নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ফানডামেনটাল

;

হানিফঢাকা

So peace is on me the day I was born, the day that I die, and the day that I shall be raised up to life (again) (১৯:৩৩)

হানিফঢাকা › বিস্তারিত পোস্টঃ

ইমাম তাবারী, ইসলামের ইতিহাস লিখন এবং কোরআনের তাফসীর পদ্ধতি

১৫ ই নভেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৪:১৯

যারা ইসলাম ধর্ম নিয়ে কিছু পড়ালেখা করেছেন তারা ইমাম তাবারী নামের সাথে পরিচিত। ইমাম তাবারী সর্ব প্রথম ইসলামের ইতিহাস রচনা করেন এবং কোরআনের তাফসির করেন। তার রচিত তারিখ- আল- মূলক- ও আল রাসুল Tarikh al-Rusul wa al-Muluk (History of the Prophets and Kings) ইসলামের সর্বপ্রথম ইতিহাস। আমি এই লেখায় সংক্ষিপ্ত আকারে এই ইমাম তাবারী সম্পর্কে আলোচনা করব।

লেখার উদ্দেশ্যঃ
ইসলামের ইতিহাস জানার ব্যপারে আমি আগ্রহী। এই ব্যপারে বেশ কিছু বই পড়েছি, অনলাইনে বিভিন্ন আর্টিকেল পড়েছি, বিভিন্ন রেফারেন্স মিলিয়ে দেখেছি। আমার মুল উদ্দেশ্য হচ্ছে হাদিসের উৎস, বিকাশ, এর উপর তৎকালীন রাজনৈতিক প্রভাব এবং সর্বপরি এর সত্যতা এবং ইসলামে এর গুরুত্ব এবং প্রভাব খুজে বের করা। এই ক্ষেত্রে ইসলামের রাজনৈতিক ইতিহাস খুবই গুরত্বপুর্ন। এই ইতিহাস নিয়ে ঘাটাঘাটি করতে গিয়ে তাবারী সম্পর্কে অনেক কিছুই জানতে পারলাম। সেই প্রেক্ষিতে আমার লেখার উদ্দেশ্য হচ্ছে আমরা যারা ইসলামের ইতিহাস জানি তার সত্যতা কতটুকু এবং এই তাবারী এই সম্পর্কে কি বলেছে এবং তার লেখা বইয়ের সত্যতা কতটুকু? কারন যেহেতু উনি প্রথম ইসলামের ইতিহাস লিখাছেন সেহেতু উনি কিভাবে লিখেছেন, কোন ভিত্তিতে লিখেছেন তা জানা জরুরী কারন ইতিহাস সবসময় বিজয়ীদের দ্বারা লেখা হয়।

ঈমাম তাবারীর ব্যক্তিগত পরিচয়ঃ
ইমাম তাবারী ইরানের তাবারিস্থান নামক স্থানে জন্ম গ্রহণ করেন। উনার জীবন কাল উইকিপিডিয়া বা অন্য যেকোন বই অনুযায়ী ৮৩৯-৯২৩ খৃষ্টাব্দ। অর্থাৎ উনি নবী মোহাম্মদ (সাঃ) এর মৃত্যুর ২০৭ বছর পরে জন্ম গ্রহণ করেন এবং ২৯১ বছর পরে মৃত্যু বরন করেন। অর্থাৎ নবীর মৃত্যুর প্রায় ৮ জেনারেশন পরে উনার জন্ম। এই কথা বলার উদ্দেশ্য হচ্ছে নবীর এবং তাবারীর মাঝে বিশাল সময়ের ব্যবধান কে বুঝানো। উনার শিক্ষা জীবন শেষে উনি জ্ঞানের সন্ধানে ৪৪ বছর অতিবাহিত করেন।

ইমাম তাবারীঃ শিয়া নাকি সুন্নীঃ
এটা খুবই ইন্টারেস্টিং একটা প্রশ্ন। অনেকের মতে ইমাম তাবারী একজন শিয়া কিন্তু নিজেকে সুন্নী বলে পরিচয় দিয়েছেন। এই ক্ষেত্রে উনি “ত্বাকিয়ার” আশ্রয় নিয়েছেন। সহজভাবে ত্বাকিয়া হচ্ছে কোন কিছু নিজের মধ্যে গোপন করে রাখা এবং এর বিপরীত কথা বলা। ত্বাকিয়া শিয়াদের একটা অন্যন্য বৈশিষ্ট। তাবারীর পিতামহ যখন জোরাস্ট্রিয়ান ধর্মী ছিল তখন তার নাম ছিল রুস্তম। পরে উনি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে নাম পরিবর্তন করে নাম রাখেন ইয়াজিদ। ইমাম তাবারী যখন সুন্নীদের জন্য বই লিখেছেন তখন তিনি নিজের নাম লিখেছেন মুহাম্মদ বিন জারীর বিন ইয়াজিদ এবং যখন শিয়াদের জন্য বই লিখেছেন তখন নিজের নাম নিয়েছেন মুহাম্মদ বিন জারীর বিন রুস্তম। শিয়ারা উনাকে শিয়া বলে স্বীকার করে না।



তারিখ- আল- মূলক- ও আল রাসুল Tarikh al-Rusul wa al-Muluk (History of the Prophets and Kings):

এই বইটাকে বলা হয় “ সমগ্র ইতিহাসের জননী” "The Mother of All Histories"। তের খন্ডের এই বইটাই সর্ব প্রথম ইসলামের ইতিহাসের বই। তাবারী যখন এই বইটি লিখেন তখন তার হাতে কোন রকম লিখিত ডকুমেন্ট ছিলনা। উনি শুধু ঐ সময়ে প্রচলিত কাহিনী গুলি লিপিবদ্ধ করেছেন। তিনি কোন ঘটনার যাচাই বাচাই করে এর সত্যতা নির্ণয় করেন নি। তার পদ্ধতি ছিল “ সে আমাকে বলেছে যা সে অমুকের কাছ থেকে শুনেছে, অমুকে শুনেছে তমুকের কাছ থেকে এবং তমুকে শুনেছে তমুকের কাছ থেকে ইত্যাদি ইত্যাদি”। তার এই বইয়ের ভুমিকাতে সে লিখেছে

"Let him who examines this book of mine know that I have relied, as regards everything I mention therein which I stipulate to be described by me, solely upon what has been transmitted to me by way of reports which I cite therein and traditions which I ascribe to their narrators, to the exclusion of what may be apprehended by rational argument or deduced by the human mind, except in very few cases. This is because knowledge of the reports of men of the past and of contemporaneous views of men of the present do not reach the one who has not witnessed them nor lived in their times except through the accounts of reporters and the transmission of transmitters, to the exclusion of rational deduction and mental inference. Hence, if I mention in this book a report about some men of the past, which the reader of listener finds objectionable or worthy of censure because he can see no aspect of truth nor any factual substance therein, let him know that this is not to be attributed to us but to those who transmitted it to us and we have merely passed this on as it has been passed on to us"

এই লাইন গুলি একবার ভাল করে দয়া করে পড়ুন। তারপর নিজে সিদ্ধান্ত নিন এই কথা গুলির প্রেক্ষিতে তার লেখা ইতিহাস কতটুকু গ্রহণযোগ্য? তার কাছে কোন ডকুমেন্ট ছিলনা, কোন সাক্ষ্য প্রমান ছিল না, কোন কিছু যাচাই বাচাই ও করেনি, শুধু যা শুনেছেন তাই ইতিহাস হিসাবে লিখে ফেলেছেন।এর সাথে সময় কালটাও বিবেচনা করুন- এই জিনিষ লেখা হয়েছে নবীর মৃত্যুর প্রায় ২৫০ বছর পর। আপনি যদি এই তাবারীর পদ্ধতিতে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস লেখার চেষ্টা করেন কোন রকম ডকুমেন্ট, প্রমান ছাড়াই তাহলে কি তা গ্রহণযোগ্য হবে? সেই একই কারনে তাবারী লিখিত ইতিহাস কখনোই ১০০% সঠিক ইতিহাস নয়। সে শুধু সেই সময়ের প্রচলিত কথা গুলি লিপিবদ্ধ করছে, এবং সেই সময়ের রাজনৈতিক প্রভাবও কাজ করেছে।
তাবারীর পর যত ইসলামের স্কলার ইসলামের ইতিহাস লিখেছেন তাদের প্রায় ৯৯% তাবারীর এই বইটিকে অন্ধভাবে অনুসরণ করে গেছেন। যার ফলে পরবর্তীতে অন্য ইতিহাসবিদদের লেখা ইসলামের ইতিহাস তাবারি বর্ণিত ইতিহাসের কপি ছাড়া আর কিছুই নয়।

স্যটানিক ভার্সেসঃ
আশা করি সবাই জানেন স্যটানিক ভার্সেস কি। তাবারীর বর্ণনা অনুযায়ী শয়তান মুহাম্মদ (সাঃ) কে আল্লাহর ওহী থেকে ভুলিয়ে শয়তানের নিজের কথা বলতে প্ররোচিত করে এবং সে অনুযায়ী নবী মুহাম্মদ (সাঃ) শয়তানের শেখানো অনুযায়ী লাত, উজ্জা, মানাত কে আল্লাহর কাছে মধ্যস্ততাকারী হিসাবে মেনে নেন এবং সেজদাবনত হন। তার সাথে মক্কার মুশরিকরাও সেজদাবনত হন।

সালমান রুশদী লিখিত “স্যটানিক ভার্সেস” এই তাবারী লিখিত বই থেকেই কোট করা হয়েছে। সালমান রুশদী নিজে কছু বানিয়ে লিখেনি, সে শুধু তাবারী বর্ণিত ঘটনাকে রেফারেন্স হিসাবে দেখিয়েছে। তখন মোল্লারা তাবারীর লিখিত এই ভুমিকাটিকে নিজেদের ঢাল হিসাবে ব্যবহার করেছেন এবং বলেছেন তাবারী যা বর্ণনা করেছেন তা তার নিজস্ব লেখা, মতামত। এর সাথে এই ধরনের কোন ইতিহাস নেই। এটা সম্পূর্ণ তার নিজের ব্যপার, এর সাথে আমরা একমত নই । কিন্তু যখন সময়ের সাথে সাথে যখন এই ঘটনা মানুষ ভুলে গিয়েছে তখন মোল্লারা আবার সেই একই বইকেই আকড়ে ধরে রেখেছে।

তাবারি বর্ণিত ইসলামের ইতিহাস অনেক জিনিশ আছে যা খুবই সন্দেহ জনক, বিশেষ করে সিফিন, জামাল। নাওহাল এবং কারবালার এর যুদ্ধ। এই ব্যপারে ইমাম রাগীব বলেছেনঃ

Tabari, Waqidi, Mas'oodi, Sayyuti wrote any reports they heard from anyone. Moreover, figures such as Abu Mukhnif, Lut bin Yahya and Muhammad bin Saaeb Kalbi never existed. The civil wars within Islam during the times of Hazraat Ali, Mu'awiya and Yazeed have been made up under these fictitious names. These names have been concocted and the narratives in their names have all been invented by one man, the Zoroastrian "Imam" Tabari bin Rustam. Think and reflect: If civil wars of such intensity were taking place within early Islam, how could Muslims continue to expand their benevolent rule in nearly half the known world of the time? (Ajaaib-it-Tareekh by Yaqoot Hamdi)


তাফসীরে তাবারিঃ
তাবারি ৩০ খন্ডের কোরআনের তাফসীর করেছেন। তার পদ্ধতি কি ছিল? সে কোরআনের আয়াত ব্যাখ্যা করতে হাদিস এবং তার নিজের বর্ণিত ইতিহাস ব্যবহার করেছে। তার বর্ণিত ইতিহাস কে কোরআনের আয়াতের সাথে সম্পর্কিত করে তার লিখিত ইতিহাস কে অলঙ্ঘনীয় সত্য হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।এর ফলে তার বর্ণিত ইতিহাস কে কেউ চ্যলাঞ্জ করার সাহস দেখাননি কারন এটা কোরআনের আয়াতের সাথে সম্পর্কযুক্ত। এর সাথে হাদিস ব্যবহার করে সে যা করতে বা বুঝাতে চেয়েছে তা হল কোরআনের ব্যখ্যায় যা কিছু বলা হয়েছে তা তার নিজের কথা না বরং নবী মুহাম্মদ (সাঃ) এর কথা। এটা তার একটা খুবই কার্যকরী পদক্ষেপ ছিল, কারন এর পর থেকে কোরআনের সেই ব্যখ্যাই সত্য এবং গ্রহণযোগ্য বলে বিবেচিত হত যা তাবারী লিখেছে। কারন যখন এটা বলা হয় যে নবী এই আয়াত এইভাবে ব্যখ্যা করেছেন (যদিও এটা সত্য নয়) তখন কোন মুসলমানের পক্ষে এটাকে চ্যালেঞ্জ করা সম্ভব নয় অথবা বলা সম্ভব নয় যে ঐ আয়াতের ব্যাখ্যা ভিন্ন। এই জন্য কোন মুসলমান তাবারীর এই তাফসীর কে চ্যালেঞ্জ করতে সাহস করেনি। যারা করেছে তাদের কে নানা রকম উপাধি দেওয়া হয়েছে। এভাবেই কোরআন তাবারির ইতিহাস এবং হাদিসের উপর নির্ভরশীল হয়এবং নিজের স্বকীয়তা হারায়। যুগ যুগ ধরে মানুষ তাবারী লিখিত এই ইসলামের ইতিহাস এবং তার এই তাফসীর অনুসরণ করে আসছে। আর তাই কোরআন যখন এক কথা বলে অনেক ক্ষেত্রে তাফসীর তার বিপরীত কথা বলে।

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ১৫ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ৮:১২

শতদ্রু একটি নদী... বলেছেন: বেশ ভালো পোস্ট। আপনার পোস্টগুলো পড়লে অনেককিছুই জানা যায় আবার খুব সরল যুক্তিতে ভাবতে বাধ্য হই।

শুভকামনা রইলো। :)

১৬ ই নভেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১২:৪৯

হানিফঢাকা বলেছেন: আপনাকে ধন্যবাদ।

২| ০১ লা ডিসেম্বর, ২০১৫ সকাল ১১:৩৭

amitanmoy বলেছেন: তাবারীর কোরআন তাফসীরের লিংকটা কি দেয়া যাবে ? আমি তাবারীর তাফসীর খানা খুজছি ।

৩| ২৬ শে জানুয়ারি, ২০১৬ সকাল ৯:৫৪

আইভি আহমেদ বলেছেন: আপনি যে লেখাগুলি পড়ে অনুপ্রাণিত হয়ে এটি লিখেছেন সেগুলো নাম রেফারেন্স হিসেবে এখানে উল্লেখ করা উচিত বলে আমার মনে হয়।

২৬ শে জানুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৪:৩১

হানিফঢাকা বলেছেন: বিভিন্ন বইয়ে রেফারেন্স হিসাবে এসেছে। তবে উনার ব্যাক্তিগত ইনফরমেশন নেওয়া হয়েছে উইকিপিডিয়া থেকে। স্যটানিক ভার্সেস- একটা খুব কমন বিষয়। ইন্টারনেটে প্রচুর ইনফরমেশন পাবেন এইটার উপরে।
ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.