নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জীবন কিন্তু একটাই

জীবন কিন্তু একটাই

হাতপা

কিছু বলার নাই

হাতপা › বিস্তারিত পোস্টঃ

একজন শামীম

০৯ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:০৮

"শামীম সাহেব আপনি কোথায়?"
"স্যার,স্যার এই তো স্যার,আমি সিনএজি তে,স্যার,আর পাঁচ-দশ মিনিট লাগবে..."
"দেখেন,শামীম সাহেব,আজকের মিটিং এর ইম্পর্ট্যান্স..."

শামীম এর কপালে এই হেমন্তের শীতেও বিন্দু বিন্দু ঘাম জমতে থাকে,ছুটি টা বস থেকেই নিয়েছিল;কোন কারণে হয়ত বস ভুলে গেছে।তাই,বকাবকি শুরু হয়েছে।আসলে,বকাবকি না সামান্য উত্তেজিত কথাবার্তায়-ও শামীম বেশ নার্ভাস হয়ে পড়ে।এক ধরণের ভয় পেয়ে বসে তাকে।তার স্ত্রী,এমনকি ছোট ছেলের সামনে কথা বলতে গিয়ে নার্ভাস হয়ে পড়ে।হয়ত,ছেলে হুট করে বলে বসল,আব্বু,এইটা কি পেন্সিল আনছ,কিছু লেখা হয়না,কাঠ ভেঙ্গে যায়!এই সামান্য কথাতেও শামীমের বুকটা ধ্বক করে উঠে।অন্য কেউ হলে হয়ত তখন বলত,আচ্ছা,বাবা,তুমি এখন লেখ,আমি পরে ভালো দেখে কিনে দেব।অথচ,শামীম হকচকিয়ে উঠে আর রীতিমত হাত-পা কাপা শুরু হয়।তার মনে হতে থাকে,সে যাই করছে,যা করছে ভুল হচ্ছে।

"আপনি তো চিটাং গিয়েছিলেন"
"জ্বি স্যার,আপনার কাছে ছুটি চেয়েছিলাম"
"হ্যা,আমার এত কাজের মধ্যে কি আর মনে থাকে।এদিকে হেডঅফিস থেকে অডিট আসবে,আচ্ছা,এখন যান,রেডি হন,আর কি ব্যাপার?টাই কোথায়?"
"সরি স্যার,স্যার,আমি টাই এনেছি,ড্রয়ারে..."
"আচ্ছা,যান"

মাসে দুইবার করে অডিট হয়।সেই অডিটে এই অফিসের সব নেটওয়ার্কিং ইকুইপমেন্ট আর কম্পিউটার এক্সেসরিস গুলো নিয়ে মোটামুটি দুইতিন ঘন্টার রাউন্ড দিতে হবে।কে যে আসছে কে জানে?পিসি তে বসে মেইলগুলো চেক করে নেয় শামীম।সত্যি বলতে কি,এই চাকরির ক-অক্ষর গোমাংস ধারণা নেই।বউয়ের দিকের এক আত্নীয়ের সুবাদে ঢুকে যাওয়া।বেতন টা মোটামুটিই,আর কাজের ধারণা না থাকলেও উপরওলার একটা জোর আছে বলেই রক্ষা।এই সেদিন,সামান্য প্রিন্টার টাও সেটআপ দিতে পারছিলেন না দেখে একজন তো বলেই বসছিল,"দুই বছর ধরে এইখানে আছেন,দেন,দেন আমরাই সেটাপ করে দিচ্ছি"।শুধু মাঝে মাঝে লোকের একটু অপমানজনক কথা শুনতে হয় আর কি।কারণ,তার চাকরি পাওয়ার ব্যাপারটা কারো কাছেই অজানা না।

"তাহলে,শামীম সাহেব,আমরা গ্রাউন্ড ফ্লোর থেকে স্টার্ট করি..."
"জ্বি,জ্বি,চলুন"
"হুম,টোটাল কতটা সুইচ,আর ইউজার আছে সবগুলো আমাকে ডিটেইলস কপি আকারে দিবেন।আর ফুল নেটওয়ার্ক ডায়াগ্রাম টাও দেখাবেন"
"ডায়াগ্রাম দেখাতে হবে স্যার?"
"হ্যা,কেন কোন সমস্যা?"
"না।স্যার..."

ডায়াগ্রাম টা আগেই রেডি করে ফেলা উচিত ছিল।কিন্তু,কিভাবে কি করবে আগামাথা কিছুই জানা ছিলনা।এই লোক দেখি সব কিছুই দেখতে চাইছে।কি করা যায় এখন।রিপোর্ট গেলে খবর আছে...হাতের তালু ঘামতে থাকে।
"আসেন,স্যার,আসেন।এইটা এমআইএস সেকশান"
"আপনি ঢুকুন আগে"
এমআইএস সেকশানেই বজ্জাত মেয়ে দুটো আছে।শামীম কে দেখলেই খিলখিল হাসি...কোন ভাবেই নার্ভাস হওয়া যাবেনা...।
কার্ড পাঞ্চ করে ভিতরে ঢুকে গেল শামীম। দরজার একোনাতেই সুইচ বোর্ড।তার নিচেই সাবরিনার ডেস্ক।শামীম কে দেখামাত্রই,"কি শামীম ভাই,খালি তো আসেন আর যান,উন্নতি তো কিছুই হচ্ছে না,সকাল থেকে নেট স্লো"
"ও,তাই,মনে হয়,একটু লিঙ্কে সমস্যা..."
"শামীম ভাই,একমাস হয়ে গেল আমার নতুন মাউস পেলাম না,আপনি তো দেখবেন এগুলো,সারাদিন ঘুরোঘুরি করলে হবে?"
হি হি হি ... হাসতে হাসতে সাবরিনা আর ওর পাশে বসা শারমিন আরো কিছু বলতে যাচ্ছিল...
তার আগেই ঘটনা টা ঘটল,সুইচ বোর্ডটা দেখানোর জন্য টুলের উপর দাঁড়িয়ে ছিল শামীম।ওখান থেকেই ধপাস করে নিচে পড়ে যায়,মেঝেতে ভারী কার্পেট থাকায়,অতটা আঘাত পায়না।কিন্তু সেন্সলেস...

"আপনি আসলেন স্যার,আজকে এমন হল"
"না,না,কোন সমস্যা নেই,আপনি নিশ্চিন্ত থাকুন,আপনাকে বেশ অসুস্থ মনে হচ্ছে"
শামীমের চোখ ভিজে আসল,এই অফিসে এত মানুষ আছে,প্রায় সবার সাথেই তার পরিচয়।হয়ত,সামনে পড়ে গেলে সবাই তার প্রবলেম নিয়ে মানে কারো হয়ত মনিটোর খারাপ,কারো নতুন কি-বোর্ড,মাউস লাগবে।কিন্তু,কেউ কখনো জানতে চায়নি সে কেমন আছে,তার কিছু লাগবে কিনা।
এই মানুষটি এভাবে অনাকাঙ্খিত ভাবে জানতে চাওয়ায় হঠাত অবাকই হল।
"না,আমার মনে হচ্ছে, আপনি কোন সমস্যার মধ্যে আছেন...আমাকে বলতে পারেন"
"আসলে স্যার,আপনাকে বলি-আমার ভয় লাগে"
"যেমন?"
তারপর শামীম তার চাকরি হওয়া থেকে শুরু করে তার অজ্ঞতা,আর অনভিজ্ঞতার ব্যাপারগুলো বলতে থাকে।
চুপচাপ শুনে যায় ভদ্রলোকটি।তারপর হাসে,"আচ্ছা,আপনার ব্যাপার শুনলাম,আসলে দেখেন শামীম সাহেব,আমরা সবাই কিন্তু সব কিছু জানিনা বা পারিনা।সেটা হয়ও না।এই যে,আমি আপনাকে ডায়াগ্রামটা দিতে বললাম,আমি নিজেও ওরকম ডায়াগ্রাম রেডি করতে পারতাম না।ঠেকায় পড়ে শিখেছি।আপনার আশেপাশেই অনেক লোককেই দেখবেন ভালোভাবে খেয়াল করে যে,তারা অনেক কিছু না জেনেও জোড়াতালি দিয়ে কাজ করে যাচ্ছে।এটাই বাস্তবতা।এভাবেই চলতে হবে।না পারলে আপনি শেষ।"
কথাগুলো ভালো লাগে শামীমের।মনটা অনেক হালকা হয়।
"কিন্তু,স্যার,ডায়াগ্রাম যে আমি দিতে পারছিনা"
হো হো করে হেসে ফেলেন ভদ্রলোক"ডায়াগ্রাম দিয়ে আমি কি করব?আপনার কি ধারণা উপরওয়ালাদের এত সময় আছে,ডায়াগ্রাম-ফায়াগ্রাম দেখার।এগুলো সব ফর্মালিটিস,করা লাগে,করি।এত চিন্তিত হবেন না,আমি ম্যানেজ করে নেব।আপনি শান্ত হোন।আমি আপনাকে কথা দিচ্ছি আপনার কোন অসুবিধা হবে না,আজকেই আমি ব্যাক করব।ভালো থাকবেন"
"চলেন,স্যার,আপনাকে এগিয়ে দিয়ে আসি..."

লোকটা চলে যাচ্ছে।শামীমের চশমার ফাঁকে চোখ দুটো ভিজে যাচ্ছে,এরকম মানুষ আজকাল খুব একটা দেখা যায়না।যারা,জীবনটাকে সরল-সোজা ভঙ্গিতে দেখে,সবার কথা মন দিয়ে শুনে,অসুবিধা গুলো বুঝবার চেষ্টা করে।লোকটার পাঁচ মিনিটের কথাগুলো শামীমের কাছে অনেক দামী।ধন্যবাদ টা দেয়া হল না।

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ০৯ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:২১

নাজমুল হাসান মজুমদার বলেছেন: খুব সাবলীল একটা লেখা , পড়ে ভালো লাগলো । সুন্দর করে বর্ণনা করছেন

২| ০৯ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:২৭

ঢাকাবাসী বলেছেন: লেখাটি ভাল লেগেছে, লেখার স্টাইলটা ভাল।

৩| ০৯ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৪১

ভোরের শিশির । বলেছেন: পড়ে খুব ভাল লাগলো ।

৪| ০৯ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ৯:৩৪

মামুন রশিদ বলেছেন: ভালো লেগেছে ।

৫| ০৯ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ১১:৫৬

ডি মুন বলেছেন: হাহহাহাহা

বেচারা শামীম সাহেব। B:-) :-B :-B :-B

মজা পেলাম গল্প পড়ে।

+++

৬| ১০ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ সকাল ১১:৩০

প্রফেসর মরিয়ার্টি বলেছেন: হুম, বেশিরভাগ মানুষই জীবনটাকে জটিল ভাবে দেখে এবং অন্যদের অপদস্ত করে আনন্দ পায়।

গল্প পড়ে ভাল লাগলো

৭| ১০ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১:২৭

জেসন বর্ন বলেছেন: ভাল্লাগসে ভায়া।

৮| ১০ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৫:৫৬

আজিজার বলেছেন: ভাল লেগেছে

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.