নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সত্যের পক্ষে আছি,তাই কারো পক্ষে বা বিপক্ষে বলতে হয় না।

হাসান ইমরান

আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠি বারবার...

হাসান ইমরান › বিস্তারিত পোস্টঃ

The Method of Dialectic / সক্রেটিয় পদ্ধতি ।

০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০২১ ভোর ৫:৫১


প্লেটো তার রিপাবলিকগ্রন্থে সক্রেটিসের শিক্ষাদানের পদ্ধতি গুলো সংলাপ আকারে তুলে ধরেন। তিনি একে বলেন The method of dialectic বা সক্রেটিয় পদ্ধতি । এ লেখায় পাঠকদের জন্য কিছু সংলাপ সংক্ষেপে তুলে ধরার চেষ্টা করবো।

সক্রেটিস ও তার বন্ধুর কথোপকথন :
সক্রেটিস একবার তার এক ব্যবসায়ী বন্ধু সেফালস কে জিজ্ঞাস করলেন : ন্যায়পরায়ণতা কী ?
সেফালস উত্তর করলেন : ন্যায়পরায়ণতা হল সত্য কথা বলা এবং কারো কাছে ঋণ থাকলে তা পরিশোধ করা।
সক্রেটিস বললেন : কখনো কখনো ঋণ পরিশোধ করাও অনুচিত।
সেফালস বললেন : কিভাবে?
সক্রেটিস বললেন : ধরুন আপনি আপনার এক বন্ধু থেকে একটা অস্ত্র ধার নিলেন। কিছুদিন পর সে বন্ধু পাগল হয়ে গেল। এখন কি তাকে সে অস্ত্র ফেরত দেয়া ঠিক হবে ?
.... সেফালস পড়লেন বিপাকে। তখন সে সক্রেটিসের সাথে একমত পোষণ করলেন । আর এতে করে তার পূর্বের দেয়া সংজ্ঞাটা নস্যাৎ হয়ে যায়।

সক্রেটিস এভাবেই মানুষের দেয়া সংজ্ঞা গুলোকে যুক্তি, তর্ক বা প্রতিদৃষ্টান্ত দিয়ে সেগুলোর সংকীর্ণতা আর সীমাবদ্ধতা বের করে নিয়ে আসতেন। ফলে নতুন করে সংজ্ঞা নির্মাণ করা প্রয়োজনীয় হয়ে দাঁড়াতো।
সক্রেটিস মানুষকে প্রশ্ন করতে পছন্দ করতেন। তিনি মানুষকে প্রশ্ন করতেন এবং মানুষ যেখানে গিয়ে আর পেরে উঠতো না সেখান থেকে তার নিজের জ্ঞান বিতরণ আরম্ভ করতেন। তিনি মানুষকে বিভিন্ন বিষয়ের সংজ্ঞা জিজ্ঞেস করতেন । তারা উত্তর দিলে তিনি সেখান থেকে টেনে ভুল বের করতেন। এভাবেই চলতো সক্রেটিসের জ্ঞান দান প্রক্রিয়া । কিন্তু সবসময় যে সক্রেটিস নতুন সংজ্ঞা দাঁড় করাতেন এমন না। কখনো কখনো সক্রেটিস নিজেও আগের সংজ্ঞা বাতিল করে দেয়ার পরে নতুন কোন সংজ্ঞা দিতে পারতেন না।

সক্রেটিস ও পলেমার্কাসের:
সেফালসের পুত্র পলেমার্কাস। তিনিও বাবার মতো একজন সুনাম-ধন্য ব্যবসায়ী; এবং সক্রেটিসের একজন গুণগ্রাহী ভক্ত ও শিষ্য। তিনি সক্রেটিসের আশেপাশেই থাকতেন বেশিরভাগ সময়।
"ন্যায়পরায়ণতা কী?"
এমন প্রশ্নের উত্তরে পলেমার্কাস বলেন যে: " বন্ধুদের বন্ধু এবং শত্রুদের শত্রু হিসাবে প্রত্যেকে তার পাওনা বুঝিয়ে দেয়াই হলো ন্যায়পরায়ণতা।"
(প্লেটোও এই মতের সাথে একমত ছিলেন। তার মতে, যার যা প্রাপ্য তাকে তা বুঝিয়ে দেয়াই হলো ন্যায়পরায়ণতা।)
সক্রেটিস বলেন: "একজন ন্যায়পরায়ণ ব্যক্তির বন্ধুর প্রতি অনুকূলতা বা পক্ষপাত করা কিংবা শত্রুর প্রতি শুধুমাত্র শত্রু বলেই হিংসা, বৈরিতা বা শত্রুতা প্রদর্শন করা অনুচিত" ।
পলেমার্কাসের নিকট এর প্রতিউত্তর নেই।তাই তিনি চুপ হয়ে যান।
এভাবে সক্রেটিস পলেমার্কাসের দেয়া সংজ্ঞা খণ্ডন করেন।

সক্রেটিস ও থ্রাসিমেকাস:
সক্রেটিস সবচেয়ে বেশি বিপদে পড়ে যান থ্রাসিমেকাসের সাথে তর্ক করতে গিয়ে। থ্রাসিমেকাস ছিলেন সোফিস্ট মতানুসারী । সোফিস্টরা ছিল নীতি-আপেক্ষিকতাবাদী। তাদের মতে নৈতিকতাবোধ, ন্যায়পরায়ণতা, সম্মানজনক অবস্থা ইত্যাদির কোন সুনির্দিষ্ট সংজ্ঞা নেই। অর্থাৎ এগুলি সার্বজনীন নয়। নৈতিকতাবোধ বা ন্যায়পরায়ণতা ইতিহাস, সংস্কৃতি ভেদে ভিন্ন হতে পারে।
এ সুরেই থ্রাসিমেকাস বলেন যে: "রাষ্ট্রের আইন এবং ব্যক্তির নীতিবোধের সাথে ন্যায়পরায়ণতার কোন সম্পর্ক নেই। আইন হলো শক্তিমানের ইচ্ছা। আর সমাজ বা রাষ্ট্রের আইন হলো শাসকের স্বার্থে, ক্ষমতাধর শক্তিমানের স্বার্থে। আইন মান্য করা হলো দুর্বলের নৈতিকতা এবং এ আইন শুধু শাসকগোষ্ঠীর স্বার্থরক্ষা করে।"
তৎকালীন শাসকশ্রেণীর উপর থ্রাসিমেকাস কতটুকু অসন্তুষ্ট ছিল তার কথাবার্তা থেকেই আন্দাজ করা যায়।
থ্রাসিমেকাস বলতে থাকেন: "সাধারণ মানুষের নৈতিক দায়িত্ব হলো আইন মান্য করে চলা। আর এর মানে হলো বিনাপ্রশ্নে, বিনাবাক্যে, অন্ধভাবে শাসকশ্রেণী বা শক্তিমানের স্বার্থরক্ষা করা"।
সক্রেটিস এ প্রসঙ্গে সুশাসনের কথা তুলে আনেন।
তিনি বলেন: "শাসক যদি শাসনব্যবস্থার সু-কারিগর হন তাহলে সে শাসিতের কল্যাণে নিবেদিত থাকবেন"। তিনি আরো বলেন: "শাসক হলো ডাক্তারের মতো। তার প্রাথমিক ইচ্ছা হলো রুগীকে ভালো করা। এরপর রুগী ভালো হলে তার কাছে তার মজুরি চাইবে। শাসক শ্রেণিও জনগনের কল্যাণে কাজ করার পর তাদের কাছে তার বিনিময় চাইবে। তবে সুশাসক সবসময় শাসিতের কথা আগে ভাববে"।
ন্যায়পরায়ণতার প্রশ্নে সক্রেটিস বলেন: "ন্যায়পরায়ণতা আপেক্ষিক নয়। সেটা সবকালে, সবসমাজে একই রূপে থাকে। স্পার্টাদের জন্য যেটি ন্যায় এথেনীয়দের জন্য সেটি অন্যায় নয়"।
(সক্রেটিসের এ কথাকে সমর্থন করে পরবর্তিতে প্লেটো তার পক্ষে যুক্তি দেন এবং সোফিস্টদের আপেক্ষিকতাবাদী নীতি ভুল প্রমাণ করেন।)
কিন্তু থ্রাসিমেকাস সক্রেটিসের কথায় সন্তুষ্ট হন না। তিনি মনে করেন সক্রেটিস তার যুক্তি খণ্ডন করতে সক্ষম হননি।


[তথ্যসূত্র: দার্শনিক অন্বেষা; টি জেড লেভিন]

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০২১ সকাল ১০:১১

সাজিদ উল হক আবির বলেছেন: সক্রেটিক ডায়ালেকটিককে আমাদের সমাজ বাস্তবতায় প্রাসঙ্গিক করার উপায় নিয়ে আপনার মতামত কি?

০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০২১ সকাল ১০:৫৪

হাসান ইমরান বলেছেন:


মতামত জানাতে আমার ভয় হচ্ছে, কারণ আমি নিজেকে যোগ্য মনে করি না।
তবে আমার মনে হয়, আনাদের সমাজে এই মেথড অব ডায়ালেকটিক ইতিমধ্যে অনেকাংশেই প্রাসঙ্গিক।
কিন্তু আমরা সক্রেটিসের মতো ততটা উদার নই। সক্রেটিস কোন বিষয়ের ত্রুটি খুজে পেলে সেটা অবশ্যই প্রকাশ করিতেন, কিন্তু জোর করে মনগড়া সংজ্ঞা দিয়ে দিতেন না। কিন্ত আমরা সে লোভ সামলাতে পারিনা ।
এ বিষয়ে আপনার মতামত আশা করছি।

২| ০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০২১ সকাল ১০:১৫

এস এম মামুন অর রশীদ বলেছেন: আপনার লেখা সরল-সুন্দর হচ্ছে, চালিয়ে যান।

০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০২১ সকাল ১০:৫৯

হাসান ইমরান বলেছেন:


ধন্যবাদ আপনাকে আপনার আন্তরিক মন্তব্যের জন্য। উৎসাহ কর্মস্পৃহা বাড়িয়ে দেয়।

৩| ০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০২১ সকাল ১০:৪৬

পদ্মপুকুর বলেছেন: সক্রেটিসের সময়ে গ্রিকবাসীরা একবার ওরাকল অব ডেলফির সামনে গিয়ে প্রশ্ন করলো- ডেলফি, বলোতো বর্তমান পৃথিবীতে সবচেয়ে জ্ঞানী মানুষ কে? (কথিত আছে যে ডেলফির মন্দিরের সামনে গিয়ে যেকোনো প্রশ্ন করলে ভেতর থেকে তার উত্তর আসতো)

ডেলফির মন্দির থেকে উত্তর আসলো- 'সক্রেটিস'।
গ্রিকবাসী ব্যাপক ধন্ধে পড়ে গেলো। এই পাগল লোকটাই নাকি বর্তমান পৃথিবীর সবচেয়ে জ্ঞানী! তারপরও তারা সক্রেটিসের কাছে গিয়ে বললো- সক্রেটিস, ডেলফি বলেছে যে তুমিই বর্তমান পৃথিবীর সবচেয়ে জ্ঞানী মানুষ, তোমার কি ধারণা?
সক্রেটিস বললেন- ডেলফি ঠিকই বলেছে... গ্রিকবাসীর এইবার পুরো অজ্ঞান হওয়ার দশা! আরে, এতো জাতে পাগল হলেও তালে ঠিক আছে! তারা আবার জিজ্ঞাসা করলো- তো, কি জন্য তুমি সবচেয়ে জ্ঞানী?
সক্রেটিস বললেন- কারণ আমি জানি যে 'আমি কিছুই জানিনা'। আর অন্যরা এটুকুও জানে না যে তারা কিছুই জানে না।...

০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০২১ সকাল ১১:১১

হাসান ইমরান বলেছেন:


"সত্যিকারের প্রজ্ঞা নিহিত থাকে কিছু না জানার সহজ স্বীকারোক্তির মাঝে।"

সক্রেটিস তার বিচার চলাকালীন আদালতে দাঁড়িয়ে কয়েকটি পিলোসফি দিয়েছিলো। এটা তার মাঝে একটা।
"সক্রেটিসের বিচার ও আত্মপক্ষ সমর্থন" নামে আমার একটি লেখা আছে কয়েকদিন আগের। সেখানে আপনার দেয়া লেখাটির আংশিক উল্লেখ আছে। পড়ার আমন্ত্রণ রইলো ।

৪| ০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০২১ বিকাল ৪:২৪

রাজীব নুর বলেছেন: পোষ্ট টি ভালো লাগলো।

৫| ০৭ ই জানুয়ারি, ২০২১ সকাল ১০:০৩

সাজিদ উল হক আবির বলেছেন: মতামত দিতে ভয় কিসের ভাই, যতক্ষণ তা ইতিবাচক টোনে, পরস্পরের প্রতি সম্মান রেখে দেয়া যায়? দুঃখপ্রকাশ করছি দেরীতে উত্তর দেয়ায়।

যাই হোক, সক্রেটিক ডায়ালেকটিক ম্যাথড, আমার মনে হয়, এখন কেবল বাংলাদেশের ক্লাসরুমগুলোতেই প্রয়োগ করা সম্ভব, শিক্ষকরা যদি একটু কম ইগোওয়ালা হন, এবং শিক্ষার্থীদের সামনে নিজেকে 'সক্রেটিক ফুল' হিসেবে রিপ্রেজেন্ট করার সাহস রাখেন। এর প্রভাবও নেহায়েত কম হবে না, যদি একটা জেনারেশনের শিক্ষার্থীদের মাঝে এই সঙ্গায়নের সচেতনতা তৈরি করা যায়।

আপনাকে যে প্রশ্নটি আমি রেখেছিলাম, প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে, এই প্রশ্নটি উথাপন করবার করবার কারন একটিই। আমি অনুভব করি, অতীতের সমস্ত জ্ঞানকে আমাদের বর্তমান সময়ের সঙ্গে প্রাসঙ্গিক করে পাঠ করা প্রয়োজন। এই সচেতনতাটুকু থাকলেই একটা জ্ঞানভিত্তিক সমাজ তৈরি সহজ হয়ে যাবে। আর বাংলাদেশের বর্তমান যে ক্রাইসিস (যদি থেকে থাকে আর কি) সেটা থেকে উত্তরণে আমাদের প্রথম পদক্ষেপ হওয়া উচিৎ একটা জ্ঞানভিত্তিক সমাজ তৈরি, এমনটাই আমি মনে করি।

ধন্যবাদ আপনাকে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.