নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জীবন কিন্তু একটাই

জীবন কিন্তু একটাই

হাতপা

কিছু বলার নাই

হাতপা › বিস্তারিত পোস্টঃ

ছোটগল্পঃ হলি লাভ(Holy Love)

১১ ই নভেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৩৬



ক্লাশ শেষে হইচই করে নীচে নেমে আসে মাহমুদ,সুজন,তৌফিক আরো কয়েকজন।
ভীষণ রোদের মাঝখান থেকে একটু ছায়ার জন্যে আর হাল্কা নিকোটিন সেবনের জন্য ওরা মারুফের দোকানের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়।
-মামা,চাইরটা বেনসন।
মাহমুদ না বলে।বাকি তিনজন হেসে উঠে।-হালা,দুইদিন আগেও তো খাইতি,নে ধরা।

তখন ওদের সামনের রাস্তা দিয়ে হেঁটে পার হচ্ছে ক্লাসের কয়েকটি মেয়ে।তাদের মধ্যে আছে নিপুণ।মাহমুদ নিপুণ কে দেখতে পেয়েই একটু মাথার চুলে হাত বোলায়।হঠাত কানে আসে বাকিরা ওদের নিয়ে কী কী সব মন্তব্য করছে যেন।মাথা টা গরম হয়ে যায়,নিপুণের নামে কিছু বলছে ওরা?
-মামা,একটা লেবু চা দেন।মাহমুদ লেবুচা নিয়ে একটু দূরে গিয়ে খেতে থাকে;নিপুণের চুলগুলো হাওয়ায় উড়ে এসে চোখেমুখে ঝাপটা দিচ্ছে,এখান থেকে দাঁড়িয়েই যেন ওর চুলের আবেশে ডুবে যাচ্ছে মাহমুদ;চুমুক দিয়ে ঠোঁট পুড়ে ফেলে -ধ্যাত!

###
লাইব্রেরিতে প্রচুর ছেলেমেয়ে গিজগিজ করছে;এক ফাঁক করে বসে পড়ে মাহমুদ।চোরা চাহনিতে খুঁজতে থাকে নিপুণের চোখ।লাইব্রেরিতে কখনোই আসতে ভাল লাগত না,এখন বলতে গেলে নিয়মিতই আসে।এসে চুপচাপ এককোণে বসে ফেসবুক ঘাটাঘাটি করে,সামনে একটা বই নিয়ে;আর খুঁজতে থাকে নিপুণের চোখ।
ঐতো ওর বান্ধবীটির সাথে ঢুকছে নিপুণ।কী অপূর্ব লাগছে!এখান থেকে নিপুণের চোখজোড়া দেখা যাচ্ছে।কী মায়ায়ভরা কাজলমাখা নিপুণের চোখজোড়া।

'আরিশালা,এখানে কি করা হচ্ছে?'পিঠে বেদম চাপড় খেয়ে নিপুণের কথা উড়ে গেল মাথা থেকে।
-এই তো দোস্ত,একটু এসির বাতাস খাই আর ফেসবুকিং করি।ফ্রী নেট!
-হুম।আমার লগে চল।
-কোথায়?
-আরে,চল না...

মেজাজ টা চরম খারাপ হয়ে আছে।নিপুণের একজোড়া চোখের চাহনি ছেড়ে এই বদমাইশের দলের সাথে টুয়েন্টি-নাইন খেলতে হচ্ছে।
-দোস্ত,আইজকা বইছিলাম নিপুণের পিছে।ওর কামিজের ব্যাকটা এত খোলা যে...
তেড়ে আসে রীতিমত মাহমুদ।সবাই একটু অবাক-ই হয়।
-হা হা,তুমি সব কইতে পারো,আমরা কিছু কইলে এত লাগে ক্যান
-আমি কি বলছি,মাহমুদের চোখ-মুখ লাল।
তামান্না রে নিয়া,রুমকি-রে নিয়া যে এত কবিতা বানাও,আমরা তো সেই তুলনায় কিছুই কইনাই।তোমার যদি দরকার হয় আমগো ক!নিপুণ-এর লগে সেট কইরা দি,
তাও কওনা।খালি খালি আমগো লগে চেতস!

মাহমুদ শান্ত হয় কিছুটা।চালটা দেয়।

###

-হ্যালো...হ্যালো,কে?কথা বলবেন তো।ধুর।
ওপাশ থেকে লাইনটা কেটে দিয়েছে নিপুণ।"আমি নিপুণ আমি,মাহমুদ,তোমার ক্লাশের সবচেয়ে পিছনে বসে যে তাকিয়ে থাকি তোমার দিকে,কোনদিন বোঝোনি।তুমি যখন পাশের মেয়েটির সাথে হেসে গড়িয়ে পড়,আমি পাগল হয়ে যাই।তুমি যখন ঘাড় কাত করে স্যারের লেকচার তুলো,আমি তুলিনা,আমি কেবল মনে মনে তোমার ছবি আঁকি...আমার শুধু ভয় আমি যদি প্রত্যাখ্যাত হই!"

অনেক খুঁজেপেতে আইডি টা পেয়েছে-"অনামিকা আমি";সিম্পল একটা প্রোপিক দেয়া।চট করে লাইক দিয়ে,কমেন্টস দিয়ে দেয়-"খুব সুন্দর...না,এত সিম্পল কমেন্টস হবে না।এত কমেন্টসের ভীড়ে চোখে পড়ার মত কমেন্ট কি হতে পারে,তা নিয়ে গুগলে ঘাটাঘাটি করতে লেগে গেল মাহমুদ"

চটপট এলবামে গিয়ে যে কয়টা ছবি ভালো লেগেছে সেইভ করে রাখে একটা ফোল্ডারে।কিছু মোবাইলেও নিয়ে নেয়।

###
সুজন আর ওরা সিগারেট ফুঁকছে
-মাহমুদ হালার প্রবলেম কি?
-আরে ধুর!লেডিস হালায়
-ঐ দেখ,আইতাছে

তোরা,মাহমুদ এসে দাঁড়াল।একটা চা নিয়ে খুব মনোযোগ দিয়ে মোবাইল দেখতে লাগল

-মাহমুদ,কালকে একটু হ্যাং-আউটে যাই;চল
-না রে দোস্ত,শরীর টা ভাল নাই,তোরা যা,আমি এখন বাসায় যামুগা।থাক তোরা।


###

অনামিকা আমি অনলাইনে!
-হ্যালো
-হ্যালো,কি খবর?
-ভালো,তোমার?
-ভালো না---মাহমুদ টাইপ করে।
-কেন?
-কেউ নেই পাশে,তাই?
-ও,আচ্ছা

মেয়েটা কি ইঙ্গিত টের পেয়েছে?পাওয়ারই কথা,এত বোকা না।কি টাইপ করবে ভেবে পাচ্ছে না।মেয়েটা দেখা যাচ্ছে বই-টই পড়ে;অথচ এ ব্যাপারে মাহমুদ একেবারেই জিরো।নাহ,কালকেই কিছু বই নিয়ে এসে শুরু করে দিতে হবে!

-আচ্ছা,তোমার প্রিয় লেখক কে?
-শঙ্কর।

একটু বিপদে পড়ে গেল মাহমুদ।ভেবেছিল,হুমায়ূন বড়জোর রবীন্দ্রনাথ হবে।নাহ,শঙ্কর নিয়ে একটু গুগলিং করা লাগবে।আজকে আর আগানোই যাচ্ছে না...

###

মেইন ক্যাম্পাসের সিঁড়িতে বসে আছে ওরা।মাহমুদ কে আজকাল চেনা যায় না।পরিপাটি পোশাক।মোটা ফ্রেইমের চশমা।হাতের ব্যান্ডানা,রিং ফেলে দিয়েছে কবে।
-সুজন,দেখ,আমগো ভাবি আইতেছে
-কই,কই?কি রে মাহমুদ?তরে দেইখা ভাবি মনে হয় একটু হাসল
-আরে যা!মাহমুদ লজ্জা পায়,কি কস।ও কিছু জানে না
-আমরা আছি কি করতে,জানাই দিমু
-এখন না,দোস্ত,ফাইনাল এক্সাম দিয়া নি।এত টেনশান এখন নিতে পারুম না।

মাহমুদ আর অনামিকাআমি মানে নিপুণের চ্যাটে ভালই কথা চলে।শঙ্করের উপর মোটামুটি থিসিস করে ফেলেছে মাহমুদ;"ঘরের মধ্যে ঘর" এটা জন্মদিনে ওকে গিফট করবে,এটা নিপুণের পড়া নেই।
-তোমার তো সামনের মাসে বার্থডে।
-হ্যা।
-আচ্ছা,আমি যদি তোমাকে একটা বই গিফট করি,নেবে?
-বই নিয়ে আমার কোন না নেই :)
-গুড।

যে মাহমুদ আগে মেগাডেথ চালাত,এখন গুণগুণ করে "এসো নীপবণে..."-এটা নিপুণের কভার ফোটোতে দেয়া,তাই।

###

জন্মদিনের আগের রাতে মাহমুদ ফোন দিয়ে উইশ করে নিপুণকে।বেশিক্ষণ কথা বলতে পারেনি।নিপুণের প্রব্লেম আছে।
ফেসবুকেই বসল
-কালকে তো শুক্রবার,বইটা কিভাবে দেই
-পরদিন
-ক্লাস তো একেবারে রোববারে।আমি এক কাজ করি,তোমাদের ঐদিকে আসি...বইটা দিয়ে চলে আসব
-না,কালকে একটু কাজ আছে
-ও,বাসায় স্পেশাল আয়োজন নিশ্চয়?
-তা তো আছে,আসলে বিকেলে ও আসবে তো...
-মানে?কে আসবে?
-হাহা,আমার বিএফ।
-তোমার বিএফ!!
-হ্যা।
-ইউ আর জোকিং,রাইট?
-না,ও চিটাং থাকে।আমরা কালকে দুজনে বিকাল টা কাটাবো...
-তোমার বিএফের কথা আমাকে বলোনি
-বলার মত প্রসঙ্গ আসে নাই। তাছাড়া তুমিও জানতে চাওনাই...

বিএফ কে,কি করে,সে বিষয়ে জানবার বিন্দুমাত্র আগ্রহ নেই মাহমুদের।মাথা টা ঝিমঝিম করছে মাহমুদের।শঙ্করের বইটা লাথি দিয়ে বিছানা থেকে ফেলে দেয়।রাগে সমস্ত শরীর কাঁপছে ওর।ফোন আসে মোবাইলে
-হ্যালো,কি ব্যাপার,তুমি কি রাগ করলে নাকি?-নিপুণের কন্ঠ
-না,ঘুম আসছে-বলে রেখে দিয়ে মোবাইল টা বিছানায় ছুড়ে ফেলে।

নিজেকে সংযত করার চেষ্টা চালায়।ঘন্টা দুয়েক চুপচাপ শুয়ে থেকে উঠে মাহমুদ।তার ফোল্ডারে সেইভ করে রাখা নিপুণের ছবিগুলো বের করে,কুৎসিত হাসি হাসে।
-নিপুণ--মনে মনে কুৎসিত একটা গালি দেয়।
নিপুণের প্রোফাইলে গিয়ে বেছে বেছে আরো কিছু ছবি ডাউনলোড করে।এইবার নিপুণের সর্বনাশ করার পালা।আজকের এই ইন্টারনেটের যুগে অপপ্রচার করে কত কি করে ফেলা যায়,তা কি তুমি জানো নিপুণ?জানো না।আমার এই কষ্টের শোধ আমি এভাবেই নেব নিপুণ।

#######

আবার,ওরা একসাথে
মাহমুদ,সুজন,তৌফিক--মাহমুদ দুটান দিয়ে আধখাওয়া বেনসন টা এগিয়ে দেয়।

সব ধোঁয়া ছেড়ে দিতে দিতে সামনে হেঁটে যাওয়া নিপুণকে নিয়ে বিশ্রী একটা মন্তব্য করে,সবাই হো হো করে হেসে ওঠে।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.