নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি- হাসান জাকির। অজ পাড়াগাঁয়ে বড় হয়েছি। কিন্তু জীবিকার তাগিদে শহুরে জীবনে আটকা পড়ে আছি। কাজ করছি- স্বাস্থ্য সেবা খাতে। ভালবাসি নিজেকে- নিজের পরিবারকে, দেশকে- দেশের মানুষকে। সারাদেশে ঘুরে বেড়ানো আমার নেশা।

হাসান জাকির ৭১৭১

জীবনের জন্য কাজ, জীবের জন্য ভালবাসা।

হাসান জাকির ৭১৭১ › বিস্তারিত পোস্টঃ

মুক্তি....

২৯ শে মার্চ, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:০৯

কলেজ পড়ুয়া টগবগে এক সুদর্শন তরুণ। স্কুল জীবনেই যার রাজনীতিতে হাতেখড়ি। পড়াশোনার পাশাপাশি প্রতিদিনই বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মকান্ডে ব্যস্ত। মুক্তিযুদ্ধ দেখার সৌভাগ্য হয়নি। তবে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে অনুপ্রাণিত, উজ্জীবিত। মুক্তিযুদ্ধভিক্তিক বিভিন্ন বই, গল্প-সিনেমা, মুক্তিযোদ্ধাদের কথা, মুক্তির গান যার প্রিয়। পড়াশোনায়ও মন্দ নয়, বরাবরই রেজাল্ট ভাল। সহজ সরল আড্ডাবাজ এক গ্রাম্য তরুণ।
কলেজে পরিচয় থেকে ভাললাগা ছিল সহপাঠী এক হিন্দু তরুণী। নাম - মুক্তি। এই নামটিই হয়ত তাকে আরো বেশি আকাঙ্খিত করে তুলেছিল তরুণটির নিকট। কিন্তু সামাজিক রাজনৈতিক নানা বিবেচনায় অনেক তরুণীর জন্য বেশ কাঙ্খিত সুদর্শন তরুণটিকেও যে কিনা বিনয়ের সাথে ফিরিয়ে দিয়েছিল শুধু ধর্মের বিভেদে। একসময় হারিয়ে গেল মুক্তি। তবে তার "মুক্তি" নামটি গেথে ছিল তরুণের হৃদয়ে, এত বছর পরে যা আজও বিশেষ স্থান দখল করে আছে।

বড় ভাইদের সাথে বয়সের ব্যবধান অনেক। নিজের পরিবার, বউ-বাচ্চা নিয়ে ব্যস্ত বড় ভাই-ভাবির কাছ থেকে পুরোপুরি আদর-ভালবাসা বঞ্চিত তরুণের শিশুকালে কিছুটা ভালবাসার পরশ ছিল মেজ ভাই-ভাবির। মেজ ভাবি যখন এ বাড়ির বউ হয়ে আসেন তখন তিনি তুলতুলে এ শিশুটিকে অনেক আদর করতেন, গোসল করাতেন, খাইয়ে দিতেন এসব গল্প সে শুনেছে, তবে নিজের মনে নেই। কর্মসূত্রে তারাও মাঝে অনেকগুলো বছর দুরে ছিলেন।
তারা যখন আবার গ্রামে ফিরে আসলেন তখন সেই ছোট্ট শিশুটি তরুন আর বিয়ের বারো বছর পরে প্রথম কন্যা শিশু জন্ম দেওয়া মেজ ভাবি তখন দুই সন্তানের জননী, তৃতীয় সন্তান তার পেটে। পুলিশ অফিসার মেজ ভাই সারদা ট্রেনিং একাডেমিতে। তাই ভাবির সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য সহযোগী তরুণ দেবরটি, আর শহুরে শুদ্ধ ভাষায় কথা বলা গ্রাম্য সেই ভাবিও তার খুব প্রিয়।

তখন সম্ভবত মার্চ মাস, স্বাধীনতার মাস। কলেজ থেকে ফিরে দেখল ভাবির কোলে ফুটফুটে দ্বিতীয় কন্যা সন্তান। "মুক্তি" পাগল তরুণটি ভাতিজিকে কোলে তুলে নিল, নাম রাখল মুক্তি।
কিন্তু,প্রথম মেয়ের ডাকনাম "মনি" তাই পরে ভাই-ভাবি মিলে "মুক্তি"র চেয়ে "মুক্তা" নামটাকেই বেশি যুক্তিযুক্ত ও মূল্যবান মনে করল। মুক্তি এখানেও হারিয়ে গেল।
অর্থ ও ব্যক্তিস্বার্থ মানুষকে একসময় হয়ত অন্ধ করে দেয়, আপনকেও পর করে দেয়। যা থেকে পুলিশ অফিসার ভাই- ভাবিও মুক্ত ছিলনা।

উচ্চশিক্ষা অতঃপর জীবন ও জীবিকার টানে একসময় পরিবার থেকে ছিটকে পড়া স্পষ্টভাষী তরুণটি আজ রাজনীতি বিমূখ। শেষ যৌবনে স্ত্রী-দুই সন্তান নিয়ে পরিবার, আপনজন, রাজনীতি থেকে অনেক দুরে। হয়ত সুযোগ পেলে বছরে একবার দেখা হয় সবার সাথে।
তার কোলে তুলে নেয়া সদ্যপ্রসূত সেই ছোট্ট ফুটফুটে মুক্তিও মুক্তা হয়ে আজ দুই সন্তানের জননী। চাচাকে ভুলে গেছে একদম, কখনো খোজ নেয়ার প্রয়োজন মনে করে না। হয়ত তার বাবা-মাকে সেটি কখনো করতে দেখেনি, তাই শেখেনি।

মুক্তিপাগল সেই তরুণ আজ শেষ যৌবনে এসে কখনো কখনো তার সহপাঠী মুক্তির কথা ভাবে। ভাবে কলেজ থেকে ফিরে কোলে তুলে নেয়া সদ্যপ্রসূত তার সেই ছোট্ট ফুটফুটে মুক্তির কথা।
আর ভাবে, সে কি কখনো মুক্তি পেয়েছিল? মুক্তিকে পেয়েছিল? নাকি, চেয়েছিল কখনো?

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৯ শে মার্চ, ২০১৮ রাত ৮:৪৭

মো: নিজাম উদ্দিন মন্ডল বলেছেন: গল্পের প্রথম অংশের সাথে আমার মিল আছে, তবে মেয়েটির নাম মুক্তি নয় মিতু:P

লেখার মাঝে দু-এক বার ইন্টার চাপবেন।

৩০ শে মার্চ, ২০১৮ সকাল ১১:২৬

হাসান জাকির ৭১৭১ বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ ভাই।
পরামর্শটা আন্তরিকভাবে গ্রহণ করলাম।
নিরন্তর শুভকামনা ও অন্তহীন ভালবাসা।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.