নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জীবন কিন্তু একটাই

জীবন কিন্তু একটাই

হাতপা

কিছু বলার নাই

হাতপা › বিস্তারিত পোস্টঃ

হাসিবের বউ

২৩ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১২:১৪


গল্পটার ১পর্ব লিখেছিলাম কিছুদিন আগে।এখানে পুরোটা রইল।পড়বার জন্য ধন্যবাদ
=================
হাসিবের বিয়ে হয়েছে মাস ছয়েক হল।সাধারণ আর দশটা ছেলের মতই সে চেয়েছে একটা সুন্দরী মেয়ের সাথে তার বিয়ে হবে।প্রেমট্রেম করবার মত সাহস বা ইচ্ছা তার কোনকালেই ছিলনা। প্রেম করে কে কবে বড় হয়েছে?হাসিব যখন সেকেন্ড সেমিস্টারে পড়ে একটা মেয়েকে তার ভালো লেগেছিল।ঐ পর্যন্তই।পাশ করে চাকরি-বাকরি ধরার পর তাকে বিয়ের জন্য বলতে থাকে বাবা-মা।বাবা-মা তার পছন্দ জানতে চায়।হাসিবের পছন্দ একটাই মেয়ে দেখতে সুন্দর হতে হবে।পড়ালেখাও যেন মোটামুটি ভাল হয়।পাত্রী দেখা দেখি চলল,এইটা হয় তো ঐটা হয় না।এমনি করে বছর ঘুরে যাবার পালা।পাত্রী মিলল অবশেষে।একেবারে হাসিবের মনের মত।এইবার বিয়ে করে বন্ধুদের কে একচোট দেখিয়ে দেয়া যাবে।

মেয়ের নাম ফৌজিয়া।সুন্দর বললেও কম বলা হয়।শখানেক মেয়ের ভীড়ে আলাদা করে চোখে পড়ার মত।যেদিন কথাবার্তা সব ফাইনাল হল,সেদিন-ই হাসিব ঠিক করল তার সব বন্ধুদের দাওয়াত দেয়া চাই।দেখিয়ে দিতে হবে।জানুয়ারীর এক শীতের রাতে মোটামুটি জাঁকজমক ভাবে বিয়ে হয়ে গেল হাসিবের আর তার সুন্দরী স্ত্রী মানে ফৌজিয়ার।বন্ধু-বান্ধব হাসিবের পিঠ চাপড়ে দিচ্ছে। বউয়ের পাশে বসে খটাখট সেলফি তুলে আবার অতি চালু বন্ধু কেউ খুনসুটির ছলে ফৌজিয়ার হাত টা ধরে ছবি তুলছে।হাসিব খেয়াল করলেও খুব একটা পাত্তা দিল না।আজকে তো ওরই দিন।দেখিয়ে দেবার দিন।

নতুন বিয়ে।ছবি টা তো ফেসবুকে দেয়া চাই।"ও ভাবি,কি দারুণ","ঝাক্কাস বউ পাইছিস"-কমেন্ট গুলো পড়ে বেশ গর্ব অনুভব করে হাসিব।তারপর ,ফৌজিয়ার ফর্সা নরম হাত নিজের গালে চেপে চোখ বন্ধ করে সুখের রাজ্যে হারিয়ে ফেলে নিজেকে।

বিয়ের পর ছয়মাস কেটে গেল।বাপের বাড়ীতে এভাবে বউ নিয়ে থাকাটা আর পোষাচ্ছে না।ভাড়া বাড়ী।তার মাঝে ছোট বোন,আর ছোট ভাই।বেশ গাদাগাদি অবস্থা।নতুন বাসা ঠিক করার জন্য বের হয় হাসিব বৌকে নিয়ে।মোহাম্মদপুরের দিকে কিছু বাসা দেখে এসেছিল।আজকে ছুটির দিনে ফৌজিয়াকে নিয়ে বের হয়েছে।সামনের মাসের মধ্যেই একটা বাসা দরকার। রিকশা করে ওরা বাসাটার সামনে এসে নামে,দুই তলা বিল্ডিং,দোতলায় দুই ফ্লাট।নিচে একতলা ভাড়া দেয়া হবে।দুই বেডরুম আর একটা ড্রইং কাম ডাইনিং।বাড়িওলার সাথে গত সপ্তাহে কথা হয়ে গেছে।ভাড়া বারো হাজার সব মিলিয়ে।আজকে ফৌজিয়াকে দেখাবে বলে নিয়ে এসেছে।

বেল টেপার কিছুক্ষণ পর কাজের ছেলে এসে দরজা খুলে দিল।

"কে?আপনে"

"আমি ,আমি এই নিচের ভাড়ার ব্যাপারে এসেছি।আঙ্কেল কে ডেকে দাও"

"দাঁড়ান"

ফৌজিয়া আর হাসিব দাঁড়িয়ে।মিনিট দুয়েক পর ভদ্রলোক এলেন।মানে বাড়িওলা।হাসিব কে যেন দেখতে পান নি।ব্যাপারটা হাসিবের নজর এড়াল না।ওদের দুজনের মধ্যে সবাই আগে ফৌজিয়াকেই দেখে।সে পুরুষ হোক,বা মহিলাই।

তো বাড়িওলা হাসিবকে চিনতে পেরে ভিতরে আসতে বললেন।ড্রইংরুমে ঢুকে আলো জ্বালিয়ে দিলেন।

"দিনের বেলাতেও খুব অন্ধকার বুঝলেন?বসেন আপনারা।এই বিল্লাল,বিল্লাল।একটু চা দিয়ে যা"

তারপর ভদ্রলোক সোফায় হেলান দিয়ে বসলেন।

"আঙ্কেল,আমার ওয়াইফ কে নিয়ে আসলাম ফ্লাট টা দেখে যাবার জন্য"

"হ্যাঁ,হ্যাঁ,দেখে শুনেই ঠিক করেন।আপনারা নির্ঝঞ্জাট ফ্যামিলি।দুজন মাত্র মানুষ।এমন টাই চাইছিলাম"

লোকটা কোনা চোখে ফৌজিয়াকে দেখছে।

চা টা দ্রুত শেষ করে হাসিব ফ্লাট দেখতে চাইল।



"কেমন লাগল?" ফৌজিয়া কেই সরাসরি জিজ্ঞেস করলেন ভদ্রলোক।

ফৌজিয়া হেসে একবার হাসিবের দিকে তাকালো-" আমার ভালই লেগেছে...কিন্তু,বারো হাজার একটু বেশি হয়ে যাবে"

"আপনারা সব মিলিয়ে এগারো হাজার দিবেন,এরকম নির্ঝঞ্জাট ফ্যামিলি আমি ছাড়তে চাই না"

"থ্যাঙ্কস"

হাসিব খুব অবাকই হল। টাকার পরিমাণ কমতে তার খুশিই হবার কথা।কিন্তু,কিসের জন্য টাকাটা কমল এটা তো না বোঝার কিছু নেই।সেদিন একটা ভোঁতা মাথাব্যাথা নিয়ে সারাটা রাত পার করল হাসিব।

।।দুই।।



শুক্রবার।বসুন্ধরা সিটিতে ফৌজিয়াকে নিয়ে শপিং এ গেল হাসিব।দুটো শাড়ী কিনে এদিক ওদিক হাঁটছে।

"হাসিব!"

মাথা ঘুরিয়ে হাসিব তাকালো।মামুন দাঁড়িয়ে আছে।ওর ফ্রেন্ড।
"স্লামালেকুম,ভাবি"
"ওয়ালাইকুমসালাম"
"আমি মামুন,হাসিবের ফ্রেন্ড।আপনাদের বিয়েতে আমি আসতে পারি নি।"

হাসিব পরিচয় করিয়ে দেবার আগেই মামুন নিজে আলাপ করে ফেলে।হাসিব ফৌজিয়াকে বলে,"মামুন কিন্তু আমার ক্লোজ ফ্রেন্ড,চল মামুন,একটু খাওয়া দাওয়া করি"


"কি শপিং করলেন ভাবি?"
"এই তো ও আমাকে দুটো শাড়ি কিনে দিল।আমি ওকে একটা টিশার্ট কিনে দেব ভাবছিলাম,ও নেবে না..."
"কিরে? ভাবি শখ করে কিনে দিচ্ছে নিচ্ছিস না কেন?"
"তোর কি খবর?বিয়ে টিয়ে..."হাসিব প্রসঙ্গ পালটায়।
"বিয়ে টিয়ে করার ঝামেলা রে"
"তাই বলে করবেন না?"-ফৌজিয়া বলে।

মামুন একটু মুচকি হাসে।চেয়ারে হেলান দিয়ে টেনে টেনে বলে,"করব।আপনার মত কাউকে পেলে,হা হা হা"

ফৌজিয়া ও হাসছে। ওর ঝনঝনে হাসি কানে বাজে হাসিবের...

প্রসঙ্গ পালটে উলটো বিপদেই পড়া গেল।মামুনের সাথে এতদিন পরে দেখা।অথচ হাসিবের মনে বাজছে অন্য সুর।হাসিব কফি খেতে খেতে অন্যমনস্ক হয়ে গেল।

"দোস্ত,আমি যাই রে।একটু তাড়া আছে।ভাবি থাকেন।একদিন বাসায় আসব।আসি"
"মাছ টা মনে হয় একটু লবণ বেশি হয়ে গেছে,না?"
"উম?"
"কি?কিছু ভাবছ?"
"না,কিছু না।আচ্ছা,ফৌজিয়া,একটা কথা বলব তোমাকে?"
"বল"
"কথাটা তোমাকে কয়দিন হল বলব ভাবছি..."
"আচ্ছা"
"ইদানীং তো অনেকেই হাল ফ্যাশানের বোরখা পরে"
"হ্যাঁ,তো?"
"আমি ভাবছি তোমাকে একটা বানিয়ে দিই।মডার্ণ ধরণের।কি বল?"

হাসতে হাসতে ফৌজিয়া যেন গড়িয়ে পড়ল,"এই কথা?"
"কেন?কি হল?"
"বিয়ের পর পর তুমি আমাকে কি বলেছিলে মনে আছে?আমাকে বলেছিলে আমি যেন মাঝেমাঝে স্লিভলেস পরি।আমার হাত দুটো ভাল দেখাবে,হা হা"
"ও আচ্ছা...হ্যাঁ"
"সেই তুমি এখন আমাকে বোরখা পরতে বলছ।আচ্ছা।না হয় পরলাম,কিন্তু,কারণ টা আমাকে বলবে?"
"মানুষ বোরখা কেন পরে?"
"কেন পরে?"-ফৌজিয়া হাসতে থাকে... ...

হাসিব কিছু বলে না।খাওয়া শেষ করে চুপচাপ উঠ হাত ধুতে যায়।ফৌজিয়াকে ব্যাপারটা বলাতে হেসে উড়িয়ে দিচ্ছে।হাসিব ভেবেছিল, বোরখার কথা শুনে একটু রিএক্ট করবেই ফৌজিয়া।কিন্তু,ব্যাপারটাকে কে তো সে বেশ হাল্কা ভাবেই নিল মনে হচ্ছে।ঘটনা কি?

ফৌজিয়াকে একটু অবজার্ভ করা দরকার।অবশ্য,তাকে কখনো তেমন সন্দেহ হয় নি।মানে,ফৌজিয়া কে নিয়ে।তার খারাপ লাগে একটাই,ফৌজিয়াকে সবাই দেখে।চোখ সহজে ফেরায় না।এটা ধীরে ধীরে হাসিবের মনে একটা যন্ত্রণা তৈরী করছে।কিন্তু,কথা হচ্ছে।ফৌজিয়া কি ব্যাপারটা এঞ্জয় করে?অন্যরা তাকে দেখছে,তার সৌন্দর্যের প্রশংসা করছে।এগুলো নিয়ে কি ফৌজিয়া গর্ববোধ করে না?উফ,রাতের বেলা এলেই এইসব উল্টোপাল্টা চিন্তা কুরে কুরে খায় হাসিব কে।



ফৌজিয়ার বান্ধবী মিতুলের বিয়ে।বিয়ে রাতে।হাসিব আর ফৌজিয়া সন্ধার পর বের হবে।দুজন মিলে আজকে অনেকদিন পরে বের হওয়া।মেরুন কালারের শাড়ীটা পরে ফৌজিয়া ট্রায়াল দিচ্ছিল আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে।

"কি?কি দেখছ এভাবে"

"তোমার এই শাড়ীটা ছাড়াও আরো শাড়ী আছে,এইটাই বেশি পরো"

"এইটা একটু বেশিই মানায় আমাকে,ঠিক না?"

সত্যি বলতে এই শাড়ীটা তে ঝলমল করছে ফৌজিয়া।হাসিবই পছন্দ করে কিনে দিয়েছিল-"আমি বলি কি,এখন তো রাতের প্রোগ্রাম।একটা হাল্কা রঙের পর।সাদা বা অফ হোয়াইট আছে না?"

চুল টা ঠিক ঠিক করতে করতে ফৌজিয়া হাসিবের দিকে তাকায়"আমি কি বুড়ি নাকি? হ্যাঁ?নাকি বয়স বেশি হয়ে যাচ্ছে?এখনো তো বাচ্চাই হল না?"

সব কথাই ঠাট্টা করে উড়িয়ে দেবার এই স্বভাব টা হাসিবের আর ভালো লাগছে না।

"এটা খুলে অন্য শাড়ী পর"

"এখন?এখন আরেকটা পরতে গেলে বিয়েতে যাওয়া লাগবে না।একটা শাড়ী ঠিক করতে মিনিমাম কত সময় লাগে ধারণা আছে?আগে বলতে তোমার চয়েসেই পরতাম।"

এবার,রীতিমত ধৈর্য্যের বাধ ভেঙ্গে যায় হাসিবের,ইচ্ছা হচ্ছিল...।মাথাটা গরম হয়ে গেল।নেহাত বের হবে বলে চুপ করে রইল।আর ফৌজিয়াকে কি বলবে?ও যে বলবার কোন সুযোগই দিচ্ছে না।যদি ফৌজিয়া প্রতিবাদ করত,রিএক্ট করতে,রেগে যেত।তাহলে,না হয় হাসিব সব রাগ ঝেড়ে ফেলতে পারত।দু-একটা কঠিন কঠিন কথা শুনিয়ে দিত।



সব সমস্যার সমাধান হাসিব একদিন করেই ফেলল।সেদিন সন্ধ্যায় ফৌজিয়াকে নিয়ে টেইলার্সে ওর মাপে বোরখা বানাতে দিল।এটাই দরকার ছিল।এতদিন বসে না থেকে আগেই জিনিস টা বানিয়ে ফেললে এত চিন্তায়-চিন্তায় অস্থির হত না হাসিব।বোরখা টা যেদিন হাতে পেল,ডেলিভারিতে।সেদিন অফিস থেকে আসার সময় বোরখাটা নিয়ে বেশ খুশি মনেই হেলতে দুলতে বাসায় চলে আসল হাসিব। বুকের উপর থেকে বিরাট পাথর সরে গেছে।

ফৌজিয়া খুব আগ্রহ নিয়ে বোরখা টা উলটে পালটে দেখল।মডার্ণ স্টাইলে বানানো।আপাতত একটা বানিয়েছে।আরো বানাতে দিতে হবে।

"আজকে পোলাও রান্না করেছি,সালাদ করে নিই,তুমি হাতমুখ ধুয়ে নাও।আমি রেডী করছি"



"কালকে তো ছুটি।চল,আমার ঐ যে ফ্রেন্ড আছে।মামুন।বিয়ের পর তো আর দেখা হয় নি।যেতে বলেছে,দেখা করে আসি।"

"ও,ঐ যে মামুন!হুম,তুমি তো বিয়েতে নিয়ে গেলে না..."

"কালকে চল,ছুটি টা কাটবে ভালো।বোরখা টা পরে টরে দেখ"

"হ্যাঁ,খেয়ে দেয়েই পরব।"



এক কেজি মিষ্টি নিয়ে মামুনের বাসায় আসল ওরা।

ড্রইংরুমে বসতে দিল ওদের মামুন।পাশে দাঁড়িয়ে ওর বউ।দেখতে মিষ্টি চেহারা।তবে ফৌজিয়ার মত নয় মোটেই।টুকটাক কথাবার্তা বলে বউটি ভিতরে চলে গেল।নাস্তা করবে হয়ত।

মামুন হাসিবের কাছে ঘেষে এসে বলল,"কিরে হাসিব!বোরখা করে দিলি ভাবিকে?তুই তো কোনকালে নামায-টামায পরিস নি,হা হা হা।"

"আগে পরিনি বলে এখন পরব না সেরকম তো কথা নেই,নাকি?"

"কি ভাবী?তাহলে হাসিবকে মোল্লাদের পোশাক-এ দেখব মনে হচ্ছে নেক্সট টাইম,হা হা"

ফৌজিয়া হাসছে।ওর সেই ঝনঝনে হাসি।এই হাসি একবার শুরু হলে থামতেই চায় না। পুরো রুমটাতে ফিরে ফিরে যাচ্ছে হাসির শব্দ।এই হাসিটা কি ফৌজিয়ার ইচ্ছাকৃত?এতক্ষণ ধরে মানুষ হাসে?ওর অবয়ব টা নাহয় বোরখা দিয়ে ঢেকে রাখা গেল।হাসিটা কি দিয়ে ঢাকবে? [সমাপ্ত]

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১২:২৭

সাফরিনলিপি২ বলেছেন: ভাল লাগলো !!

২| ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১২:৪৬

আহমেদ নিশো বলেছেন: শেষের লাইনটা দিয়ে কি বুঝাইলেন মাথার উপ্রে দিয়া গেল।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.