নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জীবন কিন্তু একটাই

জীবন কিন্তু একটাই

হাতপা

কিছু বলার নাই

হাতপা › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্পঃ রাতের ট্রেন

১০ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১:৪০



হাতঘড়িতে সময়টা দেখে মামুন।ট্রেন ছাড়তে এখনো মিনিট দশেক বাকি,রাতের ট্রেনে সময় টা ঘুমিয়ে কেটে যাবে।নিশি ট্রেনে উঠেই ঘুমিয়ে পড়েছে,অবশ্য ওর মত এত তাড়াতাড়ি ঘুম আসেনা মামুনের।ট্রেনের জানলা দিয়ে প্লাটফর্মের মানুষগুলোর যাওয়া আসা দেখছে।

"ভাই এটা কোন দিকের সীট?"
"এই যে সামনের দুটো সিটেই আপনাদের"

মুখোমুখি সীট দুটিতে ওরা বসে পড়ে,ওরাও মনে হয় হাজবেন্ড-ওয়াইফ।মামুন নাদিয়াকে চিনতে পেরেছে;আগে চোখে চশমা ছিল না,নাহলে আরো আগেই চিনতে পারত।নাদিয়ার হাজবেন্ড; যে লোক সীট খুঁজছিল বেশ বিরক্ত হয়ে এদিক-ওদিক তাকাতে তাকাতে কি যেন খুঁজছে।মামুন হাতঘড়ি টা আরেকবার দেখে চোখ টা বুজে হেলান দিয়ে বসে।


ট্রেন চলতে শুরু করছে।মামুন প্রাণপণে চেষ্টা করে ঘুমানোর।অন্তত চোখ না খুলে থাকার।একটা অসস্তি ভীড় করে মনে।প্রায় বারো,হ্যাঁ,বারো বছর পরেই নাদিয়াকে দেখা।

"মামুন,ফ্যানটা অফ করে দাও,ঠান্ডা লাগছে" আধোঘুমে নিশি বলে।



নাদিয়া চিনতে পেরেছে মামুনকে,তবু ভালো যে মামুন কোন এপ্রোচ করেনি। প্রথম যখন দেখল ওর হাজবেন্ড কথা বলছে মামুনের সাথে,প্রচন্ড ভয় পেয়ে বসেছিল।আরিফের দিকে তাকিয়ে নিশ্চিন্ত হল,বোঝার কথা না অবশ্য।কি করেই বা বুঝবে।চশমা টা ঠিকঠাক করে বসল নাদিয়া ।মামুন অনেক মোটা হয়ে গেছে।ওর ওয়াইফ মনে হয়।পাশে ঘুমাচ্ছে।চেহারা ভালই।কত বছর হল ওরা বিয়ে করেছে?

মামুন যখন প্রদীপস্যারের কাছে পড়বার সময় হা করে তাকিয়ে থাকত সেই কথা মনে করে হাসি আসে।এখন অনেক বদলে গেছে মামুন।আগে একটু হাবাগোবা টাইপের ছিল।সেদিন ছিল শুক্রবার।প্রদীপ স্যারের কাছে কেমিস্ট্রি পড়বার জন্য যেত নিশি।শুক্রবার থাকায় অনেকেই আস্তেধীরে আসছে।নিশি একা বসে আছে।তখন মামুন ভিতরে ঢুকে নিশিকে দেখেই আবার বের হয়ে গেল।কিছুক্ষণ পরেই আবার ঢুকে নিশির কাছে এসে দাঁড়াল।

"কেমন আছে?"
"এইতো আছি,স্যার নেই,না?"
"আছে হয়ত,সবাই আসলে ঢুকবে"
"ও,আচ্ছা,আজকে তো শুক্রবার,জুমার নামায পড়তে হবে,খুব তাড়াহুড়ো..."

নাদিয়ার সাথে আলাপ জমাতে চাইছে ছেলেটা।জমাক...

তারপর,নাদিয়ার বাসা কোথায়,ফ্যামিলিতে কে কে থাকে,বাবা-মা কে কি করেন,আর যতপ্রকার আছে প্রশ্ন করে যায় মামুন।তারপর,নাদিয়ার দিকে তাকায়।একসাথে সে একাই কথা বলে যাচ্ছে,অথচ,নাদিয়ার নির্লিপ্ত আর নীরব ভাব দেখে একটু লজ্জা পায় মামুন।কথাশেষ করে নিজের জায়গায় গিয়ে বসে পড়ে।

এরকম একটা হাবলা ছেলের সাথে কথাবার্তা চালিয়ে যেতে বিরক্তই লাগে নাদিয়ার।মনে মনে ধুর বলে ব্যাগ খুলে খাতাবই বের করে উল্টায়।
এইচএসসি এক্সামের আগে আগে তখন।সবাই পরীক্ষা নিয়ে ব্যস্ত।নাদিয়ারও ঘুম নেই।সেদিন প্রদীপ স্যারের কাছ থেকে পড়া শেষে বের হচ্ছে।এমন সময় একটি ছেলে এসে তাকে ডাকে।ওদের সাথেই পড়ে।কিছু মনে হয় বলতে চায়...
"আসলে,নাদিয়া,তুমি তো জানো।মামুন অনেক লাজুক।নিজে থেকে বলতে পারেনা।তাই আমাকে বলতে হচ্ছে...তুমি সময় নাও,ভেবে দেখ"

নাদিয়া দু-একদিন না,বেশ কয়েকদিন সময় নিয়েছে।এক্স্যামের আগে স্পেশাল ক্লাসে ওরা আসে।ক্লাস শেষ।

"মামুন"

"ওহ,নাদিয়া"

"একটু কথা আছে"

মামুনের মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠে।হাতের ব্যাগ টা ভাল করে ধরে নাদিয়ার সামনে এসে দাঁড়ায়।মামুনের হাসি হাসি মুখ।

স্টুডেন্টরা চলে গিয়ে জায়গাটা একটু ফাঁকা হলে নাদিয়া কথা বলে।

"তোমার ফ্রেন্ডের সাথে কথা হয়েছিল,আমি আসলে অনেক ভেবেছি"

"আচ্ছা"- উৎসুক মামুন।

"আমি মনে করি তোমার নিজের মানে আসলে তোমার আমাকে কথাটা বলার আগে একটু ভাবার প্রয়োজন ছিল"

"মানে?"

"মানে,তুমি একটা জিনিস দেখ।আমি হচ্ছি শহরে বড় হওয়া মেয়ে।আমার ফ্যামিলির মানে বাবা,মা,সবাই অনেক এডুকেটেড।কিন্তু..."

মামুন নাদিয়াকে থামিয়ে দেয়।
"ঠিক আছে,নাদিয়া,ঠিক আছে,আমি বুঝতে পেরেছি..."



চশমাটা তুলে চোখটা বুজে স্মৃতির পাতায় হারিয়ে গিয়েছিল নাদিয়া।ওর পাশে বসে বই পড়ছে ওর হাজবেন্ড।আর,সামনে বসে আছে সেই মানুষ।অনেক বছর আগে যে সত্যিকার আবেগভরা ,সযত্ন ভালোবাসার প্রত্যয় নিয়ে এসেছিল।তাকে ফিরিয়েছে নাদিয়া।যে মানুষটির সাথে তার বিয়ে হয়েছে সে মানুষ টির সাথে নাদিয়া ভালো নেই।নিয়তিই ছিল।নাকি মানুষই নিয়তি তৈরী করে।আজকে নাদিয়া ভালো নেই।অন্তত,আজকের এই ক্ষণে নাদিয়ার মনে একবার-এর জন্য হলেও মামুনের অকৃত্রিম ভালোবাসা দোলা দিয়ে যায়।

সেদিন গ্রামের ছেলে একজন হতদরিদ্র স্কুল মাস্টারের ছেলে মামুন নিজেকে অনেক বোঝাল।কিন্তু,বারবার মনের সাথে যুদ্ধ করেও হল না।সেবার আর পরীক্ষা দেয়া হয়নি মামুনের।জীবনের এটা খুব ভুল সিদ্ধান্ত ছিল,এখন বুঝতে পারে মামুন।সেই প্রতাখ্যানকারিণী এখন তার সামনে বসে আছে।কেমন আছে সে?যাইহোক,নিশিকে নিয়ে বেশ সুখেই আছে মামুন।ভালো করে নিশির গায়ে চাদরটাকে ঠিকঠাক করে দিয়ে চোখ বুজে ঘুমের আবেশে চলে গেল মামুন।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ১০ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১:৫৮

জাহিদ জুয়েল বলেছেন: ভাল লাগল

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.