নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জীবন কিন্তু একটাই

জীবন কিন্তু একটাই

হাতপা

কিছু বলার নাই

হাতপা › বিস্তারিত পোস্টঃ

একটি শিরোনামহীন গল্প

১৩ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ সকাল ১১:১৪

শিল্পীর বিয়ে হয় দুবার।প্রথমবার বাড়ি থেকে পালিয়ে,বাবা-মার অসম্মতিতে।ছেলেটা পাড়ার।মোটেই ভদ্রগোছের না।পাড়ার মাস্তান বলে চিনে সবাই।বিলু মাস্তান।শিল্পীর চাকরীজীবি বাবা,বুদ্ধিমান লোক।মান সম্মানের শেষ দেখে ববুদ্ধি করেই গুছিয়ে নিলেন সবকিছু।নিজে ভেঙ্গে না পড়ে প্রভাব খাটিয়ে ভেঙ্গে দিলেন দুই দিনের বৈবাহিক জীবন আর কতিপয় টাকা কাজে লাগিয়ে মেয়েকে বিয়ে দিলেন এক সৎ পাত্রে,ছেলে দেখতে শুনতে ভালো।বিয়ের পর শিল্পী গেল পালটে ,এখন রীতিমত সংসারী।প্রথম বছর গড়াতেই প্রথম বাচ্চা,নাম রাখল সৌরভ।সৌরভ তখন শিল্পীর জীবনে নতুন দিগন্ত,সৌরভ কে নিয়ে শিল্পীর দিনকাল।জামাই থাকে বিদেশ।বিদেশী টাকায় বড় হবে সৌরভ,ডাক্তার হবে ,ইঞ্জিনিয়ার হবে।শিল্পীরা তখন ঝিকাতলায় থাকে।বাপের বাড়ি থেকে ১০ মিনিটের রাস্তা।আসা-যাওয়া।সৌরভ কে নানুর বাসায় রেখে শিল্পী ঘরে ফিরছিল।
"কে যায়? শিল্পী নাকি?"
"কে?আপনি কে?"
"আমারে চিন না...তোমার জামাই লাগি,হে হে হে"
"রাস্তা ছাড়েন,এখন আমার বিয়া হইছে"
অন্ধকারে শিল্পীর হাত ধরে কাছে টানে ছায়াটি।দেশি মদের গন্ধ ভুরভুর করে নাকে লাগে।
"নতুন সংসার,নতুন সবকিছু না?"
"আপনি এখন যান,পরে কথা বলব আমি"
"ঠিক আছে,রাতে কথা হবে,হে হে হে"
সৌরভ কে খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে দেয়ালে হেলান দিয়ে বসে শিল্পী।ছেলেটা বাপের রং পাইছে।শিল্পীর গায়ের রঙ-ও খারাপ না।মুখটা একটু কালোর দিকে।সৌরভ হওয়ার পর শরীরে মেদ জমে মোটা হয়ে যাচ্ছিল।এখন এক আত্নীয়ের কথামত টনিক খায়।অল্প কয়দিনে নাকি শরীর ঠিক হয়ে যাবে।ফ্যান টা ছেড়ে শাড়ি টা আলগা করে বিছানায় কাত হয়ে শোয়।আজকে আর খাওয়াদাওয়া হবেনা।এখানেই ঘুম চলে আসছে।ঘুমে দুই চোখ বুজে আসছিল।জোরে জোরে দরজা ধাক্কানোর আওয়াজে ধড়ফড় করে উঠে বসে শিল্পী।প্রথমে একটা দুইটা বাড়ি।এরপর রীতিমত লাথি মারতে থাকে।

দুই-তিনজন মানুষের মূর্তি দরজা খোলার পর ঢুকে পড়ে। সবার মুখে বাড়তি কাপড় লাগানো।শিল্পীকে ওখান থেকে মুখ চেপে ধরে ভিতরে নিয়ে যায় ওরা।সৌরভ ঘুমাচ্ছে খাটে।এরমধ্যেই একজন একটা ছুরি বের করে শিল্পীর চোখের সামনে ধরে।অসহায়,স্তম্ভিত,কিংকর্তব্যবিমূঢ় শিল্পী।কিছুই করার ছিল না।তিনজন পালাক্রমে কাজটা করে চলে যাচ্ছিল। একজন এসে কানে কানে বলে গেল,"তোর সাথে সংসার করনের বড় শখ আছিল রে,তোর বাপের জন্য হইল না"

এই এলাকায় ভালো খবরের চেয়ে খারাপ খবর আগে ছড়ায়।পাড়ায় পাড়ায় রটে গেল শিল্পীর কীর্তি।স্বামী বিদেশ,এসব তো হবেই।মহিলারা ফিসফাস করে-হ্যাঁ,শিল্পী তো আগেও কেমন জানি ছিল।এখন স্বামী নাই।এই সুযোগে,ছি ছি।

শিল্পীর বাবা বুদ্ধিমান মানুষ।এবার আর কুল-কিনারা পান না।পাড়ার লোকের মুখের কথার সাথে পেরে ওঠা সহজ কাজ না।জামাই আসবে একমাসের জন্য।এর মধ্যেই শিল্পীকে পাড়া থেকে সরিয়ে একটা উন্নত জায়গায় বাসা করে দেন।
অনেক দিন পর জামাই এসেছে শ্বশুরবাড়িতে।আদর-আপায়্যনএর বাড়া।শিল্পীও আহ্লাদে আটখানা।জামাই ড্রইংরুমের সোফায় বসে চ্যানেল ঘুরাচ্ছে টিভির।এমন সময় এক ভদ্রলোক-আর ভদ্রমহিলার উপস্থিতি।শ্বশুর শিল্পীকে ডেকে নিলেন,"তুই ওকে নিয়ে এখন বেরিয়ে যা"
মূলত শ্বশুরের উদ্দেশ্য কোনভাবেই যেন জামাইয়ের সাথে পাড়ার কোন লোকের সাক্ষাৎ না হয়।এদিকে মেয়েকে বুদ্ধিশুদ্ধি দিয়ে ড্রইংরুমে আগত অতিথিদের সামনে এসে দাঁড়িয়েই দেখলেন তার সরলমনা জামাইটি প্রাণখুলে আলাপ জুড়ে দিয়েছে,শ্বশুর ওদের কথার ভঙ্গি দেখে ভাবলেন যাক ঐ কথা নিশ্চয় আলাপ করেনি।তারপর জামাইকে মেয়ের জিম্মায় দিয়ে অতিথিদের সাথে আলাপ শুরু করলেন।


কতদিন পর স্বামীর ছোঁয়া পেল শিল্পী। নিজের পুরুষের ছোঁয়া। মাঝখানের ঐ রাতের স্মৃতিটুকু জোর করেও মন থেকে মুছে ফেলতে পারেনা শিল্পী।পাশের মানুষটিকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে ইচ্ছা করে তার।মানুষ টা কত ভাল।
"শিল্পী"
"কি?"
"তুমি আমাকে কথাটা গোপন করতে চাইছিলা?"
বন্ধ চোখ না খুলেই শিল্পী এপাশ থেকে ওপাশ ফিরে,স্বামীর গায়ের থেকে হাত সরিয়ে নেয়...
"আজকে তাহলে ওরা তোমাকে এসব কথা শুনাইছে,না?আমি জানতাম..."
"না,শিল্পী আমি দুবাই থাকতেই শুনছি, জয়নাল তোমাদের পাড়ার।সেই আমাকে বলে।কথাটা কতটুকু সত্যি?"
খাটে বসে এলোমেলো চুলগুলো ঠিক করতে করতে শিল্পী ঐ রাতের ঘটনা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বলে।বিলু মাস্তান এর ব্যাপারে আগে থেকেই জানত জাফর।ওর সাথে যে একবার বিয়ে হয়েছিল সেটা জেনেশুনেই বিয়ে করেছে শিল্পীকে।তার পারিবারিক অবস্থা,আর্থিক অবস্থার কথা চিন্তা করে শিল্পীর বাবার কথায় সে অমত করেনি।বিদেশ যেতে পেরেছে,সেটা হয়ত নিজের চেষ্টায় সে যেতে পারত না।তাই,অনেক কথা,ভালোলাগা,মন্দলাগা জাফর জলাঞ্জলি দিয়েছে টাকার আছে।সবকিছু শুনল জাফর।
"তুমি কি গোস্বা হইছ?"
"না",দুই হাত মাথার পিছনে নিয়ে চোখ বন্ধ করে শোয় জাফর।
"কি চিন্তা কর?"
"ভাবতেছি আর বিদেশ যাইয়া কাজ নাই,এবার গেলে একবারে দেশে ফিরব"
"ক্যান?"
"টাকাপয়সা কিছু জমাইয়া এখানে ব্যাবসা করব"
"তাইলে তো ভালই।আমার একলা আর ভালো লাগেনা"
ঘুম ভেঙ্গে সৌরভ কেঁদে ওঠে।শিল্পী দুই হাতে ছেলেকে কোলে নিয়ে ঘুম পাড়ানোর চেষ্টা করছে।কান্না থামছে না।
"দুধ খাইব,তুমি ঘুমাও,আমি ওরে ঘুম পাড়াইয়া আসি"

জাফরের শখ ছিল একটি মেয়ের।শিল্পী সেই আশা পূরণ করল।হসপিটাল থেকে মা-মেয়ে সহ বাসায় আসল জাফর।শ্বশুর দুই হাজার টাকা দিল।দোয়া করল।পাড়া প্রতিবেশী ভিড় করল।সবার মুখে একটাই কথা।বাচ্চা তো বাপের চেহারা পায় নাই।হ্যাঁ,হ্যাঁ-কার মত জানি লাগে।
শিল্পী মেয়েকে দেখে দীর্ঘশ্বাস ফেলে।গায়ের রঙ তার মতই।কিন্তু, চেহারাটা! জাফর মেয়েকে কোলে নিয়েছে,ওর মনে কি সন্দেহ জেগেছে কোন?
ঘরে শিল্পী একা।বাচ্চা দুটি ঘুম।এমন সময় বিলু মাস্তান এসে ঢুকে।
"আপনি কেন আসছেন?"
"দেখতে আসলাম তোমাদের,কি খবর টবর?"
"যান,চলে যান!"
"স্বামীর সোহাগে আমারে ভুইলা গেছস না?"বলে বিলু মাস্তান শিল্পীকে কাছে টানে।

জাফর দোকান থেকে ফিরছিল।ফেরার সময় খেয়াল করে, বিলু মাস্তান ওর বাসা থেকে বের হয়ে যাচ্ছে।জাফরকে দেখে একটা ক্রুর হাসি দিল সে।
"হারামজাদি..."ঘরে ঢুকেই শিল্পীকে এলোপাথাড়ি মার শুরু করে জাফর।শান্ত স্বভাবের মানুষ জাফর।একবার মেজাজ চড়ে গেলে দিগবিদিক জ্ঞান থাকেনা।
মার খেয়ে শিল্পী কোন প্রতিবাদ করেনা।তা দেখে জাফর যেন আরো ক্ষুব্ধ হয়ে শিল্পীর গলা চেপে ধরে।ওর এতদিনের বুকের ভিতর জমানো সব ক্ষোভ শক্তিতে পরিণত করে জাফর চেপে ধরে শিল্পীর শ্বাসনালী।দুর্বল নারী শরীর এই ক্রুব্ধ অসুরের কাছে হাত-পা ছোঁড়াছুড়ি ছাড়া কিছুই করতে পারেনা।নিথর হয়ে যাবার কিছুক্ষণ পরে জাফর ছেড়ে দেয়...




মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.