নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জীবন কিন্তু একটাই

জীবন কিন্তু একটাই

হাতপা

কিছু বলার নাই

হাতপা › বিস্তারিত পোস্টঃ

দাওয়াত

২৪ শে জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ৮:০৬

ভাদ্র মাসের প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির দেখা নেই বহুদিন,টানা বৃষ্টি হয়ে আকাশ এখন রোদে ফেটে ফেটে পড়ছে।
জোবেদআলির বাড়িতে আজকে রান্না হয় নি।সংসারে আছে তার বউ,দুই ছেলে বাবলু আর লাবলু। ঢাকার সাভারে একটা সেমিপাকা বাসার দুইনম্বর ঘরটাতে সংসার। বউ এলাকার সম্পন্ন বাসাবাড়িতে ঠিকে ঝিগিরি করে ,আর জোবেদআলির আয়ের উপায় হল ছোটছোট বাচ্চাদের প্লাস্টিকের খেলনা ফেরি করে বেড়ানো। সাভার থেকে খুব ভোরে সে বাসে চড়ে। সারাদিন ঢাকার পার্কে পার্কে ঘুরে বেড়ায়। কিন্তু, বর্তমানে দেশের যে অবস্থা, সীমিত টাকা-পয়সা যা আয় হত,এখন তা প্রায় শূণ্যের কোঠায়। এই হরতাল-অবরোধের মাঝে মানুষ আর পার্কে-পার্কে ঘুরতে আসেনা।জোবেদ আলি খেলনার পসরা সাজিয়ে তীর্থের কাকের মত চেয়ে থাকে,একটা দুটো-ও যদি বিক্রি হয়। তারপর,রাত আটটা নাগাদ বাক্স-বস্তা গুছিয়ে রওনা হয় সাভারের উদ্দেশ্যে।গত দুই সপ্তাহ জোবেদালির এই করুণ অবস্থা।
বাবলু,লাবলু জোবেদালির দুই ছেলে।বাবলুর বয়স আট,লাবলু এক বছরের ছোট। দুই ভাই গত কয়েকদিন ধরে ভালোমত খেতে না পেয়ে বিরক্ত।
বাবলু লাবলুর দিকে তাকায়-“কিরে?খিদা পাইছে না তর?”লাবলু মাথা নাড়ে।ওর খিদা পেয়েছে। বাবলু কিছু বলে না। মা কে গিয়ে বললে এখন রামধমক খাবে। তার চেয়ে ছোট ভাইটিকে পাঠানোর চেষ্টা করে।বকা যদি খায় লাবলুই খাক। এমন সময় রাজুকে বাসার সামনে দিয়ে যেতে দেখে বাবলু নাম ধরে ডাকে।রাজু বয়সে বাবলুর সামান্য বড়।রাজুর বাবার আয়-রোজগার মোটামুটি ভালো। সেটার ছাপ ওর গায়েগতরে চেহারায়।কাছে না এসে দূর থেকেই রাজু বলে,’কি?’
‘এদিক আয়’
‘না,কাম আছে,হক সাহেবের বাড়িতে যাই।মা আছে সেখানে।ডাইকা আনতে যাই’
‘তর মা কি করে ঐ বাসায়?’
‘মিলাদুন্নবী না?শুক্রবার দুপুর বেলা ওরা অনেক লোক খাওয়াইব।মা কাম করতে গেছে।‘
‘সত্যি?’
‘হ।জানস না?বিরাট গরু আনছে আইজকা। এই বাড়ি ঐ বাড়ি সবাইরে দাওয়াত করব। আমগোরেও কইব’
‘আমগোরে করব?’
‘সবাইরে দাওয়াত দিব যখন, তোগোরেও দিব।আমি যাইগা’
রাজু চলে গেলে বাবলু ছোট ভাইয়ের দিকে তাকায়।‘আইজ কি বার জানস নাকি লাবলু? মনে হয় বুধবার।বুধবারই হইব।শুক্রবার দাওয়াত’
লাবলু একগাল হেসে বলে ‘মজা না ভাই?কি খাওয়াইব ওরা?পোলাও মাংস?ভাই?’
‘ধুরো।খালি কি পোলাওমাংস।কত্ত বড়লোক ওরা জানস নাকি?খাসির কোর্মা করব।বিরিয়ানি করব।আরো অনেক কিছু করব।দেখবি’
উত্তেজনায় লাবলুর চোখ চকচক করে। সকাল থেকে পেট টা খালি খালি লাগছিল বাবলুর। এখন আপাতত দাওয়াতের চিন্তায় মন থেকে সেই কষ্ট টা অনেকটা যেন চলে গেছে।

সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে বাবলু লাবলু কে নিয়ে বের হোল। এই গলির মোড়েই হক সাহেবের বাড়িটা।বিশাল আটতলা বাড়ি। বাড়ির সামনের জায়গাটাতে গরু টা বাঁধা। হক সাহেবের অনেক টাকাপয়সা।কত লোক খাওয়াবে?
‘ভাই,অনেক বড় গরু তো’
‘কাছে যাবি?আয়’
ছোট ছোট ছেলেমেয় ভীড় করে আছে গরুটার চারপাশে। লাবলু গরুটার দিকে একমনে তাকিয়ে আছে। লাবলু তার ভাইয়ের গায়ে গা ঘেষে দাঁড়িয়ে কান্ড দেখতে থাকে। হকবাড়ির দারোয়ান মোস্তফা তখনি ব্যাটন হাতে বেরিয়ে এসে সবাইকে দূর দূর করে তাড়িয়ে দেয়।
সারাদিন কেটে গেল। দুপুরে ভাত আর জংলা শাক সেদ্ধ দিয়ে গপাগপ ভাত গিলে ফেলল দুই ভাই।এখন আর মনে কোন বিরক্তি নাই।আজ বাদে কাল দাওয়াত। বিকেলবেলা আরেকপাক ঘুরে আসে হক সাহেবের বাড়ি থেকে।সামনের আঙ্গিনায় বিশাল শামিয়ানা টাঙ্গানো হচ্ছে।উৎসুক ছেলেপেলে টুকটাক কাজ করছে।বাবলু ছোটভাইকে বলে,’এত তাড়াতাড়ি বাসায় গিয়া কাম নাই।আয় ওদের সাহায্য করি’।দুইভাই মিলে প্যান্ডেলওয়ালাদের এটা ওটা এগিয়ে দেয়।বাশ,সুতো,পেরেক –খুব মজা লাগছে দুজনেরি।কত লোক খাবে কাল এখানে?অনেক লোক হবে ত।

উত্তেজনায় রাতে ঘুম আসে না বাবলু-লাবলুর। বাবলু তার মাকে জিজ্ঞেস করে-‘মা ও মা,হকবাড়িতে কালকে দাওয়াত আছে,না মা?’
‘কিসের দাওয়াত? ছোটলোকের কোন দাওয়াত নাই... ঘুমা’
‘কালকে মনে হয় দাওয়াত দিব; না মা?’ লাবলু জানতে চায়।
‘দিলে দেখা যাইব’
হক বাড়ির খোলা আঙ্গিনায় একপাশে শামিয়ানার এক কোণে দুই ভাই একসাথে খেতে বসেছে।ক্যাটেরার-এর লোকজন বড় বড় বাটিতে পোলাও,কোর্মা,ফিরনি নিয়ে ছোটাছুটি করছে। লাবলু বাবলু আয়েশ করে খাচ্ছে।অনেক পদ খাবারের। বাবলু লাবলুর প্লেটে গোশতের বড় টুকরা তুলে দিচ্ছে। আহ কি স্বাদ,কি স্বাদ... ।
‘ওঠ,ওঠ’ - মায়ের হাতের ঠেলায় ঘুম ভাঙ্গে লাবলুর।সে শুয়ে আছে শতচ্ছিন্ন সেই তাদের বিছানায়। রোদ এসে ভরে আছে পুরো ঘরটায়।‘অনেক সকাল হইছে,ওঠ তোরা’- আমি কামে গেলাম।
এতক্ষণ তাহলে কি সব স্বপ্নই দেখছিল লাবলু? ঘুম ভেঙ্গে গিয়ে এদিক সেদিক ফ্যাল-ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে।আজকেই তো শুক্রবার।ভাইকে ঠেলে ঘুম থেকে উঠায়,’ভাই,উঠ’
বেলা বেড়ে চলল। দুই ভাই গেটের সামনে দাঁড়িয়ে রাস্তার দিকে তাকিয়ে রইল।আকাশে ভাদ্রমাসের কড়া রোদ।কই?এখনো তো হক বাড়ি থেকে কেউ আসলো না তাদের দাওয়াত করতে। জুমাবার ।একটু পরে সবাই নামাজ পড়তে যাবে। হয়ত নামায শেষে হক বাড়ি থেকে লোক আসবে তাদের ডেকে নিয়ে যেতে।
বেলা গড়াল। সকাল থেকে পেটে কিছু পড়েনি দুই ভাইয়ের। নামায শেষে ফিরছে সবাই। ঐ তো রাজু,সুমন,কাউসার ওরা পাঞ্জাবি গায়ে দিয়ে যাচ্ছে। সাথে সাথে ছোট-বড় আরো কয়েকজন।ওদের দিকে তাকিয়ে রাজু এগিয়ে আসল,’কিরে এখানে বইসা আসছ কেন?’
বাবলু বলে,’ কোথায় যাচ্ছস তোরা?’
‘হক সাহেবের বাড়িতে।দাওয়াত না? তোদেরকে বলেনাই?সবাইরে বলেনাই মনে হয়’
বাবলু হঠাৎ রাগে-অভিমানে দিশেহারা হয়ে গেল। রেগে দাঁড়িয়ে উঠে বলল- ‘দাওয়াত করবে না কেন?আমরা পরে যাবো’
বাবলুর রাগ করা দেখে রাজু অবাক হয়ে বলল ‘রাগ করস কেন?কি বলছি আমি?’

ওরা চলে যাবার পর বাবলুর চোখে পানি এসে পড়ল। হয়তবা সংসারের এই নিয়ম দেখেই। এই দাওয়াতের দিকে পথ চেয়ে কতদিন ধরে বসে আছে ওরা। ওর ছলছল চোখের সামনে দিয়ে হক সাহেবের বাড়িতে দাওয়াত খেতে চলে গেল রাজুরা।
( প্রিয় লেখক বিভূতিভূষণ বন্দোপাধ্যায়ের 'তালনবমী' গল্প থেকে অণুপ্রাণিত হয়ে লেখা)

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ২৪ শে জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ৮:৪৪

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: জীবনের কঠিন রুপ!!! যা আমরা দেখেও না দেখে চলি!!!


++++

২| ২৪ শে জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ৯:৫২

আহলান বলেছেন: আসলেই না দেখে চলি ...

৩| ২৫ শে জানুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ১:২১

নীল লোহীত বলেছেন: সত্যি তাই। এইটাই সমাজের বিচিত্র রুপ।
ভালো লাগলো।


শুভকামনা রেখে গেলাম।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.