নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জীবন কিন্তু একটাই

জীবন কিন্তু একটাই

হাতপা

কিছু বলার নাই

হাতপা › বিস্তারিত পোস্টঃ

ছোটগল্প

২৫ শে নভেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:২৭

একটি নিছক প্রেমের গল্প

"আমি এখন ফোনটা রাখছি,তুমি প্লিজ আমার সাথে আর যোগাযোগ করবেনা।ভাল থেকো,রাখি।"
কলটা কেটে যাওয়ার পর সৌরভ একটু মুচকি হাসে।যাক,ঝামেলা বিদায় হয়েছে।অনেক দিন থেকে যে কথাটা বলি বলি করেও সৌরভ বলতে পারছিল না,কাজটা শাম্মী অনেক সহজ করে দিয়েছে।ফোনটা রেখে ওয়াশরুমে গেল সৌরভ।নিজের গালটা এপাশ-ওপাশ করে দেখছে।একসপ্তাহের না কামানো দাঁড়ি।চুলগুলো-ও গতএকমাসে বেড়ে গেছে অনেক।দাঁড়ি টা কামানোর কথা ভাবতে গিয়ে এখন থেকে প্রায় বছর দুয়েক আগের এক বিকেলের স্মৃতি ঝট করে খেলে যায়।
সেদিন খুব তড়িঘড়ি করে সৌরভ দাঁড়ি কামাচ্ছিল।তার কারণ অবশ্য আছে।মেঘলা দিন।বাসায় কারেন্ট নেই।আবছা আলোয় শেইভ করতে হচ্ছে।যার সাথে গত প্রায় দুই-তিন মাস ধরে ফোনালাপ করেছে,অনলাইনে চ্যাট করেছে,আজকে তার সাথে সামনাসামনি দেখা!ব্যাপারটা সৌরভকে একটু নার্ভাস করে দিয়েছে।আসলে,ফোনে যতই প্রম্পট ,আদতে সামনাসামনি একটা মেয়ের সাথে দেখা করে,আলাপ করতে কিভাবে কি করতে হবে এটাই মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে সকাল থেকে।ভোরেই শাম্মী মেসেজ দিয়েছিল-আজকে আমরা দেখা করতে পারি?।সাধারণত নাটক সিনেমায় কি হয়।নির্দিষ্ট পোশাক পরে যায় অচেনা দুজন।এতকিছু মাথায় নেই।তাছাড়া,মোবাইল তো আছেই।সেগুনবাগিচায় দেখা হবে বিকাল চারটায়।
মেইনগেইটের সামনে এককোণায় দাঁড়িয়ে ছিল সৌরভ।শাম্মী পৌঁছে যাবে মিনিট পাঁচেকের মধ্যে।মোবাইলে কথা হয়েছে।এই মেঘলা ঠান্ডা আবহাওয়াতেও সৌরভের হাত ঘামছে।বারবার মোবাইলে সময় দেখছে,আর দেখছে কোন রিকশা এসে থামল কি না।মোবাইলে রিং হতেই চমকে উঠে সৌরভ-
'হ্যালো'
-তুমি এসে গেছ?
-হ্যা,আমি গেইটের সামনেই আছি।
বামদিকে হুডতোলা একটা রিকশা থেকে হাত নাড়ছে মেয়েটি।মাথায় সানগ্লাস।ভাড়া দিয়ে এদিকে আসছে।
-তাহলে,দেখা হয়েই গেল?
-হুম,তুমি তো ঘেমে গেছ মনে হচ্ছে।
-হ্যা,আমি অল্পতেই ঘামি।
তারপর ওরা একপাশে গিয়ে দাঁড়ায়।শাম্মী সানগ্লাস টা খুলে হাতে নেয়।মেয়েটার চোখদুটো ভারি।Once upon a time in the west-এর নায়িকা ক্লডিয়ার মত।কাজল ছাড়াই কি গভীর,আর অর্থবহ!
-চলো,আমরা কোথাও বসি।
-হ্যা,সেটাই
ফোনে সারারাত কথার পর কথার ঝুলি করে রাত পার করে দিলেও সৌরভ-শাম্মী আজ তাদের প্রথম সাক্ষাৎ-এ বলার কিছুই যেন পাচ্ছে না।আজকে সব কাজ চোখের,সৌরভ দেখছে শাম্মীকে।শাম্মীও ফাঁকে ফাঁকে সৌরভকে।
একটা খাবার দোকানে মুখোমুখি বসে পড়ে দুজন।দুটা কোল্ড ড্রিংস আর চিকেন ফ্রাই অর্ডার দিয়ে।শাম্মীর নাকে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমে আছে।মেয়েটা কি মুছে ফেলবে?ইস,কি দারুণ দেখাচ্ছে ওকে।সবুজ-সাদা একটা সালোয়ারকামিজ পরে।ফেইসবুকে ছবি দেখে আসলে কিছুই বোঝা যায়না।
-গানটা আমার খুব ফেবারিট, ইটজ দ্যা ফাইনাল কাউন্টডাউন।
-হুম,আমিও শুনি,তোমাকে শার্ট টাতে ভালো মানিয়েছে।
-আচ্ছা,একটু লম্বা হয়েছে মনে হচ্ছে
-আমি বেশিক্ষণ থাকবো না,বাসায় তাড়াতাড়ি ফিরতে হবে।শেষমেশ দেখা হল আমাদের।
-হ্যা,
রিকশা ঠিক করে দেয় সৌরভ।রিকশায় উঠে শাম্মী বাই দেয়।কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে হাঁটতে থাকে...
এরপর,সৌরভ-শাম্মীর প্রেম দুরন্ত গতিতেই চলতে থাকে।ওরা দুজন দুজনকেই পছন্দ করে।একে অপরের ভালোলাগা,মন্দলাগা আরো কত কি নিয়ে কথা হয়।মোবাইলে,অনলাইনে।আর সুযোগ পেলে দেখা করার চেষ্টা করে।অবশ্য,শাম্মীর একটু ম্যানেজ করতে হয় বাসায়।
সেইদিন।শাম্মী আর সৌরভ বই কিনে ফিরছিল।শাম্মীর টেক্সট বই।দুজন পাশাপাশি হাঁটছে।বইগুলো সৌরভের হাতে।শাম্মীর হাতে চুড়ি।হাত ভর্তি চুড়ি।সবুজ-লাল।হঠাত খপ করে শাম্মীর চুড়িভরা হাত ধরে ফেলে।বিকেল গড়িয়ে প্রায় সন্ধ্যা।শাম্মী কিছু বলেনি।অন্ধকারে ওর চেহারা বুঝতে পারেনি সৌরভ,শুধু হাতটা আস্তে করে ছাড়িয়ে নিয়েছে।এই ঘটনার পর রীতিমত লজ্জায় পড়ে গিয়েছিল সৌরভ।পরে,শাম্মী সেটা বুঝতে পেরে ওকে বলেছে,"দেখ।আমি আসলে কিছু মনে করিনি।তবু..."
সবকিছুই ঠিকঠাক চলছিল।দেখা হওয়া,টিএসসি,শাহবাগ,বসুন্ধরা সিটি।কিন্তু,ঠিক চলছিল না সৌরভ।সৌরভের ছবি আঁকার অভ্যাস আছে।মাঝে মাঝেই স্কেচবুকে স্কেচ করে।কলম-পেন্সিল দিয়ে নিমিষে একে ফেলে চোখ-মুখ,নানান দৃশ্য।এমনি একদিন স্কেচবুকে একটা অবয়ব আঁকে সৌরভ।এক নারীর।একটি মেয়ের।চোখটা আঁকে।ঠোঁট আঁকে।ঠোঁটের মাপ টা ঠিকমত দিতে একটু পরিশ্রম করে।ফোন আসে...একটু বিরক্ত হয় সৌরভ।শাম্মী।টুকটাক কথা বলে রেখে দিয়ে আবার ব্যস্ত হয়ে পড়ে।
স্কেচ করা মেয়েটির মুখ তার খুব পরিচিত।
"আমি কি এখন আসব?মানে,এসাইনমেন্ট টা কিছুই করতে পারি নি।আমরা একসাথেই শেষ করি তাহলে।"
-আচ্ছা
কম্পিউটার ল্যাবে চুপচাপ বসে আছে সৌরভ।তৃণা আসবে।মেয়েরা ছেলেদের চেয়ে পড়াশোনা একটু মন দিয়েই করে।কিন্তু,এই মেয়েটা ব্যতিক্রম।কোন কাজ বা এসাইনমেন্ট থাকলেই সৌরভকে খুঁজে বের করে।সৌরভের প্রথম প্রথম বিরক্ত লাগত।কিন্তু,ইদানীং ও বেশ আগ্রহ নিয়েই করে।
পাশের চেয়ারে এসে বসে তৃণা।
-তুমি করছ?আমার টাও করে দাও প্লিজ,আর ভাললাগেনা এইসব।বলতে বলতে তৃণা সৌরভের কাছে ঝুঁকে আসে।এতই কাছে যে সৌরভের নাকে তৃণার শরীরের ঘ্রাণ এসে লাগে।ওর এলোমেলো মন আরো এলোমেলো হতে থাকে।
"আচ্ছা,আমি ফোন দিয়েছিলাম,তুমি ধরোনি কেন?"
-"বিজি ছিলাম"
-"না,সৌরভ,তুমি বলেছিলে ক্লাস এগারোটায় শেষ"
-"আরে ,ক্লাসের পরেও কাজ ছিল।এসাইনমেন্টের"
শাম্মীর এধরণের অভিযোগ এখন প্রায়ই শুনতে হয় সৌরভের।
একদিন শাম্মী মেসেজ করে-"এই তৃণা মেয়েটা কে?কেন তুমি তার সাথে একসাথে লাঞ্চ করেছ?"
এই কথার কোন আগামাথা বুঝতে পারেনা সৌরভ,তারপর হঠাত ওর ফেইসবুকে দেখতে পায়।দুপুরে তৃনার সাথে লাঞ্চ করতে গিয়েছিল,সেটা ট্যাগ করা।ওহ।এরপর আর তেমন রাখঢাক করেনি সৌরভ।ডিরেক্টলি-ইনডিরেক্টলি বোঝানোর চেষ্টা করেছে শাম্মীকে তার ভালো লাগছে না।শাম্মী তেমন মেয়ে নয় যে হইচই করবে,ওর ব্যক্তিত্বই অন্যরকম।যেই মুহুর্তে টের পেয়েছে সৌরভের মন এখন কি চাইছে তখনই মনস্থির করে ফেলেছে।সৌরভকে আর নয়।শুধু সৌরভ থেকে শুনতে চায় সে কথাটা।তাই,তাকে দুইদিন সময় দিয়েছে শাম্মী।"সৌরভ,তুমি যদি অন্য কারো প্রতি আবেগ অনুভব করো,আমাকে সরাসরি বল।আমি চাইনা তুমি জোর করে আমার সাথে সম্পর্ক রাখো।না চাইলে সরাসরি না বল।আর,যদি আমার ধারণা ভুল হয়।আমাকে বল"
শাম্মী যেদিন সৌরভের উত্তর পেয়েছিল,তার আগ পর্যন্ত বেশ স্বাভাবিক ছিল।দুইদিন পরেই সৌরভ উত্তর দিয়েছিল।মোবাইলে মেসেজ টা দেখেই শাম্মী চোখের পানি আটকাতে পারেনি।একটা ছোট্ট শব্দ 'না',শাম্মী তো মনে মনেই প্রস্তুত ছিল।কিন্তু,এই সামান্য শব্দটিই কাঁপিয়ে দিল শাম্মীকে।থরথর করে কাঁপতে থাকল।না,না,না... ... কি ভীষণ অপমান আর ভর্ৎসনা নিয়ে তাকিয়ে আছে 'না',ওর সারা মুখ ভিজিয়ে টপটপ করে পানির ফোটা পড়তে থাকল।ওর সামনে রাখা বইয়ে।চোখের দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে আসলে,শাম্মী চোখবন্ধ করে ফেলে।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২৫ শে নভেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৪৬

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: আহা! বড় আবেগি মেয়ে!! এত আবেগ রাখতে নেই..

চোখ থেকে মুছে ফেল অশ্রুটুকু..................:)


+++

২| ২৫ শে নভেম্বর, ২০১৪ রাত ৯:৪৮

নীলাম্বরী আকাশ বলেছেন: খুব ভাল লাগ..

৩| ২৬ শে নভেম্বর, ২০১৪ রাত ১:১২

কলমের কালি শেষ বলেছেন: গল্পে ভালো লাগলো ।

৪| ২৬ শে নভেম্বর, ২০১৪ রাত ৮:৪০

অপূর্ণ রায়হান বলেছেন: ২য় ভালোলাগা +

অনেক শুভকামনা :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.