স আজ ৪৩ বছর। এখন প্রশ্ন হলো এই যে, ওইদিন যে শিশুটির জন্ম হয়েছে তার বাবার অপরাধের প্রায়শ্চিত্ত কেন সে করছে? কিংবা ধরুন তার বয়স যেহেতু ৪৩ সুতরাং নিশ্চয় তার ছেলেপুলে এমনকি নাতি নাতনিরাও এখন পৃথিবীতে এসে গেছে। তাদের কি দোষ? এরা মানবেতন জীবন যাপন করছে মিরপুরে আজ ৪৩ বছর ধরে। আমরা তাদেরকে বলি আটকেপড়া পাকিস্তানি। কারন তারা পাকস্তানের নাগরিক বলে দাবী করেন, তাদের প্রতি আনুগত্যই প্রকাশ করেছেন। কিন্তু পাকিস্তান তাদেরকে ফেরত নিতে চায় না। মাথামোটা জাতি, মুসলমানদের কলংক পাকিস্তানি শাষক গোষ্ঠি বহু নাটক করেছে গত ৪৩ বছর কিন্তু না দিয়েছে আমাদের সম্পদ ফেরত, না নিয়েছে এই সব বিহারীদেরকে ফেরত। আমাদের সরকার গুলোও সম্ভবত এইসব মানুষগুলোকে নিয়ে শুধু কু রাজনীতিই করে গেছে।



পটকা ফুটানোর অপরাধে, জমি দখলের পাঁয়তারায় যে মানুষগুলোকে পুড়িয়ে মারা হলো সেটা মানবতার বিরুদ্ধে জঘন্য আর একটা অপরাধ ছাড়া আর কিছুই নয়। যারা এইসব অপরাধকে ঢাকতে আবারও আমার মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনার দোহাই দিচ্ছেন হয় তারাও অপরাধী, না হলে জ্ঞানপাপী।

কারন দুর্নীতি, খুন, গুমকে হালাল করতে যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেন তারাই আসলে সবচেয়ে বেশী ক্ষতি করছেন মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে। তারাই মুলত মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সবচেয়ে বড় শত্রু।



খুব সংক্ষেপে একটা কথা বলে শেষ করি। আমেরিকায় ৯/১১ এর পরে বিভিন্ন শহরে যে সব মুসলমানরা আক্রান্ত হয়েছিল শুধুমাত্র গুটি কতেক অপরাধীর কারনে সেটা কি জাষ্টিফাইড ছিল? এমনকি মুখে দাড়ি থাকার কারনে মুসলমান ভেবে যে সব শিখ ভাইয়েরা আমেরিকার রাস্তায় নিগৃহীত হয়েছিলেন সেটা কি জাষ্টিফাইড ছিল? ভারতে হিন্দু মুসলিম দাঙায় যখন বাংলাদেশে কোথাও কোথাও আমার হিন্দু ভাইদের উপর নির্যাতন করা হয় সেটা কি গ্রহনযোগ্য? কিংবা ধরুন, টরন্টোর রাস্তায় রাতের বেলায় যখন মাথায় হিজাব থাকার কারনে কোন মুসলিম মহিলার উপর বাসের ড্রাইভার অকস্মাত কিল ঘুষি মারেন, যারা সাথে ৯/১১ অথবা আফগানিস্তানের তালেবানদের দুরতম সম্পর্কও নাই সেটা কি জাষ্টিফাইড হবে? অথবা ধরুন, চল্লিশের দশকে, আমেরিকার হারবার ফ্রন্টে জাপানিরা আক্রমন করার পরে, সারা কানাডার নিরীহ জাপানীদের কে সারা দেশ থেকে জড়ো করে ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া, তাদের কয়েক পুরুষের সম্পদ কেড়ে নেয়াকে কি জাষ্টিফাইড মনে করেন? তা যদি না হয়, তাহলে এইসব বিহারীদের উপর কেন এই নির্মমতা? তাদের পুর্ব পুরুষেরা যে অন্যায় করেছে, আজকের যুদ্ধাপরাধীদের মত তাদের বিচার করলেইতো ল্যাঠা চুকে যায়।



আসলে বিষয়টা হলো আইনের শাষনের অভাব। পটকা ফুটিয়ে কেউ যদি আইন অমান্য করেন তাহলে অবশ্যই দেশের প্রচলিত আইনে তাদের বিচার করা যেত। আইন নিজ হাতে তুলে নেবার অধিকার কি কারো আছে? তবে যদি সব কিছুই আইনের বাইরে চলে, তাইলে আর বলার কিছু নাই। কোন দ্যাশে যেন শুনেছি নাগরিকদেরকে নিজেদের নিরাপত্তার দায়িত্ব নিজেদেরকেই নিতে বলা হয়েছে, আমরা কি সেই অবস্হায় চলে এসেছি! যে কোন অবস্হায় নিরীহ নারী শিশুকে হত্যা করার অধিকার কারো নেই। দোষীদের শাস্তি আজ না হলেও কাল হবে। সেই প্রত্যাশায় রইলাম।



মন্তব্য ১ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ১৭ ই জুন, ২০১৪ রাত ১০:০৮

ল্যাটিচুড বলেছেন: দুর্নীতি, খুন, গুমকে হালাল করতে যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেন তারাই আসলে সবচেয়ে বেশী ক্ষতি করছেন মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে। তারাই মুলত মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সবচেয়ে বড় শত্রু।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.