নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

হাসান ইকবাল-এর লেখালেখির অন্তর্জাল।

হাসান ইকবাল

.... ছেলেবেলার দুরন্ত শৈশব কেটেছে নেত্রকোনায়। আর সবচেয়ে মধুর সময় ছিল সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার দিনগুলি। আর এখন কাজ করছি সুবিধাবন্চিত শিশুদের জন্য একটি স্পানিশ আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থায়।

হাসান ইকবাল › বিস্তারিত পোস্টঃ

অরণ্যে পরাহত কয়েকটি দিন

১৮ ই মার্চ, ২০১৪ রাত ১০:০৯

এক.

জায়গাটা বেশ নীরব। কোন কোলাহল নেই। দু'একটা ঝরাপাতার মর্মর শব্দ আর রং বদলানো গিরগিটি ছুটে চলার শব্দ ছাড়া আর তেমন কিছুই নেই। চারপাশটা বেশ পরিপাটি। মাঝে মাঝে বাগানের সরু পথ ধরে টুংটাং বেল বাজিয়ে চলে যায় সাইকেল আরোহীরা। বাগানের যে পাশে বাংলোটা, ঠিক তার পশ্চিম পাশেই একটি কৃত্রিম ঝর্ণাধারা। বাগানের মালী, বাংলোর পরিচারক ছাড়া তেমন লোকজন নেই। এই বড্ড দুপুর বেলায় বাংলোর দরোজায় ক্রিংক্রিং শব্দ।

হকার। খবরের কাগজের হকার দারোগ আলী। সাইকেলের ঘন্টা বাজান এমনি করেই। উনি সাইকেলকে বাই-সাইকেল বলতে নারাজ। বাঙালি হয়ে উঠার চেষ্টা করছেন। বেশি স্বাচ্ছন্দের শব্দ তার কাছে 'দ্বি-চক্রযান'।



শহর থেকে এই বাংলো আঠারো কিলোর পথ। এই বাংলোতে খবরের কাগজ পৌঁছোয় ঠিক মধ্য দুপুরে। কোনোদিন বিকেলে। ইতোমধ্যে দেশে ঘটে যায় কতশত ঘটনা। মিটিং, মিছিল, খুন, অপহরণ, সংবর্ধনা, নারী নির্যাতন, টেন্ডারবাজি আরো কতকিছু! নতুন নতুন খবরের জন্ম হয়। ছাপাখানার প্লেটগুলো ভরে ওঠে নতুন খবরের শিরোনামে।



দারোগ আলীই এ বাংলোতে নিয়মিত খবরের কাগজ পৌছান। বয়স তার ষাটের কাছাকাছি। সকাল থেকে খবরের কাগজ বিলি করেন-আর সবশেষ খবরের কাগজটি পৌঁছায় এই বাংলোতে।



দুই.

বাংলোর অদূরে বেশ ক'টি পুরাতন সেগুন গাছ। যুগ যুগান্তরের ইতিহাসের নীরব স্বাক্ষী। গাছের দুটো মোটা শিকড় চলে গেছে বাগানের সরু পথ বরাবর। এ জায়গাটায় আসলে সাইকেল আরোহীদের একটু জোড়ে ব্রেক কষতেই হয়।

ওপাশে সারি সারি মেহগিনি। দেবদারু গাছগুলো কেটে ফেলেছে বেশ কয়েক বছর আগে। প্রচন্ড ঝড়ে লন্ডভন্ড হয়ে গিয়েছিল এখানকার অনেক গাছ। দেবদারু যুগল গুলো এখন হারিয়ে গেছে। সে জায়গা দখল করেছে ঘ্রাণে পাগল করা বকুলের গাছ।

বকুলতলা থেকে মিনিট পাঁচ এগুলে চোখ পড়ে অনেকগুলো প্রাচীন সমাধি। সমাধি ফলক গুলোর এফিটাফ মুছে গেছে। সন তারিখ কোনকিছুই ভালো বুঝা যায়না। জরাজীর্ন ফলকে শ্যাওলার আস্তরন। এখানে আসলে এক নির্জন অনুভূতি জাগানিয়া পরিবেশ স্মরন করিয়ে দেয় জীবনের বর্ণিল বারতার শেষ অনুক্ষণ এখানেই।

একটি সমাধি ফলকের এফিটাফের কিছু লেখা সহজেই পড়া যায়। কিছু অক্ষর খসে পড়ে গেলেও পড়তে অসুবিধে হয়না। এটা বুঝাও যাচ্ছে এ লেখাগুলোর বয়স অনেক কম এ সমাধি ফলকের চেয়ে। মূল লেখাগুলো ইংরেজিতে।



এফিটাফ

১০/১০/১৭৯৪



শুধুই শ্যামল ঘাস

এ পুত:কবরে রচিয়াছে

এক দৈন্যের ইতিহাস।

'তোমার কীর্তি মনে পড়ে বারংবার

শিয়রে নাই শিলালিপি

পরিচয় জানাবার।'



এ সমাধি ফলকের পরিচয় আমরা জানতে পারিনি এফিটাফ পড়ে। তিনি হয়তো কোন নামী-দামী মানুষ ছিলেন। কিন্তু তার সমাধিভূমি এতোটাই দৈন্যদশায় যে, বিস্মিত হওয়া ছাড়া আর কোন ভাবার অবকাশ ছিলনা।



তিন.

বাংলোর পূর্বদিকে এক বিশাল শ্মশান ঘাট। বায়ে মোড় নিলে কয়েকটা আবক্ষ মূর্তি চোখে পড়ে। কিছু সময়ের জন্য নজর কেড়ে নেয়। ষোড়শ শতকে রোমের ইতালীতে নির্মিত ভাস্কর্যের আদলে নির্মিত কিছু প্রতিমূর্তি।

কালো ভাস্কর্যের গায়ে পুরনো শ্যাওলা আর নিচের দিকে মাকড়সার নিরাপদ ঘরবসতি দেখে মনে হয়-এতো সুন্দর তৃণভূমিতে কত অযত্ম অবহেলায় এই আবক্ষ মূর্তিগুলো পড়ে আছে যুগ যুগ ধরে।



দশ ফুট দুরত্বে এক একটি লন্ঠনবাতির খুঁটি ন্যুব্জ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। রাস্তার পাশেই মার্বেল পাথরে নির্মিত বেঞ্চ। বেঞ্চতো নয়, অসাধারণ এক একটি শিল্পকর্ম!



পাশেই উবু হয়ে পড়ে আছে পাথুরে বই হাতে নগ্ন একটি মূর্তি। কয়েক গজ এগোলেই বতিচেল্লির ভেনাসের আদলে তৈরি অদ্ভুত এক নারী মূর্তি। কালের পরিক্রমায় সে নারী মূর্তির নিটোল সুডৌল দেহ অবয়বে কোন মুছনের দাগ নেই। নিরব হয়ে দাঁড়িয়ে আছে নির্বাক দৃষ্টি নিয়ে। উন্নত স্তনযুগলে লেপ্টে আছে অগণিত পোকা-মাকড়ের শুকনো ডিম্বানুর খোলস।



পাশে ইউকেলিপটাস গাছের পাশে ঝিঁঝিঁ পোকার বিকট শব্দ। যা ধীরলয়ে ক্রমাগত তীব্রতর হতে থাকে। এই দুপুরে পাখির কিচিরমিচির আর নীরব ঝর্ণাধারার শব্দ এক মায়াময় আবহ তৈরি করেছে।



আমি হাটছি অনবরত।

ডান পায়ের আঙুলটা থেতলে যাবার উপক্রম হয়েছিল, সেই নারী মূর্তি দেখতে যেয়ে। মূর্তির কাছে যেতেই হােছট খেয়ে পড়ি এক খন্ড পাথর শিলার সাথে।



হাটছি খুড়িয়ে খুড়িয়ে। আমার আগ্রহ বাড়ছে ক্রমাগত। এ কোন মায়াময় অরণ্য রাজ্যে চলে এসেছি আমি! নারী মূর্তির রেশ কাটতে না কাটতেই আমার মস্তিষ্কের নিউরনে অনুভূত হলো কোথাও যেন ব্যথা পাচ্ছি। সম্বিত ফিরে পেয়ে দেখলাম, লাল রক্তে ভিজে গেছে আমার জুতো জোড়া।



চার.

দারোগ আলী খবরের কাগজ বিলি করে সন্ধ্যে অবধি এই বাংলোর আশে পাশেই কাটান বাংলাের মালী মুক্তুল হোসেনের সাথে। মুক্তুল হোসেনের বয়স ষাটোর্ধ। দু'জনই সংসার বিরাগী মানুষ। জীবিকার তাগিদে খবরের কাগজ বেচা, বাগানের পরিচর্যা। দু'নজেই ভালোবাসেন এই গহীন অরণ্যের প্রকৃতিকে।



সংগ্রামের বছর (যুদ্ধের বছর)



বাকী অংশ আগামীকাল

(চলবে.....)

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ১৯ শে মার্চ, ২০১৪ দুপুর ১২:২৫

অরুদ্ধ সকাল বলেছেন:
ভালো লাগিল

২০ শে মার্চ, ২০১৪ সকাল ১০:০৫

হাসান ইকবাল বলেছেন: ধন্যবাদ।

২| ১৯ শে মার্চ, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৫৭

শুঁটকি মাছ বলেছেন: বাকি অংশের অপেক্ষায় রইলাম

২০ শে মার্চ, ২০১৪ সকাল ১০:০৬

হাসান ইকবাল বলেছেন: কম্পোজ শেষ হলে বাকি অংশ পোস্টে সংযোজন করব। ধন্যবাদ আপনাকে।

৩| ১৯ শে মার্চ, ২০১৪ রাত ১০:৩২

জাহাঈীর হোসেন রবিন বলেছেন: সুনদর লাগলো

২০ শে মার্চ, ২০১৪ সকাল ১০:০৭

হাসান ইকবাল বলেছেন: অনেক অনেক ধন্যবাদ জাহাঈীর হোসেন রবিন।

৪| ২০ শে মার্চ, ২০১৪ রাত ১২:০৬

এহসান সাবির বলেছেন: চলুক।

২০ শে মার্চ, ২০১৪ সকাল ১০:০৭

হাসান ইকবাল বলেছেন: হ্যা চলবে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.