নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

I have a dream...

নিরন্তর সত্যের উপর পথ চলি, দুমড়ে মুচড়ে দেই সব বাধা!

আব্দুল হালিম মিয়া

আব্দুল হালিম মিয়া › বিস্তারিত পোস্টঃ

জলাতংক বনাম দলাতংক

০৩ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ২:০৪

কুকুরে কামড় দিলে নাকি জলাতংক রোগ হয়। পানি দেখলেই শরীরে সমস্যা শুরু হয়ে যায়। বাংলাদেশে এখন দল দেখলেই জনগনের মধ্যে এক ধরনের দলাতংক রোগ শুরু হয়েছে। দল বলতে রাজনৈতিক দল ছাড়াও নানা ধরনের দল রয়েছে। অথচ এই সব দল যখন ক্রিয়েট করা হয়, সেটা রাজনৈতিক দল হোক আর সামাজিক দল, ক্লাব বা এসোসিয়েশন যাই হোক তখন তাদের যে গঠনতন্ত্র বা আদর্শ উদ্দেশ্য লেখা হয়, পড়া হয়, প্রেসক্লাব বা পল্টনে গলা ফুলিয়ে বলা হয়, সেগুলোতে থাকে জনগনের উপকার করার নানা ধরনের চটকদারী কথাবার্তা!
অথচ এইসব দল এখন জনগনকে রীতিমত কামড়ানো শুরু করেছে। আগের দিনে কামড় দেবার আগে কিছু ওয়ার্নিং দেয়া হতো, এখনো সেটাও দেয়া হয় না। সরাসরি কামড়ে দিয়ে এমন ক্ষত বিক্ষত করা হয় তাতে দেখা যায় যাকে কামড়ানো হলো সে হয় মারা গেছে না হলে সারা জীবনের জন্য পংগু হয়ে গেছে।
কামড়ের ধরনগুলো কিছু দিন পর পর পাল্টে যাচ্ছে। আজ থেকে প্রায় চল্লিশ বছর আগে শুরু হয়েছিল এদেশের সম্পদ লুট করে প্রতিবেশী ভারতে নিয়ে যাওয়ার কামড়। বাধা দিয়েছিলেন মুক্তিযুদ্ধের অকুতোভয় সেক্টর কমান্ডার মেজর এম এ জলিল। ফলে তাকে শুধু জেল জুলুমই সহ্য করতে হয় নি, ১৯৭৩ সালের নির্বাচনে তার ব্যালট বাক্স ঢাকায় এনে গননা করে তাকে পরাজিত করা হয়। অর্থাত জনগন ভোট দিলেও সেটা কামড়ে ছিড়ে ফেলা হয়। তবুও ভালো তার বা জনগন যারা তাকে ভোট দিয়েছিল, তাদের গা'য়ে কামড় দেয়া হয় নি। কেবলমাত্র ভোটের কাগজে কামড় দেয়া হয়েছিল।
এছাড়াও কামড় দেয়া হয়েছিল সদ্য স্বাধীন দেশে আসা বৈদেশিক সাহায্যগুলোতে। বঙ্গবন্ধু আক্ষেপ করে বলেছিলেন, সাড়ে সাতকোটি মানুষ, আট কোটি কম্বল, আমার নিজেরটা গেল কোথায়?
৭৫ এ বঙ্গবন্ধুর সপরিবারে নিহত হবার পর যারা এলেন তারা বললেন, আর কামড়ানো হবে না। জনগনকে মুক্তি দেয়া হবে। জনগন আশায় বুক বাধলো। কিন্তু দেখা গেল গণভোটের নামে, রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের নামে, এমনকি পার্লামেন্ট নির্বাচনের নামেও হলো বিরাট প্রহসন। জনগন ভোট কেন্দ্রে যেয়ে দেখে সকাল দশটার মধ্যেই তাদের ভোট দেয়া হয়ে গেছে। হাট বাজারগুলো সরকারীভাবে ফেয়ার টেন্ডার করে তা থেকে আসা রাজস্ব দিয়ে স্হানীয় উন্নয়নের পরিবর্তে যুব কমপ্লেক্সের নামে এমন কামড় বসানো শুরু হলো যে মানুষের দলাতংক রোগ শুরু হয়ে গেল। হাট বাজার থেকে শুরু করে টেন্ডার এমনকি বিসিএস, পুলিশ ইত্যাদিতেও দলীয় করন করা শুরু হলো। মন্ত্রীর বাসায় কুখ্যাত দাগী আসামী ইমদুকে আশ্রয় দেয়া হলো।
জনগন শুধু অসহায়ভাবে চারিদিকে তাকায় আর ভাবে আহারে, কেউ যদি এসে আমাদেরকে উদ্ধার করতো! সাইকেল চালিয়ে ক্যান্টনমেন্ট থেকে বের হয়ে এলেন একজন। তিনি বললেন, নাহ, যথেষ্ট হয়েছে। ঘুষ দুর্ণীতি আর চলবে না। দলীয় বাণিজ্যও বন্ধ করা হবে। কিছুদিন চললো, তারপর কিছু সংস্কার হলো বটে কিন্তু কামড়ানো থামলো না। আগেরবার ছিল দলীয় কামড়ানো। সেটা বন্ধ করে দলকে সাইনবোর্ড হিসেবে রেখে স্বামী স্ত্রী ও দু একজন পাইক পেয়াদা নিয়ে জনগনকে কামড়াতে শুরু করলেন। ফলে যখন সিংহাসনচ্যুত হলেন দেখা গেল স্ত্রীর শাড়ীর ভাজ থেকে কোটি টাকা বের হয়ে এলো।
এবার জনগন ভাবলো যাক বাবা বাচা গেল। তত্বাবধায়কের অধীনে দেশে স্বাধীনতার পর প্রথম নিরপেক্ষভাবে ভোট দিতে পেরে জনগন সত্যিই স্বস্তি পেল। কিছুদিন পর আবার সেই একই দশা। জায়গায় জায়গায় সাইনবোর্ড টানানো শুরু হলো এই জমির মালিক 'অমুক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক, অমুকের'! সুতরাং সাবধান, কেউ ধারে কাছেও আসবেন না! রাতারাতি শুরু হলো দখলবাজী। মানুষের জমি দখল, টেন্ডারবাজি, 'স্বৈরাচারের দালাল' ট্যাগ দিয়ে বড় বড় শিল্পপতি, কোটিপতিদেরকে এমন কামড়ানো শুরু হলো যে এক্কেবারে দিন এনে দিন খায় অবস্হা থেকেও কেউ কেউ রাতারাতি দশ বিশকোটি টাকার মালিক হয়ে গেলেন। বিরোধী দলের সাইনবোর্ডে আলকাতরা দিয়ে ঢেকে দেয়া হলো। জনসভা করতে গেলে কামড়ানো লোকগুলো গুলি বোমা ককটেল মেরে তাড়িয়ে দিল।
শুরু হলো আবার আন্দোলন। জনগনকে আরো কিছুদিন কামড়ানোর অভিপ্রায়ে ভুয়া নির্বাচন করেও পার পাওয়া গেলো না। কামড়ানোর দলে এলো পরিবর্তন। এভাবেই একদল কামড়ায়, তারা যায় আবার নুতন আর একদল এসে আরো দ্বিগুন বেগে কামড়ায়। তবুও কিছুটা স্বস্তি জনগনের ছিল যে পাচ বছর পর পর অন্ততপক্ষে কামড়ানোর দলতো পরিবর্তন হচ্ছে। হচ্ছিল কারন তখন তত্বাবধায়ক সরকার নামে একটা তিনমাসের নিরপেক্ষ অথচ কামড়ানো ছাড়া সরকার ক্ষমতায় থাকতো। রেফারির ভুমিকা পালন করলেও তারা ছিল লোভ লালসাবিহীন, তাদের কামড়ানোর দরকার পড়তো না, কারন তাদের কোন দল ছিল না। কিছুদিন আগে সেটাও বাতিল করে দেয়া হলো। কারন ওই কামড়ানো দলগুলো প্রতি পাচ বছর কামড়িয়ে তাদের দাতে যে রক্ত মাংসের লোভনীয় স্বাদ পেয়ে গেছিল সেটা আবার পরের পাচ বছর না পাওয়ার বেদনা সহ্য করতে পারছিল না। যে কারনে একটানা কামড়াতে 'তত্বাবধায়ক' নামক জীবটিকে চাকু দিয়ে ফালি ফালি করে রক্তাক্ত করা শুরু করে দিল। তারপরে এলো আর এক দল, তারা ভাবলো, দুত্ত্বোরিকা! তত্বাবধায়কের কি দরকার। পুরোটাই এক গালে খেয়ে ফেললেইতো হয়! ঠিক তাই করা হলো। দলগুলোর এই বভুক্ষতাকে মেটাতে যেয়ে এই জনগন কখনো বাসের মধ্যে গান পাউডার খায়, কখনো ট্রাকের নীচে চাপা খায়, কখনো গুলি খায়, কখনো পেট্রল বোমা, ককটেল আর মরিচের গুড়া খায়। ওরা খায় না, খায় কেবল জনগন। ওরা বক্তৃতা দেয়, দিয়ে সাদা ফিনফিনে পান্জাবীর ভাজ ঠিক করতে করতে মন্চ থেকে নেমে আসে আর দলকানা ডান্ডাবেড়ী পরা কয়েদীদের প্রশ্ন করে, কিরে কেমন হলো আজকের বক্তৃতা? দলদাসেরা আহলাদে গদগদ হয়ে বলে, নেতা, এরকম বক্তৃতা আর কখনো শুনি নাই। তেজোদীপ্ত কণ্ঠে শ্লোগান ধরেন, নেতা তুমি এগিয়ে চলো.....মন্চের সামনে, বিস্তীর্ণ ময়দান ভর্তি বিভিন্ন বস্তি থেকে রাতভর টাকা বিলিয়ে নিয়ে আসা জীর্ণ শীর্ণ লোকগুলো মিহি সুরে কণ্ঠ মেলান, 'আমরা আছি তুমার সাথে'! সভা শেষ। লোকজনে ঠাসা বাসে উঠে ভাবছেন, আহারে, অন্তত আজকে আমার অসুস্হ পুলাডারে গোশত খাওয়াতে পারবো। কতদিন পুলাডা গোশতো তো দুরের কথা, পেট ভরে একবেলা ভাতই খায় না। ভাবতে ভাবতেই হঠাত করেই দেখে বাসটা দাউ দাউ করে জ্বলছে। মানুষজন ছুটাছুটি করে নামছে। টাকা নিয়ে বাড়ী ফেরার পথেই ঢাকা শহরের কোন এক মোড়ে কারা যেন বাস ভর্তি লোকজনকে উদ্দেশ্য করে পেট্রল বোমা ছুড়ে মেরেছে। সারা শরীর পুড়ে যাচ্ছে, স্বপ্নগুলো নিমিষেই শেষ, ঘরে রেখে আসা স্ত্রীর আর্তনাদ মনে পড়ছে, কাম নাই, বাদ দাও, শয়তানদের মিটিং এ যাওয়ার দরকার নাই, ঘরেই বইসা থাকো আজ। শুনেন নাই স্ত্রীর কথা। এরপর.....সব শেষ। পুড়ে কয়লা হয়ে যাওয়া লাশ। তারপরো অবশ্য তার মুল্য কমে নাই। পুড়ে কয়লা হওয়া লাশটাতেও ওরা শেষ কামড়টা দেয়, ওদের কাজে লাগে। ফেসবুকের পাতায় ঠাই হয়, বড় বড় গণমাধ্যমে প্রচার হয়, বিশ্ববাসী অবাক হয়ে দেখে। সময় হয়তো আসছে, মানুষ দল দেখলেই পালাবে, ডাক্তার ডায়াগোনাইসিস করে বলবে, লোকটার দলাতংক রোগ হয়েছে!

রাজনৈতিক দলগুলো তাদের অস্তিত্ব প্রকাশ করে জনগনের কল্যাণের জন্য। জনগনের মধ্য থেকেই উঠে এসে তাদের প্রয়োজনেই দলগুলোর প্রকাশ ও বিকাশ ঘটে বা ঘটার কথা। যদিও বাংলাদেশে বেশীরভাগ দলই এসেছে গুটি কয়েক লোকের ব্যাক্তি স্বার্থে, ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে, জনগনের স্বার্থে, জনগনের মধ্য থেকে নয়। বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের সরকারী নিয়ন্ত্রনের কারনে নির্বাচন কমিশন নামক ঠুটো জগন্নাথ চিরটাকাল জনগনকে তোয়াক্কা না করেই এসব দলকে একের পর এক নিবন্ধন দিয়ে গেছেন, ব্যাঙের ছাতার মত আজ ছোট এই দেশে শতাধিক রাজনৈতক দল রয়েছে। আর এরাই আজ জনগনের প্রতিপক্ষ হয়ে দাড়িয়েছে, জনগনকে হত্যা, জখম করে চলেছে। কখনো এরা, কখনো তারা। তাই সম্ভবত আজ বেশীরভাগ মানুষ দলাতংকে ভুগছে! এভাবে চলতে থাকলে, মানুষ যাদেরকে আশ্রয়, আশা ভরসার স্হল ভাবার কথা, একদিন হয়তো তাদেরকে দেখলেই দৌড়ে পালিয়ে যাবে।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.