নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জীবন কিন্তু একটাই

জীবন কিন্তু একটাই

হাতপা

কিছু বলার নাই

হাতপা › বিস্তারিত পোস্টঃ

মিথ্যেপ্রেম

৩০ শে জানুয়ারি, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:১৮


কিরে, কালকেই অসুখ থেকে সেরে উঠলি না মাত্র?আজকে বের হচ্ছিস যে আবার? তর সইছে না আর বুঝি।আহা,আহা কি প্রেম। আমার তো হিংসা হচ্ছে রে- টিপ্পনী কাটে তূর্ণা।
তন্বী কিছু বলে না। শুধু অল্প করে হাসে।
রাতের খাবার কি এখানে খাবি,নাকি বাইরে থেকেই খেয়ে আসবি?আজকে রাতে ফিস্ট এর কথা মনে আছে তো। মৌরি বাসা থেকে চলে আসবে একটু পর।
- না রে,আজকে বেশি দেরী হবে না মনে হয়,লম্বা চুলগুলো ক্লিপ দিয়ে শক্ত করে বাঁধতে বাঁধতে জবাব দেয় তন্বী।সাজতে খুব বেশি সময় নিলনা । চোখের চারদিকে হালকা করে কাজল,আর ঠোঁটে একটু লিপস্টিক হালকা করে বুলিয়ে নিয়েই বের হল। টেনশান হচ্ছে খুব। অয়নকে সামনাসামনি কথাগুলো কিভাবে বলবে সবকিছু ঠিকঠাক মত ভেবেচিন্তে মনে মনে একটা রিহার্সাল দিয়ে নিয়েছে। মনের ভিতরে একটা ভীষণ তোলপাড় চলছে। কী হবে,কী হবে ,কী করবে এখন সে এই চিন্তায় গতকাল থেকেই তার মন ভীষণ ভার হয়ে আছে।এরকম একটা পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হবে তাকে সেকথা একটিবারের জন্যও মনে হয়নি।একদিকে অয়নের চেহারা টা ভেসে উঠছে বার বার আর অন্যদিকে...।প্রথমে ভেবেছিলো কথাগুলো গতকাল রাতেই অয়নকে বলে হালকা হয়ে নিবে।পরে ভেবে দেখল,না,অতটা তাড়াহুড়ো করা ঠিক হবে না। সামনাসামনি পুরো ব্যাপারটা ব্যখ্যা করে বলাটাই ভালো হবে। অয়ন যে কি রিএকশান করবে কে জানে...
বিকেল টা পড়ে গেছে।ছয়টার মত বাজছে ঘড়িতে। এই সময়টায় এখানে মানুষজন গিজগিজ করে,প্রেমিকজোড়া কিংবা বন্ধুবান্ধব মিলে এদিক সেদিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে গল্পগুজব আর আড্ডায় বেশ জমজমাট আর মুখরিত হয়ে থাকে।অয়নের সাথে প্রায় এই জায়গায় বিকেলগুলো একটা মোহাচ্ছন্ন ভাবে কেটেছে ।আজকে একটু নিরিবিলি দেখে টিএসসি মোড়ের একপাশে একটু আলাদা করে বসল ওরা দুজন।অয়ন আর তন্বী। অয়ন সিগারেট টা শেষ করল মাত্র। ঘন ঘন নিঃশ্বাস নিচ্ছে।চশমাটা খুলে নিয়ে আবার চোখে দিল অয়ন।অয়নকে ভালো ভাবে লক্ষ্য করছে তন্বী,অয়ন কি জানে তন্বী আজকে কি বলবে ওকে,ও জানবে কি করে?
- শরীর ঠিক আছে এখন?তন্বীর দিকে তাকিয়ে অয়ন বলে।
-হ্যাঁ।ঠিক আছে। অয়ন,আসলে,আজকে তোমাকে ডেকেছি কিছুকথা বলবার জন্য। অয়নের দিকে না তাকিয়েই ধীরে ধীরে কথাটা বলল।ভাবছিল,আরেকটু অপেক্ষা করবে। তবু ভিতরে জমে থাকা চিন্তা হয়ত প্ররোচিত করেছে তন্বীকে।প্রভাবিত করছে ওর সমস্ত অনুভূতিকে।
অয়ন তন্বীর ডান হাতটা ওর কোলের উপর টেনে নিল।তন্বীর মধ্যমা আর অনামিকার ফাঁকে নিজের আংগুল গুলো জড়িয়ে নিয়ে সেগুলো দেখতে দেখতে বললো-বলো।
অন্যসময় তন্বী সেই হাতে ধরা অয়নের হাত টা নিয়ে গালের পাশে আলতো করে নিয়ে মাথা হেলিয়ে দিত। কিন্তু,আজকে তন্বী যেন কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে হাতটা আস্তে করে অয়নের হাত থেকে ছাড়িয়ে নেয়।অয়ন অবাক হয়ে বলে-কী ব্যাপার?হাত সরিয়ে ফেললে যে?
-না,এমনি।কিছু না। আমার কথাগুলো আগে শেষ করি,কেমন?শুনো,আর প্লিজ, আমি যে কথাগুলো বলব সেগুলো প্লিজ একটু মন দিয়ে শুনবে।মানে,তুমি যদি আমার পারস্পেক্টিভ থেকে চিন্তা কর,তাহলে আশা করি তুমি আমার কথা,আমি কি বলতে চাই বুঝতে পারবে।
অয়ন চশমার ফাঁক দিয়ে তন্বীর দিকে তাকায়।ওর মুখের সামনে ঝুঁকে এসে বোঝার চেষ্টা করে-কী ব্যাপার?হঠাৎ কি এতসব গুরুগম্ভীর আলাপ শুরু করলে,হ্যাঁ?তারপর,তন্বীর কাছে ঘেষে বসে।
-না,অয়ন।সত্যি আমি একটা বিরাট সমস্যার মধ্যে পড়ে গেছি।সেই ব্যাপারটাই আমি তোমাকে বলতে চাচ্ছি।
-অবশ্যই,কী সমস্যা?খুলে বল।

তারপর তন্বী ঠিক যেভাবে যেভাবে বলবে ঠিক করে এসেছিল সেভাবেই পুরো টা বলল অয়ন কে। বলা শেষ করে একটু যেন হালকা বোধ হল নিজেকে।অয়নের চোখের দিকে তাকালো ,চশমার ভিতর দিয়ে ওর চোখের ভাষা পড়া যাচ্ছে না।সন্ধ্যা নেমে গেছে।মিনিট পাঁচেক নীরব হয়ে গেল ওরা দুজনেই।অয়ন কিছু বলছে না দেখে তন্বী অস্বস্তিবোধ করতে থাকে একটু।
-কী হলো,আমি তো আমার কথা শেষ করলাম।কিছু বলো তুমি।
অয়ন মুখে হাত দিয়ে একদম চুপচাপ বসে আছে। ওকে দেখে একবার মনে হলো ভীষণ রেগে গেছে।ভয় করতে থাকে তন্বীর।তন্বী ওর দিকে তাকিয়ে-ই আছে,কিছু একটা জবাবের আশায়।রাগ-বিদ্বেষ যাইহোক একটা কিছু হয়ে যাক,তাই চায় তন্বী।ওর মনের ভিতরে তোলপাড় ভাব কাটেনা।সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ে বরং।
এসব ফালতু প্রসঙ্গ তুলে এখন তুমি আমাদের রিলেশান টা এন্ড করতে পারো না- নীরবতা শেষ করে তন্বীর কথাগুলোর জবাব দিলো অয়ন।
তন্বী চুপ করে থাকে ,যা বলার ঠান্ডা মাথায় বলা হয়ে গেছে।এখন অয়ন হয়ত কিছুক্ষণ রাগের মাথায় কথা বলবে।ওকে শান্ত হবার জন্য সময় দিতে হবে।
- এসব ব্যাপার আমাকে আগে কেন বলোনি?
-কি আশ্চর্য? আমি তো সবটুকু তোমাকে বললাম।আমি আগে থেকে কিভাবে বলব বলো? আমি তোমার কাছে কোনকিছুই লুকাইনি।এবার তুমি বলো,আমার কি করা উচিত?
অয়ন এবার দুহাতে মাথার চুল টেনে ধরে।–না,না,এভাবে আমাদের সম্পর্ক টা শেষ হতে পারেনা।আচ্ছা,যেটা হয়েছে সেটা হয়ে গেছে।সেটা ভুলে যাও ,বাদ দাও।
-না অয়ন,সেটা আমার পক্ষে পসিবল না।
-কেন? তাহলে,আমাদের গত চারমাসের রিলেশান মিথ্যে হয়ে গেল?
- সত্যমিথ্যের প্রশ্ন আসছে না এখানে অয়ন। সেদিন আমি যা ভেবেছিলাম সেটা একটা ...
- দেখো তন্বী।আমি জানি তুমি আমাকে অনেক ভালোবাসো,আমিও তোমাকে।তাহলে,এখন ঐ ব্যাপারটা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেল। পাস্ট,এটা অতীত, সেদিন চলে গেছে...

অতীত?চলুন আমরা একটু পেছনের সেই দিনগুলো থেকে একটু ঘুরে আসি।সেটা এখন থেকে প্রায় চারমাস আগের কথা।

টানা তিনদিনের জ্বরে ছেড়ে বিছানা থেকে উঠল তন্বী। সময়টা সন্ধ্যা আসি আসি করছে।এই সন্ধ্যার সময়টাতে মন কোন কারণ ছাড়াই ভয়ানক খারাপ লাগতে থাকে। বাসায় থাকলেও এমন হত।এখন হল-এ থাকে বলে মন খারাপ ভাবটা কম টের পায় তন্বী।কারণ,এখানে নিজের কাজ নিজে করে নিতে হয়,মন খারাপের অতটা সময় নেই।

গ্যাস্ট্রিকে মুখ টক হয়ে আছে। একটা নাপা আর গ্যাস্ট্রিক এর ট্যাবলেট খেয়ে নিতে হবে।প্রচন্ড খিদে খিদে লাগছে।জ্বরের কারণে কোন রুচি ছিল না।না ছিল মুখের স্বাদ। উফ।এখন আবার নাস্তা রেডি করা,কি ঝামেলা!হিটারে নুডুলস রাধবার জন্য গরম পানি বসাতে বসাতে মনে পড়ে গেল সামনের উইকে কয়েকটা ক্লাসটেস্ট।কোন টার জন্যই প্রিপারেশান নেয়া হয়নি। মনে হচ্ছে,জ্বরে পড়ে থেকে দুনিয়াদারী ভুলে ছিল,এইতো বেশ ছিল।

হাবিজাবি চিন্তা করতে করতে তন্বী নুডুলস বসাল।এই একটা জিনিস যেনতেন ভাবে রেঁধে ফেললেও খাওয়া যায়।সাথে হাল্কা মশলা,আর একটা ডিম ছেড়ে দেয়া ,ব্যস। তন্বীর রান্নার বেশ নামডাক এই রুমে এবং অনেকের কাছেই। ওর রান্না খাওয়ার জন্য অনেকেই আসে,ওর ক্লাসমেট, এমনকি সিনিয়ার আপুরাও।তন্বী-ও যা পারে সাধ্যের মধ্যে রেঁধে খাওয়ানোর চেষ্টা করে। সেবার ঈদের ছুটিতে মায়ের সাথে গরুর মাংস রান্না করে এনে হোস্টেলে এনেছিল,সেই থেকে তন্বীর নামডাক। তন্বী-ও উপভোগ করে ব্যাপারটা ।গুরুত্ব পেতে কার না ভালো লাগে?

-হুম,গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে? এই বসলাম। একটুখানি দিতে হবে কিন্তু...তূর্ণা আয়েশ করে ওর বিছানার উপরে তন্বীর রান্না দেখতে থাকে।

-চা টা তুই করে খাওয়াবি তাহলে।

-ওকে ,আমার বিস্বাদ চা মুখে নিতে পারলে কোন আপত্তি নেই আমার।
তূর্ণার পাশে মৌরিও এসে বসে।ওরা একই রুমের বাসিন্দা। মৌরির ঢাকায় বাসা আছে।তবু মেয়েটা কেন হোস্টেলে থাকে তন্বী বোঝেনা।সম্ভবত ওর সেই প্রেমিকটার সাথে ঘুরাঘুরি করতে সুবিধা হয় বলে।মৌরির প্রেমিক কে দেখেছে তন্বী।মৌরি আলাপ করিয়ে দিয়েছিল। তূর্ণা আবার একই সাথে দুই-তিনজন ছেলের সাথে কথা বলে।কোনপ্রকার সম্পর্কে যেতে ও রাজি না।তন্বী এসবের মধ্যে নেই। শুধু ওদেরকে দেখে যায়। তবে, হঠাৎ হঠাৎ ভাবে,এরকম কেউ একজন তার থাকলে মন্দ হত না...এভাবে রান্না করে সেরকম কেউ থাকলে খাওয়াত ও।

নুডুলস বাটিতে নিয়ে নিয়ে ওরা তূর্ণার বিছানায় গোল হয়ে বসে। তূর্ণা-ই একমাত্র গোছালো এই রুমে।ওর ঝকঝকে পরিষ্কার বিছানায় আরাম করে ওরা তিনজন বসে গল্পে মেতে উঠে।বেশিরভাগই ক্লাসের কোন টীচার কেমন?অমুক স্যার দেখতে বেশ সুন্দর,ঐ ছেলেটা এত বোকা।ঐ মেয়েটা হেন –তেন ইত্যাদি নানাপ্রকার আলাপ
... মৌরির ফোন আসে। ফোনটা কানে দিয়ে বারান্দায় চলে যায় ও। ঘন্টা খানেকের আগে ওর কথা বলা শেষ হবে না। আর,তূর্ণা তো আছেই সারাক্ষণ নেটে। একইসাথে চালাচ্ছে দিগবিদিক।

এসব দেখতে দেখতে তন্বী ভাবে।ও আর কি করবে? নিজের মোবাইল টা টিপতে টিপতে মেসেজের ইনবক্সে আজকে দুপুরে আসা মেসেজ টা ওপেন করে।

এই মেসেজ টা কম করে হলেও বিশ বার পড়ে ফেলেছে এরমধ্যে।সাধারণ একটা মেসেজ,তাতে উচ্ছসিত হবার তেমন কিছু লেখ নেই।একজন অসুস্থ মানুষের সুস্থতা কামনা করে মানুষ যে কয়েকটি কথা বলে সেরকম দুই-তিন লাইনের গুছানো কিছু কথা দিয়ে একটা মেসেজ। এই মেসেজটাই কোটেশান থেকে শুরু করে কোটেশান পর্যন্ত বিড়বিড় করে নিজের মনে পড়ে তন্বী।যতবার পড়ে প্রতিবারই ভালো লাগে। এই মেসেজের রিপ্লাই কি হতে পারে? রিপ্লাই এখনো দেয়া হয়নি।“থ্যাঙ্কস” লিখে পাঠিয়ে দিবে?এটা কেমন কথা?শুধু থ্যাঙ্কস?ভাবো তন্বী,ভাবো।সুন্দর করে কিছু লিখ।উফ।কি লিখবে তন্বী। ভেবে কুল পায় না। সেই অচেনা শুভাকাঙখীর কথা ভাবতে ভাবতেই অসময়ে ঘুমিয়ে পড়ে।

####

ভাইয়া,দেখেন।ম্যাথটা হয়েছে?

ছাত্রের হাত থেকে খাতাটা নিয়ে চোখ বুলাতে থাকে। ক্যালকুলাসের মত সহজ এই বিষয়টাকে বুঝাতে গিয়ে হিমশিম খেয়ে যাচ্ছে অয়ন।ক্যলকুলাস ওর ফেবারিট টপিক্স ছিল ইন্টারে। কিন্তু,এই ছেলেটাকে গতদুইদিন ধরে মাথায় ক্যালকুলাস ঢুকাতে ওর ঘাম ছুটে যাচ্ছে।এটার দায় অবশ্য খানিকটা অয়নের নিজেরই।কয়েকদিন ধরেই অয়ন টের পাচ্ছে সে পুরো মনোযোগ দিতে পারছে না কোন কাজে ।এই কিছুক্ষণ আগেও ছাত্রকে ম্যাথ বুঝাচ্ছিল মুখে কিন্তু মনে মনে ভাবছিল অন্য কথা।

“আহ,রাফি!কি করছ এগুলো...তোমাকে তো আমি একঘন্টা ধরে একটা জিনিস বুঝালাম,আর ঠিক উলটো টা করেছ তুমি! দেখি খাতাটা এদিকে দাও”

খাতা নিয়ে খসখস করে কয়েকটা সূত্র লিখে অয়ন উঠে দাঁড়ালো।
“এই সূত্র গুলো ভালোমত মাথায় ঢুকাও আগে।আমি আজকে একটু তাড়াতাড়ি বের হচ্ছি,কাজ আছে।কালকে এসে তোমাকে দেখিয়ে দিব”

রাস্তায় নেমে মিনিট পাঁচেকের মত হেঁটে মেইনরোডে উঠল অয়ন।রাত সাড়ে আট টা। মোড়ের উল্টোদিকে চলে গেল। এখান থেকে বাসে উঠে যাবে।বৃষ্টির রাত।অন্যদিনের মত লোকজনের চলাচল নেই।

কোণের চা-সিগারেটের দোকানটায় গিয়ে ঝিরঝিরে বৃষ্টি থেকে মাথাটা বাঁচাল।ছাতা নেই সাথে। একটা সিগারেট নিল। ঝিরঝির বৃষ্টি।একটানা অনেকক্ষণ ধরে বৃষ্টির ফলে রাস্তা ঘনকালো রঙ ধরেছে। গাড়ির হেডলাইটগুলো রাস্তার সেই আলোয় হলদে প্রতিবিম্ব ফেলে সাঁই সাঁই ছুটে যাচ্ছে।ওর রুটের বাস এসে গেছে।লোক নেই তেমন। বাস টাতে চাইলেই উঠা যেতে পারে,কিন্তু,আরাম করে সিগারেট শেষ না করে উঠার কোন মানে হয় না।বাস তো আরো আসবে।

দোকানের নড়বড়ে টুলটার একপাশে আরাম করে বসে অয়ন।ধোঁয়া ভাল করে মুখে না নিয়ে ধোঁয়া ছেড়ে দিচ্ছে।

আচ্ছা,এমন ও তো হতে পারে ও যেই মেসেজ টা দিয়েছে সেটা পৌঁছয়নি।মেসেজ দেখেইনি সে।মোবাইল অপারেটরগুলো যে এত ফালতু হয়ে যাচ্ছে দিনকে দিন। কিন্তু মেসেজ টা সেন্ট হয়ে আছে।নিশ্চয়ই মেসেজ টা ও পড়েনি।সারাক্ষণ কি আর মোবাইল পাশে নিয়ে পড়ে থাকবে? আরো তো কত কাজ আছে, আর সে মেসেজ কোন প্রশ্ন-ই করেনি ,সুতরাং মেসেজের রিপ্লাই না দিয়ে থাকলেও কিছু বলার নেই।

কল দিবে? কল দিয়ে কি বলবে?যে মেয়ের সাথে সামনাসামনি কোনদিন কথা হল না।এভাবে আচমকা ফোন দেয়াটা হ্যাংলামি মনে হয়।আর তাছাড়া মেয়েদের সাথে তেমন কথা বলার অভ্যাস-ই ওর নেই।এটা একধরণের মেয়েদের সাথে না মেশার ই ফল।

ছোট থেকে বয়েজ স্কুলে পড়েছে।কলেজ কো-এডুকেশান থাকলেও অতটা মেশামিশি ছিল না।যার কারণে মেয়েদের সাথে কথা বলতে গিয়ে নার্ভাস হয়ে পড়ে অয়ন।আর সুন্দরী হলে সেটা আরো বেশি প্রভাবিত করে,তন্বীকে প্রথম যেদিন দেখেছিল ও,সেদিনের কথা ওর স্পষ্ট মনে আছে ওর।

ভার্সিটিতে ফার্স্ট সেমিস্টারের এডমিশান ফী জমা দেয়ার শেষ দিন ছিল।লাইনে দাঁড়িয়ে চুপচাপ অপেক্ষা করছিল অয়ন।হঠাৎ সামনের মেয়েটি তার দিকে পেছন ফেরে,লাইনে দাঁড়ানোর ফলে ওদের মধ্যে দূরত্ব তেমন ছিল না।মেয়েটির একরাশ চুল হঠাত-ই অয়নের মুখে এসে লাগে। অদ্ভূত সুন্দর একটা স্নিগ্ধ গন্ধ...”একটা কলম হবে,প্লিজ”।

“হ্যাঁ,হ্যাঁ”বলেই অয়ন প্যান্টের পকেট,শার্টের পকেট হাতড়াতে থাকে।তারপর মুখটা সকরুণ করে মেয়েটির দিকে তাকিয়ে বলে-“স্যরি...”

মেয়েটা একটু বিরক্ত হয়ে লাইনে আর কারো কাছে কলমের জন্য জিজ্ঞাসা করতে থাকে।মনটাই খারাপ হয়ে যায় অয়নের।মেয়েটা বিরক্ত হয়েছে।

সেদিন রাতে বিছানায় শুয়ে মেয়েটির কথা ভাবতে শুরু করে।কি নাম তার?খুব অল্পসময়ের জন্য মেয়েটার চেহারা নজরে এসেছিল।ওদের ভার্সিটিতেই কোন ডিপার্টমেন্টে এডমিশান নিচ্ছে।চুলগুলো ওর নাকে-মুখে এসে লেগেছিল,গন্ধটা ঠিক এখনো অনুভব করতে পারছে।অয়নের একুশ বছর বয়সের হৃদয়টা যেন এই গন্ধে-আবেশে আকুল হয়ে উঠল।সাথে যদি কলমটা থাকত,মেয়েটাকে আরেকটু ভালভাবে খেয়াল করা যেত।

প্রথম যেদিন ওদের ডিপার্টমেন্টের ওরিয়েন্টেশান ক্লাস হল,অয়ন অনেকের ভীড়ে খেয়াল করল সেই লাইনের সেই মেয়েটিই ।হাসছে,কথা বলছে,মাথা নাড়ছে। অয়ন অবশ্য মেয়েটিকে দেখতে দেখতে নিজেকেই নিজে শাসন করে,ওর দিকে চেয়ে লাভ নেই অয়ন।ও তোমার দিকে ফিরে তাকাবে না।তবু,মনে যে একবার বাসা বেঁধেছে সেটা অগ্রাহ্য করবার মত সামর্থ্য অয়নের হয়না......বাস এসে গেছে।হাতের সিগারেট-ও শেষ। সিগারেটের ফিল্টার টা রাস্তার কোণায় ছুঁড়ে ফেলে উঠে দাঁড়ায়।দাম মিটিয়ে বাস ধরার জন্য এগিয়ে যায়।বৃষ্টির তোড় বাড়ছে।বাসে উঠে যেতে হবে ।

####
প্রিপারেশান মোটেই ভালো ছিলনা।গতকাল অনেক চেষ্টা করেও পড়ায় মন বসাতে পারেনি। দেখাদেখি করে ক্লাস্ট টেস্ট গুলো দিয়ে ফেলেছে তন্বী।মোটামুটি একটা মার্ক্স পেয়ে গেলেই চলবে।

সকালে নাস্তা করে আসেনি দেখে এগারোটার দিকে পেট টা খিদেয় নড়ে উঠছে।সায়মা কে নিয়ে তন্বী ক্যান্টিনের উদ্দ্যেশ্যে হাঁটছে। হাল্কা কিছু খেতে হবে।নাহয় পরে দুপুরে ভাত খাওয়া যাবে না।দুইটা সিঙ্গারা আর চায়ের অর্ডার দিয়ে সায়মা আর তন্বী বসল।

আচ্ছা,সায়মা,অয়ন নামে আমাদের ক্লাসে কেউ আছে নাকি?
-কি নাম বললি?অয়ন?আছে তো।কেন?
-না, এমনি,একটু দরকার ছিল।আচ্ছা,এই উইকের বাকি ক্লাসটেস্টের মেটেরিয়ালস গুলো লাগবে।যোগাড় করে দিস।
-ঠিকআছে।ক্লাস শেষ হলে ফোটোকপির দোকান হয়ে যাব আমরা তাহলে।

গতকালকের সেই মেসেজ টার কথা মনে আবার ভাবছে তন্বী। “... ইতি,তোমার শুভাকাংখী,অয়ন” মেসেজ টার রিপ্লাই দেয়াহয় নি। ডিলিট হয়ে গেছে।মেসেজ টা থাকলে বের করে পড়ত আবার।ও যা অনুমান করেছিল তাই। ছেলেটা ওদের ক্লাসেরই তাহলে। অয়ন,অয়ন – নামটা মনে মনে বিড়বিড় করে। সায়মার চোখে চোখ পড়ায় হাসে।

-চল,দেরি হয়ে যাবে আবার। ম্যাথক্লাসে দেরিতে ঢুকলে এটেন্ডেন্স নিবে না।

সায়মা একমনে বোর্ড থেকে ডীফারেন্সিয়াল ইকুয়েশানের ম্যাথ খাতায় টুকে নিচ্ছে। তন্বী সায়মাকে পাশ থেকে ডাক দেয়,অয়ন টা কোনজন?দেখিয়ে দে। ক্লাসের ছেলেরা যেখানে বসে আছে,সেকেন্ড বেঞ্চের দিকে নির্দেশ করে সায়মা। তন্বী মাথা ঘুরিয়ে দেখল।

- ঐ যে সাদা শার্ট,চুল বড় বড় ছেলেটা
- চোখে চশমা?
- হ্যাঁ...

তন্বী মাঝে মাঝেই মাথা ঘুরিয়ে দেখতে থাকে।ওরা যেই সারিতে বসেছে তার এক সারি সামনে । এই তাহলে অয়ন? তার অসুস্থতার কথা জানল কী করে? জেনেছে হয়তবা।কারণ,তন্বীর চেহারা আর দশটা মেয়ের মাঝে চোখে পড়ার মত।তার কন্টাক্ট নাম্বার,ডিটেইলস বেশিরভাগ ছেলেরই জানা থাকার কথা।

ক্লাস শেষ হয়ে গেল।ক্লাস ভাংলে একটা গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে।সেই গুঞ্জনের মাঝে একবার ছেলেটির দিকে তাকালো।আশ্চর্য্য তো।ছেলেটা একবারো এদিকে তাকালো না।তন্বী ভেবেছিল- তাকে খেয়াল করবে নিশ্চয়ই ছেলেটি। বাহ,গতকাল মেসেজ দিলো,আজকে খুব ভাব ধরেছে মনে হচ্ছে ছেলেটা।মেসেজের রিপ্লাই না পেয়েই খুব ভাব?রিপ্লাই পেলে যে কি করত?হায় আল্লাহ!ছেলেদের একটা ধারণা আছে ,মেয়েদের সাথে ভাব নিলে খুব সহজেই মেয়েদের পটানো যায়।এই অয়ন নামের ছেলেটাও মনে হয় একই কারণে ভাব নিচ্ছে।নিচ্ছ নাও,তোমার সাথে কথা বলে আমার আর কাজ নেই।

ও এসেছে।ও এসেছে...মনে মনে অয়ন নিজেকেই বলে উঠে।গত দুইদিন যাবত ওর মনে একটা কালোমেঘ জমাট বেঁধেছিল,সেটা আজকে সরে গিয়ে যেন রোদ ঝলমল করে উঠল। ক্লাস শুরুর পর থেকে তন্বীকে একমনে খেয়াল করেছে অয়ন।

অসুখ থেকে উঠেছে ,দেখতে রোগা মনে হল খানিকটা অয়নের কাছে।রোগা হোক,ওকে দেখতে আগের মতই স্নিগ্ধ আর সুন্দর দেখাচ্ছে।একটা সাদা ড্রেস,কানে বেশ বড় জোড়াদুল।অয়ন ছবি আঁকতে জানে না।নাহলে তন্বীর একটা প্রাণবন্ত ছবি এঁকে ফেলত।তাই মনে মনেই ও ছবি আঁকে।একটা সাদা ক্যানভাস।সেখানে ভ্রমরকালো দুটি চোখ।লম্বা আর ভারি চোখেরপাপড়ি,অয়ন কবিতা লিখতে পারেনা।তবু,ইচ্ছে করে একটা কবিতা লেখে।
“দুটি মুহুর্ত তুমি তাকিয়েছিলে
আমার দিকে,আর সেদিন থেকে আমি যেন কবি হয়ে গেছি”
নিজের মনে কবিতা তৈরি করে নিজেই হেসে ফেলে অয়ন।

তন্বী ক্লাসে ঢুকার পরপরই সারা ক্লাসে একটা গুঞ্জন পড়ে যায়। ছেলেরা ভাল-মন্দ কত মন্তব্য করে।কিন্তু অয়ন একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে একটা অবাস্তব কল্পনায় ডুবে যায়,সেখানে তন্বীর হাত ধরে অয়ন রাস্তায় হাঁটে।অয়নের নাকে তন্বীর সুগন্ধ এসে ঝাপটা মারে।

আচ্ছা,এতসব ভাবা কি পাপ?অন্যায়? ওতো আর দশটা ছেলের মত অরুচিকর মন্তব্যে মেতে উঠছে না।মাঝে মাঝে মনে হয়,এটা ঠিক না।তন্বীকে নিয়ে অয়ন যা ভাবে,কিন্তু ওর যে ভাবতে খুব ভালো লাগে।খুব।
#####

শুক্রবার মানেই অফুরন্ত শান্তি। ক্লাস নেই,তাড়া নেই। সকালে দেরি করে ঘুম থেকে ওঠো। কোথাও যাবার তাড়া থাকলে ঘুমটাও ঠিক মত হতে চায় না ,দেখাগেল ক্লাস আছে দশটার দিকে।সাতটার পরপর-ই ছটফট করতে থাকে,এই মনে হয় সময় হয়ে গেল।

আজকে শুক্রবার অন্যান্য শুক্রবারের চেয়ে অনেক আলাদা,অনেক। ছোটবেলায় যখন তন্বী স্কুলে পড়ত,একেকটা শুক্রবার মনে হত মহামূল্যবান-কারণ সেদিন মায়ের বকুনি খেয়ে স্কুলে যাবার জন্য তাড়াহুড়ো পড়ে যেত না,ধীরেসুস্থে ঘুম থেকে উঠত।বাবা সেদিন ঘরে থাকতেন। প্রায়ই তন্বীকে নিয়ে সকালে মাঠে নিয়ে ঘুরিয়ে আনতেন,বিকালেও ঘুরতে যেতেন এদিক-সেদিক।বড় হতে হতে এই আবেদন,আনন্দ গুলো কত ম্লান হয়ে গিয়েছে।কিন্তু,অনেক দিন পর আজকে তন্বীর মনে হচ্ছে সে যেন সেই আট-ন’বছরের ছোট মেয়ে,তার মনে কোন এক অজানা কারণে প্রচুর আনন্দ-প্রচুর। খুব খুশি খুশি।

তূর্ণার পিসিতে হাই ভল্যুমে হিন্দিগান বাজছে।অন্যসময় হলে তন্বী বিরক্ত হয়ে ধমক দেয়,কিসব গান শুনিস এইসব?এত রোমান্স কোথায় পাস?আজকের কথা আলাদা,আজকে ওর বরং ভালই লাগে।
দুপুরে খাওয়াদাওয়ার পর গোসল সেরে রেডি হয়ে গেল। তিনটার পর বের হবে।সেজেগুজে বসে আছে।

মোবাইলে সময় দেখল,দুইটা চল্লিশ।হোস্টেল থেকে বের হয়ে গেল।বসে থাকতে আর ভালো লাগছে না।

সন্ধ্যার পর হোস্টেলে ফিরলে তূর্ণা-মৌরি ঘিরে ধরল তন্বীকে। মৌরির প্রেম অনেকদিনের,তূর্ণা যদিও অনেকের সাথেই কথাবলে,মেশে কিন্তু প্রেম করেনা,তাই তন্বীর কথা শোনার জন্য ওর আগ্রহই বেশি।

যদিও অয়নের সাথে ক্লাসে প্রতিদিনই দেখা হয়,টুকটাক কথাবার্তা চলে।তবু,দুজনের একসাথে দেখা করার আজকের অভিজ্ঞতা তন্বীর মনে-প্রাণে দোলা দেয় খুব। এই যে,ও আজ সারাদিন ভেবেছে কী পরে যাবে,সাদা-লাল,নাকি সবুজ রঙের জামা।কানে কি দুল পরবে না পরবে না?এইযে অয়নকে ও নিজের করে কিছু মুহুর্তের জন্য পাওয়া,আর সেজন্য নিজেকে সাধ্যের মধ্যে উপস্থাপন করার যে প্রক্রিয়া,এগুলোর নেপথ্যে টুকরো টুকরো ক্ষুদ্রক্ষুদ্র অনুভূতি জড়িয়ে থাকে,এগুলো মিলেই তো হয় প্রেম।সেই অর্থে আজকে যেন ওদের প্রেমের পর্দা উঠল।অয়ন আর তন্বীর।

বাহ!ছেলেটা তো বেশ রোমান্টিক আছে,নাকি,তন্বীর হাতে ধরা একগুচ্ছ গোলাপ নিজের হাতে নিয়ে শুঁকতে শুঁকতে বলল তূর্ণা।

গোলাপ ছাড়া আর কি কি দিল রে- মৌরি যে অর্থে কথাটা বলল,সেটা ওর চোখ টেপার ভঙ্গিতে বুঝে গেল তন্বী।

তূর্ণা কেবল বলল- গোলাপ দিয়েছে আর কি দিবে রে?আমাকে যদি কেউ এতগোলাপ একসঙ্গে দিত!

-খুব সিগারেট খায়।এই সময়ের মধ্যেই তিনচারটা খেয়ে ফেলেছে।
-ঝাড়ি দিবি।প্রেম করলে তো ঝাড়ি দেয়া মাস্ট-মৌরি বলে।

তূর্ণা শুনছিল।তারপর বলল-ঝাড়ি দিবি কেন?ছেলেরা সিগারেট খেলে আমার খুব ভাল লাগে।পোড়া তামাকের কড়া গন্ধটা বেশ লাগে।

-কয়টা সিগারেট খেয়েছিস?
-আমি খাবো কেন?বাবা খায়।

এইসব নানারকম কথা-বার্তায় রাত বাড়তে থাকে। তন্বীর একটা আনন্দময় স্মৃতিময় দিনের শেষে নিজেকে মনে হতে থাকে হাওয়ায় ভেসে উড়ে যাওয়া কোন মেঘের অংশ।এই বুঝি প্রেম!

বিকেলে বিছানায় শুয়ে ছিল তন্বী। ঘুম বেশিক্ষণ হয়নি।আলস্যে ভরে আছে শরীর-মন। হঠাৎ মৌরি এসে বলল,চল তোদের নিয়ে ফুচকা খেতে যাবো।

তূর্ণা ঘুমিয়ে ছিল,কিন্তু সেই বলে উঠল- ফুচকা?ওয়াও,উপলক্ষ কিরে?

-উপলক্ষ আর কিরে; ছোটভাই এ+ পেয়েছে,এখন সেই খুশিতে তোদের কে খাওয়াবো

বিছানায় উঠে বসতে বসতে তন্বী বলল- ও,তোর সেই পিচ্চি ভাইটা,ভুলেই গিয়েছিলাম।
-এ+ পেয়েছে,ফুচকা টুচকা খাওয়াবি কিরে?চাইনিজ খাওয়া
-ইস! যেন ভাইয়ের বিয়ে!টাকাপয়সা হাতে নেই বেশি,আর এখনকার এ+ পেয়ে চাইনিজ খাওয়ানোর কোন মানে হয় না।গন্ডায় গন্ডায় পাওয়া যায়,চল।বের হই।

ফুচকার প্লেট আসতে সবাই হামলে পড়ল। খিদা লেগেছে যে খুব এমন না।

-তূর্ণা,এতদিন দেখতাম মোবাইল নিয়ে সারাদিন তুই বিজি থাকতি,এখন দেখছি তন্বী তোকে হারিয়ে দিবে।

মৌরির কথা শুনে হাসে তূর্ণা- ওর তো নতুন নতুন প্রেম।হারাবেই তো।

মোবাইল টা দেখতে দেখতে ওদের দিক তাকালো তন্বী- আসলে তোরা যা ভাবছিস তা না,অয়ন না...
-মানে?পরকীয়া শেষমেশ!
একগাল ফুচকা মুখে নিয়ে চোখ বড় বড় করে তাকাল মৌরি।ওর মুখের অবস্থা দেখে হেসে ফেলল তন্বী।কিছু বলল না।

-এই তন্বী! ফাজলামি করছিস ,না?
তন্বী মাথা নাড়ল,এপাশ-ওপাশ ।ফাজলামি করছে না।তারপর,ওদের আগ্রহের মুখে নিজেই মোবাইল টা ওদের দিল। প্রথমে তন্বী ,তারপর মৌরি।

-এসব কি রে?জীবনানন্দ বেঁচে উঠল নাকি?
-মনে তো হচ্ছে।আচ্ছা বাদ দে।চল চা খাই,ফুচকা –র সাথে চা না হলে জমে না। চা’টা আমিই খাওয়াচ্ছি...
‘তুমিহীনা একএকটি দিন
আমার কাছে নরক সম
তিমির রাত্রির গহীন নিস্তব্ধতায়
...... কবিতাটা পড়তেই থাকে তূর্ণা।ইস,আমাকে এমন করে কেউ লিখে না রে।

########
নুডুলস চেটেপুটে খেয়ে নিল অয়ন।
সামনে বসে বসে সবটা দেখল তন্বী।খাওয়ার পরে চামচ,বাটি পানি দিয়ে ধুয়ে ঢুকিয়ে নিল ব্যাগে।এখন দেখা হলেই টুকটাক এটা-সেটা রান্না করে খাওয়ায়। এত রান্না আগে ও জানতো না,এখন শিখে নিচ্ছে,অয়নকে খাওয়াতে বড় ভাল লাগে। অয়ন বেশ মজা করে খায়।

খাওয়ার পর একটা সিগারেট ধরাল অয়ন। লম্বা একটা টান দিয়ে তন্বীর দিকে তাকালো।

-ভাল হয়েছে খুব।নুডুলস টা।
-আচ্ছা - খুশি হ্ল তন্বী।
- কি ?কি দেখছ? ধোঁয়া ছেড়ে দিতে দিতে অয়ন বলে।
-তোমাকে। আচ্ছা,কবিতা শুনবে ?
-কবিতা? কার কবিতা?
-দাঁড়াও শুনাই।আগে শুনো

‘তুমিহীনা এক একটি দিন
আমার কাছে নরক সম’-বলতে বলতে তন্বী ভাবল।এটা কি করছে সে? কার না কার কবিতা মেসেজে পড়ে সেই কবিতাই এখন অয়নকে আগ্রহ নিয়ে শোনাচ্ছে।লজ্জা পেয়ে গেল নিজেই।

-তারপর? অয়ন বলে।
তন্বী নিজের বিব্রত ভঙ্গি লুকোয়- ওহ!বাকিটা কি যেন ছিল,ভুলে গেছি।
-অয়ন তন্বীর হাত নিয়ে চুমু খেল সেই হাতে,বলল-কোন সমস্যা নেই।যতটুকু শুনিয়েছ তাই ভাল লেগেছে,কি জানি বলেছিল,তুমিহীনা...
মনে মনে নিজেকে ভর্ৎসনা করল তন্বী,বেশ কয়েকটা কবিতা আছে ইনবক্সে তার,সবগুলোই ডিলিট করে দিতে হবে(চলবে)
বুধবার বিকেলে ফোন এসেছিল বাসা থাকে।তারপরই অস্থির হয়ে গেল তন্বী।বাসা থেকে বলছে তেমন কিছু হয়নি।কিন্তু,তেমন কিছু না হলে ফোন দিয়ে বাসায় যেতে বলবে কেন?মার কিছু হয়ে গেলে তন্বীর কি হবে।সেদিন বিকেলেই অয়ন ওকে বাসে তুলে দিল। নারায়ণগঞ্জ শহরে তন্বীর বাসা। যেতে আসতে বেশি সময় লাগে না,অয়ন চেয়েছিল ওর সাথে আসতে।তন্বী আসতে দেয়নি।

এইবার প্রায় একমাস পরে বাসায় আসা। অনেক ভালো লাগছে তন্বীর। তিন-চারদিন থেকে যাবে। মা এখন মোটামুটি সুস্থ। প্রেসারের রোগী,বাথরুমে মাথা ঘুরে পড়ে গিয়েছিলেন। বেশি আঘাত পান নি।

নারায়ণগঞ্জের এই বাসাটা ছেড়ে ঢাকায় চলে যাবার চিন্তা-ভাবনা করছে তন্বীরা।ছোট ভাইটি সামনে এস,এস,সি পরীক্ষা দিয়ে ফেললে সবাই মিলে চলে আসবে ঢাকায়।

রান্নাঘরে উঁকি মারল তন্বী,মা মসলা করছেন।
-কি রাঁধবে মা?
-কালাভুনা,খাবি না?

এটা তন্বীর প্রিয় খাবার।–খাবো মা,অনেকদিন খাই নি। এবার তোমার সাথে দেখে শিখে নিব। আচ্ছা,মা পরিমাণে একটু বেশি করে বানিও,হোস্টেলে নিয়ে যাবো।
-আচ্ছা,রুমমেট দুইজন না?একজন তূর্ণা আর একটা মেয়ে আছে না?
-হ্যাঁ,মৌরি ।–আসলে, তন্বী নিয়ে যাবে অয়নের জন্য,অয়নের কথা মনে পড়ায় ওকে ফোন দিতে চলে গেল বারান্দায়।

-কালকে চলে আসবে?কখন বের হবে?
-সকালেই।মন ভালো না।
-আন্টি সুস্থ?
-হ্যাঁ।এখন ভালো।কিন্তু, আসতে ইচ্ছে হচ্ছে না।
-আচ্ছা, তাহলে,দেখা করি কাল।মন ভালো হয়ে যাবে না আমার সাথে দেখা করলে?-অয়ন বলে।
-সেটা তো হবে।আচ্ছা,তুমি কালাভূনা খাও?
-সবই খাই।কেন?খাওয়াবে নাকি...
-হুম,আমি রান্না করছি,মানে মা করবে,আমিও করব। এই রাখি,মা আসছে-বলে ফোনটা কেটে দিল।

ইনবক্সে মেসেজ।সেই অচেনা কবি। ডিলিট করে দেয় সব মেসেজ ,কিন্তু পড়ার আগে একবার করে পড়ে।আজকে কী পাঠিয়ছে কবি?
‘গত কদিন ধরে তোমাকে ক্লাসে দেখছি না,কিছু হয়েছে তোমার –ইতি তোমার শুভাকাঙ্খী অয়ন’

মানে কি?অয়ন কেন এই মেসেজ পাঠাবে?ফান করছে?সাথেসাথে অয়নকে ফোন করল তন্বী,না,অয়ন এরকম কিছু মেসেজ পাঠায়নি।নিশ্চয়ই,কেউ ফাজলামি করছে।

এইরকম একটা মেসেজ-ই তো সেদিন অয়ন দিয়েছিল।অনেকটা এরকম,যখন জ্বরে পড়েছিল।সেদিন,সেই মেসেজ টা যে কতকতবার পড়েছিল তন্বী।ইতি তোমার শুভাকাংখী অয়ন। সামান্য কয়টা কথা তার মনে অয়নকে একটা অন্যরকম স্থান এনে দিয়েছিল।সেই থেকেই তো শুরু বলতে গেলে। আজকে এইরকম করে কে পাঠালো?কৌতূহল মিটিয়ে ফেললেই হয়। নাম্বারটা বের করে ফোন করল। রিং হচ্ছে। ধরল না। আবার করল। ধরল না। মনে হয়,ভয় পেয়েছে।

আবার মেসেজ।এইবার ভাবল না পড়েই ডিলিট করে দিবে।তারপরো পড়ল-‘কথা বলব না,আমি তোমার শুভাকাঙ্খী। তোমার সাথে প্রথম দেখা হবার পর থেকেই ...। –অয়ন’

কে এই অয়ন?
বেশ কয়েকবার চেষ্টা করল তন্বী। রিসিভ করল।ব্যাপারটা ক্লিয়ার হল। ছেলেটি তাদের সাথেই পড়ে।নাম বলছে রাফিদুল ইসলাম।এই নামে কাউকে চিনে না তন্বী।অবশ্য কত ছেলেই তো আছে,সবার নামধাম তো আর জানা থাকবার কথা না, ছেলেটির কথা শুনে মনে হল না মিথ্যে বলছে।
তবে,একটা প্রশ্ন ছিল তন্বীর,কেন তার প্রেমিক মানে অয়নের নাম দিয়ে মেসেজ দিচ্ছে সে? ছেলেটির কাছে জানতে চাইল,তার নাম না লিখে অয়ন নাম লিখেছে কেন?

-আমার নাম অয়ন।
বিরক্তিতে ভ্রু কুচকে গেল তন্বীর।আগাগোড়া ফাজলামি করছে এই ছেলে?- অয়ন মানে?

-হ্যাঁ,ডাকনাম অয়ন। এই নাম কেউ জানে না। ভালো নামটাই জানে সবাই। তোমাদের সাথে সাদিয়া যে আছে,ও আমার এলাকার,ওকে জিজ্ঞেস করো।
তন্বীর মনে হল কোথাও একটা বিরাট গন্ডগোল হয়েছে। ওর মাথাটা হাল্কা ঘুরে উঠল

-আচ্ছা,তুমি কি অনেকদিন আগে কোন মেসেজ দিয়েছিলে?
-আমি তো প্রায়ই দেই,বিরক্ত হও ?
এসব কানে আসছে না তন্বীর,ওর জানা দরকার।সেদিনের সেই মেসেজ টা কে দিয়েছিল আসলে?

-আচ্ছা,একটা ব্যাপার জানার ছিল।অনেক দিন আগে আমার মোবাইলে একটা অপরিচিত নাম্বার থেকে মেসেজ এসেছিল।তারপর মেসেজ টা বলল তন্বী ,মুখস্ত থাকে কয়েকটা লাইন।–এটা কি তুমি দিয়েছিলে?

তন্বী মনে প্রাণে চাইছিল উত্তর যেন না হয়।
-হ্যাঁ,আমি দিয়েছিলাম।
ব্যস,ফোনটা রেখেদিল।সবকিছু উলটপালট হয়ে গেল।

বারান্দা দিয়ে নীচের লোকজনের আসা-যাওয়া দেখছে। কেন এমন হল? গত চারমাস ও অন্য একজনের সাথে প্রেম করেছে।অয়ন নামে যে ছেলেটির সাথে ওর প্রেম,সে আসলে ওই অয়ন নয়।যে অয়ন কে মনে মনে ভেবেছিল সেদিন রাতে,যার একটি সামান্য মেসেজ তন্বীর মনে আজো ভালোলাগার আবেশ দিয়ে যায়,সেইদিনের সেই অতুলনীয় অনুভূতি যে তার আজকের উত্তাল প্রেমের দিনগুলির প্রতি পরতে পরতে মিশে আছে। ঘৃণা হচ্ছে নিজেকে। যার সাথে প্রেম করে আসছে, সে কে?সে তো আসলে কেউ নয়।তাকে নিয়ে তো ভাবেনি ঐ রাতে সেদিন।এখন কী করবে? সূর্য ডুবে যাচ্ছে একটি দিনের শেষে। চোখটা বন্ধ করে সূর্যের আবীর মাখা রঙে নিজের শরীরমন উজাড় করে দিয়েছে তন্বী।
(সমাপ্ত)

মন্তব্য ১ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ৩০ শে জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ৮:৪৩

নিলু বলেছেন: বাপরে বাপ মিথ্যে ভালোবাসার ইতিহাস এত লিম্বা , লিখে যান

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.