নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সরাইখানা

পথে থাকি, পথেই ঘুমাই, পথেই কাটে সারাবেলা পথভোলারা পথ পুছিলে নেই না কোন অবহেলা

নিরীহ জন

নিরীহ জন › বিস্তারিত পোস্টঃ

আসুন ‘একুশ’কে একটু গভীরে গিয়ে স্পর্শ করি

২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ৮:০৩

২১ ফেব্রুয়ারী। চেতনার মাস, ভাষার মাস, আরো অনেক কিছুর মাস। ২১ ফেব্রুয়ারী এখন আন্তর্জাতিক ভাষা দিবসও। এ মাসেই একাডেমীর প্রাঙ্গনে এ জাতির প্রাণের বইমেলা। একুশ এখন প্রতিবাদের ভাষা। একুশ এখন অনৈতিক চাপের কাছে মাথা না নোয়াবার প্রত্যয়। একুশ এখন চেতনার মুহূর্মুহ বিষ্ফোরন। এ এখন নিজ ভাষার কথা বলে যাবার সীমাহীন স্বাধীনতা। একুশ এখন প্রতিটি জাতির ভাষিক স্বাধীনতার বিশ্ব-প্রতীক।



এই হলো ২১ শে ফেব্রুয়ারী নিয়ে চেতনা জাহিরের আবেগী বয়ান। চেতনার তোড়ে প্রতিবারই ভেসে যাই। ঘাটি না এর অন্তর্নিহিত ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া নিয়ে। ফলে হোচট আমাদের পিছু ছাড়ে না। আবেগ শেষে বাস্তবতার ভুবনে কিছুই পাই না। ইতিহাস নিজ নিয়মে প্রতিবারই পদস্খলনের পুনরাবৃত্তি ঘটায়। স্বাধীনতার এত বছর পরও আমরা আমাদের পায়ের তলে মাটি খুঁজে পাই না। যে, শব্দটি নিয়ে পুরো জাতির এক পায়ে দাড়িয়ে আপোষহীন থাকতে হয়- ‘স্বাধীনতা’ -এ শব্দটি নিয়ে নিজের অজান্তেই দ্বিধাগ্রস্থ হয়ে পড়ি।



আপাত দৃষ্টিতে একুশ নিতান্ত নিরীহ গোছের একটি দিন। তৎকালীন সরকার চাইল, অন্যসব বিষয়ের মতো এ জাতির মাতৃভাষাটা নিয়েই একটু টানা-হেচড়া করতে। এ দেশে এসে, এ মাটির বুকে দাড়িয়ে লাখো মানুষের মুখ বরাবর বজ্র নিনাদে ঘোষিত হল, উর্দূই হবে এ দেশের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা। ততদিনে এ জাতির আশাহত হৃদয় প্রতিবাদের ভাষা খুঁজে নিয়েছে। এ রাষ্ট্রের জন্মলগ্ন থেকেই আশাভঙ্গের উপর্যুপরি আঘাতে জনতার ধৈর্যের বাঁধ ততদিনে নড়ে উঠেছে। এরপর রাষ্ট্রীয় হঠকারিতায় ঝরল কয়েকটি প্রাণ। আমরা পেলাম একুশে ফেব্রুয়ারী। ভাষার স্বাধীনতা।



জন্মদাতা যদি সন্তানকে সংরক্ষণের সক্ষমতা না রাখে, তাহলে সে সন্তানের দুর্ভোগের শেষ থাকে না। পাকিন্তানের জন্মই হয়েছিল ধর্মীয় প্রশ্নকে সামনে রেখে। মুসলমানদের জন্যই আলাদা রাষ্ট্রভূমি চাই। সমগ্র ভারত জুড়ে আর সব মুসলমানের অবস্থান, স্থাপনা, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ইত্যাদির কী হবে এমন প্রশ্নকে অমীমাংসিত রেখেই। স্বাভাবিকভাবেই এ বিভক্তি করণের নেতৃত্বে ছিলেন ধর্মীয় নেতারা। ধর্মীয় নেতারাই জনগণকে বুঝিয়েছিলেন, ধর্মের ভিত্তির এ রাষ্ট্রীয় বিভক্তির কী কী ফায়দা। এরপর রাষ্ট্র বিভক্ত হলো। সারা ভারতজুড়ে এ বিভক্তির ফলে যে অবর্ণনীয় অবস্থা, বিশেষত মুসলমানদের ক্ষেত্রে সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা ছিল, তাই হল। আপনি শুনে আশ্চর্য হবেন- যে ধর্মীয় নেতারা নেতৃত্ব দিয়ে এ রাষ্ট্রকে বিভক্ত করলেন তারা মনে করতেন, যে কোন ধরণের রাষ্ট্রীয় সংশ্লিষ্টতা তাদের স্বাধীন ধর্মীয় কার্যবিধির জন্য ক্ষতিকর। সুতরাং তারা নেতৃত্ব দিয়ে রাষ্ট্র পৃথক করলেন বটে, কিন্তু সে রাষ্ট্র চালনার দায়িত্ব নিলেন না। অথবা বলা যায় পূর্ব থেকেই দায়িত্ব আরেকজনকে দিয়ে রাখলেন। ফলে তারা যা যা জনতার সাথে প্রতিশ্রুতি এতদিন দিলেন সম্পূর্ণ তার বিপরীত কর্মকাণ্ড সেই অপরজন চালাতে শুরু করলেও তাদের দুঃখবোধ করা ছাড়া আর কিছুই করার ছিল না। এ দুঃখ শুধু তাদের নয়, তাদের কথায় আস্থা রেখে যে, যারা তাদের সমর্থন যুগিয়েছিল সেই পুরো জাতির।



মোটামুটি এতটুকুই বুঝে আসার কথা যে, কেন জন্ম থেকেই পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রটির দুর্ভোগের শেষ ছিল না। জন্মলগ্ন থেকেই পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী কেন জনবিচ্ছিন্ন ছিল। কেন মানুষের মুখের ভাষা নিয়ে টানাটানির মতো, জনবিরোধী-গণবিরোধী অবস্থান বারংবার তাদের থেকে প্রকাশ পেত। অতীষ্ট তো আগেই হয়েছিল। ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে জাতির সেই রোষ ও ক্ষোভ নতুন মাত্রা পেয়েছিল। যারা বলেন ৭১এ এ জাতি স্বাধীনতা সংগ্রাম শুরু করেছিল, তাদের সেই কথা পুরো সত্যনিষ্ঠ নয়। শুরুটা এ জাতি করেনি। শুরুটা করেছিল পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠীই। ২৫ মার্চ গণহত্যার মধ্য দিয়ে। হ্যাঁ, শাসক গোষ্ঠীই এ দেশের নিরীহ জনতার উপর গণহত্যা চালানোর মধ্য দিয়ে এ দেশের স্বাধীনতার সূচনা করেছিল। তারই পূর্ণতা দিয়েছিল এ দেশের সংগ্রামী নিরীহ জনতা। মূলত এ গণহত্যাও এ দেশের স্বাধীনতার মতো একুশের চেতনাকেও নতুনভাবে, নতুনরূপে জন্ম নিতে সাহায্য করে।



একটি জাতির স্বাধীনতা মানে আরেকটি জাতি জাতির খণ্ডায়ন। একটি স্বাধীনতা মানে আরেকটি স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ। সুতরাং আমরা তো স্বাধীন ছিলামই। ছিলাম স্বাধীন পাকিস্তানের অংশীদার। যে, স্বাধীনতা ছিল ইংরেজমুক্ত স্বাধীনতা। এরপর অত্যন্ত যত্নের সাথে পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী স্বাধীন পাকিস্তানের ভিতর একটি পরধীনতার বীজ বপন করে। ক্রমশ সেটিকেই পরিচর্যা করে বড় করে তুলতে চেষ্টা করে। অনিবার্য ফলরূপে আমরাও নতুনকরে আরেকটি স্বাধীনতা খুঁজতে প্রয়াসী হই। একটি স্বাধীনতা ভেঙ্গে নতুন আরেকটি স্বাধীনতা গড়ার স্বপ্ন দেখি। সে স্বপ্নই ভাষা আন্দোনের পথ বেয়ে ৭১ এ পরিণত হয়ে ওঠে। সুতরাং ভাষা আন্দোলন সে স্বপ্নের প্রথম পূর্ণাঙ্গ সিঁড়ি।



৭১ পূর্ববর্তী সময়ে কে কতটা স্বাধীনতা চেয়েছি, তা বলা কঠিন। এমনকি স্বয়ং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবও ২৫-পূর্ববর্তী সময়ে বাঙালী জাতির যে স্বাধীনতা চাইতেন সেটা এ জাতির ন্যায্য অধিকার আদায়ের মাধ্যমে। কিন্তু বাংলাদেশ নামক পৃথক পুর্ণাঙ্গ একটি স্বাধীন রাষ্ট্রভূমি চাইতেন এ কথা বললে মনে হয় পুরো সত্য বলা হয় না। মূলত ২৫ শে মার্চের পরই আমরা বুঝলাম যে, আমরা সকলেই স্বাধীনতা চাই। এটা একটা বাস্তবতা, যা অস্বীকারের উপায় নেই।



বাস্তব হলেও এ কথাটাকে অনেকে অস্বীকার করতে চেষ্টা করবেন। তাই আসুন এ নিয়ে আরেকটু গভীরে যাই। এ কথা তো সকলেই সকলেই স্বীকার করি যে, আমরা সকলেই ২৫ শে মার্চের ভয়াল কালো রাত দেখেই ঝাপিয়ে পড়েছিলাম স্বাধীনতা সংগ্রামে। আমরা সকলেই এ দেশের স্বাধীনতা চেয়েছিলাম, তাহলে আমরা কি চেয়েছিলাম ২৫ শে মার্চের মতো একটি ভয়াল কালো রাত যা আমাদেরকে স্বাধীনতা সংগ্রামে উদ্বুদ্ধ করবে? যদি না চেয়ে থাকি তাহলে এদেশে একটা স্বাধীনতার সংগ্রাম হোক, পরিণতিতে আমরা একটা স্বাধীন রাষ্ট্র পাই সেটিকেই আমরা চাইনি? নাকি সংগ্রামহীন এমনিতেই একটি স্বাধীনতা আমরা কামনা করতাম!! মূলত এসব অসঙ্গতি বাঁচতেই আপনাকে স্বীকার করতে হবে আমরা মূলত ২৫ শে মার্চের পরই পূর্ণাঙ্গভাবে চেয়েছিলাম আমরা স্বাধীন হই, এর আগে নয়। এমনকি স্বয়ং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবও নন।



কেন চাইনি? এর কারণ অনেক। স্পষ্টরূপে যা বুঝা যায়, স্বাধীনতা মানে নিছক কোন বুলি নয়। স্বাধীনতা নয় নিছক কোন আবেগের নাম। স্বাধীনতা শক্তি-সামর্থ ও ভূখণ্ড নামক একটি বাস্তবতা। এ বাস্তবতায় যদি আপনি পরাজিত হন, শক্তি-সামর্থে যদি হন নিতান্ত দুর্বল, ভূখণ্ডের প্রসারে যদি হন করুণার পাত্র তাহলে স্বাধীনতার যে স্বপ্ন-সাধে আপনি স্বাধীনতা আনবেন আজীবন সে স্বপ্নকে ধুয়েই ধুয়েই আপনাকে খেতে হবে। সে স্বাধীনতাকে কারো নিকট ভাড়া-বন্ধক দিয়েই আপনাকে বাঁচতে হবে। এর কিছু বাস্তবতা বর্তমানে আমরা উপলদ্ধি করছি। কেন আমার সীমান্তে আমি প্রতিদিন নিহত হই, কেন আমি আমার একটুখানি ভোটের অধিকারের জন্য চল্লিশ বছর ধরেই গুম হয়ে যাই, খুন হয়ে যাই, সে কারণ এখানেই নিহিত। এ বাস্তবতা আমাদের আবেগ না বুঝলেও আমাদের তৎকালীন নেতারা ঠিকই বুঝতেন। বুঝতেন বলেই ২৫ মার্চের আগ পর্যন্তও তারা স্বাধীনতাটাকে তেমনভাবে চাননি।



এতটুকু বয়ানের পর বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে মানতে কষ্ট হচ্ছে? রাজাকার হয়ে কী করবেন। সে দুদুল্যমনতার দিন শেষ। যে দু দুল্যমনতার দরুন ২৫-এর আগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ক্ষেত্রেও এ প্রশ্ন তোলা হয় তিনি এ দেশের স্বাধীনতা চেয়েছিলেন নাকি পাকিস্তানের ক্ষমতা? এখন এটাই বাস্তবতা যে, আপনি স্বাধীন বাংলাদেশের একজন স্বাধীন নাগরিক। এবার এ বাস্তবাতাকে সামনে নিয়ে স্বাধীন নাগরিক রূপে বাঁচতে চাওয়াই আপনার প্রধান কাজ। এ চেষ্টায় যদি নিষ্ঠাবান হন তাহলে ষড়যন্ত্রকারীরা আপনাকেই স্বাধীনতার প্রধান শত্রু বলে অভিহিত করার সর্বাত্মক চেষ্টা করবে। ভুট্টো-ইয়াহইয়ার প্রেতাত্মারা শেখ সাহেবের মতো আপনাকেও বলবে আপনি রাষ্ট্রদ্রোহী, ষড়যন্ত্রকারী। বলবে সন্ত্রাসী। আপনি ‘খাঁটি’ গণতন্ত্রের অন্তরায়। এমনকি আপনি রাজাকারও হয়ে যেতে পারেন। নিরাশ হলে চলবে না। এসব বাঁধা মাড়িয়েই আপনাকে সামনে যেতে হবে। স্বাধীনতা নিয়ে বাঁচতে হলে সংগ্রাম করেই বাঁচতে হবে। এ সংগ্রামই ভাষা-আন্দোলনের মূল চেতনা। এখানেই ‘অমর একুশে’র অন্তর্নিহিত তাৎপর্য। এটিকে স্পর্শ করতে পারলেই একুশের চেতনা সার্থক।



মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.