নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জীবন কিন্তু একটাই

জীবন কিন্তু একটাই

হাতপা

কিছু বলার নাই

হাতপা › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্পঃ বাড়ির নাম নিরিবিলি

১৯ শে জানুয়ারি, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:১০


গল্পঃ বাড়ির নাম নিরিবিলি
ক্লাস নাইন ছেড়ে সবে টেনে উঠেছে শম্পা।বরাবর ক্লাসে ভালো রেজাল্ট করে ও ।এবারো তার ব্যতিক্রম হল না। স্কুলটা অবশ্য অত নামকরা স্কুল না।মোটামুটি মানের।শম্পার মার ইচ্ছা ছিল মেয়েকে একটা ভালো স্কুলে পড়াবে। কিন্তু,শম্পার বাবা একটু ভীতু,মেয়ের কি হবে না হবে এই ভেবে দূরের কোন স্কুলে পড়াতে তিনি নারাজ। অবশ্য ছোট মেয়ে শশীকে ক্লাস ফাইভে থাকতে একটা নামকরা স্কুলে ভর্তি করিয়েছেন বউ-এর চাপাচাপিতে। ভালো স্কুলে পড়তে না পারার দুঃখ শম্পার মনে নেই।এই ছোটখাট স্কুলের টীচার-ম্যাডাম দের অনেক ভালোবেসে ফেলেছে সে।দুঃখ হচ্ছে এটাই যে,আর কয়দিন পরে শম্পাকে তার এই প্রিয় এলাকা ছেড়ে যেতে হবে।শম্পার বাবা নিজেদের একটা বাড়ি করছেন,জায়গাটা বেশ দূর আছে। শম্পারা কয়েকবার গিয়েছেওখানে। অনেক টা গ্রাম গ্রাম ভাব যেন।লোকালয় ছেড়ে দূরে খানিক,জমি টা ভাল লাগায় ওর বাবা কিনে রেখেছিলেন।এখন বাড়ি করছেন।একতলা কমপ্লিট,দোতলা করবার প্ল্যান আছে। এখানে থেকে বাড়ির কাজের তদারকি করা মহা ঝামেলার ব্যাপার।সপ্তাহে প্রচুর খাটুনি যায়।কাজেই ঠিক করা হল সবাই মিলে এই শীতেই বাসা শিফট করে উঠবে নিজেদের বাড়ি। শম্পার আফসোস হয়,এখন থেকে আর হেঁটে স্কুলে আসা হবে না।কিংবা বিকেল বেলায় এই সামনের খোলা জায়গাটাতে আনমনে হাঁটতে বের হওয়া হবে না,অথবা ওই যে পেছনের বারান্দা দিয়ে দূরের একটি বাড়ী থেকে একটা চশমা পড়া ছেলে ওর দিকে তাকিয়ে থাকে,ওকে কোথায় দেখা যাবে আর?এসব হাবিজাবি ভাবনা ভাবতেই শম্পারা এক শুক্রবারে এসে পড়ে তাদের বাড়িতে।নিজেদের একটা বাড়ি!

প্রথম প্রথম যতটা খারাপ লাগবে ভেবেছিল অতটা খারাপ শম্পার লাগেনা।আশেপাশে লোকালয় কম হলেও কাছেই দু-তিনটে বাড়ি আছে।আরো কন্সট্রাকশানের কাজ চলছে। বাবা বলেছে,আরো বছর তিন-চার যাক,এদিক দিয়ে মানুষের ভীড়ে হাঁটতে পারবি না দেখিস।শহরে মানুষ এখন হন্যে হয়ে জায়গা খুঁজে ফিরছে।শম্পা শশীকে নিয়ে বিকালে একটু হাঁটতে বের হয়।বাড়ির সামনের রাস্তাটা ইট-সুরকি দিয়ে চলনসই করে রাখা হয়েছে। এরপর থেকে মেইনরোড পর্যন্ত যেতে হলে একটু কষ্ট করতে হয়। কিছু কিছু জায়গায় বিশাল বিশাল গর্ত। বাড়ির একটা জিনিসকে ও মুহুর্তে ভালোবেসে ফেলে সেটা হচ্ছে বাড়ির ছাদ।বিকেল হলেই বিশাল মগ ভর্তি গরম চা নিয়ে ছাদে চলে আসে।রেলিং এ হেলান দিয়ে চুমুক দেয়।এত বড় বিশাল একটা ছাদের মাঝে শম্পার দাঁড়িয়ে চিৎকার করে কিছু একটা বলতে ইচ্ছে করে...কাউকে ডাকতে ইচ্ছে করে?কাকে ডাকবে শম্পা? শম্পার মনে তেমন কেউ কি আছে? আছে একজন।তার কথা কেউ জানে না,এমনকি শম্পা নিজের কাছেও লুকোয় সেই মানুষের কথা।যখন শম্পার খুব মন খারাপ হয়।কান্না পায়,কান্না এই বয়েসী মেয়েদের কোন কারণ ছাড়াই মাঝে মাঝে পায়,তো যখন এমন হয়- তখন শম্পা মানুষটির সাথে দেখা করে,মানুষ টি তার কাছে আসে।তার অনেক কাছে এসে তার মাথায় হাত রাখে।টের পায় শম্পা।সেই হাতের স্পর্শে শম্পা অনেক কষ্ট ভুলে যায়।মানুষ টার চেহারা অস্পষ্ট,আবছা।তার মুখের আদল আঁচ করবার চেষ্টা করেছে অনেক শম্পা।একদিন যদি সত্যি এই মানুষটা শম্পার সামনে এসে হাজির হয়ে যায়,কি করবে ও তখন? পাগল হয়ে যাবে। দৌড়ে পালাবে। আয়নায় নিজের চেহারাটা ঘুরিয়ে ফিরিয়ে তাই দেখে শম্পা,ওর চেহারায় কি এমন আছে,যে মানুষটা ওকে পছন্দ করবে?কিছু নেই।ধূর।

‘এইবার তো বাড়ির একটা নাম দিতে হয়।মানুষ জন তো বাড়ি-ই চিনবে না নাহলে’ শম্পার বাবা খেতে খেতে বলে।
‘বাড়ির একটা নাম দে তোরা।দুই বোন মিলে ঠিক কর’
শম্পা ও শশী দুজনেই মা’র কথায় খুশী হয়। কি নাম দেয়া যেতে পারে সেটা নিয়ে মহাব্যস্ত হয়ে পড়ে।শশী ছোটমানুষ। তেমন কিছু ঠিক করতে পারে না। শম্পা বাংলা একাডেমির ডিকশনারিটা নিয়ে বসে,কঠিন কিছু নাম ঠিক করতে হবে।বাংলা ভাষায় কঠিন শব্দের অভাব নেই।কিন্তু,কোন নামই পছন্দ হয় না। ডিকশনারিটা পাশে রেখে শুয়ে পড়ে।শশী আর শম্পা একসাথে ঘুমায়।শম্পা শুয়ে পড়ার পরেও বেশ খানিকক্ষণ জেগে থাকে। চারপাশে সুনসান নীরব। সকাল-বিকাল যা একটু মানুষের শব্দ শোনা যায়, দুই –একটা ফেরিওলা এসে হাঁক দেয়,সন্ধ্যার পর থেকেই একেবারে শব্দহীন...কোন শব্দ নেই।নিরিবিলি,হ্যাঁ,এই নিরিবিলি নামটা দিলে কেমন হয়? নি-রি-বি-লি... বাবাকে বলতে হবে।

এই নিরিবিলি-তে শম্পার যৌবনকাল এর প্রারম্ভ,যৌবনের যে সময়টায় একটি মেয়ের শরীর মনের পরিবর্তন ঘটে,একটা মেয়ে থেকে নারীতে রূপান্তর হয়,সেইসময়টা কাটিয়েছে এই বাড়ি নিরিবিলি-তে।শম্পার চিন্তায়,ভাবনায়,আনন্দে,বিরহে,একাকীত্বে এই বাড়ির প্রতিটি কোণ ,দরজা,জানলা ,মেঝে যেন ওতপ্রোত ভাবে মিশে আছে। এই বাড়িতেই পরিবারের সম্মতিতে শম্পার বিয়ে হয়,তার খুব পছন্দের এক মানুষের সাথে। ওর নাম আপন,শম্পার খুব আপন এক মানুষ। ইঞ্জিয়ানিয়ারিং ভার্সিটিতে পড়ার সময় ওদের পরিচয়। আপনের সাথে শম্পার প্রেম হয়ে গেল কিভাবে ,তার সাথে গল্পের কোন সম্পর্ক নেই।তবে,এটুকু বলা যায়,আপন যেদিন শম্পার মাথায় হাত রেখে বলেছিল,শম্পা,আমি তোমাকে অনেক...সেই দিনই শম্পা বুঝেছে এই সেই হাত যেটা সে কল্পনা করত,ভাবত,একা একা যার স্পর্শ পাবার জন্য সে কল্পনায় ডুবে যেত।সেই কল্পনার আশ্রয়, আজ শম্পার বাস্তবের আশ্রয়।

একটা মেয়ের জীবনে আর দশটা শখ কিংবা প্রাণের আকুতি যেমন ঠিক তেমন শম্পার মা হতে ইচ্ছা জাগে। এই মা হওয়াতেই জীবনের সকল পরিতৃপ্তি,কিন্তু,আপন বলেছে আরেকটু অপেক্ষা করতে।ওর চাকুরীর জন্য সুবিধা হবে।চাকুরীর সুবাদে ঢাকার বাইরে থাকে আপন। শম্পার শ্বশুরবাড়ি গ্রামে,ওখানে কিছুদিন থেকে হাঁপিয়ে ওঠে শম্পা বাবার বাড়ি নিরিবিলিতেই থাকতে শুরু করে।আপন মাসে দুইবার-তিনবার করে আসে।শম্পা চায়,আপন ওখানে একটা বাসা নিক।ছোটমোট যাইহোক,একসাথে থাকবে বলেই তো এতসব।কিন্তু,আপনের গুছাতে সময় লাগবে। নিরিবিলি বাড়িতে আবার আবার শম্পার আরেক জীবন শুরু হয়। একটা চাকরিতে ঢুকার চেষ্টায় আছে শম্পা,সেটা আর্থিক সঙ্গতির জন্য না হলেও মনের শান্তির জন্য।ব্যস্ত থাকলে একাকীত্ব আর নানারকম চিন্তা থেকে দূরে থাকা যাবে।আপনকে নিয়ে একটু চিন্তায় আছে শম্পা।আগের মত সময় ওর নেই জানে,তবু,একটা পরিবর্তন লক্ষ্য করছে,সূক্ষ্ণ একটা পরিবর্তন। হয়ত ফোন দিচ্ছে,খোজখবর নিচ্ছে।মাসে দু-তিনবার আসছে যাচ্ছে। মানব-মানবীর যে আদিম-অকৃত্রিম চাহিদা ওরাও দুজনে সেটা উপভোগ করছে ,কিন্তু,কোথাও যেন একটা সুতো ছিঁড়ে গেছে কি? শম্পার ভয় লাগে,আপন কে নিয়ে এমন বাজে চিন্তা ও করতে চায় না,তেমন ছেলে আপন নয়...

বেশ কিছু বছর পরের কথা। নিরিবিলি বাড়ি এখন দোতলা ছেড়ে চারতলা হয়েছে। শম্পা-শশীরা আর ছোট নেই।সবাই বড় হয়েছে গেছে কত। এই বাড়ির ছোট মেয়ে আজ বেড়াতে এসেছে জামাই নিয়ে। শম্পার বাবা সারাদিন ব্যস্ত ছিলেন; জামাইয়ের জন্য বাজার-সওদা করলেন।এদিকে বাড়ির চারতলার কাজ এগুচ্ছে,সেগুলোর তদারকি চলছে। রান্নাঘরে মার সাথে কাজে হাত লাগিয়েছে শম্পা,ছোটবোন টি আসছে, সাথে ওর জামাই,ওদের বিয়ে হয়েছে ছয় মাস।শশী সবসময় বলতো ওর নাকি ফর্সা ছেলে একদম পছন্দ না।অথচ ফয়সালের রঙ দুধ-সাদা।শশীকে এটা নিয়ে ক্ষেপায় শম্পা।
-অনেক দিন পর আজকে আমরা একসাথে শুচ্ছি ,না আপু?
- হ্যাঁ, ফয়সাল কি কালকে চলে যাবে?
-হ্যাঁ ,আমি থাকবো আপু,কম করে হলেও এক সপ্তাহ...এরপর তো আমিও চাকরিতে ঢুকে যাচ্ছি সামনের মাস থেকে।
-থাক,মজা হবে,কিন্তু তোর ফয়সাল কিভাবে থাকবে?
- থাকবে,থাকতে পারবে।আচ্ছা,আপু,তোমার খারাপ লাগে না ?একা?
-একা কই? বাবা আছে,মা আছে...তোরা আছিস।একা লাগার কিছু তো দেখছি না।
-মা-বাবার কথা তো শুনলে না।
-বাদ দে রে শশী,বিয়ে আর করব না...শশী তুই ঘুমা।সারাদিন কাজটাজ করে প্রচন্ড ঘুম পাচ্ছে।কালকে কথা হবে।

নিরিবিলি বাড়িতে প্রতিরাতের মত আরেকটি রাত নেমে আসে। এই বাড়ির বড় মেয়েটি যে কিনা স্বপ্ন দেখত একটা নিঃস্বার্থ হাতের,একটা মানুষের অকৃত্রিম ভালোবাসার হাতের সেই হাত কি তবে কেবল স্বপ্নেই পাওয়া যায়? বাস্তবের হাতগুলো কি আপনের মতই ঠকায় নাকি শুধু?আপন কি ওকে ঠকিয়েছে?নাকি ওই আপন কে ঠকানোর সুযোগ করে দিয়েছে। আপন যে ওর সহকর্মীর সাথে গোপনে সম্পর্ক গড়ে তুলেছিল,সেটা জানাজানি হবার পরেও কেন প্রতিবাদ করেনি শম্পা।মামলা করার সুযোগ ছিল,সবাই তাই চেয়েছিল।কিন্তু,মানুষের মন যেখানে নড়ে যায়,এইসব আরোপিত মামলা কিংবা প্রতিবাদ দিয়ে কি সেই মনের ছোঁয়া ফিরে পেত শম্পা? পেতনা বলেই শম্পা ছেড়ে দিয়েছে আপন কে।এই নিরিবিলি বাড়ির দেয়াল গুলোই তার শেষ আশ্রয়।

(সমাপ্ত)

মন্তব্য ২ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৯ শে জানুয়ারি, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:২২

নীল-দর্পণ বলেছেন: ভাল লাগা....

২| ১৯ শে জানুয়ারি, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:২৬

কালের সময় বলেছেন: ভালো লাগলো

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.