নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জীবন কিন্তু একটাই

জীবন কিন্তু একটাই

হাতপা

কিছু বলার নাই

হাতপা › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্পঃ মিসেস এমদাদ

১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:২৮

"ভাবী আমাকে আজকের রাতটা এখানে থাকতে দিবেন,প্লিজ,প্লিজ"
মিসেস এমদাদের চোখে পানি,পরনের শাড়িটা পরেই এভাবে এসে ঢুকলেন যে জাহানারা রীতিমত ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলেন।মিসেস এমদাদ কর্মজীবি।ব্যাংকে চাকরি করেন।ওনার স্বামীও ওনার সাথেই একই ব্যাংকে চাকরি করেন।দুই মেয়ে।থাকেন,ওদের বিল্ডিং্যের তিনতলায়।মহিলার বয়স চল্লিশের কাছাকাছি।কিন্তু হালকা ফিগারের জন্য স্বামীর তুলনায় অনেক কম বয়েসী বলে মনে হয়।অথচ উনি স্বামীর চেয়ে বছর তিনেকের বড়,এটা আশেপাশের সবার জানা।জাহানারা হাউজ ওয়াইফ,এক ছেলের মা।ওনার হাজবেন্ড-ও সেই ব্যাঙ্কে চাকরী করেন।দুজনেরেই দুজনের বাসায় যাতায়াত আছে।
এখন প্রায় রাত সাড়ে দশটা। কৌতূহলী হয়ে জাহানারা মিসেস এমদাদের দিকে তাকান।
"প্লিজ,ভাবী,আজকের রাতটা,আমি কালকে বাবার বাসায় চলে যাব..."
"কোন সমস্যা,ভাবী?"
"বলছি,আপনি আমাকে এক কাপ চা খাওয়াতে পারেন?"
কি উপদ্রব!

মহিলাকে ড্রইংরুমে বসতে দিয়ে জাহানারা ভিতর ঘরে উঁকি দিয়ে গেলেন।ছেলে ঘুমাচ্ছে।ওর হাজবেন্ড-ও ঘুম।

চা তে দুচুমুক দিয়ে মিসেস এমদাদ বললেন,"ভাবী,চিনি একটু কম হয়েছে,আমি কিচেন থেকে নিয়ে আসছি"
জাহানারা ভিতরে ভিতরে রেগে যান।
"এবার,বলি,ভাবী...আপনি তো জানেন।আমি চাকরী করি,কামাই রোজগার করি,আমি কি মানুষ খারাপ?"
"না,তা হবে কেন?"
"সত্যি করে বলেন ভাবী,আমাকে দেখে মনে হয় আমি খারাপ?"
মনে মনে বিরক্তি চেপে রেখে জাহানারা হাসিমুখ করে বলেন-"অবশ্যই না,কিন্তু,এসব কেন বলছেন?"
এবার হু-হু করে কেঁদে উঠলেন মিসেস এমদাদ।জাহানারা ভয় পেয়ে ওকে জড়িয়ে ধরলেন-"কি হয়েছে ভাবী?"
ফট করে মিসেস এমদাদ ওর কাধটা দেখালেন।লাল দাগ হয়ে আছে।
"ও আমাকে মেরেছে"
"ইস!কেন?"
"ও কোন কারণ ছাড়াই গায়ে হাত তুলে"
এবার নড়েচড়ে বসলেন জাহানারা।ব্যাপার গুরুতর মনে হচ্ছে।
"আমি কাউকে কিছু বলি না,মন খুলে আপনাকে আপন ভাবে বলছি;বিয়ের পরেই ও আমার গায়ে হাত তুলত,তুচ্ছ কারণে,চা হল না কেন?দরজা খুলতে দেরি হল কেন..."
এতক্ষণ জাহানারার মেজাজ চড়ে ছিল,মিসেস এমদাদের মুখে স্বামীর এই অহেতুক বাজে ব্যবহার শুনে তিনি উলটো আফসোস করলেন।সান্তনা দিতে লাগলেন।
"ভাবী,আর কি বলব,কপালটাই আমার খারাপ...আজকে একটা রুটিতে পোড়া ছিল,সাথে সাথে ঐ রুটি সহ বাটিটা আমাকে ছূড়ে মারে,গরম তরকারি লেগে আমার হাতের এই অবস্থা..."
"থাক ভাবী,আর কাদবেন না..."
"কাপ টা নেন,চা টা ভালো হয়েছে"
অতঃপর জাহানারা আরেক কাপ চা,আর ঘরে রাখা সন্দেশ দিলেন মিসেস এমদাদ কে।এবং প্রায় রাত দুইটা পর্যন্ত মিসেস এমদাদের দুঃখের ইতিহাস শুনলেন।আর জেগে থাকা যায় না।দুঃখ করে লাভ নেই,জীবনটাই এমন।একটু রয়ে সয়ে চলতে হবে,এসব যা বলবার বলে-কয়ে শান্ত করে মহিলাকে বাসায় পাঠিয়ে দিলেন।পাঠানোর পর চিন্তা করতে লাগলেন,মহিলা না হয় একরাত থাকত?এখন যদি কিছু হয়!

পরের দিনের কথা।বিকেল।জাহানারা একটু হাঁটতে বেরিয়েছেন। ফেরার পথে কি মনে করে ভাবলেন মিসেস এমদাদ কে দেখে আসবেন,আর কালকে তাকে ঠিকমত সময় দেয়া হয়নি ,দেখে আসাই উচিত।

"আরে ভাবী,আসেন,আসেন"
"আসবোনা,কি খবর টবর দেখতে আসলাম"
"ভালো ভাবী।"
"না আসলে,কালকে রাতে আপনার..."
"ধুর ভাবী,আসলে ও অনেক ভালো,আমাকে খুব লাভ করে,আর ঐসব তো একটু-আধটু হয়।"
জাহানারা ঠিক বুঝতে পারলেন না,
"বসেন ভাবী,চা খান,ও ফিরবে তো আমি নাস্তা বানাচ্ছি..."
"না, না, ছেলেটা বাইরে থেকে াসবে, আমি যাই ভাবী।আপনাকে দেখতে আসলাম একটু"
"আচ্ছা,দেখেন ভাবী,আমি কালকে একটু সমস্যায় পড়েছি ,তাই আপনি ভাবছেন আমাদের মধ্যে সম্পর্ক শেষ?বাহ,এসব তো ঠিক না।দেখতে এসেছেন এখন?"
ভাল বিপদে পড়া গেল।ভেবে,জাহানারা বিদায় নিয়ে চলে গেলেন। অদ্ভুত মহিলা।

তার কয়েকদিন পরের কথা।রাত দশটা। মিসেস এমদাদ চোখ মুছতে মুছতে দরজার বাড়ি দিচ্ছেন।এবার দুইতলার মিসেস হাসানের বাসায়... [The End]

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.