নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

I have a dream...

নিরন্তর সত্যের উপর পথ চলি, দুমড়ে মুচড়ে দেই সব বাধা!

আব্দুল হালিম মিয়া

আব্দুল হালিম মিয়া › বিস্তারিত পোস্টঃ

আর ইউ এ্যা ভিআইপি? দেন, ইউ আর দ্যা প্রোবলেম, গট ইট?

২৬ শে মার্চ, ২০১৫ রাত ১০:০২

দৌলতদিয়া ঘাটে দুই শ্রেনীর লোক মুলত বাধ্যতামুলকভাবে ভিআইপি সেবা করে। তারা হলেন পুলিশ আর ফেরীঘাটের কিছু শ্রমিক কর্মচারী। রাত একটা দুইটা, ভোর পাঁচটা, কোন ঠিক নাই। চোখ দুটো লাল করে ভোর বেলায় বাড়ীতে ফিরেন। খুব ভোরে যারা ঘুম থেকে উঠে একটু হাটাহাটি করেন, তাদের সাথে ওদের দেখা হয়, জিজ্ঞেস করলে বলেন, ভাই, ভিআইপি ডিউটি ছিল, সারা রাত জাগতে হয়েছে। হয়তো কোন এক মন্ত্রী, এসপি, ডিসি, সচিব, চেয়ারম্যান, ডিজি, আইজি, ডিআইজি, জিএম, এমডি বা কোন রাজনৈতিক দলের বড় নেতা পার হবেন সেই জন্য আগে থেকেই গোয়ালন্দ ঘাট থানাকে অবহিত করা হয়। ভিআইপি সাহেব যাবেন, তার ফেরী পারাপার যেন নির্বিঘ্ন হয়, সুতরাং ভিআইপি ডিউটি অনিবার্য হয়ে উঠে। কোন এক ভিআইপি সাহেবের পিএস বা পিএ ফোন করেন স্হানীয় থানাকে। বলেন যে স্যার রাত ১২ টায় ঘাটে পৌছুবেন। ফেরী যেন রেডী থাকে। সেইভাবেই ঘাটে দায়িত্বরত শ্রমিক বা আইডব্লিউটিএর কর্মচারীদেরকেও নির্দেশনা দেয়া থাকে। 'স্যারের' রাত ১২ টায় আসার কথা, আসেন রাত তিনটায়। এসেই দেখেন ঘাটে তিন মাইল লম্বা যানজট। ফেরীতে গাড়ী উঠানোতো দুরের কথা, হেটে গেলেও জায়গা নাই। শুরু হয়, ভিআইপি ততপরতা। দুই দিন ধরে অপেক্ষারত সবজির ট্রাক, দুধের লরি, সারাদিন ঘাটে বসে থাকা সাধারন মানুষ ভর্তি বাসের প্যাসেন্জারদেরকে পেছনে ফেলে, অসুস্হ্য রোগি বহন করা এ্যাম্বুলেন্সকেও হয়তো ফেলে রেখে, তথাকথিত ভিআইপি সেবা শুরু হয়ে যায়। স্যারদের তাড়া আছে। সকালে অফিস আছে। স্যারের মেয়ের সকালে স্কুল আছে। গিয়েছিলেন সুন্দরবনে প্রমোদ ভ্রমনে। অনেক টায়ার্ড। পরে এসে আগে পার হয়ে যেতে না পারলে আর ভিআইপি হলেন কেমনে? হু কেয়ারস এ্যবাউট বাসের মধ্যে সারাদিন গরমে পুড়ে বমি করে করে নেতিয়ে পড়া রহিমুন করিমুন।



এখানেই শেষ নয়। ফেরীতে উঠেই তাদের জন্য আলাদা বাথরুম, আলাদা খাবার, সে অনেক কথা। যাইহোক ভোরের দিকে ব্যারাকে ফিরে আসা পুলিশের সিপাহি ভাই কিংবা বাড়ীতে ফিরে যাওয়া শ্রমিক ভাইয়ের দেহখানা তখন 'ভেঙে ভেঙে পড়ে' অবস্হা।



ঢাকা শহরে সারাদিন যানজটে নাকাল থাকেন লক্ষ লক্ষ মানুষ, প্রতিদিন, প্রতি মুহুর্ত, মাসর পর মাস, বছরের পর বছর, যুগের পর যুগ। তাতে কি? উপরে উল্লেখিত ভিআইপিদের তাতে কি কোন অসুবিধা হয় কখনো? হয় না। কারন তারা যখন চলেন, প্রথমত ভিআইপি রোড দিয়ে চলেন। কখনো যদি সাধারন গন্ধওয়ালা কোন রাস্তা দিয়ে চলতে হয়, ঐ যে বললাম, ভিআইপি ডিউটি রত ট্রাফিক ভাইয়েরাতো আছেনই। বাশী হুইসেল দিয়ে সব ক্লিয়ার করে দেন। এক নিমিষেই রাস্তা ফাকা হয়ে যায়। ভিআইপি ম্যাডাম বা ভিআইপি চাচা পার হয়ে যান। যান জটের দুঃসহ জ্বালা তাকে, তাদেরকে কোনকালেও ছুতে পারে না।



সুতরাং ঐসব খেটে খাওয়া আমজনতার সুবিধা অসুবিধা নিয়ে তারা অতটা চিন্তিত থাকেন না। ঢাকা শহরে যখন বিদ্যুতের লোড শেডিং হয়, ভিআইপি এলাকায় কখনো সেই দুঃসহ অন্ধকার স্পর্শ করতে পারে না। মিন্টু রোডে কখনো বিদ্যুত যায় না।



'কি যাতনা বিষে, বুঝিবে সে কিসে? দংশেনি যারে।' । অথচ কি তামশা, এইসব আমজনতার যত দুর্গন্ধ যুক্ত সমস্যা, এইগুলার সমাধানের দায়িত্ব কিন্তু আবার ঐসব ভিআইপি 'বাজান'দের। সুতরাং এই সমস্যা চল্লিশ, পন্চাশ, ষাট বছরের জটে পড়ে যায়। কারন, যার হাতে ফাইল, যিনি সমাধান করবেন তিনিতো আর ঐ সমস্যায় পড়েন না। যিনি নিজে জানেন না, বোঝেন না, সমস্যা কাহাকে বলে, কত প্রকার কি কি, তিনি কি করে ঐসব সমস্যার দ্রুত ও পারমানেন্ট সমাধান করবেন, কি ঠ্যাকা তার। কখনো কখনো ফাইল নড়ে যদি ফুয়েল পড়ে।



সুতরাং সমস্যা সমাধানের মুল অন্তরায় হলেন এইসব তথাকথিত ভিআইপিরা। এরা যে সুযোগ সুবিধাগুলো ভোগ করেন তার বেশীরভাগই সংবিধান অনুযায়ী অবৈধ। সেই বিষয়টা ধরতে পেরেছেন ভারতের কিংবদন্তি, জনমানুষের নেতা আম আদমি পার্টির অরবিন্দ কেজরিওয়াল। তিনি ভদ্রবেশে লুকিয়ে থাকা সমাজের অনেক সমস্যাকেই লাথি মেরে সমাধানের ওয়াদা করেছেন। এই লাথিটা এরকম না যে তার ডান বা বাম পা উচিয়ে ফ্লাইং কিক করা। এটা তিনি করছেন, গোড়ায় হাত দিয়ে।



প্রচন্ড গরমের শহর দিল্লীর মানুষের অন্যতম প্রধান সংকটের নাম পানির অপ্রতুলতা। ১১০০ মিলিয়ন গ্যালনের জায়গায় উতপাদন হয় ৮০০ মিলিয়ন গ্যালন। ৩০০ মিলিয়ন গ্যালন শর্ট। রাতারাতি এটা পুরন করা সম্ভব নয়। কাজ চলছে নুতন প্লান্টের ১৪০০ মিলিয়ন গ্যালন উতপাদনের। কিন্ত যতদিন এটা না হবে, ততদিন এইযে ৩০০ মিলিয়ন শর্ট, সেটার জ্বালা, যন্ত্রনা,কষ্ট কারা ভোগ করবে? এতদিন ভোগ করেছে সাধারন মানুষ। কখনো তারা পানি পেয়েছে, কখনো পান নি। অথচ দেখুন, এই পানি সমস্যা সমাধানের বা নুতন নুতন প্লান্ট বানানোর দায়িত্ব কিন্তু সাধারন মানুষের নন। তারা ভোট দিয়ে, ট্যাক্স দিয়ে যাদেরকে ক্ষমতায় পাঠান, বেতন দেন, তারা হয়ে যায় ভিআইপি, আম জনতা হয়ে যান দলিত মথিত অস্পর্শ। দিল্লীতে যতই পানির সংকট থাকুক, ঐসব ভিআইপি সাহেবরা কিন্তু কখনোই পানির সংকটে থাকেন নাই। ঠিক যেমন ঢাকাতে। সেখানে যতই বিদ্যুতের লোড শেডিং থাকুক, মিন্টু রোড সহ ভিআইপি এলাকায় কখনো বিদ্যুত যায় না।

এসব কথা বিবেচনায় এনে, দিল্লীর নব নির্বাচিত মুখ্যমন্ত্রী কেজরিওয়াল গতকাল বুধবার ঘোষনা করেছেন যতদিন পানির সংকট থাকবে ততদিন সমানুপাতিক ভাবে এইসব ভিআইপিরাও সংকটে থাকবেন। অর্থাত একজন সাধারন মানুষ যদি একদিন পানি না পান, একজন ভিআইপিও একদিন পানি পাবেন না। শুধুমাত্র তিন চারজন লোক বাদে সকলেই এই নির্দেশের আওতায় পড়বেন। শুধু কি তাই, তিনি বলেছেন, এটা আমার কাছ থেকেই প্রথম শুরু হবে। মানে হলো যেহেতু তিনি নিজেও এখন ভিআইপি, আর নির্দেশটা তিনিই দিচ্ছেন, সুতরাং কার্যকারীতা যেন তার থেকেই প্রথম শুরু হয়, পানি কাট করতে হলে প্রথম যেন তারটাই করা হয়। আহ, কি কথা!



দেখুন কোথায় লাথিটা মেরেছেন বিশ্বের কোটি কোটি আমজনতার প্রিয় কেজরিওয়াল। এবার কি হবে? যখন কোন ভিআইপি জাদার আদরের কন্যার বা লাডলি সকালে নাস্তা করতে যেয়ে পানি পাবেন না, বা তিনি নিজেও যখন পানি না খেয়েই বাসা থেকে বের হয়ে অফিসে দৌড়াবেন, তখন তিনার এই পানি সংকটটা সমাধানের প্রচেষ্টা যে রকেটের গতি পাবে সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।



আগ্রহীদের জন্য কেজরিওয়ালের এই দুঃসাহসিক পদক্ষেপের নিউজটা নীচে দিয়ে দিলাম। একটু সময় নিয়ে পড়ুন প্লিজ। মুখে শুধু মার্কস বাদ লেনিনবাদ, সর্বহারার জয় চাই বললেই আপনি সর্বহারার নেতা হয়ে যান না। খেটে খাওয়া মেহনতি মানুষের জন্য কিছু করতে চাইলে বাস্তব পদক্ষেপ নিতে হয়। ফ্যান্টাসিজম দিয়ে আপনার দাদাদের জীবন পার হয়েছে, বাবারা চলে যাওয়ার পথে, নিজেদের চুল দাড়িও পাকা শুরু করেছে। আকাশ থেকে মাটিতে নেমে আসুন, এমন কিছু করুন যে আপনার জীবদ্দশায়ই তার ফল ভোগ করতে পারেন, চল্লিশ প্রজন্ম পরে নয়। কেজরিওয়ালরা সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ুক, তাদের সফলতা কামনা করি।





প্লিজ ক্লিক দ্যা লিংক-----



Click This Link

মন্তব্য ১৪ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২৭ শে মার্চ, ২০১৫ রাত ১:২৭

শতদ্রু একটি নদী... বলেছেন: পোস্ট ভাল্লাগছে। কেজরী ভাইরে এইদেশে নিয়া আসা দরকার।

২৭ শে মার্চ, ২০১৫ রাত ১:৫৩

আব্দুল হালিম মিয়া বলেছেন: ধন্যবাদ।

২| ২৭ শে মার্চ, ২০১৫ রাত ২:৪৫

নাহিদ রুদ্রনীল বলেছেন: যতদিন পর্যন্ত দেশের আমজনতা থেকে একজন নেতা উঠে আসবেন ততদিন পর্যন্ত এসব "ভিআইপি" রাই তথাকথিত নেতা হয়ে দেশ শাসন করবেন। পরিবর্তন আসাটা খুব জরুরী।

২৮ শে মার্চ, ২০১৫ সকাল ৯:০৮

আব্দুল হালিম মিয়া বলেছেন: ঠিক বলেছেন, পরিবর্তন আসতেই হবে।

৩| ২৭ শে মার্চ, ২০১৫ রাত ৩:৪০

মহান অতন্দ্র বলেছেন: সব ভিয়াইপিরাই তো এরকম করেন । আমরা আবার ভি আই পি হয়ে গেলে ঠিক এমনটাই করব নাতো!

২৮ শে মার্চ, ২০১৫ সকাল ৯:০৯

আব্দুল হালিম মিয়া বলেছেন: আমরাও করবো যদি আমাদের মুখে শেখ ফরিদ আর বগলে থাকে ইট!

৪| ২৭ শে মার্চ, ২০১৫ ভোর ৪:৩৯

সচেতনহ্যাপী বলেছেন: এই কালচারই আমাদের শেষ করে দিলো।।

২৮ শে মার্চ, ২০১৫ সকাল ৯:১০

আব্দুল হালিম মিয়া বলেছেন: এর থেকে বের হয়ে আসতে হবে, শেষ থেকেই যেন আবার শুরু হয়ে যায়!

৫| ২৭ শে মার্চ, ২০১৫ সকাল ১০:০১

রাসেল মাহমুদ মাসুম বলেছেন: ভারতে গণতন্ত্রের চর্চা আছে বলেই কেজরিওয়াল ভায়া ক্ষমতায় । কিন্তু আমাদের দেশে তো গনতন্ত্রের চর্চা নেই.!

২৮ শে মার্চ, ২০১৫ সকাল ৯:১২

আব্দুল হালিম মিয়া বলেছেন: কেজরিওয়াল কেও কেজরিওয়াল হতে অনেক সময় ও পরীক্ষা দিতে হয়েছে, ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে। আশা করি আমাদের মধ্যেও কেউ না কেউ এগিয়ে আসবেন। এমনও হতে পারে, আমাদের মধ্যে থেকে একজন দু জন নয়, হাজার হাজার কেজরিওয়াল বের হয়ে আসবেন।

৬| ২৮ শে মার্চ, ২০১৫ সকাল ৯:৩০

ছিপি বলেছেন: বাংলাদেশের বিচারিক ব্যাবস্থা যতদিন স্বাধীন না হবে, ততদিন কেজরিওয়ালের আশা করে লাভ নেই।

২৮ শে মার্চ, ২০১৫ সকাল ১০:৪১

আব্দুল হালিম মিয়া বলেছেন: বিচারিক ব্যবস্হা স্বাধীনতো এমনি এমনি হবে না, কোন একজন বা একাধিক কেজরিওয়ালের নেতৃত্বে নুতন কোন বা নুতন ধরনের আন্দোলনের মাধ্যমেই সেট হতে পারে। আমাদের কেজরিওয়াল হুবহ ভারতের মত হবে এমন আশা করাটা ঠিক হবে না। ভিন্ন বাস্তবতা, ভিন্ন দেশ, ভিন্ন পরিস্হিতি বা পরিবেশ মাথায় রেখেই যিনি বা যারা আসবেন, তাদের কাজ করতে হবে।

৭| ২৮ শে মার্চ, ২০১৫ দুপুর ২:৩৬

মায়াবী রূপকথা বলেছেন: ++

৩০ শে মার্চ, ২০১৫ রাত ৯:৩৫

আব্দুল হালিম মিয়া বলেছেন: ধন্যবাদ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.