নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

I have a dream...

নিরন্তর সত্যের উপর পথ চলি, দুমড়ে মুচড়ে দেই সব বাধা!

আব্দুল হালিম মিয়া

আব্দুল হালিম মিয়া › বিস্তারিত পোস্টঃ

বিএনপির সম্ভাব্য করনীয়ঃ একটা মেঠো বিশ্লেষন

১৯ শে মার্চ, ২০১৫ ভোর ৪:১০

বিএনপি গত ৫ই জানুয়ারী থেকে নুতন করে আন্দোলন শুরু করেছে। তবে এবারকার আন্দোলনে জনসম্পৃক্তা নেই বললেই চলে। আন্দোলনের ফলাফল নিয়ে দেশের অনেকের সাথেই আমিও একমত। সেটা হলো, নিজেরা মাঠে না নেমে যাদের জন্য আন্দোলন, যাদের জন্য গনতন্ত্র তাদেকেই বিপদের মুখে ঠেলে দেয়া কোনভাবেই গ্রহনযোগ্য হতে পারে না, সেটার নামও কখনো আন্দোলন হতে পারে না। প্রশ্ন হলো, কেনো এমন হলো? এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে উনারা মাঠে থাকতেন। হরতাল দিয়ে ঘরে বসে থাকতেন না। বিএনপি বিরোধী আন্দোলনেও ৯৬ সালে জামাত, আওয়ামী লীগ, জাপা মাঠে থাকতেন। সুতরাং প্রথম কারন হলো, এবার তারা মাঠে থাকেন না। দ্বিতীয়ত, বিএনপি ও জামাত ছাড়া এই কুড়ি দলে তেমন কেউ নেই। দল হলো দুটো, নাম দেয়া হয়েছে কুড়ি দল। সেই কুড়ি দলের সাথে দেশের অন্যান্য দল ও মতের লোকদেরকে নিজেদের আন্দোলনের পক্ষে আনাতো দুরের কথা সহানুভুতিও দেখা যাচ্ছে না। ২০০৬ সালে যখন ৪ দলীয় জোটের বিরুদ্ধে মহাজোট গড়া হলো, আমি নিবিড় ভাবে খেয়াল করছিলাম যে কিভাবে সেই মহাজোট সত্যিকার ভাবেই মহাজোট হয়ে উঠছিলো। কিভাবে সেই মহাজোটের প্রতি দেশের সিংহভাগ শ্রেনী পেশার মানুষকে শেখ হাসিনা তথা আওয়ামী লীগ অত্যন্ত মুন্সিয়ানার সাথে একত্রিত করতে পেরেছিলেন, বিএনপির একের পর এক ভুলকে তারা কিভাবে ক্যাশ করতে সফলতা দেখাচ্ছিলেন। যেদিন পল্টনে মহাজোটের প্রথম প্রকাশ্য ঘোষনা করা হয়, পাঠককে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই যে, মনে করে দেখুন, সেদিন প্রচন্ড চাপ, লোভ ও ভয় ভীতিকে উপেক্ষা করে, দুই দিন গোয়েন্দা চোখ ফাকি দিয়ে, লুকিয়ে থেকে, সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদ পল্টনের জনসভায় হাজির হয়েছিলেন। সাথে আরো ছিলেন মুলত বিএনপি জামাত বাদে দেশের শীর্ষ স্হানীয় সকল রাজনৈতিক দলের প্রধানেরা। তার মধ্যে ছিলেন, সাবেক রাষ্ট্রপতি বি চৌধুরি, কর্নেল অলি আহমেদ থেকে শূরু করে ইসলামিক ও কম্যুনিষ্ট পন্হী বা বাম দলগুলো। ফলে দেশের বেশীরভাগ মানুষের একটা গনজোয়ার সেদিকে গিয়েছিল। এমনকি, কট্টর আওয়ামী লীগ বিরোধী কাজী জাফর আহমেদও সেদিন সেই মহাজোট গড়তে বড় ভুমিকা পালন করেছিলেন। এরশাদ বিরোধী ডক্টর কামাল, হাসানুল হক ইনু, বি চৌধুরী, কর্নেল অলি পাশাপাশি মন্চে বসেছিলেন মাঝখানে এরশাদকে রেখে, হাসি মুখে কথা বলছিলেন। ১/১১ এর পরে যদিও শেখ হাসিনা ও তার দল অংগীকার থেকে সরে এসে কাজী জাফর, কর্নেল আলি, বি চৌধুরীদের কে দেয়া ওয়াদা পালন করেন নাই, করলে হয়তো আজ ইতিহাস ভিন্ন রকম হতো। সেদিন প্রকাশ্যে সেই মন্চে শেখ হাসিনা ও জাতীয় নেতৃবৃন্দকে মাঝখানে রেখে লক্ষ লক্ষ মানুষের সামনে এরশাদ তার অতীতের কৃতকর্মের জন্য, ভুল ত্রুটির জন্য জাতির কাছে ক্ষমা চেয়েছিলেন। শেখ হাসিনাও তার আগের টার্মের ভুল ত্রুটি শুধরে নেবার কথা বলেছিলেন, নুতন নুতন ওয়াদা করে জাতিকে আশ্বস্ত করতে পেরেছিলেন।

তো আজ বেগম খালেদা জিয়ার জোটের অনেক দাবী দাওয়ার সাথে দেশের মানুষ একমত হলেও কেন তিনি আন্দোলন সফল করতে পারছেন না? বিশেষ করে বিগত ৫ই জানুয়ারীর ভোটার বিহীন নির্বাচন দেশের সিংহভাগ মানুষ গ্রহন করেন নাই, মেনে নেন নাই, তবুও কেন খালেদা জিয়ার আন্দোলনের এই হাল? তার প্রধান কারন হলো তার নুতন কোন ওয়াদা নেই। নুতন কোন ভিশন মিশন নেই। তিনি জাষ্ট আবার ক্ষমতায় যেতে চান। শুধুমাত্র আওয়ামী লীগের ভুলের উপর দাড়িয়ে তিনি আবার ক্ষমতায় যেতে চান। তিন নিজের এত এত সেই ভুলের কথা একবারো বলেন না, অতীতের সেই ভুল ত্রুটি গুলো জাতির সামনে এখনো দগদগে ঘা য়ের মত, সে ব্যাপারে টু শব্দটি তিনি করেন না। নুতন করে দেশ ও জাতির জন্য কি করবেন সেটাও তিনি বলেন না। তার সাথে শুধুমাত্র জামাত ছাড়া আর কোন রাজনৈতিক দলকে নুতন করে এনে আওয়ামী লীগকে একঘরে করার কোন ব্যবস্হাই তিনি নিতে পারেন নাই। বরং তার পুত্র যার কারনে হাওয়া ভবনের বদনাম নিয়ে তাকে ক্ষমতা ছাড়তে হয়েছিলো, তিনি লন্ডনে বসে এমন সব বিতর্কিত কথা বলেছেন যা কঠিন আওয়ামী লীগ বিরোধী রাজনীতিকরাও তাদের জীবনে শুনেন নাই বা বলেন নাই। এছাড়া উনাদের অরাজনৈতিক আচরন ও ব্যবহারের কারনে বিএনপির বর্ষিয়ান ও অভিজ্ঞ রাজনীতিক যেমন তরিকুল ইসলাম সহ অনেকেই দলীয় কর্মকান্ড থেকে দীর্ঘদিন যাবত দুরে রয়েছেন। অপরদিকে শেখ হাসিনা অতীতের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে প্রশাসন ও অন্যান্য বাহিনীকে ইচ্ছেমত কাজে লাগাচ্ছেন, সরকারের এমন বেপোরোয়া আচরনের সামনে বিএনপির অনেকের ঘর থেকে বের হওয়া মুশকিল হয়ে দাড়িয়েছে। নিজেরা সাহসের সাথে রাজপথে দাড়িয়ে দল ও দেশের জনগনকে লীড করেন না, নিজের দলের অভিজ্ঞ ও বিশ্বস্ত নেতাদেরকে দুরে ঠেলে দেন, তুচ্ছ তাচ্ছিল্ল করেন, অপমান করেন। বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে কটুক্তি করেন, ইতিহাস বিকৃতি করেন, দেশের অন্যান্য পেশাজীবিদেরকে আনতে পারেন না, অন্যান্য দলীয় নেতৃবৃন্দকে কাছে টেনে জাতীয় ঐক্যমত তৈরী করতে পারেন না, প্রশাসন পুরোটাই বিরুদ্ধে চলে গেছে, ছাত্রদল বিভিন্ন ক্যাম্পাসে ঢুকতে পারে না। বাকী রইলো কি? আন্তর্জাতিক শক্তি? তারা আর কি করে দিতে পারে! এই আন্তর্জাতিক শক্তি সব সময় দেখেছি দুর্বলের দিকে থাকেন না, তারা সবলের দিকেই থাকেন, কারন তাদের স্বার্থ হাসিল করাটাই বড় কথা।

সুতরাং একথা জোর দিয়ে বলা যায়, দেশের সিংহভাগ সাধারন মানুষের সমর্থন থাকলেও বিএনপি নিজেদের ভুলের কারনেই আন্দোলনের ফসল ঘরে তুলতে পারছে না। বিগত দুই বার অর্থাত ৯১ ও ২০০১ সালে জিতেছিল শুধুমাত্র আওয়ামী লীগের ভুলের কারনে, এবারও যদি ভেবে থাকেন সেই আগের মত অটো পাশ করে যাবেন, তা বোধ হয় আর হবে না। হ্যা, যদি ফেয়ার ইলেকশন হতো, যদি মানুষ ভোট দেবার সুযোগ পেত, আওয়ামী লীগের ভুলগুলোর কারনে এবারও আপনারা অটো পাশ করে যেতেন। পরের আবার আপনাদের ভুলের কারনে আওয়ামী লীগ পাশ করে যেতো কিন্তু হলফ করে বলতে পারি, যদি, নির্বাচনের ব্যলটে পয়েন্ট ভিত্তিক ভোট দেবার ব্যবস্হা থাকতো, যেমন দুর্নীতি, উন্নয়ন, প্রশাসনিক দক্ষতা, ব্যাক্তিগত যোগ্যতা, ব্যাক্তিগত অর্জন ইত্যাদি পয়েন্ট ধরে ধরে মানুষকে ব্যালটে ভোট দিতে হতো, তাহলে হয়তো মানুষ ভোট কেন্দ্রে যেয়ে 'ধ্যাত' ভোট দেয়ার ক্যাথা পুরি বলে ব্যালট ছিড়ে ফেলে দিয়ে চলে আসতো!

তো কথা হলো, এত কথার পর, বিএনপি ও দলের নেতৃবৃন্দ যে অবস্হায় আছেন, কি তাদের অপসন হতে পারে? তাহলে কি করা যায়? বিশেষ করে গত দু মাস যাবত বেগম খালেদা জিয়া কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে কয়েকজন নেতাকে নিয়ে অবস্হান করছেন, গ্রেফতারী পরোয়ানাও তাকে বের করে আনতে পারে নাই, সেখান থেকে তিনি বের হবেন কিভাবে? কোন মুখে? হরতাল দিলে হরতাল হয় না, অবরোধ প্রায় ফ্লপ, মিছিল মিটিং করতে পারেন না বা সরকার করতে দেন না। তাহলে উপায় টা কি? জনগনের কাছে মুখ রক্ষা করে কি এমন কোন উপায় বের করা যায় না, যাতে সাপও মরে লাঠিও না ভাঙে!

আমিও কনফিউসড। তবে, একটা বিষয় আপাত দৃষ্টিতে মনে হচ্ছে মন্দের ভালো হতে পারে। সেটা হলো, সদ্য ঘোষিত ঢাকা সিটি করোপরেশনের নির্বাচনে অংশ নেয়া। বলা যে ঠিক আছে, দেশের ও জনগনের স্বার্থে আমরা আন্দোলনের কিছুটা বিরতি দিলাম। আমরা এই নির্বাচনটাকেই জনমত যাচাইয়ের উপায় হিসেবে গ্রহন করলাম। সুতরাং আমরা হরতাল ও অবরোধ প্রত্যাহার আপাতত প্রত্যাহার করলাম। যদি কোন রকম কারচুপি করা হয়, তাহলে আবার হরতাল ও অবরোধ দেয়া হবে। চ্যালেন্জটা নেয়ার কথা বলে গুলশানের ঐ কার্যালয় ছেড়ে বের হয়ে আসা, রাজপথে জনগনের সাথে মিশে যাওয়া। এটা এইজন্য বলছি যে, ঢাকা শহরে বিএনপির আন্দোলন সফল হয় না, সেজন্যই নাকি সরকার পতন হয় না। তাহলে, কৌশলগত ভাবে এটাকে একটা মোক্ষম অস্ত্র হিসেবে নিতে পারে বিএনপি। তারা যদি সিটি নির্বাচনে অংশ নেন, তাহলে স্বাভাবিকভাবে ঢাকা শহরের দু মেয়র ও কাউনসিলর প্রার্থীদের ব্যপক সংখ্যক সমর্থকদের নিয়ে প্রায় প্রতিদিনই পাড়ায় মহল্লায় মিছিল মিটিং করতে পারবে। নির্বাচন উপলক্ষ্যে জনগনের মধ্যে একটা তেজীভাব ও উত্তাপ অটোমেটিক্যালি ছড়িয়ে পড়বে। নির্বাচনে যদি হেরে যান বা হারিয়ে দেয়া হয় তখন সেই উত্তাপকে আরো বাড়িয়ে আন্দোলনের পরবর্তী ধাপে যেতে পারবেন, সেক্ষেত্রে আন্দোলন এখনকার চেয়ে অন্তত হাজার গুন বেশী গতি পাবে সেটা নিশ্চিত করে বলা যায়। আর কোন কারনে যদি জিতে যান, বলা যাবে যে এ সরকারকে জনগন চায় না, সিটি নির্বাচনের ফল তার প্রমান। মধ্যবর্তী জাতীয় নির্বাচনের দাবীটা আরো যৌক্তিকতা পাবে। এ ছাড়াও এ নির্বাচনে অংশ না নিলে, ঢাকাতে সরকারী দলের মেয়র ও কাউন্সিলরদের দাপট চলবে আগামী দশ বছর যা বিএনপির জন্য বা তার দলের জন্য ক্ষতি ছাড়া লাভ বয়ে আনবে না।
সুতরাং এ কথা বলা যায়, এক ঢিলে কয়েক পাখী মারতে হলে, ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ গ্রহন না করার কোন বিকল্প বিএনপির হাতে নেই। সেটা নিজ দলের প্রার্থী দিয়েই হোক আর অন্য কাউকে সমর্থন দিয়েই হোক।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ১৯ শে মার্চ, ২০১৫ ভোর ৪:১৭

চাঁদগাজী বলেছেন:


"তো আজ বেগম খালেদা জিয়ার জোটের অনেক দাবী দাওয়ার সাথে দেশের মানুষ একমত হলেও কেন তিনি আন্দোলন সফল করতে পারছেন না? "

-মানুষ অনেক অনেক দেরীতে হলেও বুঝতে পেরেছেন যে, খালেদা জিয়ার উদ্দেশ্য একটা, উনি টাকশাকের ভেতরে ঘুমাতে চান।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.