নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জীবন কিন্তু একটাই

জীবন কিন্তু একটাই

হাতপা

কিছু বলার নাই

হাতপা › বিস্তারিত পোস্টঃ

কাজী সাহেবের শেষ দিন

১৫ ই জানুয়ারি, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:০৫



সকাল থেকে আজকে একটু অন্যরকম অন্যরকম লাগছে।আর দশটা দিনের মত এই দিন নয়। অন্যদিন হলেও ছয়টা-সাড়ে ছয়টার সময় উঠে হাল্কা গরম পানি দিয়ে গোসল সারতেন,তারপর টেবিলে বসে অপেক্ষা করতেন তার স্ত্রী নীলুফার একটা ডিম পোচ আর দুইটা রুটি দিয়ে যাবেন।গত প্রায় পঁচিশ বছর এই টাই হয়ে আসছে।তারপর, খেয়েদেয়ে অফিসের উদ্দেশ্যে রওনা। আজকেও তেমনি সকাল-এ ঘুম থেকে উঠে হাল্কা গরম পানি দিয়েই গোসল সারলেন,ডিম পোচ-ও খেলেন তারিয়ে তারিয়ে। গরম গরম ধোঁয়া ওঠা চা খাওয়ার অভ্যাসটা তাকে ধরিয়েছে নীলুফার-ই। ঠান্ডার ধাত আছে। শীত-গ্রীষ্ম চিরকাল-ই এই কাশি-সর্দি লেগে থাকে।এসব ডাক্তারি ওষুধ বা চিকিৎসায় সারেনা। গরম চা,আর চিরতার রস তার মোটামুটি একটা পথ্য ই বলা চলে।
খবরের কাগজ টার উপর আনমনে চোখ বুলাচ্ছেন।নীলুফার আর দুই মেয়ে স্বাতী,বিথী ,ওরা টেবিলে বসে গল্প করছে। সবাই রেডি।আজকে বাবার সাথে অফিসে যাবে।আজকে কাজী সাহেবের অফিসের শেষদিন।দীর্ঘ একুশ বছর যে নিয়মে তিনি আবদ্ধ ছিলেন,আজকে জগতের আর সব নশ্বর বস্তুর সেই নিয়মেরই অবসান হতে যাচ্ছে।এই দিনটা যে আগে থেকে জানা ছিল না তেমন নয়।তবু,কাজী সাহেবের মনে আজকে একটা সুতো ছিঁড়ে যাবার মত সূক্ষ্ণ বেদনা...।
-বাবা,তোমার তো অফিস শেষ-ই হয়ে গেল।আমরা অনেক দিন বেড়াতে যাইনা।চলো,কোথাও ঘুরে আসি।
বিথী,ওদের ছোট মেয়ে।অনার্স ফাইনাল ইয়ারে পড়ছে।আর বড় মেয়ে সদ্য একটা চাকরিতে জয়েন করেছে।বিথীর কথা শুনে নীলুফার-ও যোগদিলেন -হ্যা, রাঙ্গামাটি চল সবাই,তোদের চাচার বাসায় থেকে আসি কয়দিন।
চা-এর কাপ টা নিঃশব্দে প্লেটে রাখলেন কাজীসাহেব-হ্যা,এখন তো অখন্ড সময় আমার,যাওয়াই যায়।তারপর সবার অলক্ষ্যে একটা নিঃশ্বাস ফেললেন ...
একটা সিএনজি ঠিক করলেন কাজী সাহেব। দুই মেয়ে আর স্ত্রীকে বসিয়ে সামনে বসতে চাচ্ছিলেন উনি।বীথি ডাকলো বাবাকে,বাবা,এখানেই বসো,একটু চাপাচাপি করলেই হয়ে যাবে।
প্রতিদিন এই সময়ে রাস্তার মোড়ে এসে দাঁড়াতেন,পাঁচ-ছমিনিটের মাথায় অফিসের গাড়ি এসে পিক করে নিত তাকে।প্রথম প্রথম লোকাল বাসে করে যেতেন। প্রথম দিনের কথা ওনার মনে আছে।নীলুফারের কোলে তখন স্বাতী।ছয় মাসের বাচ্চা। একটা প্রেসে-র ছোট চাকরি ছেড়ে এই অফিসে ঢোকা। সামান্য কেরানী হিসেবে...বেতন ছিল না বেশি।কিন্তু, কাজী সাহেবের তখন বয়স কম,পরিশ্রমের নেশা মনে।সততা আর নিষ্ঠা আর কর্মোদ্দীপনায় ভর করে পাড়ি দেবেন সেই সাহস বুকে নিয়ে শুরু করলেন চাকরী। ভুল করেন নি অবশ্য। সেইসময়ে ওনার ইমিডিয়েট বস কামালউদ্দিন খুব স্নেহ করতেন। তার হাত ধরে অনেক কাজ শিখেছেন।একবার ,সহকর্মীর সাথে সামান্য বিষয় নিয়ে তর্কাতর্কি থেকে সেটা খানিকটা হাতাহাতি পর্যায়ে চলে গিয়েছিল। কামালউদ্দিন রুমে ডেকে নিয়েছিলেন কাজী সাহেবকে।কাজীসাহেবের বুক দুরুদুরু করছিল।এই বুঝি শেষ। কিন্তু,বস কামালউদ্দিন তেমন কিছুই বলেন নি,শুধু দুটো কথা বলেছেন,"দেখো,কাজী।তোমাকে আসলেই আমি অনেক পছন্দ করি।আমার ধারণা এই অফিসে তুমি টিকে যাবে,আর উন্নতি-ও করবে।তবে একটা জিনিস মাথায় রাখবে।এটা অফিস।এখানে কেউ কারো না।কারো সাতেপাচে না থেকেই তোমাকে হাসিমুখে সবার সাথে কাজ চালিয়ে যেতে হবে।কারো সাথে বাধালে তোমার নিজেরি বিপদ।আসলে আমি অনেক অভিজ্ঞতা থেকে বলছি।মনে রেখো কথাটা,ঠকবে না"।কাজী সাহেব মনে রেখেছিলেন...এবং তার বিশ্বাস তিনি ঠকেন নি। ক্যাশ ডিপার্টমেন্টের খাটুনি অনেক।প্রায় সময় রাতে থাকতে হত। এই বিষয়ে নীলুফারের কাছে কৃতজ্ঞ তিনি।হয়ত রাস্তায় কিছু হলো কিনা সেটা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে নীলুফার,কিন্তু অন্যান্য মহিলার মত স্থূল অভিযোগ নিয়ে আসেনি কখনো,কখনো বলেনি- সারাদিন অফিসেই সময় দাও,আমার দিকে খেয়াল দাও না।নীলুফার কে না বললেও কাজী সাহেব মনে মনে তার আজকের এই অবস্থানের জন্য তাকে ধন্যবাদ জানান।
"বাবা" স্বাতী বলে।
"হ্যাঁ?"
"আজকে তো মনে হয় তুমি স্পিচ দিবে..."
"কি জানি?ওরা কি আয়োজন করেছে"
সিএনজি থেকে নেমে ভাড়াটা মিটিয়ে নামলো সবাই। কাজী সাহেব অফিসের বিশাল গেটের ভিতর মাথা ঢুকিয়ে এগোলেন। বুকটা খুব ভার ভার লাগছে। এখনো অনেক পরিচিত মুখ আছে ,অনেক পরিচিত মুখ চলে গেছে তারই মতই।কাল থেকে তিনি যেন এই জায়গায় অপাংক্তেয় হয়ে যাবেন। এই কঠিন সত্য মেনে নেয়া যায়,কিন্তু কেন যেন সহ্য হয় না...।
কাজী সাহেবের পিছুপিছু মা-মেয়েরা আসে। কাজী সাহেবের রুম এটা।পাশাপাশি দুজন বসেন। টেবিলে একগাদা ফাইল-কাগজ।একপাশে রাখা টেলিফোন সেট।চেয়ারে কাজীসাহেবএর প্রিয় নীল রঙের তোয়ালে ঢাকা। কাজী সাহেব বসলেন কিছুক্ষণ। ওদেরকে সামনের চেয়ারে বসতে দিলেন। সুলতান সাহেব আরো কয়েকজন নিয়ে এদিকে আসছেন...
"কি ব্যাপার ভাই? আজকেও শেষদিনে অফিস করবেন নাকি?ভাবি।এবার তো দুজনে মিলে দেশের বাইরে থেকে ঘুরে আসেন।"
কাজী সাহেব হাসেন। কিন্তু মন খুলে যেন পারছেন না...
তারপর সবাই মিলে বোর্ড মিটিং রুমে গেলেন ওনারা। ফুলটুল দিয়ে ভালই সাজিয়েছে । একপাশে ডায়াস। উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা কয়েকজন আছেন। কাজী সাহেব এদিক ওদিক চারপাশ দেখছেন। বিদায়ের পালা ।বিদায় সবসময়-ই বেদনার...।আর,সেটা যদি হয় দীর্ঘ সম্পর্কের বিদায় তাহলে মানুষের মন কি কেঁদে উঠে না। কাজী সাহেব ডায়াসে গেলেন।দাঁড়ালেন,স্বাভাবিক হয়ে হাল্কা দু-একটা কথা বলে নেমে আসলেন।একটা ফুলের তোড়া ,একটা ক্রেস্ট আর একটা গিফটপেপারে মোড়া কিছু তার হাতে তুলে দিলেন একজন।
অনুষ্ঠান শেষ। পরিচিত সবার সাথে আলাপ সেরে ,হালকা কথাবার্তা বলে কাজী সাহেব বললেন ,"চলো,যাই আমরা"
অনেকেই এগিয়ে আসলেন বাইরে পর্যন্ত,কাজী সাহেব দ্রুত চলে যেতে চাইছেন,এতটা খারাপ লাগবে তিনি ভাবেন নি। নীলুফার আর মেয়েরা সামনে অনেক দূর এগিয়ে গেছে।কাজী সাহেব যেতে যেতে একটু পিছন ফিরে তাকালেন,এই অফিস,এই উঁচু বিল্ডিং...এই দীর্ঘ কর্মজীবনের অবসানে মনটা তার হু-হু করে উঠে। (End)

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ১৫ ই জানুয়ারি, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:১৩

আহলান বলেছেন: এ রিয়েল লাইফ, এ রিয়েল ড্রামা ....

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.