নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জীবন কিন্তু একটাই

জীবন কিন্তু একটাই

হাতপা

কিছু বলার নাই

হাতপা › বিস্তারিত পোস্টঃ

বনফুলেরগল্পঃ নাথুনীর মা

০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ১:৫৯

পেশায় চিকিৎসক হওয়ায় বনফুল এর অধিকাংশ গল্পে উঠে এসেছে মানুষের বিভিন্ন শারীরিক রোগ,এবং চিকিৎসা,প্রতিকার ইত্যাদির ঘটনা।সেগুলোর পাশাপাশি গল্পগুলোও লেখক অসম্ভব চমৎকার ভাবে উপস্থাপন করেছেন।নিচের গল্পটি একটি ছোটগল্প এবং অবশ্যই পড়ে বিনোদন পাবেন।
**************************নাথুনীর মা****************************

Fixity of Purpose এর বাংলা কি?
উদ্দেশ্যের দৃঢ়তা ?
যাহাই হোক,ইহার সুন্দর একটি উদাহরণ সেদিন দেখিয়াছিলাম।গল্পটি বলিবার পূর্বে "লক জ” কাহাকে বলে,তাহাও বুঝানো দরকার। “লক জ(Lock Jaw)” তাহাকেই বলে যাহা হইলে ব্যয়ত আনন আর বন্ধ হয় না,ব্যায়তই থাকে। হাই তুলিতে গিয়া অনেকসময় এই বিপদ ঘটে। মুখ কিছুতেই বোজে না,হাঁ করিয়াই থাকিতে হয় যতক্ষণ না ডাক্তার চোয়ালের হাড়টি যথাস্থানে বসাইয়া দেন।ইহার ঠিক ডাক্তারি নাম ডিসলোকেশান অব ম্যান্ডিবল(Dislocation of Mandible)-একবার হইলে সঙ্গিন “পরিস্থিতি”।
একটি রোগীকে লইয়া অনেক রাত্রি পর্যন্ত জাগিতে হইয়াছিল। সকালে চোখ হইতে ঘুম ছাড়িতেছিলনা। গৃহিণীর বারম্বার তাগাদা সত্ত্বেও তন্দ্রাচ্ছন্ন হইয়া বিছানায় পড়িয়াছিলাম।
‘কড়কড়’ শব্দে বাজ পড়িল না-দুয়ারে কড়া নড়িল।
বাহিরে আসিয়া দেখিলাম ,একটী আধ-ঘোমটা-দেওয়া কম-বয়সী মেয়ে একটি বুড়ীকে লইয়া দাঁড়াইয়া আছে। চিনিতে পারিলাম –নাথুনীর স্ত্রী ও মা। ইহাদের বাড়িতে ইতিপূর্বে চিকিৎসা করিয়াছি। নাথুনী স্থানীয় ময়দার কলে চাকরি করে।
কি হল?
বুড়ী নীরব ।
নাথুনির বউ বলিল ,মায়ের মুখ হা হয়ে গেছে। বুজছে না।–বলিয়া সে মুখ ফিরাইয়া হাসি গোপন করিল।
তাই নাকি?দেখি-
দেখিলাম,ঠিকই তাই – বুড়ির ‘জ’ স্থানচ্যূত হইয়াছে।
নাথুনি কোথায়?
নাইট-ডিউটি থেকে ফেরেনি এখনও।
এরকম হল কি করে?হাই তুলতে গিয়ে?
বধূই উত্তর দিল (বুড়ীর পক্ষে কথা বলা অসম্ভব) ,না,হাই তুলতে গিয়ে নয়।
তবে?
এমনই।
এমনই কি করে হবে?কিসের জন্য হা করেছিল?
বধূটি তখন ঈষৎ হাসিয়া অবনত মস্তকে পায়ের বুড়ো আঙ্গুলের নখ দিয়া মাটি খুঁড়িতে খুঁড়িতে সসংকোচে বলিল, মা আমাকে গাল দিচ্ছিলেন ।অনেকক্ষণ গাল দেবার পর যেই ‘পোড়ারমুখী’ বলতে গেছেন ,অমনি ‘পোড়ার’ পর্যন্ত বলেই –
মুখে আঁচল দিয়া ঘাড় ফিরাইয়া সে হাসি গোপন করিল। বুড়ীর চোখের দৃষ্টি অগ্নিবর্ষণ করিতে লাগিল।
কতক্ষণ হয়েছে?
আধঘন্টা হবে।
আচ্ছা,বস তোমরা,এখুনি ঠিক করে দিচ্ছি আমি।
ভাবিলাম মুখরা বুড়ীটা একটু শাস্তিভোগ করুক, আমি ততক্ষণে প্রাতঃকৃত্যাদি সারিয়া লই।
রোগী দেখিবার ঘরটায় তাহাদের বসাইয়া আমি ভিতরে চলিয়া গেলাম।
ফিরিলা প্রায় ঘন্টাখানেক পরে।
আসিয়া বিধিমত দুই হাতের দুইটা বুড়া আঙ্গুল বুড়ীর মুখগহবরের পুরিয়া নীচের চোয়ালের হাড়টায় বেশ জোরে চাপ দিয়া টান দিলাম। খুট করিয়া হাড় যথাস্থানে বসিয়া গেল।
মুখ হইতে বুড়াআঙ্গুলটি বাহির করিয়া লইবার সঙ্গে সঙ্গে বুড়ী বলিল – মুখী!

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.