নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জীবন কিন্তু একটাই

জীবন কিন্তু একটাই

হাতপা

কিছু বলার নাই

হাতপা › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্পঃ তারপর-৩

০৩ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ১২:৪৮


তারপর-১
তারপর-২
দুইঠোঁটে সিগারেট চেপে ধরে দেশলাই ঠুকে সিগারেট ধরাল মাহমুদ।জ্বলতে থাকা দেশলাইয়ের দিকে তাকিয়ে থাকল।শেষ হয়ে আসলে পর নিভিয়ে টেবিলে রাখা ছাইদানীতে গুজে দিল।তারপর,লম্বা করে একটা টান দিল সিগারেটে।

অনেকদিন পর।ঠোঁটের ফাঁক দিয়ে হালকা হালকা ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে ভদকার গ্লাস টা টেবিল থেকে নিয়ে নাকের সামনে ধরল।এলকোহলের ঝাঁঝালো গন্ধ আর নিকোটিনের কড়া গন্ধ দুই মিলেমিশে মাহমুদের চেতনাকে ছিন্নভিন্ন করে দিচ্ছিল।এক ফোটাও পান করেনি সে।অথচ,নিজেকে এলোমেলো লাগছে খুব। মনে হচ্ছে তার শরীর টা কেউ যেন হাওয়ায় ভাসিয়ে নিচ্ছে।খুব ভালো লাগছে। এভাবে কতক্ষণ থাকা যায়?

হাতড়ে হাতড়ে নিজের মোবাইলটা শার্টের বুকপকেট থেকে বের করে আনল।তারপর, ফোনবুক এ গিয়ে এলোমেলো হাতের আংগুল দিয়ে খুঁজতে লাগল।

অনেকদিন পর বিধায় অল্পপরিমাণেই অনেক ধরে গেছে ওকে।তামান্নার নাম্বার টা মোবাইলে আজো সেইভ করা আছে।নাম্বারটা বের করে সেদিকে একদৃষ্টিতে চেয়ে রইল সে।

কি করছে তামান্না এখন,কেমন দেখতে হয়েছে এতদিনে?তামান্না আজকে আর ছটফটে উচ্ছল আর প্রাণবন্ত তরুণীটি আছে কি?ওর হাসিতে কি চারপাশ এখন আর আগের মত কেঁপে কেঁপে ওঠে?

তামান্নার সাথে কথা বলার সাহস হয় না।তবু,প্রায় এমনভাবে মোবাইল টা বের করে ওর নাম্বারটার দিকে তাকিয়ে থাকে,মাহমুদ।কথা বলে কল্পনায়-
‘হ্যালো’
‘মাহমুদ?’
‘হ্যাঁ,ভালো আছ ময়না পাখি?’ মাহমুদ মাঝে মাঝে এই নামে ডাকত তামান্নাকে।ডাকটা শুনে লজ্জা পেত আর হাসত-ও তামান্না।
‘না,মন ভালো নেই’
কেন মন ভালো নেই তামান্নার?উৎকন্ঠিত হয়ে পড়ে মাহমুদ। ছুটে যেতে ইচ্ছে করে তামান্নার কাছে।ওর মুখটা নিজের বুকে জড়িয়ে চেপে ধরতে চায়।হু-হু করে কেঁদে উঠে।

একি! সত্যি সত্যি কাঁদছে মাহমুদ।চোখের পানি ওর মুখ বেয়ে ঝরছে।সংযত করার চেষ্টা করল না।এখানে কেউ কারোকে দেখে না। সবাই যার যার টেবিলে বসে নিজ নিজ সুখ-দুঃখের অনুভূতি নিজমত উদযাপন করছে। তাছাড়া আবছায়া অন্ধকারে স্পষ্টভাবে কিছু দেখা যায় না।

তারপর হাত দিয়ে চোখটা-মুখটা মুছে ফেলল-

"পৃথিবীর রাঙা রাজকন্যাদের মতো সে যে চলে গেছে রূপ নিয়ে দূরে;
আবার তাহারে কেন ডেকে আনো? কে হায় হৃদয় খুঁড়ে
বেদনা জাগাতে ভালোবাসে!"

দরজা খুলে দিয়েছিল অরিত্রিকা।বেল না বাজিয়ে দরজা ধাক্কাচ্ছিল মাহমুদ। মাহমুদকে দেখেই একটু আতঙ্কিত হয়ে চিৎকার দিয়ে উঠছিল সে,পরে,চিৎকার টা গিলে নিল।এ কি অবস্থা? দেখে মনে হচ্ছে মারপিট করে এসেছে,চোখমুখ বেশ লাল আর সারা গায়ে তীব্র গন্ধ।

মাহমুদ কিছু না বলে চুপচাপ বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়ল।অরিত্রিকা হতভম্ব হয়ে দেখছিল।লোকটার চোখের দিকে তাকানো যায় না। অরিত্রিকার মনে হয়েছে লোকটা যেন একটা বিশাল কষ্টের সমুদ্র থেকে ডুব দিয়ে এসেছে। কি এত বেদনা তার?থাকতেই পারে। সে বেদনা কি তার নিজের কষ্টের চেয়েও বেশি?

###

আজকে বেশ সকালেই ঘুম থেকে উঠে গেল অরিত্রিকা।গোসল সেরে নিল।
মাহমুদ ঘুমাচ্ছে। পা টা গুটিয়ে শিশুর মত ঘুম।রাতে খায়নি।জাগানো কি উচিত হবে?থাক।ঘুম থেকে জাগলে গতরাতের কথা বলে একটু লজ্জায় ফেলা যাবে।

দশটার সময় ঘুম ভাঙ্গল মাহমুদ।মেয়েটা চেয়ারে বসে আছে।চোখবন্ধ করে ফেলল মাহমুদ।

হলুদ রঙের পোশাক পরে আছে অরিত্রিকা। লম্বা চুলটা বেণী করা,কোন ঘরের কার এই সুন্দর মেয়েটি তার ঘরে বসে আছে।কী সম্পর্ক তার সাথে? বউ? মনে মনে হাসল মাহমুদ।

‘উঠুন,সময় কম হয় নি।চা করছি আমি’-বলে অরিত্রিকা উঠে দাঁড়ালো-
‘ আর শুনুন। আজকে কাজের মহিলার হাতের রান্না খাবো না ,যা বিস্বাদ,আপনি তো ভালই খেতে পারেন’

মাহমুদ চোখ পিটপিট করে চেয়ে রইল।
‘চাল-ডাল-ডিম মিশিয়ে খিচুড়ি রেঁধে ফেলব ভাবছি,কি খাবেন তো?’
মাহমুদ হ্যাঁসূচক মাথা নাড়ল।

অরিত্রিকা বেরিয়ে গেল।

গতরাতের কথা মনে পড়ে গেল মাহমুদের।কি বিশ্রী অবস্থা না হয়েছিল !ঘরে ঢুকেই শুয়ে পড়েছিল।তারপর আর কিছু মনে নেই। মেয়েটি কি ভাবছে?

চা-বিস্কিট নিয়ে আসল অরিত্রিকা।

'চিনি ঠিক আছে?'
'হ্যাঁ' -বলল মাহমুদ।

‘আচ্ছা, আপনার কাছে মুভি কালেকশান কেমন আছে?’
অরিত্রিকার দিকে তাকালো মাহমুদ।ও ভেবেছিল কালকে রাতের প্রসঙ্গ তুলবে মেয়েটি।
'আছে কিছু। পিসিতে'
‘আচ্ছা,দেখতে হবে’-বলল অরিত্রিকা।
‘সময় কাটছেনা?’-মাহমুদ জানতে চায়।
‘সেটা না। ইচ্ছে হল।তাছাড়া, ভাবছিলাম দেখলে মনটাও ভালো লাগতে পারে’-বলে নিজের আঙ্গুলগুলো দেখতে থাকে অরিত্রিকা।
‘মনের কি হল?’-মাহমুদ প্রশ্ন করে।
‘মন?’ বলে থামল অরিত্রিকা।তারপর,জোরে একটা নিঃশ্বাস ফেলে বলল-‘সেটা শুনে আর কাজ নেই আপনার।চা ভালো হয়েছিল?’
‘হুম।ভাল হয়েছে’

‘এখানে সব মুভি আছে।দেখে নিন’- পিসিতে অরিত্রিকাকে দেখিয়ে দিল মাহমুদ।
‘অরণ্যের দিনরাত্রি আছে?’
‘সেটা আবার কি?’-মাহমুদ প্রশ্ন করে।
‘সত্যজিত রায়ের মুভি।আপনি দেখেন নি!’-বিস্মিত হল অরিত্রিকা-‘চমৎকার মুভি’
‘নেই।আমি দেখিনি।আপনি ডাউনলোড করে নিন তাহলে ’
‘ঠিক আছে।করছি।আপনি দেখবেন তো?’

অরিত্রিকার প্রশ্ন করার ধরণে অবাক হল মাহমুদ।মেয়েটি কতদিন ধরে চেনে ওকে,এভাবে বলছে।

‘আচ্ছা।দেখব’-মাহমুদ বলে।

অনেকদিন পর ঘরোয়া রান্নার স্বাদ পেল মাহমুদ।খিচুড়ি আহামরি স্বাদ না হলেও ভালই খেয়েছে।কাজের মহিলার রান্না তো নিয়মিত একরকম বাধ্য হয়েই খায়।ভালো খেতে পেলে মনটাও কেমন যেন ফূর্তি ফূর্তি লাগে-মনে মনে ভাবলো মাহমুদ।খাওয়াদাওয়া সেরে দুইজন মিলে বসল।মাহমুদ চেয়ার টা টেনে নিল।অরিত্রিকা বিছানায় বালিশ কোলে নিয়ে আয়েশ করে বসে পড়ল।

‘আপনি এখানেই আসুন না ,বিছানায়।আরাম করে দেখুন’-মাহমুদ কে ডাকল।
‘না,না,আমি এখানেই ঠিক আছি’

‘ঠিক থাকলে তো ভাল।দেখেছেন সত্যজিত রায়ের এক্টর রা মিনিটে মিনিটে সিগারেট খায়।ঠিক তন্ময়ের মত।’

সামান্য মুভি দেখবার জন্য কত আয়োজন। চা-ও বানিয়ে এনেছে মেয়েটি।বিচিত্র কান্ড-কারখানা এই মেয়ের। মাহমুদ মুভি না দেখে মেয়েটিকেই খেয়াল করছে।

ডাক শুনে মাহমুদের ঘুম ভাঙল। অরিত্রিকা ওর পাশে।ঘুমিয়ে পড়েছিল চেয়ারেই।সাদাকালো মুভিটি দেখতে দেখতে ঘুম এসে গিয়েছিল,

‘শুনছেন? কেউ এসেছে!বেল বাজছে’
‘ও আচ্ছা।আমি দেখছি’-বলে মাহমুদ উঠে গেল।

কিছুক্ষণ পর মাহমুদ বেডরুমের দরজায় এসে দাঁড়ালো।
‘আচ্ছা,শুনুন। একটা ব্যাপার হয়েছে’
‘হ্যাঁ,কি?’-অরিত্রিকার মনোযোগ মুভিতে।
‘আমাদের বাড়িওয়ালা আন্টি এসেছিলেন।আপনাকে দেখতে চাইছে’
‘তাই?’-উঠে গিয়ে মুভিটা পজ করে দিয়ে মাহমুদের দিকে চাইল অরিত্রিকা।দুজনেই যেন জানে দুজনের মনের কথা।ওদের মাঝে যে একটা সূক্ষ্ণ দূরত্ব নিজেরা বজায় রেখে চলছে সেটা ওরা জানে।এখন সেটাকে কনসিল করতে হবে এই হচ্ছে ব্যাপার।দুজনের চোখাচুখিতেই সব কথা বলা হয়ে গেল যেন।
অরিত্রিকা মিষ্টি হেসে বলল-‘টেনশান নেই।সমস্যা হবে না’

ড্রেসিং টেবিলটার সামনে গিয়ে আয়নায় এক ঝলক নিজেকে দেখে নিল অরিত্রিকা,মেয়েদের চিরন্তন স্বভাব।

তারপর মাহমুদের কাছে এসে বলল, ‘চলুন।মানে চলো’-বলে অরিত্রিকা হেসে ফেলল।মাহমুদও।

‘ভদ্রমহিলা তো দাওয়াত করে গেলেন আগামীকালের ’-মাহমুদ অরিত্রিকার দিকে চেয়ে বলল।অরিত্রিকা হাসছে। শব্দ করে হাসি না।মৃদু হাসি।

‘আপনি কি ভাবছেন?আমি যেতে চাইব না?’-অরিত্রিকা প্রশ্ন করল।–‘দেখুন,আমি না বললেও আপনি নিশ্চয় বুঝতে পারছেন এই বিয়েতে আমার মত ছিল না,এবং সত্য কথাটি হল এখনো নেই।তবে,এতে হয়ত আপনার কোন দোষ নেই।চিন্তা করবেন না;আপনাকে আমি ছোট করব না’-একটানে কথাগুলো বলে চাইল মাহমুদের দিকে।

মাহমুদ কিছু যেন বলতে গিয়ে আবার থেমে গেল। তারপর, চুপচাপ উঠে গেল।

অরিত্রিকা একটু ভাবল। তার কথাগুলো কি বেশি কঠিন হয়ে গেছে?রাগ করল নাকি? এমনিতেই নিজে নিজে কষ্টে আছে,তার উপর এই মানুষটা তার কথাগুলো শুনে রাগ করে যদি এটা ভেবে একটু খারাপ লাগতে থাকে। আর কিছু না হোক,এই ঘরে একই ছাদের নিচে আছে দুজন।অহেতুক তার উপর মানুষটা বিরূপভাব নিয়ে থাকুক এটা কাম্য নয় অরিত্রিকার।

কি হচ্ছে এসব? আমি কেন এই মানুষটার ভালোমন্দ নিয়ে ভাবতে শুরু করেছি? নিজেকে ঘৃণা হতে থাকে আবার অরিত্রিকার। ভুল অরিত্রিকা,এইসব ভুল।এইসব ভেবো না।অরিত্রিকা তুমিই ঠিক।

###

‘আচ্ছা,দাওয়াতে গেলে তো আমাদের কিছু নেয়া উচিত, তাই না?’
‘আমারো তো তাই মনে হয়’
‘কি নেয়া যায়?’
‘মিষ্টি-ফিষ্টি,ছোট বাচ্চা থাকলে আইসক্রিম’
মাহমুদ অরিত্রিকার বুদ্ধির প্রশংসা করল। তারপর,হঠাত চিন্তিত হয়ে পরল।-‘কি পরে যাওয়া যায় ভাবছি’
অরিত্রিকা এক মুহুর্ত ভাবল-‘আজ তো জুমাবার।দুপুরে দাওয়াত,পাঞ্জাবি পরুন না’
মাহমুদ চুপ মেরে গেল।মাহমুদের নীরবতা দেখে অরিত্রিকা জিজ্ঞেস করল-‘কি ব্যাপার?পাঞ্জাবি কি নেই?নাকি ধোয়া নেই?নাকি ছেঁড়া?কোনটা বলে ফেলুন।’
‘না ঠিকই আছে’-তারপর মাহমুদ খুঁজেপেতে বের করল।সেই পাঞ্জাবিটা হাতে নিয়ে অরিত্রিকার সামনে আসলে অরিত্রিকা হাসতে হাসতে শেষ-‘কতদিন পরেন না?দিন,দিন,আয়রন করে দিই’

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.