নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জীবন কিন্তু একটাই

জীবন কিন্তু একটাই

হাতপা

কিছু বলার নাই

হাতপা › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্পঃ একজন কবির মৃত্যু

২৫ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১২:৪০

ছেলেটা একটা বিশাল সাইজের ব্যাগ আর কিছু খাতাবই নিয়ে উঠল রুমে।নতুন জুনিয়ার রুমমেট। হালকা-পাতলা।চেহারায় কবি কবি ভাব।
আর দশটা ছেলের থেকে একটু আলাদা।সবাই যখন ধুমসে টুয়েন্টি-নাইন কিংবা পিসিতে গেইমস বা ফেসবুকিং চালাত,ছেলেটি কে দেখতাম খুব মগ্ন হয়ে একটা মোটা ডায়েরী তে কি যেন লিখে।একদিন আমাকে এসে ডায়েরীটা দিল,"ভাই দেখেন,আমি কয়েকটা কবিতা লিখছি"
পাঁচ-ছয়টা কবিতা পড়লাম।সবই তুমি-আমি জাতীয়।
"আর কোন বিষয় নিয়ে লেখ না?"
"আর তো পারি না ,ভাই,এগুলা ভাল লাগছে,লিখছি"

একদিন ছুটির সকালে ঘুম ভেঙ্গে গেল।কবি দেখলাম রেডি হচ্ছে।একটা পাঞ্জাবি গায়ে দিয়ে,ছোট আয়নায় নিজের মুখ টা ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখল।তারপর খেয়াল করল আমি তাকিয়ে আছি।আমার সামনে এসে একটা নূতন সানগ্লাস চোখে পড়ে-"ভাই,দেখেন তো কেমন লাগছে"
হাসি থামাতে গিয়ে আমার কাশি বের হয়ে গেল।হাসলাম না।বললাম-"বাহ,দুর্দান্ত,কোথায় যাওয়া হচ্ছে?"
"এইতো ভাই,একটু ঘুরাঘুরি করব,ধানমন্ডি লেক এর পাড়ে..."
আমার উৎসাহের কমতি দেখে কবি একটু হতাশই হল সম্ভবত।ভেবেছিল, আমি হয়ত জানতে চাইব কোন মেয়ের সাথে দেখা করতে চাইছে।এটা-ওটা জিজ্ঞেস করব। তা না করে আমি চুপচাপ রইলাম।
কবি তার সদ্যকেনা সানগ্লাস পরে হেলতে-দুলতে চলে গেল।সাথে একটি আনকোরা প্যাকেট।গিফট-টিফট হবে হয়ত।

বিকেলে বাইরে বসে চা-সিগারেট খাচ্ছিলাম,তখনি একটা ফোন আসল।
ফোনের অপর প্রান্তে কেউ কাঁদছে এরকম মনে হল।অস্পষ্ট,বোঝা যায় না।একটু পর কন্ঠ কানে আসল,"ভাই,আমার অনেক বড় ঝামেলা হয়ে গেছে..."

অনেক দৌড়াদৌড়ি হল।ডিস্পেন্সারি থেকে ব্যান্ডেজ-টেন্ডেজ সেরে রাতে কবিকে নিয়ে আমরা দুই তিনজন রুমে আসলাম।কবির চোখে ছলছল।ঘুমের ওষুধ দেয়া হয়েছে।

ঘুম ভাংলে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে কবির দিকে তাকালাম।ঘটনা পুরোপুরি জানতে চাই।

ঘটনা হল এই- রাইসার সাথে কবির পরিচয় দুমাস।প্রেমে পড়তে আজকাল দুদিন সময় যথেষ্ট।সেখানে দুমাসে অনেক কিছুই হয়ে যাওয়া স্বাভাবিক।তেমন কিছুই হয়নি।কারণ আমাদের কবি নিতান্তই সহজ সরল।রাইসাকে নিয়েই তো এত কবিতা। তো,রাইসার জন্মদিন ছিল আজ।জন্মদিনের উপলক্ষে রাইসা কবির সাথে দেখা করতে চেয়েছে।প্রথম দেখা রাইসার সাথে,কবির মন উথাল-পাথাল।কবিতা দিয়ে তো আর পোষাবে না।কবিতার মর্ম রাইসা নাও বুঝতে পারে। হাজার দশেক টাকা দিয়ে তাই কিনেছে একটা মোবাইল সেট।
সবকিছুই ঠিক ছিল।রাইসাকে দেখে প্রথমেই ভাল লেগে গিয়েছিল।হাতটুকু ধরতে দিয়েছিল রাইসা।ওর হাতটা ধরে আস্তে আস্তে মানুষের ভীড় ছেড়ে অনেক নির্জনে চলে গিয়েছিল ওরা।রাইসা লাস্যময়ী ভঙ্গিতে ওর হাতের আঙ্গুল নিয়ে গোলাপি ঠোঁটে ছোঁয়াল। আবেগ নয় আবেশে কবি আরো গাঢ় আলিঙ্গনে আবদ্ধ হতে চেয়েছিল।রাইসাও বাধা দিচ্ছিল না।তখনই রাইসা কান্ডটা করে বসল,"এই ছাড়।ছাড় বেয়াদব..."

কবির হাতখানা তখন রাইসার সংবেদনশীল জায়গায়,ওখানে হাতটা কিভাবে গিয়েছিল তা কবি জানতো না।এত নির্জন জায়গায় হঠাত পাচ-ছয়জন ছেলে কোথা থেকে এসে হাজির হল কিছুই বুঝে ওঠার আগে কবির কবিত্ব ঘুচে গেল। হালকা উত্তম মধ্যম।তারপর ,পকেটে হাত,মোবাইল কেড়ে নেয়া।আর শেষে "মাইয়া পটাস, না?" এবং একটি অশ্লীল গালি।

কবি পুরো বর্ণণা শেষ করার আগেই আঁচ করেছিলাম ঘটনা। অতঃপর কবিকে দশহাজার টাকা দামী মোবাইলের শোক ভুলে যেতে এবং কয়েকটি সান্তনার বাণী শুনিয়ে প্রস্থান করলাম।এরপর আর কোনদিন কবিকে কবিতা লিখতে দেখিনি। (The End)

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৬ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ১:২০

মহান অতন্দ্র বলেছেন: হুম , সত্যি ঘটনা নাকি ?

২| ২৬ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ১০:৫৭

অপূর্ণ রায়হান বলেছেন: কি বলবো! হায় কবি!

ভালো থাকবেন।।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.