নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আগের অংশঃতারপর-১
ঘুমের মাঝে এপাশ থেকে ওপাশ সরতেই জানালা দিয়ে কড়া রোদের আলো এসে ঝটকা মারলো মুখে।চোখ মুখ কুঁচকে আলস্য ঝেড়ে সিলিং এর ঘূর্ণায়মান ফ্যানের দিকে চেয়ে রইল মাহমুদ।কিছু মুহুর্ত পর তড়াক করে উঠে বসল বিছানায়।
বালিশের পাশে থেকে মোবাইল টা বের করল।সাড়ে দশটা বেজে গেছে! বুধবার আজকে।বিয়ের জন্য টানা পাঁচদিনের ছুটি মঞ্জুর করা আছে তার। হাই তুলে আড়মোড়া ভেঙ্গে নিজের ঘরটা দেখল।এতক্ষণ কেন ঘুমিয়ে ছিল,একটুও টের পায়নি।গতকাল রাতেই ঘুমোতে অনেক দেরি হয়ে গিয়েছিল।শুয়ে পড়ার পরও জেগে ছিল অনেকক্ষণ, মন মেজাজ অতটা ভালো ছিল না।
মাথাব্যথাটা ছিল,এখন চলে গেছে।কপাল টা দু আংগুল দিয়ে চেপে আস্তে আস্তে উঠে ফ্রেশরুমের দিকে গেল।
ভিতরে কেউ আছে।অনেকদিনের একা থাকার অভ্যাস। আরেকজনের সাথে জড়িয়ে গেছে সে এখন।সে এখন রীতিমত ইন্ট্রুডার।ঘুম থেকে উঠে সরাসরি ফ্রেশরুমে না ঢুকলে অস্থির হয়ে পড়ে।দরজা টোকা দেয়া টা ঠিক হবে কি না বুঝতে পারছে না। ভেতরে শাওয়ারের জোরালো শব্দ হচ্ছে। বিরক্তি প্রকাশ করে মনে মনে আবার বিছানায় গিয়ে বসল তানভীর।
একটা প্ল্যান ছিল মাথায় গতকাল রাতে,যেভাবে মেয়েটাকে কিছুকথা বলে বিব্রত করে দিবে ভেবেছিল উলটে মেয়েটির কথাতেই নিজে বিব্রত হয়ে গিয়েছিল। মেয়েটার প্রথম কথাই ছিল- ‘ভালো ব্রান্ডের বডি স্প্রে ইউজ করবেন’। এইজাতীয় কথা জীবনের প্রথম বিয়ের রাতে,বিয়ে করা বউ,হোক সে মাহমুদের কাছে অপাংক্তেয় শুনে মাহমুদ একেবারেই দমে গিয়েছিল।
মাথা টা চট করে গরম হয়ে গিয়েছিল।কোথাকার কে,তাকে এইসব বলছে।পরক্ষণেই নিজেকে শান্ত করে ফেলল। কোনমাত্র বিরূপ ভাব প্রকাশ না করে,সে মেয়েটির কেমন লাগছে,অসুবিধা হচ্ছে কি না,কিছু লাগলে যেন তানভীর কে জানায় ইত্যাদি প্রসঙ্গে চলে গেল। ভেবেছিল,মেয়েটি হয়ত তার সম্পর্কে কিছু জানতে চাইবে,টুকটাক কিছু কথা বলবে।সেই মুহুর্তেই তানভীর একটু একটু করে বুঝিয়ে দেবে সবকিছু। যে মেয়েটিকে তার মোটে পছন্দ নয়। দীর্ঘ রাত তানভীর সেই সুযোগের আশায় দমবন্ধ করে বসে ছিল,অথচ কি আশ্চর্য্য মেয়েটি তার ব্যাপারে বিন্দুমাত্র আগ্রহ প্রকাশ করল না।
একটা সময় মেয়েটার প্রতি মায়াবোধ হতে লাগল,হয়ত মন খারাপ,তাই কিছু বলছে না।তাই তানভীর নিজেই অগ্রবর্তী হয়ে জানতে চাইল-‘কি ব্যাপার?মন ভালো নেই’
মেয়েটি এপাশ-ওপাশ মাথা নাড়ল।নেই।
‘ও,বাসার কথা মনে পড়ছে ,ঠিক না?’
মেয়েটি মাথা নাড়ল।
‘তাহলে?’ –তানভীর একটু বিস্মিত হল।
‘আছে একজন’-মেয়েটা নিচুস্বরে বলল।
তানভীরের সমস্ত শরীরে যেন এসিডের ছেঁকা লাগল। পরক্ষণেই নিজেকে ধাতস্থ করে নিল।আমার কি!-মনে মনে নিজেকে শান্ত করল তানভীর।তারপর,চুপ করে বসে রইল।
ব্রাশে পেস্ট লাগাতে যাবে,খেয়াল হল আরেকটি নতুন অতিথির সংযোগ হয়েছে ব্রাশের কৌটয়। মেয়েটিরই।তারপর নিজের ব্রাশ খানা দাঁত থেকে বের করে পরখ করে দেখল,তারটাই কিনা।
গুনগুন গানের শব্দ আসছে ‘পাগলা হাওয়ার বাদল দিনে’- তোয়ালে দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে বারান্দায় এলো তানভীর।তানভীরের উপস্থিতিতে মেয়েটির কোন পরিবর্তন দেখা গেল না।রোদে চুলগুলো মেলে ধরে সে গুনগুন করে যাচ্ছে-‘চেনাশোনার কোন বাইরে...’
মেয়েটার মাথায় কি গন্ডগোল আছে?নাকি তানভীরকে অগ্রাহ্য করার কৌশল এসব- ভাবতে ভাবতে তানভীর ঘরের ভিতরে আসে।ছুটির দিনগুলো অনর্থক।আরো তিনদিন পরে অফিস। ছুটি বাড়ানো যায়,কমানোও যায়।আগেভাগেই অফিসে জয়েন করবে নাকি?লোকে আবার কি বলবে?থাক... কোনরকমে কাটিয়ে দেয়া যাক কয়টা দিন।
*******************************
ছেলেটাকে প্রথম যেমন অসহ্যবোধ হচ্ছিল,এখন তেমন আর অসহ্যবোধ হচ্ছে না।আবার ঠিক করে বলাও যায় না,কার মনে যে কি আছে কে জানে।তবে আর যাইহোক,অরিত্রিকার মনে হচ্ছে,এই ছেলেটির দ্বারা তার কোনপ্রকার ক্ষতির সম্ভাবনা নেই,ক্ষতি বলতে ছেলেটি যদি অভিযোগ করে বসে নতুন বউ হিসেবে তার আচরণ নিয়ে,ইচ্ছে করেই সে একটি শীতল-রূঢ় ভাব পোষণ করে আসছে গতকাল থেকে।কিন্তু,ছেলেটাকে দেখে মনে হয়নি,এটার প্রতিবাদ করে বসবে,আত্নীয়স্বজনের কাছে গিয়ে বলাবলি করবে।
আপাতত বিয়ে যখন হয়েই গেছে,অরিত্রিকা কয়টা দিন কিছুই বলবে না।খুব আচরণও করবে না।আবার,অতটা ভাবও দেখাবে না।সময় আসুক,নিজে থেকেই ছেলেটি বুঝতে পারবে। আর যদি নূন্যতম আত্নসম্মানবোধ আর ব্যক্তিত্ব থেকে থাকে ছেলেটি মোটেই অত ঘাঁটাবে না অরিত্রিকা কে।
চুল শুকিয়ে গেছে।তোয়ালে টা বারান্দায় টানানো রশি তে ঝুলিয়ে দিয়ে দরজার চৌকাঠে এসে দাঁড়ালো অরিত্রিকা।
মাহমুদ চোখের সামনে পত্রিকা ধরে আছে। মনে হয়না তার মনোযোগ ঐ পত্রিকার পাতায় আছে।মনে মনে হাসে অরিত্রিকা। হায়রে পুরুষমানুষ,কম ঢং জানে না।
‘চা খাবেন?’
মনে হয় কিছু শুনতে পায় নি ,এমনভাবে পত্রিকার পেছন থেকে মুখের একটা অংশ বের করল মাহমুদ। চোখে আগের মত বিরক্তি ভাব নেই।
‘কিছু বললেন আমাকে?’
কথাটা শুনেও না শোনার ভান করল।মনে মনে হাসতে হাসতে বলল অরিত্রিকা- ‘হ্যাঁ,বলছি চা খান আপনি?এখন খাবেন?’
‘ওহ।হ্যাঁ,আপনি?’
‘খাই।রান্নাঘরে সবকিছু আছে তো?চা-পাতা,চিনি,চামচ টামচ?’
মেয়েটা কি রাগাতে চাইছে নাকি মাহমুদ কে?বুঝতে পারল না। -‘সবই আছে।আপনি বানাবেন?’
সে কথার উত্তর না দিয়ে অরিত্রিকা তাকে দেখিয়ে দিতে বলল কোথায় কী আছে।
মেয়েটাকে ঠিক বোঝা যাচ্ছে না। কখনো মনে হচ্ছে তার সাথে রূঢ় আচরণ করছে,কখনো মনে হচ্ছে স্বাভাবিক-এত ভেবে কাজ কী? মাথার পেছনে দুহাত রেখে বালিশে হেলান দিয়ে আগের কথা ভাবতে থাকে মাহমুদ-‘চা চাই চা?’বলে সবার মাঝে মাহমুদকে একটু আলাদা করে ডেকেছিল সেদিন তামান্না পিকনিকে।চায়ের কাপে চামচের টুংটাং বাড়ি দিয়ে।মনে হচ্ছে এই তো সেদিন,অথচ অনেকদিন আগের কথাই। কিছু কিছু স্মৃতি এত স্বচ্ছভাবে মনে গেঁথে যায়,আপনিই মনে এসে পড়ে।চা চাই চা?-সাথে টুংটাং চামচের শব্দ।
ভাবতে ভাবতে টুংটাং শব্দে চমকে উঠল।একটা ছোট ট্রেতে চায়ের কাপ আর পানির গ্লাস নিয়ে মেয়েটি পাশে দাঁড়িয়ে।ওর চুড়িগুলোই গ্লাসে লেগে শব্দ করছিল।কি যেন নাম?বারবার চেষ্টা করেও মনে করতে পারেনা মাহমুদ-রাত্রি,না কি যেন কঠিন নাম...ধন্যবাদ দেয়া উচিত মেয়েটিকে।
‘চিনি দিলাম না, আপনার সুবিধামত নিয়ে নিন। আর, দুপুরে কি খাবেন?বলেন।হালকা পাতলা কিছু।বেশি ঝামেলায় যেতে পারবো না’
একটু অবাকই হল মাহমুদ।মেয়েটির আচরণ আসলেই বিচিত্র।কখনো রোদ,কখনো যেন শ্রাবণের বৃষ্টি।
‘থ্যাংক ইউ’ বলে ট্রেতে চায়ের কাপ নিল। মেপে মেপে দুইচামচ চিনি নিল তাতে।
‘এত চিনি!’-মেয়েটি বিস্ময় প্রকাশ করল-‘এত মিষ্টি খেলে আমি নির্ঘাৎ বমি করে দেব’
‘আচ্ছা,আমি একটু বেশিই খাই’-মাহমুদ বলে।
মেয়েটা বেশ শব্দ করে চা খাচ্ছে,মনে মনে হেসে ফেলল মাহমুদ। বাসার একমাত্র সন্তান শুনেছে।সেজন্য মেয়েটির স্বভাবে-চরিত্রে হাল্কা আদুরে ভাব ,এক সন্তানরা একটু আহ্লাদী হয়ে থাকে।চা খাবার ফাঁকে ফাঁকে দেখছিল,তখনি মেয়েটা তাকালো মাহমুদের দিকে।চোখ চোখ পড়ায় একটু লজ্জা পেল মাহমুদ।গলা খাঁকারি দিয়ে সেই ভাবটা কাটানোর চেষ্টা করল,তারপর বলল- ‘চা টা ভালো লাগছে’।
‘আপনি মনে হয় সিগারেট খান না?না?’
বিষম খেলো মাহমুদ-‘না।তবে খেতাম একসময়’
‘আচ্ছা,তন্ময় প্রচুর সিগারেট খেত।ঘনঘন’-কথাটা বলতে বলতে মেয়েটার চোখমুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠল।
‘তন্ময় কে?’
‘ওহ স্যরি!আই ডিডনট ইন্ট্রোডিউস হিম’-চায়ের কাপটা প্লেটে রেখে মেয়েটা উঠল চেয়ার ছেড়ে। তারপর টেনে টেনে একটু নাটকীয় ভঙ্গিতে বলল-‘তন্ময়,অসাধারণ চমৎকার এক মানুষ।ইনকম্পেয়ারেবল পার্সন হি ইজ’ বলে মাহমুদের দিকে চাইল।
‘সেটা না। তন্ময় কী হয় আপনার?মানে রিলেশান’
একটু গম্ভীর হয়ে গেল অরিত্রিকা।সময় নিল,ভাবল।তারপর বলল-‘ওকে,ওকে আমি পছন্দ করি... ’
বলতে বলতে খেয়াল করল,ছেলেটা হাসছে।অরিত্রিকা প্রথম টা বুঝতে পারছিল না কেন হাসছে,পরে দেখল ছেলেটি আসলেই হেসে যাচ্ছে। আর কিছু বলল না। ভীষণ রাগ হল অরিত্রিকার। কথা বলাই উচিত হয় নি। ধুর।
‘তোমার চোখ’
‘আর?’
‘তোমার ঠোঁট’
‘আর?’
‘আর তোমার ...’ ঘুম ভেঙ্গে গেল।স্বপ্ন দেখছিল অরিত্রিকা। মন টা খুব খারাপ হয়ে গেল। তন্ময় যেন একটু আগেই ওর সাথে ছিল।ঠিক এভাবেই বলছিল,যেন কথা নয়,কোন কবিতা... চুপচাপ বিছানায় মন ভার করা বিকেল বেলায় বসে রইল অরিত্রিকা।বুকের ভেতরটা হু হু করে উঠছে।
দুপুরে খেয়েদেয়ে একটু শুয়েছিল অরিত্রিকা। এক ফাঁকে বাসায় কথা বলে নিয়েছে। মার সাথে কথা বলার পরপরই ঘুমিয়ে গিয়েছিল। মাহমুদ বেরিয়েছে,কোথায় যাচ্ছে জানার প্রয়োজন বোধ করেনি অরিত্রিকা।যাবার সময় ওকে বলে গিয়েছে কেউ বেল টিপলে বা দরোজা নক করলে ভালো করে কীহোল এ দেখে নিতে,আর কাজের মহিলা আসলে কাজ করতে মানা করে দিতে। কখন ঘুমিয়েছিল মনে পড়ছে না।
উঠে ফ্রেশ হয়ে নিল। মাহমুদ আসেনি। বাসাটা ঘুরে ফিরে দেখল অরিত্রিকা, একটা বেডরুম।যেটায় ওরা ছিল।আরেকটা বাড়তি রুম আছে।যেটা দুইভাগ করে দুটো রুমের মত করা হয়েছে। খুব একটা অগোছালো নয়।
ফাঁকা বাসায় একা একা কিছুক্ষণ হেঁটে বেড়াল। মন ভার ভাবটা কমছে একটু একটু। একটা বই পেলে পড়া যেত।কোন বই চোখে পড়ল না এপর্যন্ত, কয়েকটা ম্যাগাজিন ছাড়া।সেখান থেকেই একটা নিয়ে বারান্দায় চলে গেল অরিত্রিকা।জায়গাটা সামনে একটা ছোটখাট মাঠের মত আছে।বাচ্চারা ক্রিকেট খেলছে। খেলা দেখতে লাগল অরিত্রিকা।
লোকটা কখন আসবে?সন্ধ্যা পার হয়ে গেল। ফোন দিতে ইচ্ছে করছে না। আবার,একটু চিন্তা হচ্ছে।কেন চিন্তা হচ্ছে?ওকে নিয়ে তোমার কোন চিন্তা হতে নেই অরিত্রিকা,মনে মনে নিজেকে শাসায়।তুমি শুধু তন্ময়ের,শুধুই।আর কারো নও।(চলবে)
©somewhere in net ltd.
১| ০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ১১:০৪
ফাহিমুল ইসলাম বলেছেন: লাইক